২৯ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লী থেকে সিপিআই(এম এল) কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়—সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮-র ২৬ সেপ্টেম্বর আধারের সাংবিধানিক বৈধতা এবং বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পে সুবিধা প্রাপকদের আধার সংযোগের প্রয়োজনীয়তাকে অনুমোদন করেছে। ঝাড়খণ্ডের ১১ বছরের মেয়ে সন্তোষীর রেশন কার্ড আধারের সঙ্গে সংযুক্ত না হওয়ায় ভাতের জন্য আর্তনাদ করতে করতে সে অনাহারে মারা যাওয়ার এক বছর পর এই রায় এল।
সুপ্রিম কোর্টের রায় চূড়ান্ত হতাশাজনক, কেননা, রেশন ব্যবস্থা এবং একশ দিনের কাজের প্রকল্প সহ কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি থেকে দরিদ্রতম ভারতবাসীদের বঞ্চনার একটা হাতিয়ার হিসাবে আধারের ব্যবহারে সে অনুমোদন দিয়েছে। খাদ্য এবং কাজ যে মানুষের হক ও অধিকার এবং কাউকেই যে এর থেকে বঞ্চিত করা যায় না, সুপ্রিম কোর্ট তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আধারে নথিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও ২৭ শতাংশ জনগণ যে তাদের হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সেই বিপুল সাক্ষ্যপ্রমাণকে সে অবজ্ঞা করেছে। নেটওয়ার্ক না থাকা এবং তার সাথে কায়িক শ্রম, বার্ধক্য অথবা আঘাতের কারণে আঙ্গুলের ছাপ বা চোখের মণির মতো বায়োমেট্রিক নির্দেশকে পরিবর্তন আসার জন্য প্রামাণিকতা নির্ধারণ কঠিন হয়ে দেখা দেয় এছাড়া বায়োমেট্রিক ভ্রান্তির কারণে কোটি কোটি জনগণ আধারে নিজেদের নথিভুক্ত করতে পারেননি এবং এইভাবে তাঁদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চনার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিচারপতি চন্দ্রচূড় যে বিরোধী মতের রায় দিয়েছেন আমরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। তিনি তাঁর রায়ে বলেছেন, ''২০০৯ সাল থেকে গোটা আধার কর্মসূচীতে'' ''সাংবিধানিক ত্রুটি এবং বুনিয়াদি অধিকারের লঙ্ঘন'' পরিলক্ষিত হয়ে আসছে এবং এর ভিত্তিতে তিনি আধার আইনকে খারিজ করেছেন।
আধার আইনের রাজ্য সভায় পাশ হওয়াকে এড়াতে তাকে অর্থ বিল রূপে পাশ করানো হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় যে তাতে অনুমোদন দিয়েছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিরোধী মতের রায় এটাকে অবশ্য ''সংবিধানের প্রতারণা'' বলে বর্ণনা করেছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে আধার আইনের কয়েকটি ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে খারিজ করা হলেও তার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে সেটাকে পূরণ না করেই তা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ঐ রায় অসাংবিধানিক বলে আধার আইনের ৫৭নং ধারাকে বাতিল করেছে, যে ধারায় বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে আধার নম্বর চাওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোটি কোটি আধার নম্বর যে সংগৃহীত এবং সেগুলির সঙ্গে যে সংযোগ ঘটানো হয়েছে এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মুনাফাবাজির জন্য যে সেগুলিকে কাজে লাগানো হতে পারে, সেই বিষয়টাকে রায় উপেক্ষা করেছে। যে প্রকল্পে আগে থেকে না জানিয়ে সম্মতি না নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, সেই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টাকেও রায় বিবেচনায় আনেনি। যে সমস্ত ক্ষেত্রে সরকার তার নিজের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে হস্তান্তরিত করেছে, সেই সমস্ত ক্ষেত্রেও বেসরকারি সংস্থাগুলো আধার তথ্য ভাণ্ডারে ঢুকতে পারবে এবং এইভাবে ব্যক্তি মানুষের সংবেদনশীল বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের অধিগত হবে।
ইউআইডিএ আই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এল আই আইডেন্টিটি সিস্টেমস নামক কোম্পানির সঙ্গে, যে কোম্পানি সিআইএ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং এই ঘটনা থেকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে, রায় তার সমাধান দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। এই চুক্তির ফলে এল আই সিস্টেমস আমাদের বায়োমেট্রিক তথ্য ভাণ্ডারের নাগাল পাবে, কেননা, বায়োমেট্রিক তথ্য ভাণ্ডারের সোর্সকোডের মালিক হল এলআই সিস্টেমস।
সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ফোন নম্বরের সঙ্গে আধার সংযোগের বৈধতাকে বাতিল করেছে, কিন্তু আয়করের প্যান-এর সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকে বজায় রেখে সেটারই আবার বিরোধী অবস্থান নিয়েছে।
বিরোধী মতের সংখ্যালঘু রায়টাই ইতিহাসের বিচারে সঠিক বলে প্রতিপন্ন হবে।