১৭ জানুয়ারি জেলায় জেলায় ডেপুটেশন বিক্ষোভের ডাক
সবং সজনীকান্ত কলেজের অধ্যাপিকা পাপিয়া মাণ্ডি জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়ছেন। তাঁর লড়াইকে কেন্দ্র করে কয়েকটি সংগঠন ‘প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চ’ গঠন করেছে। গত ৬ ডিসেম্বর ২০২১ মঞ্চের পক্ষ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ধারাবাহিক প্রচার আন্দোলন চালিয়ে ৯ জানুয়ারি মেদিনীপুর শহরের প্রান্তে আদিবাসী গ্রামের পাশে অনুষ্ঠিত হল কনভেনশন।
৯ জানুয়ারি ডোমবারিবুরু শহিদ দিবস। ধরতি আবা বিরসা মুণ্ডার ডাকে উলগুলানের চূড়ান্ত পর্বে “আবুয়া দিশম, আবুয়া রাজ” শ্লোগান তুলে জমায়েত হওয়া আদিবাসীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ। কয়েক হাজার আদিবাসী প্রাণ দিয়েছিলেন ডোমবারি পাহাড়ে। এই বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে কনভেনশন শুরু হয়।
কনভেনশনে পেশ করা প্রস্তাবনার মূল বিন্দুগুলি সংক্ষেপে নিম্নরূপ।
উপরোক্ত এই প্রস্তাবনার ওপর এবং আশু কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনার আহ্বান করা হয়। মোট ১১ জন বক্তব্য রাখেন। আগামী ১৭ জানুয়ারি রোহিত ভেমুলার শহীদ দিবসে জেলায় জেলায় ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া বিকাশ ভবনে শিক্ষা দপ্তর, রাজ্য মহিলা কমিশন, রাজ্য আদিবাসী বিষয়ক পরিষদ ও কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রকে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবং মামলার প্রথম শুনানির দিন আগামি ৪ ফেব্রুয়ারি গণনজরদারি জারি রাখতে হবে।
কনভেনশনে মোট ৫৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য রাখেন মনু হাঁসদা, লবান হাঁসদা, সুশীল চক্রবর্তী, তপন মুখার্জী, পর্ণেন্দু মান্ডি, বিনোদ বাস্কে, ঝর্ণা আচার্য, লক্ষ্মীমণি মান্ডি, মলয় তেওয়ারি, শৈলেন মাইতি প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন আইসা রাজ্য সম্পাদক স্বর্ণেন্দু মিত্র। বক্তাদের বক্তব্যে সামগ্রিকভাবে আদিবাসীদের অধিকার ও স্বায়ত্ততা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক জোরালোভাবে উঠে আসে। প্রাতিষ্ঠানিক অবমাননার ঘটনাগুলির সাথে সাথে জমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদের নানা ঘটনা চর্চায় আসে। কনভেনশন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল যে এলাকায় সেই কেরানীচটিতে আদিবাসীদের জমি রক্ষার দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন তপন মুখার্জী, যে লড়াই এখনও চলছে। দেউচা কয়লাখনি প্রকল্প ও ঠুড়গা বাঁধ প্রকল্পে আদিবাসী উচ্ছেদ ও বিপুল বনাঞ্চল ধ্বংসের প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠে আসে। সকলেই দেউচা প্রকল্প বাতিল করার দাবি তোলেন। ঠুড়গা প্রকল্প বিরোধী লড়াইয়ে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় সরকারের পক্ষে গেছে। এই প্রসঙ্গে ঝর্ণা আচার্য বলেন, ২০০৮ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করেছিল যে গ্রাম সংসদই গ্রামসভা হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ ২০০৬’র বনাধিকার আইনে প্রকল্প অনুমোদনে গ্রামের মানুষের অনুমতি নেওয়ার জন্য গ্রামসভার আয়োজন করার যে বিধান ছিল তাকে এড়িয়ে গিয়ে গ্রামসংসদের বকলমে প্রধানের অনুমতিকেই গ্রাহ্য করার নির্দেশিকা জারি করেছিল তৎকালীন রাজ্য সরকার। আজ সেই নির্দেশিকা উল্লেখ করে হাইকোর্ট রায় দিয়ে দিল যে ঠুড়গা প্রকল্পের জন্য সরকার যেভাবে প্রধানের দেওয়া অনুমতিপত্রকেই গ্রামের মানুষের অনুমতি হিসেবে গ্রহণ করেছে তা আইনসম্মত! পাপিয়া মান্ডির ছোট ভাই পর্ণেন্দু মান্ডি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসীদের গৌরবোজ্জ্বল অগ্রণী ভূমিকা এবং ইতিহাসে তা উপেক্ষিত থেকে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন। দিশম আদিবাসী গাঁওতার রাজ্য সভাপতি লবান হাঁসদা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পাপিয়ার রুখে দাঁড়ানো আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু আদিবাসীদের ওপর অন্যায় হলেই প্রতিবাদ করব অন্যক্ষেত্রে চুপ থাকব এমন হতে পারে না, আমরা সব অন্যায়ের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করব। আদিবাসীদের সমস্ত সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গকে দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে প্রতিবাদী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি, সংগ্রামী শক্তি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রাখেন। কনভেনশনের সিদ্ধান্তগুলিকে হাততালি সহ সমর্থন জানিয়ে, লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতিতে শ্লোগান তুলে সভা সমাপ্ত হয়।