গোটা রাজ্যেই শিক্ষা কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে। স্কুল শিক্ষার অবস্থা একদমই বেহাল। একদিকে তৃণমূল সরকার সবুজ সাথী, জুতো প্রদান প্রভৃতি চটকদারী প্রকল্প চালু করলেও রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের অচলাবস্থার ছবিটা প্রকট হয়ে উঠছে। তারই প্রতিফলন দেখা গেলো ইসলামপুরে। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুলে শিক্ষকের অপ্রতুলতার জন্য ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। বিভিন্ন গণআন্দোলনে মা মাটি মানুষের তকমাধারী সরকার যেভাবে দমন নামিয়ে এনেছে ইসলামপুরে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপরেও এই সরকারের ট্রিগার হ্যাপী পুলিশ একই কায়দায় আক্রমণ নামায় এবং গুলি চালায়। গুলিতে মৃত্যু হয় রাজেশ সরকার, তপন বর্মণ ও আরও একজনের মৃত্যু হয়। এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ। এআইএসএ, এসএফআই, এআইএসএফ, পিএসইউ এবং ছাত্র ব্লক একযোগে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় ২২ সেপ্টেম্বর। জেলায় জেলায় পথে নামে ছাত্র ছাত্রীরা। হওড়া, হুগলী, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগণা সর্বত্র আইসা কর্মীরা এই ধর্মঘটকে সফল করতে রাস্তায় নামেন। চূড়ান্ত ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা ছাত্রসমাজ। আর এই ছাত্র বিক্ষোভকেই ভয় পেয়ে তৃণমূল সরকারের পুলিশ এবং তৃণমূলী গুন্ডাবাহিনী জায়গায় জায়গায় আক্রমণ নামায় ছাত্র ছাত্রীদের ওপর। হাওড়ার বালিতে আইসা'র মিছিল শেষে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা হুমকি দেয় ও হেনস্থা করে আইসার জোনাল সভাপতি এবং সিপিআই(এমএল) হাওড়া জেলা কমিটি সদস্য অঙ্কিতকে। এতদসত্ত্বেও ছাত্র ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়ে রাজ্যজুড়ে। স্কুল কলেজগুলো রাজ্য সরকারের চাপে খোলা থাকলেও বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই অনুপস্থিত ছিল। ২৪ সেপ্টেম্বর এআইএসএ এবং ইউএসডিএফের ডাকে লালবাজার অভিযান সংগঠিত হয়। বিশাল পুলিশ বাহিনী পথ আটকালে ধস্তাধস্তি বাধে,পরে গ্রেপ্তার করে আন্দোলনকারীদের এবং মুক্তি দেয়।
অপর দিকে দেখা যাচ্ছে, ইসলামপুরের ঘটনাকে সামনে রেখে রাজ্যে বিভাজন ও ঘৃণার রাজনীতির তাস খেলতে শুরু করেছে বিজেপি-আরএসএস ও তাদের শাখা সংগঠনগুলি। উর্দু বনাম বাংলা এই বিতর্কে সমগ্র বিষয়টাকে গুলিয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজের ফ্যাসিবাদী অ্যাজেন্ডাকে রূপায়িত করতে তারা মাঠে নেমেছে। ক্রমাগত উস্কানিমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তারা এই রাজ্যকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর বিরুদ্ধে সমস্ত বামপন্থীরা আন্দোলনে সামিল।
আইসা দাবী করেছে অবিলম্বে ইসলামপুর হত্যাকন্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষী পুলিশ কর্মীদের শাস্তি দিতে হবে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, ইসলামপুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি-আর এস এসের ঘৃণ্য ও বিভাজনের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার আহ্বানও আইসা সমগ্র ছাত্র সমাজ এবং জনগণের কাছে রেখেছে।