গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিপিআই(এম এল) লাতেহারের বারওয়াধিতে ব্লক সদরদপ্তরে জনগণের ঘেরাও সংগঠিত করে। ৫০টি গ্রামের ২০০০ গ্রামবাসী প্রথাগত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গণ ক্রোধ মিছিলে সমাবেশিত হয়। বারওয়াধি মিডল স্কুল থেকে শুরু হয়ে মিছিল শহরের মধ্যে দিয়ে গিয়ে বিডিও এবং সিও অফিসগুলি ঘেরাও করে। আবাসন প্রকল্প, একশ দিনের কাজ, রেশন ও কেরোসিন বন্টন সহ সমস্ত সরকারি প্রকল্পে চলা ব্যাপক লুটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই ঐ ঘেরাও কর্মসূচী নেওয়া হয়। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪.৩০টা পর্যন্ত বিডিও এবং সিওরা তাঁদের অফিসে ঘেরাও হয়ে থাকেন।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট এই ইস্যুতে ব্লক সদর দপ্তরে ধর্ণা সংগঠিত হয়েছিল। রঘুবর সরকার ঐ প্রতিবাদে কর্ণপাত না করায় এই গণ ক্রোধ মিছিল সংগঠিত হয়। সেদিনের জনসমাবেশে সিপিআই(এম এল)-এর ঝাড়খণ্ড সম্পাদক জনার্দন প্রসাদ বলেন—রঘুবর সরকার কর্পোরেট সংস্থা সমূহ এবং দুর্নীতিপরায়ণদের স্বার্থেই কাজ করছে, আর সে কারণেই ঐ সমস্ত সরকারি প্রকল্পে অবাধ লুট চলছে। সারা দেশ এবং তার সঙ্গে ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি সরকারকে অপসারিত করার সময় এসে গেছে। জেলা সম্পাদক বিরজু রাম বলেন, এই লুটে বিডিও-দেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ব্লক সম্পাদক কানহাই সিং বলেন, একশ দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিকদের মজুরি তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে না, ভুয়ো শ্রমিকের নাম দেখিয়ে দালালরা তা আত্মসাৎ করছে।
রাজ্যপালের কাছে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে এই দাবিগুলি রাখা হয়—বেতলা গ্রামের দরিদ্রদের প্রধানমন্ত্রী আবাস প্রকল্প এবং আম্বেদকর আবাস প্রকল্পের সুবিধা দিতে হবে; দুর্নীতিতে জড়িত মুখিয়া, পঞ্চায়েত সেবক এবং অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করতে হবে; এসইসিসি তথ্যে থাকা অসঙ্গতিগুলি সংশোধন করতে হবে এবং যোগ্য সুবিধাপ্রাপকদেরই আবাস প্রকল্পের সুবিধা দিতে হবে; এর আগের তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ গেছে সেরকম সহস্রাধিক গ্রামবাসীকে রেশন কার্ড দিতে হবে; কেচকি গ্রামের রেশন ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে এবং সোশ্যাল অডিটে সন্ধান পাওয়া লুটের টাকা তার কাছ থেকে আদায় করতে হবে; ন্যায্য পাওনা দেওয়া হবে বলে গ্রামীণ দরিদ্রদের কাছ থেকে যে ২০০০ থেকে ৮০০০ টাকা বেআইনিভাবে চাওয়া হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে; ২নং রেজিস্টারে থাকা নামগুলির অসঙ্গতি দূর করে গ্রামীণ দরিদ্রদের গইরমজরুয়া জমি বিতরণ করতে হবে; কেচকি এবং চেপরি গ্রামের যে দুই শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন, তাদের পরিবারগুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বারওয়াধির বন দপ্তর ঘেরাও করা হয় ১২ সেপ্টেম্বর এবং তার আগে গ্রাম সভাগুলি এবং সিপিআই(এম এল) যৌথভাবে সংগঠিত মিছিল এবং পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে ঐ ঘেরাওয়ের প্রস্তুতি প্রক্রিয়া চালান। যে সমস্ত তপশিলি উপজাতি জনগণ বনে থাকেন তাঁরা বন, গাছ ইত্যাদি বনজ সম্পদকে রক্ষা করেন এবং মহুয়া সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বন কর্তৃপক্ষ এখন তাদের মহুয়া সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং নিজেরাই মহুয়া সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। বন জমির পাট্টা পাওয়া জনগণকে জোরজবরদস্তি উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং অপরাধ আইনের বিভিন্ন ধারায় তাদের অভিযুক্ত করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শত শত গ্রামবাসী প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও বন দপ্তর তাদের পাট্টা দিচ্ছে না। বন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকা মূল্যের গাছ কেটে সেগুলি ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করছে। পেসা আইন ১৯৯৬ সালে গ্রাম সভাগুলিকে শক্তিশালী করেছিল। আজ বন দপ্তর আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নিয়ে বন থেকে তাদের উচ্ছেদ করছে। হাতি যাদের শস্য ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তাদের কোন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না।
প্রায় ২০টি গ্রামের গ্রামবাসীরা—যাদের মধ্যে বহুসংখ্যক মহিলা ছিলেন—তীর, ধনুক এবং অন্যান্য ঘরোয়া অস্ত্র নিয়ে বন দপ্তর ঘেরাওয়ে যোগ দেন। কিন্তু ফটকের সামনে তাদের বাধা দেওয়া হয়। অবশেষে জনগণের গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ জয়ী হয় এবং তাদের জন্য ফটক খুলে দিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়। জেলা সম্পাদক বিরজু রাম সমাবেশিত জনগণের সামনে বলেন—ঠিক যেমন আগুন জ্বালিয়ে বন্য শিকারি প্রাণীদের তাড়ানো হয়, সেরকমভাবে জনগণের আন্দোলন দিয়ে বিজেপি-আরএসএস-কেও ঝাড়খণ্ড থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এই ঘেরাওয়ের মধ্যে দিয়ে বন দপ্তরের কাছে ১২ দফা দাবি সনদ পেশ করা হয়।