শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত তৃণমূল
TMC is steeped in corruption

পশ্চিমবাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির বিচার চলাকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন যে, তাঁর প্রত্যাশা, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী হলেও যিনি এরআগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন) হয় নিজেই মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন, আর তা না হলে মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে যেন তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) অফিসে নিয়োগ সম্পর্কিত সংরক্ষিত নথি নষ্ট করা হতে পারে, এই আশঙ্কায় বিচারপতির নির্দেশে এসএসসি’র ভবন বুধবার ১৮ মে মাঝরাত থেকে পাহারা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ। এসএসসি’র সচিব পরদিন তাঁর অফিসে ঢুকতে গেলে বাধা পেয়ে তাঁকে ফিরে আসতে হয়। ডেটা রুম বা তথ্য সংরক্ষণের কক্ষ সিল করে দিচ্ছে সিআরপিএফ। বিচারপতির নির্দেশে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে শুধু শিক্ষিকা পদ থেকে অপসারিত করলে ও পাওয়া সমস্ত বেতন ফেরত দিলেই চলবেনা, যে স্কুলে কাজ করতেন, তিনি বা তাঁর কোনো আত্মীয় সেই স্কুলের গণ্ডি মাড়াতে পারবেন না। নিয়োগ দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে যে তদন্ত ও বিচার চলছে, এগুলো সেখান থেকে উঠে আসা তিনটে খণ্ডচিত্র মাত্র। চূড়ান্ত অমর্যাদাকর, কলঙ্কজনক, লাঞ্ছনাময় এই নির্দেশগুলো আদালত থেকে ঠিকরে গিয়ে বিঁধছে তৃণমূল দল ও সরকারের গায়ে। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি এখন এতটাই খোলসা হয়ে সামনে এসেছে যে এই অবমাননাগুলোকে মুখ বুজে হজম করা ছাড়া মমতা ব্যানার্জীদের কাছে আর কোনো বিকল্প থাকছে না।

