প্রতিবেদন
অনাদায়ী ঋণ ও ক্রোণি পুঁজিবাদ—একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

সম্প্রতি বিজয় মাল্য ও তার আগে রঘুরাম রাজনের নোট জাতীয় রাজনীতিতে বেশ হৈ চৈ ফেলেছে। লন্ডনে পালিয়ে আসার আগে সংসদ ভবনে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেঠলির সঙ্গে মাল্যের সাক্ষাৎ ও কথোপকথন এবং 'হাই প্রোফাইল' ব্যক্তিবর্গদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে ওই সমস্ত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে, অন্তত এক-দুজনের বিরুদ্ধে রাজনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ পাঠানো সত্ত্বেও কিছু না হওয়ার অভিযোগ নিয়ে উঠেছে অনেক প্রশ্ন, বিতর্ক ও সন্দেহ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে নিঙড়ে, শুষে ঋণ পরিশোধ না করে গোটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাই আজ দাঁড়িয়েছে অতলস্পর্শী বিরাট এক খাদের মুখে।

আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮র সালে লেমান ব্রাদার্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহত্তম বিনিয়োগকারী ব্যাঙ্ক তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে গোটা দুনিয়ায় বিরাট এক আর্থিক বিপর্যয়ের সূচনা ঘটায়। অকল্পনীয় ঋণের বোঝায়, সাব প্রাইম মর্টগেজের পর্বতপ্রমাণ ভারে ধসে পড়ল বিপুল-বিশাল এক ফিনান্সিয়াল সাম্রাজ্য—যা পূর্বেকার ওয়ার্ল্ডকম এবং এনরনের মতো দৈত্যাকৃতি সংস্থাগুলোর পতনের তুলনায় অনেক বেশি, ইতিহাসে বৃহত্তম। তদানীন্তন ভারতীয় রাজনীতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করা নয়া আর্থিকনীতির পূজারিদের মধ্যে এমন একটা বিভ্রম ছিল যে ওই সর্বপ্লাবি সংকট থেকে ভারত পরিত্রাণ পাবে, কারণ বেশ কিছু রক্ষাকবচের সুবাদে সে সুরক্ষিত। কিন্তু ২০০৬-২০০৮ সালে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির পর্বকালে, অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করে অনেকগুলো পরিকাঠামোগত ক্ষেত্র বিশেষ করে বিদ্যুৎ প্রকল্পে অযৌক্তিকভাবে অতি উৎসাহে ঢালাও ঋণ দিতে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো। ২০০৮-র পর থেকে বিশ্বব্যাপী মন্দার কবলে অর্থনীতির যখন নাভিশ্বাস উঠছে তখন থেকে ঋণ পরিশোধের প্রবণতা কমতে থাকে, ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে অনাদায়ী ঋণের লাগামছাড়া মাত্রা। বর্তমানে যা সরকারিভাবে ১১ লক্ষ কোটি টাকার অঙ্কে ঘোরাফেরা করছে। গোটা ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অনাদয়ী ঋণের বিপুল বিশাল বোঝা সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ!

