মাত্র আড়াই হাজার টাকায় কিনতে পারবেন একটি সফটওয়্যার প্যাচ যা দিয়ে পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় বসে আপনি নিজের জন্য বারো ডিজিটের তথাকথিত ইউনিক একটি আধার নাম্বার জেনারেট করে নিতে পারবেন। খবরটি 'হাফিংটন পোষ্ট' নামক আন্তর্জাতিক পরিচিতি সম্পন্ন খবরের পাতায় সম্প্রতি প্রকাশিত।।
১০০ কোটি মানুষের আধার সংক্রান্ত তথ্য যে ডেটাবেসে রাখা আছে বলে জানায় সরকার, সেটিকে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই হ্যাক করা হয়েছে। এই সফটওয়্যার দিয়ে যথেচ্ছ আধার নম্বর তৈরি করা সম্ভব যা করতে কারো প্রকৃত বায়োমেট্রিক্স ডেটার প্রয়োজন পড়বে না, কেবল আধার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়েই নতুন ডেটা সংযুক্ত করা যাবে। হাফপোস্টের খবর অনুযায়ি এই সফটওয়্যারের একটি প্যাচ আড়াই হাজার টাকায় কিনতেও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে।
এই সফটওয়্যার দিয়ে আধার এনরোলমেন্টের যে সফটওয়্যার আছে তার জিপিএস কে অক্ষম করে রাখা সম্ভব। আধার এনরোলমেন্ট সেন্টারগুলো কোথায় অবস্হিত তা জিপিএস এর মাধ্যমে চিহ্নিত হয়। তা যদি নষ্ট করে দেওয়া যায় তাহলে আপনি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বসে আধার নম্বর তৈরি করতে পারবেন। তাহলেই কেল্লা ফতে।
আমাদের চোখের মণিকে কেন্দ্র করে যে রংধনু থাকে তার ছবিকে আধারে প্রামাণ্য জৈব মাপকাঠি বা বায়োমেট্রিক্স হিসেবে গণ্য করা হয়। আধারে নাম তোলার প্রক্রিয়ায় যে অপারেটর থাকে তার চোখের মণির ডেটা প্রয়োজন প্রামাণ্যকরণের জন্য। হ্যাকিং সফটওয়্যারটি এমনভাবে তৈরি যে তার মাধ্যমে অপারেটরের একটি হাই রেজলুশন ছবি থেকেই চোখের মণির এই ডেটা ইনপুট দিয়ে প্রামাণ্যকরণের কাজ হয়ে যাবে, অপারেটরকে সশরীরে থাকতেও হবেনা।
কেন্দ্র সরকার যথারীতি হাফপোস্টের খবরের সত্যতা অস্বীকার করছে। কিন্তু বাস্তবে এই সফটওয়্যার গোঁজটি ব্যবহার করে নিজের কম্পিউটারে আধার এনরোলমেন্ট সফটওয়্যারটি স্থাপিত করে নেয়া যায় এবং আধার অপারেটররা নিজেদের মুনাফা বাড়াতে একই সময়ে বিভিন্ন জায়গার একাধিক মেশিনে আধারে নাম তোলার কাজ করবার জন্য এই গোঁজটি ব্যবহার করছে। হাফপোস্টের দাবি অনুযায়ি তিনটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার দ্বারা তাঁরা এই গোঁজ সফটওয়্যারটি পরিক্ষা করিয়েছেন। প্রত্যেকেই বলেছে যে এই গোঁজটির মাধ্যমে উপরোক্ত কাজগুলি করা সম্ভব এবং একদম শুরুতেই আধারভুক্তির জন্য যে সফটওয়্যারটিকে বেছে নেয়া হয়েছে তাকে সম্পূর্ণ বদলে না ফেলে এর হাত থেকে বাঁচার উপায়ও নেই।
অর্থাৎ গলদ গোড়াতেই। আপনি একটি আধার নম্বর পেয়ে গেলে তা দিয়ে কি করতে পারেন আর কি করতে পারেন না সেটা আপনার ব্যাপার। আপনি না পারলেও যারা দুর্নীতিকে লিগালাইজ করতে সচেষ্ট তাদের কী রকম সুবিধা হবে বুঝতে পারছেন নিশ্চয়? এবারে আপনি আরেক ধাপ এগিয়ে ভাবুন, সাধারণ নির্বাচনের সাথে আধার প্রক্রিয়া যদি যুক্ত হয়?