কলকাতা হাইকোর্টের হরিশ ট্যান্ডন ও রবীন্দ্রনাথ সামন্তর ডিভিসন বেঞ্চ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তের ভার দেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটির ওপর। সেই কমিটি গত ১২ মে আদালতের কাছে তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে এবং সেই রিপোর্টে দুর্নীতির স্বরূপ ও ছক অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে বিধৃত হয়েছে। রিপোর্ট জানিয়েছে, অসৎ পথে নিয়োগের জন্য একটা নকশা বানানো হয়েছিল আর তার কেন্দ্রে ছিল একটা কমিটি যেটা তৈরি হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে। এই কমিটির সদস্যরা ছিলেন এসএসসি’র পূর্বতন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওএসডি (অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি) প্রবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্সোনাল সেক্রেটারি সুকান্ত আচার্য, স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ডাইরেক্টর অলোক কুমার সরকার ও ঐ ডিপার্টমেন্টের ল অফিসার তাপস পাঁজা। এর নাম দেওয়া হয়েছিল উপদেষ্টা কমিটি এবং তা গঠনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাজে “তদারকি করা, নিয়মিত নজরদারি চালানো এবং তাকে পরিচালিত করা”। ঐ কমিটি কেমন করে মেধা তালিকায় নাম না থাকা এবং পিছনের দিকে থাকা প্রার্থীদের তালিকার ওপরে তুলে নিয়ে এসেছিল, সে কথায় আসার আগে সংক্ষেপে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতিটা বুঝে নেওয়া যাক। এসএসসি পরীক্ষা গ্ৰহণ করে (লিখিত এবং পার্সোনালিটি টেস্ট উভয়ই) মেধা তালিকা তৈরি করে। সেই মেধা তালিকার ভিত্তিতে তারা নিয়োগের সুপারিশ পাঠায় এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপারিশগুলো নিয়ে নিয়োগপত্র দেয়, যার ভিত্তিতে সফল প্রার্থীরা নিয়োজিত হন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গড়া উপদেষ্টা কমিটি যেটাকে তাদের কৌশলের প্রধান অঙ্গ করেছিল তা হল আরটিআই বা তথ্যের অধিকার আইন। এই আইনের আশ্রয় নিয়ে অসফল বা পিছনের দিকে থাকা প্রার্থীদের উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটের পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতে বলা হত। এবং উত্তরপত্র বার করে তাতে নম্বর বাড়িয়ে আবেদনকারীদের মেধা তালিকার ওপরের দিকে নিয়ে আসা হত। আর এই কাজটা সাঙ্গ হবার পর অপরাধের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করতে উত্তরপত্রগুলোকে পুড়িয়ে বা অন্য উপায়ে নষ্ট করা হত। বাগ কমিটির অন্যতম সদস্য অরুণাভ ব্যানার্জী জানিয়েছেন, “মূলত, আরটিআই’কে কিছু প্রার্থীর নম্বর বাড়ানোর অস্ত্র হিসাবে কাজে লাগানো হয়েছিল, এবং সেটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা ওএমআর শিটগুলো নষ্ট করে দিতেন”। তদন্ত করতে গিয়ে বাগ কমিটির সদস্যরা নিয়োজিত কিছু প্রার্থীর সঙ্গে কথাও বলেন। আর সেই আলোচনার ভিত্তিতে অরুণাভ ব্যানার্জীর উপলব্ধি হল, “কিছু প্রার্থী বারবারই বলেছেন যে তাঁরা কত নম্বর পেয়েছেন সেটা তাঁরা জানতেন না। কিন্তু তাঁরা কমিটির কর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ওএমআর শিটের পুনর্মূল্যায়নের ভিত্তিতে লিখিত পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে মেধা তালিকায় স্থান ওপরের দিকে আনার জন্য আবেদন করতেন।” এসএসসি’র বিধিতে পুনর্মূল্যায়নের কোনো কথাই নেই এবং গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া এভাবে চালানো হয়েছে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এক অবৈধ কমিটির মাধ্যমে। এছাড়া, যারা পরীক্ষাতেই বসেনি, তাদের নামও কোনো যাদুবলে মেধা তালিকায় সফলদের মধ্যে ঢুকে পড়ত। বাগ কমিটির রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তৃতীয় শ্রেণীতে অবৈধ পথে নিয়োগের সংখ্যাটা ৩৮১, যারমধ্যে ২২২ জনের নাম কোনো তালিকাতেই ছিল না। আর চতুর্থ শ্রেণীর ক্ষেত্রে ঐ ধারায় নিয়োগ হয়েছে ৬০৯ জন।

শিক্ষক নিয়োগে কতজনের ক্ষেত্রে ভ্রষ্টাচারের পথ অনুসৃত হয়েছিল সে তথ্য পাওয়া না গেলেও কিছু নিদর্শন কিন্তু সামনে এসেছে। যোগ্যতা অর্জন না করেও নিয়োজিত হওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর বরখাস্ত হওয়ার কথা শুরুতেই উল্লিখিত হয়েছে। সুমনা লায়েক এবং নাসরিন খাতুন যোগ্যতা অর্জন করে মেধা তালিকায় স্থান পেলেও চাকরি পাননি, এবং এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। প্যানেলভুক্ত না হয়েও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্কুলে ছ’জন গণিত শিক্ষক নিয়োজিত হন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের নিযুক্তিকে বাতিল করার নির্দেশ দেন।