একটু পিছনের দিকে চোখ রাখা যাক! ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬-য়, ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস আর টি আই-র ভিত্তিতে পাওয়া এক রিপোর্ট প্রকাশ করে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে আর টি আই-র মাধ্যমে জানা যায়, ২০১২-র মার্চ পর্যন্ত অর্থবর্ষে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫,৫৫১ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৫-র মার্চ পর্যন্ত তা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫২,৫৪২ কোটি টাকায়! একদিকে, অনাদায়ী ঋণের ভারে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলোর দেহে বিপুল তহবিল জোগানোর সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি চলতে থাকে অপরিশোধযোগ্য ঋণ মুকুবের বিচিত্র সন্দেহজনক খেলা। আরটিআই-র উত্তরেই শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানায় যে, স্রেফ ২০১৩ থেকে ২০১৫-র পর্বকালে বিভিন্ন কর্পোরেটদের কাছ থেকে বকেয়া অনাদায়ী ঋণের মধ্যে ১.১৪ লক্ষ কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো মকুব করে দিয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর সুপ্রীম কোর্ট স্বত:প্রণোদিত হয়ে মামলা করে এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে হলফনামার মাধ্যমে জানতে চায় ''৫০০ কোটি টাকার অধিক যে সমস্ত ঋণ খেলাপি টাকা পরিশোধ না করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে তার নামের তালিকা জমা দিতে।'' সুপ্রীম কোর্ট চাঁচাছোলা ভাষায় মন্তব্য করে, ''রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া রাখাটা এক বিরাট জোচ্চুরি''। শুধুমাত্র ২০১৫ সালেই, ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ৪০ হাজার কোটি টাকার বকেয়া অনাদায়ী ঋণ মকুব করেছে। ওই ঋণ ফেরত পাওয়া যাবে না বুঝেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো ঢালাও ঋণ দিচ্ছে। তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ প্রাক্তন সলিটিটার জেনারেল রঞ্জিত কুমারকে এই প্রশ্ন করেন। শীর্ষ ব্যাঙ্ক নির্দেশ দেয় ৫০০ কোটি টাকার অধিক ঋণ খেলাপিদের বিস্তৃত তালিকা জমা দিতে। এর প্রত্যুত্তরে শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানায় যে, ঐ ব্যাপারে ব্যাঙ্কের নীতিসমূহ ঠিক কী আছে, তা জেনে বুঝেই তালিকা জমা দেওয়া হবে। কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট ওই অজুহাতও খারিজ করে দেয়। রীতিমত ভৎর্সনা করেই সুপ্রীম কোর্ট বলে, ''একদিনেই আপনারা হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া ঋণ মুকুব করে দিচ্ছেন। ওই টাকা আপনাদের উদ্ধার করতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা ফি বছর আপনারা মকুব করছেন, তারপর সেই টাকা উদ্ধারের জন্য আরও বেশি টাকা ব্যয় করছেন।'' আজকে রঘুরাম রাম রাজনের নোট নিয়ে হৈ চৈ হচ্ছে। কিন্তু ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসেই তিনি প্রথম দশজন ঋণ খেলাপিদের নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে ''যথাযথ ব্যবস্থা'' গ্রহণের সুপারিশ করেন। এই সংবাদ ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত হয়। নীরব মোদী, মেহুল চোক্সী, বিজয় মাল্য নিয়ে অনেক হৈ চৈ হচ্ছে। কিন্তু ভুললে চলবে না যে এদের পাশাপাশি গুজরাত নিবাসী উইনসম ডায়মণ্ডের মালিক যতীন মেহতার কথা। একাধিক ব্যাঙ্কের কনসোর্টিয়াম থেকে প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা হাতিয়ে দেশান্তরী হয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে বর্তমানে তিনি দিব্যি নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করছেন। ভারতে ব্যাঙ্কগুলোর কাছ থেকে ঋণ খেলাপের ইতিহাসে এটাই নাকি সর্বোচ্চ! পিএনবি-র একাধিক শাখা থেকে সে হাতিয়েছে ১৭০০ কোটি টাকা। সিবিআই-এর তরফ থেকে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের একাধিক বোর্ড সদস্যকে বারংবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় যে উক্ত হীরা ব্যবসায়ীর সংস্থায় নানান অনিয়ম, সন্দেহজনক লেনদেন ও আচার-আচরণ এমনকি আর্থিক ক্রমঅবনমনের লক্ষণগুলো প্রকটভাবে ফুটে ওঠার পরও কেন ঋণদান অব্যাহত রাখা হয়। নীরব মোদী, বিজয় মাল্য, যতীন মেহতার মতো ব্যবসায়ীরা বহু আগে থেকেই হয় ব্রিটেন অথবা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে অবাধেই সেখানকার ব্যাঙ্কে লক্ষ কোটি কোটি টাকা পাচার করতেন। এমনকি একটা পর্যায়ে ইডি-ও ওই সমস্ত সংস্থার কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্ত বা নজর রাখতে শুরু করে। যে তদন্তকারী সংস্থাগুলো ভারতে 'সন্ত্রাসবাদী' 'দেশদ্রোহী' বা প্রধানমন্ত্রীকে 'হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত' থাকার অভিযোগে তড়িৎগতিতে তৎপরতা দেখিয়ে যথেচ্ছ ধরপাকড় করতে পারদর্শিতা দেখিয়েছে, তাদের কাছে এতকিছু তথ্য থাকা সত্ত্বেও দিনদুপুরে নীরব মোদীরা দেশ ছেড়ে পালালেন সমস্ত আইন কানুন ও গোয়েন্দা সংস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। আর, এটা আজ আর কারুর কাছে গোপন নেই যে ললিত মোদীকে পালাতে ও লন্ডনে নিশ্চিত আশ্রয় পেতে সুষমা স্বরাজ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে কীভাবে সাহায্য করেছিলেন।

