তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ বানানো অর্ডিনান্স বাতিল কর

আমরা ভীষণ চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে যা তিন তালাক দেওয়াকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে চায়।
সংসদে এ বিষয়ে বিতর্ক চর্চা এড়িয়ে গিয়ে কেন এরকম একটি অর্ডিনান্স জারি করার পথ বেছে নিল সরকার?

স্বামী কর্তৃক অবৈধ ও একতরফা বিবাহ বিচ্ছেদের পর পরিত্যক্ত হওয়ার দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন তো ভারতে সব সম্প্রদায়ের মহিলাদেরই হতে হয়-এটা কেবল মুসলমান মহিলাদের সমস্যা নয়।

মুসলমান ছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের মহিলাদের ক্ষেত্রে এরকম পরিস্থিতিতে দেওয়ানি (সিভিল) প্রতিকার আছে। তাহলে কেবলমাত্র মুসলমান পুরুষদের ক্ষেত্রেই অবৈধ বা একতরফা বিবাহ বিচ্ছেদকে ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) অপরাধ বানাতে অর্ডিনান্স আনা হচ্ছে কেন?

তাৎক্ষণিক তিন তালাক যদি পারিবারিক হিংসা হিসেবে গণ্য হয় সেক্ষেত্রে অন্যদের মত মুসলমান মহিলাদেরও তো দেওয়ানি মামলার সুযোগ হিসেবে "পারিবারিক হিংসা থেকে মহিলাদের নিরাপত্তা আইন ২০০৫" আর ফৌজদারি মামলার সুযোগ হিসেবে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৮-এ ধারা থাকছে। তাহলে কী প্রয়োজনীয়তা আছে অর্ডিনান্স বা নতুন আইন এনে তাৎক্ষণিক তিন তালাকের অপরাধিকরণ করার?

কোন হিন্দু স্বামী তো এমনিই তার বউকে ছেড়ে দিতে বা ত্যাগ করতে পারে আর অস্বীকার করতে পারে তার সঙ্গে থাকতে। যেমন শ্রীমতি যশোদাবেন তাঁর স্বামীর কাছে স্বীকৃতি চেয়ে চেয়ে ব্যর্থ, তাঁর স্বামী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে ত্যাগ করেছেন ৪৫ বছর আগে। তাঁদের বিচ্ছেদ যে নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ থেকে এক তরফা ভাবে করা তা প্রমাণ হয় যখন শ্রীমতী যশোদাবেন বারবার তাঁর স্বামী শ্রীযুক্ত নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মিলিত হতে চেয়ে এবং থাকতে চেয়ে আবেদন জানান আর নরেন্দ্র মোদী তা প্রকাশ্যে এড়িয়ে যান। কোটি কোটি হিন্দু মহিলার অবস্থা, যশোদাবেনের মতোই, বিশেষ রকম কঠিন। কারণ তাদের স্বামীরা খুব সহজেই হাত ধুয়ে ফেলতে পারে বিবাহের দায়িত্ব থেকে। আইনানুগ বা অন্যভাবে ডিভোর্স পাবার চাপ না নিয়েই তা করতে পারে স্বামীরা। এটা কি খুব কম অপরাধ একজন মুসলমান পুরুষের থেকে যে কিনা নিজের বউকে একতরফা "তালাক তালাক তালাক" বলে তারপর পরিত্যাগ করেছে? বি জে পি দাবি করে যে তারা 'অভিন্ন দেওয়ানি বিধি' চায় - কিন্তু অর্ডিনান্স জারি করে তারা এটা পরিস্কার করে দিয়েছে যে, বেআইনি ও এক তরফা বিবাহ বিচ্ছেদকে ফৌজদারি আইনের আওতায় অপরাধিকরণের ক্ষেত্রে সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্যই অভিন্ন বিধান আনতে তারা মোটেই ইচ্ছুক নয়, কেবল মুসলমান পুরুষদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে অপরাধিকরণ করতে চাইছে।

সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বাতিল এবং অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে। আমাদের মতে এই রায় অনুযায়ী কোনও ধর্মীয় অথবা সামাজিক প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বৈধতা দিলে সেই প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে; যারা তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বৈধতা দিচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে এটা একটা কার্যকরী প্রতিবন্ধক হবে। যে মহিলারা তাৎক্ষণিক তিন তালাকের শিকার হচ্ছেন তাঁদের সুবিচার দিতে রাষ্ট্র প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি ও আর্থিক সহায়তা এবং সামাজিক সমর্থন প্রদান করুক। আসলে সব সম্প্রদায়েরই যে মহিলারা অবাধ ও একতরফা ত্যাগ ও বিচ্ছেদের শিকার তাঁদের সকলকেই বৃহত্তর আইনি ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।

সাংসদদের কাছে আমরা আবেদন করছি যে তাঁরা তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ বানানো এই অর্ডিনান্সকে প্রত্যাহার করে নিতে দৃঢ়তার সাথে সওয়াল করুন আর নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংস্থার সাথে আলাপ আলোচনা ও সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে এ সম্পর্কিত বিল পাস করুন।

খণ্ড-25
সংখ্যা-30