এরআগে উল্লিখিত হয়েছে যে, নিয়োগের জন্য এসএসসি’র সুপারিশ এবং তার ভিত্তিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দেওয়া নিয়োগপত্র দরকার। সেটা কিভাবে হত? এই ব্যাপারে প্রভাবশালী ভূমিকা ছিল উপদেষ্টা কমিটির শান্তিপ্রসাদ সিংহ’র। তিনি এসএসসি’র প্রোগ্ৰাম অফিসার সমরজিৎ আচার্যকে দিয়ে ভুয়ো সুপারিশপত্র ছাপাতেন। সেইসব সুপারিশপত্র যেত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পূর্বতন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে যিনি তাঁর টেকনিক্যাল অফিসার রাজেশ লায়েককে দিয়ে নিয়োগপত্র তৈরি করাতেন এবং সেগুলো আবার পাঠাতেন শান্তিপ্রসাদ সিংহ’র কাছে। বাগ কমিটির রিপোর্টে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত বলে ১১ জন এসএসসি অধিকর্তার নাম রয়েছে। এইভাবে দেখা যাচ্ছে, এসএসসি ঘোষিতভাবে স্বশাসিত সংস্থা হলেও সেটা ছিল শুধু নামে। তা কব্জা হয়ে গিয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বানানো উপদেষ্টা কমিটির হাতে যারা শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগকে পরিণত করেছিল বাঁহাতি রোজগারের কদর্য কারবারে।