আর কিছুদিনের মধ্যেই আধার নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেবে সুপ্রীম কোর্ট। আমাদের অনেকেই ফেসবুক, হোয়াটস আপ, ট্যুইটার এসব ব্যবহার করি। আমরা মনে করি আমাদের সমস্ত তথ্যই তো বাইরে আছে , তাহলে আর অসুবিধা কোথায় আধারে! কিন্তু না আধারের সাথে এগুলোর একটা মৌলিক তফাৎ আছে। আপনি আমি ইচ্ছে করলে এই সোশ্যাল মিডিয়া গুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারি , কিন্তু আধারের জাঁতাকল থেকে বেরোতে পারবো না । আপনি হয়তো ভাবছেন আধার এবং ভোটার কার্ড সংযুক্ত করা হলে ভালই হবে, সমস্ত ভুয়ো ভোটার বাদ যাবে, রিগিং বন্ধ হবে। কিন্তু সত্যি কি তাই হবে? আসুন দেখে নিই ভোটার কার্ড এবং আধার যোগ করলে কি অসুবিধা হবে।
আধার কোনো পরিচয়পত্র নয় কারন ইউডিএআই নিজে একটি আর টি আই-তে স্বীকার করেছে যে কোনো একটি আধার নম্বর তুললে সেটার বায়োমেট্রিক্স যে সেটারই তা প্রমাণিত হয় না। ধরা যাক যদি আপনার আধার নম্বর যে আপনার হাতের ছাপের সাথে যুক্ত তা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তাহলে কি করে আধারকে পরিচয়পত্র হিসেবে বলা যায়? এবার ধরুন ভোটার কার্ডের সাথে আধার যুক্ত করা নিয়ে যদি কথা বলতে হয় তাহলে কি হবে?
এরমধ্যেই ৪৯০০০ টি আধার এনরোলমেন্ট সেন্টার বাতিল করা হয়েছে ২০১৭ সালে, বিভিন্ন অস্বচ্ছতার কারণে। তার মানে ৪৯০০০x১x৩৬৫x৫ বছরে কত গুলো ভুল আধার আছে? দিনে ১ টা করে ধরলে কত হয়? আচ্ছা, এর ৫০ শতাংশ কত হয়? আচ্ছা বাদ দিন ১০ শতাংশও যদি ভুল থাকে তাহলে কত হয়?
৮৯ লক্ষ ৪২ হাজার ৫০০ ভুয়ো আধার কার্ড এই মুহুর্তে আধারের ডেটাবেসে জ্বলজ্বল করছে। এই বিপুল সংখ্যক ভুয়ো আধার কার্ড যদি ভোটার কার্ডে যুক্ত হয় তাহলে কোনো দিন কি নরেন্দ্র মোদী বা এই ধরনের কোনো শক্তিকে হারানো সম্ভব ?
আজকে গুজরাটের এক সাংবাদিক একটা খবরে প্রকাশ করেছেন যে ৩১ কোটি ভোটার কার্ডের সাথে আধার যুক্ত হয়ে গেছে , কে যুক্ত করলো? কে বললো যুক্ত করতে? আমার আপনার বদলে যদি ওই ৮৯ লক্ষ আধার যুক্ত হয় তাহলে কি কোনোদিনও নরেন্দ্র মোদী দের হারানো সম্ভব ?
এরপর ধরা যাক আপনার ফেসবুক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি পরিচিত মোদী-বিরোধী, তাহলে আপনার নম্বরটা সেদিনকার জন্য সুইচ অফ করা কি খুব কঠিন কাজ ? কারণ একটা নম্বরকে মুছে দেওয়া সহজ একটা মানুষকে নয়। ওরা চাইছে আমাদের কে নম্বরে পরিণত করতে তাহলেই এটা সম্ভব। আপনি একটা নম্বর হয়ে গেলে প্রতিবাদ করবেন কি করে? কারন এটার তো কোনো প্রমাণ নেই যে আপনি আপনিই। তাই ভোটার কার্ডের সাথে আধার যুক্ত হলে আজকে সামনে নরেন্দ্র মোদী কিন্তু পিছন থেকে অন্য কেউ কলকাঠি নাড়বে।
আসলে আধার হচ্ছে কেমব্রীজ অ্যানালিটিকার দেশীয় ভারসান। আপনার ফেসবুক, ট্যুইটার, হোয়াটস আপ সমস্ত কিছু মাপা হচ্ছে, এরপর আপনাকে সুইচ অফ করে দেওয়াটা সময়ের অপেক্ষা, কারণ আধার কোনো পরিচয়পত্র নয় এটা একটা সংখ্যা ... সুতরাং বিশেষ বিশেষ দিনে আপনাকে অফ করে দিতে কোনো অসুবিধাই নেই।
আধার ধ্বংস করুন। না হলে আমরা মরবো।