২০১২-র আগস্টে ক্রেডিট স্যুইজীর একটি অনুসন্ধানকারী দল প্রথম দেখায় যে মাত্র ১০টি কর্পোরেট ঘরানা ভারতীয় ব্যাঙ্কের সমগ্র ঋণপ্রদানের ১৩ শতাংশ কুক্ষীগত করেছে। আর বিপুল পরিমাণে ওই ঋণ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো থেকে। এই ১০টা কর্পোরেট সংস্থার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—আদানী, এসার, জিভিকে, জয়পিই, জেএসডব্লিউ, ল্যাঙ্কো, রিল্যায়েন্স এডিএজি, বেদান্ত গ্রুপ প্রমুখ। ২০০৬-০৭ থেকে ২০১১-১২-র সময়সীমার মধ্যে ব্যাঙ্কগুলো থেকে পাওয়া ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয় আর সমগ্র ভারতীয় ব্যাঙ্কের নেটওয়ার্থের সাপেক্ষে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯৮ শতাংশ! মজার ব্যাপার হল, ওই কর্পোরেটগুলোর মধ্যে বেদান্তর মতো সংস্থাও রয়েছে, যারা প্রকৃত অর্থে ভারতীয় নয়। লন্ডনে সদরদপ্তর ও সেখানকার স্টক এক্সচেঞ্জে নাম নথিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বেদান্ত বিপুল পরিমাণে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলো থেকে ঋণ সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাগুলো ভোগ করত এবং ভারত-অস্ট্রেলিয়া সহ অন্যান্য দেশে খনি অধিগ্রহণ করত।

ব্যাঙ্কের অনাদয়ী ঋণ এবং সাঙ্যাততন্ত্র বা ক্রোণি পুঁজিবাদ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ! স্রেফ নীরব মোদী, যতীন মেহতারা পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে আপাদমস্তক শুষে ছিবড়ে করার পর বর্তমান অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সকার পি এন বি-কে বাঁচাতে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনর্লগ্নি করেছে। আর গত এগারো বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে পুনর্লগ্নির পরিমাণ ২ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা! এ বছরের বাজেটে গ্রামোন্নয়ন খাতে মোট যত টাকা বরাদ্দ হয়েছে, উল্লিখিত অঙ্কটি তার দ্বিগুণেরও বেশি! কর বাবদ দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছ থেকে সরকারের কোষাগারে যে টাকা জমা পড়ে, সেখান থেকেই সরকার টাকা দিচ্ছে। মোদী-জেটলির পকেট থেকে নয়। লক্ষ-কোটি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে পরিশোধ না করে নীরব মোদীরা চম্পট দেয়, আর সরকার রাজকোষের টাকায় তা পূরণ করে। এটাকে মুখ্য অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ সুব্রহ্মমনিয়ান বলেছিলেন, ''এভাবেই তো পুঁজিবাদ সচল থাকে।''