টাকা ফেললে পশ্চিমবাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্লভ না হওয়ার খবর রাজ্যের চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং বিভিন্ন জেলাতে এই নিয়োগের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছিল তৃণমূলের নেতারা ও দল ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। কোন পদের দর কত ছিল, সে খবরও সংবাদপত্রে বেরিয়েছে। প্রাথমিকে নিয়োগের দর ছিল ১২-১৩ লক্ষ, উচ্চ প্রাথমিকে ১৮ লক্ষ, নবম-দশমে ১৬ থেকে ২৫ লক্ষ, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মী হিসাবে নিয়োগের জন্য ১২ লক্ষ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী হওয়ার জন্য ১০ লক্ষ। শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগের নামে লক্ষ-লক্ষ টাকা তুলে সাধারণ মানুষদের প্রতারিত করার জন্য তেহট্ট থেকে গ্ৰেপ্তার হয়েছেন প্রবীর কয়াল। পুলিশী জেরায় সেই টাকা তিনি ‘দাদা’ তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহাকে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাপস সাহা প্রবীর কয়ালের এই বিবৃতিকে ‘মিথ্যা কথা’ বলে নিজেকে নির্দোষ বলে চালাতে চাইলেও সেই অস্বীকার বেশি ভরসা জাগায় না। একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচুর টাকা তোলার দুর্নীতি মামলায় গ্ৰেপ্তার হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ঝিলু-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান শেখ হেকমত আলি। কোলাঘাটের অতনু গুছাইত টাকার বিনিময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কয়েকজনকে চাকরিতে ঢুকিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে এবং অনেকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হওয়ায় এখন টাকা ফেরতের দাবি জানাচ্ছেন। নিজেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করা অতনু গুছাইত এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে খবর। আবার ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত যিনি তৃণমূলের মন্ত্রী ছিলেন সেই উপেন বিশ্বাসের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট জানিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগণার বাগদার জনৈক ‘রঞ্জন’ লক্ষ-লক্ষ টাকার বিনিময়ে বেশ কিছু নিয়োগ ঘটাতে পারতেন। উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে লেনদেন হত, তার হিসাবের খাতা থাকত বলেও কেউ-কেউ জানিয়েছেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, এই নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কেউ যদি বলেন যে, দলের ওপর তলায় এটা একেবারেই অজানা ছিল, সেকথা বিশ্বাস করতে গেলে যুক্তি বোধ সবকিছুকে তুলে রাখতে হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির কাঁটায় বিদ্ধ হয়ে মমতা ব্যানার্জী কখনও বলছেন — কুকর্মকারীদের মানুষ ঘৃণা করে, আর “আমিও তাদের ভালোবাসি না”। আজ যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে তাঁর বিরাগ বোধ হয়, তবে আমাদের মনে না পড়ে পারেনা যে, একসময় তিনি টিএমসি’র দু’নম্বর নেতা ছিলেন, দলে মমতার পরই ছিল তাঁর স্থান। মমতা ব্যানার্জী কখনও আবার বলছেন, “বিজেপি কয়েকটা কেন্দ্রীয় সরকারি এজেন্সিকে দিয়ে দেশে তুঘলকি কাণ্ড চালাচ্ছে। আমাকে ভোটে হারাতে পারেনি বলেই এরা এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে।” তিনি একবার নিয়োগ দুর্নীতিতে দলের নেতারা যুক্ত থাকায় তাঁর ক্ষোভ দেখাচ্ছেন, আবার সেটাকে ভিত্তিহীন ব্যাপার — শুধুই প্রতিশোধের আখ্যান বলে দেখানোর চেষ্টা। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সামনে এসেছে, সেগুলো অকাট্য বলেই প্রতিপন্ন হচ্ছে এবং মমতা ব্যানার্জী কেন, কারুর পক্ষেই সেগুলোর অস্বীকার করা সম্ভব নয়। নিজেদের দিকে ধেয়ে আসা সমালোচনাকে আটকাতে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো মুখপাত্র আবার মধ্যপ্রদেশের ভ্যাপম কেলেঙ্কারির কথা তুলছেন। ভ্যাপম বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ এবং ডাক্তারি পড়ার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়াকে কেন্দ্র করে বিরাট আকারের কেলেঙ্কারি যাতে দুর্নীতির পরিমাণ শতশত কোটি টাকা ছিল, তার সঙ্গে যুক্ত বহু সাক্ষীর সন্দেহজনক মৃত্যু ঘটেছিল এবং এমনকি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নামও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিল। কিন্তু সেই দুর্নীতি থেকে শিবরাজ সিং চৌহানের পার পেয়ে যাওয়া এবং সেখানে বিজেপি’কে আদালতের কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে না হওয়াটা পশ্চিমবাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির লঘু হয়ে পড়ার কারণ হতে পারে না। বিজেপি এই দুর্নীতি থেকে ফায়দা তোলার চেষ্টা করলে তার সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে হবে। এরই সাথে দুর্নীতি ও তৃণমূলের একাকার হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটাকে নিয়েও প্রচার অভিযান নামাতে হবে। তৃণমূল পশ্চিমবাংলায় ক্ষমতায় আসার পরপরই একগুচ্ছ চিটফান্ড দুর্নীতির উন্মোচন ঘটেছিল যাতে নিঃস্ব হতে হয়েছিল সাধারণ মানুষদেরই, আর মমতা ব্যানার্জী তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন “যা গেছে তা যাক” বলে। আজ কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআই’এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে। কয়লা পাচার দুর্নীতিতে আরও জড়িত রয়েছে তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্র ও তার ভাই বিকাশ মিশ্র। অনেক দিন এড়িয়ে চলার পর অনুব্রত মণ্ডলও সিবিআই’এর কাছে হাজির হতে বাধ্য হলেন। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন তৃণমূল মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্ন সিবিআই তদন্তের মুখে। এছাড়া, সিন্ডিকেট তোলাবাজিতে জড়িয়ে আছেন তৃণমূলের ছোট-বড় অনেক নেতাই। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন বঞ্চিত শিক্ষক প্রার্থীরা। তাঁদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ কেলেঙ্কারি আজ বিপুল মাত্রায় উন্মোচিত। শিক্ষক প্রার্থীদের এই আন্দোলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বামেদেরই এই কাণ্ডকে ধরে তৃণমূলের দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকার স্বরূপের উন্মোচন ঘটাতে হবে। ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র কাছে ১৮টা আসন হারিয়ে মমতা ব্যানার্জী ‘কাটমানি’ ফেরত অভিযান শুরু করেছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে তৃণমূল — এই আখ্যান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জী কি ঐ ধরনের কোনো উদ্যোগের পথে আবার যাবেন? তা যদি হয়, সেটার প্রহসনে পরিণত হওয়া নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকতে পারে না।

- জয়দীপ মিত্র

খণ্ড-29
সংখ্যা-20