অনাদায়ী ঋণ উদ্ধার করার জন্য ঋণ পুনরুদ্ধার ট্রাইব্যুনাল বা ডেট রিকাভরি ট্রাইব্যুনালগুলো যে কতটা অকার্যকরী তা রঘুরাম রাজনের পেশ করা এস্টিমেট কমিটির নোটেই ফুটে উঠেছে। তিনি লিখেছেন যে, ২,৩৬,৬০০ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণের মধ্যে ২০১৩-১৪ সালে উদ্ধার হয়েছিল নগণ্য মাত্র ৩০৫৯০ কোটি টাকা! এই অকার্যকরী ঋণ পুনরুদ্ধারের বিধি ব্যবস্থা উল্টে প্রমোটারকে কি বিপুল ক্ষমতা দিয়েছিল, তাও উল্লিখিত হয়েছে ওই নোটে। ঋণখেলাপি কোন প্রমোটারকে ঋণ না দিলে সে ব্যাঙ্ককে কিভাবে হুমকি দিত, তার বিবরণও তিনি দিয়েছেন। মুনাফার বেসরকারিকরণ এবং লোকসানের রাষ্ট্রায়ত্তকরণের মাধ্যমে গোটা ভারতীয় অর্থব্যবস্থা ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল সুযোগ সুবিধে আদায় করেছে সরকার-আমলা-ঘনিষ্ঠ মুষ্টিমেয় কর্পোরেট!

নয়া উদার অর্থনীতি এইভাবেই কাজ করে। ব্যবসা-বাণিজ্য-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে পুরোপুরি মুক্ত বাজারের কোলে সঁপে দেওয়ার নিদান অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা বহু দশক ধরে শুনিয়ে আসছেন। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতি যখন নিদারুণ সংকটের আবর্তে হাসফাঁস করতে থাকে তখন সেই রাষ্ট্র ও সরকারই এগিয়ে আসে 'বেল আউট'-এর বিপুল তহবিলের পুষ্পার্ঘ নিয়ে। লেমান ব্রাদার্সের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কী অকল্পনীয় অঙ্কের বেল আউট নিয়ে এগিয়ে আসে তা সকলেরই জানা। শুধু আমেরিকা নয়, সেই সময়ে গোটা বিশ্বে সমস্ত সরকারগুলোই ওই পথের অনুসারী হয়। ভারতীয় শিল্পপতি ও কর্পোরেটদের স্বার্থে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকার ১,৮৬,০০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়। ভারতীয় অর্থনীতির শ্লথগতি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা—ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বর্তমান গুরুতর সংকটের পেছনে এই দ্বৈত কারণকে উপেক্ষা করে রাজনের সময়ে গঠিত নায়েক কমিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণে জোরালো সওয়াল করেছে, যাতে সমর্থন জানিয়েছিল রঘুরাম রাজন। সেই বেসরকারীকরণের দূরগামী লক্ষ্যে এখন শুরু হয়েছে ব্যাঙ্কের সংযুক্তি! আন্তর্জাতিক মানের বড় ব্যাঙ্ক তৈরির দিকে এখন চোখ রেখেছে নরেন্দ্র মোদী। লক্ষ্য, আগামীদিনে সংযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হবে ৩-৪টি বিশাল ব্যাঙ্ক, যারা আয়তন ও গুণমানে পাল্লা দেবে ব্যাঙ্কিং বহুজাতিকদের সঙ্গে। ইতিমধ্যে, স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে মেশানো হয়েছে সাত সহযোগী ব্যাঙ্ক ও ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ককে। এবার ব্যাঙ্ক অফ বরোদা-বিজয়া ব্যাঙ্ক এবং দেনা ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব হাজির করেন অর্থমন্ত্রী। আগামীদিনে এক ছাতার তলায় আনা হবে ইণ্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, ইণ্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক ও সিণ্ডকেট ব্যাঙ্ক। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযুক্ত করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে পাঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাঙ্কের। বলাই বাহুল্য, ভি আর এসের মাধ্যমে ব্যাপক মাত্রায় ছেঁটে ফেলা হবে বর্তমান কর্মীসংখ্যা। স্টেট ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়ায় যা চালু হয়ে গেছে।
ব্যাঙ্কের কর্পোরেটাইজেশন, অর্থনীতির চূড়ান্ত ফিনান্সিয়ালাইজেশনের হাত ধরে মোদী আমলের ক্রোণি পুঁজিবাদ বলিষ্ঠ পা ফেলে এগিয়ে যাওয়ার নীল নকশা কষছে। গোটা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

খণ্ড-25
সংখ্যা-30