সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চার ডাকে কৃষক জনতার পদযাত্রা, বিক্ষোভ
United Krishan Morcha

ঘটনাবহুল পরম্পরায় অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার ধান সংগ্রহ কেন্দ্র শুরু করতে রাজি হয়েছে। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য কৃষক বিক্ষোভে সামিল হয়েছে। কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা ও খাদ্য সরবরাহ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী প্রচন্ড বিক্ষোভের মুখে পড়ে কৃষকদের দাবি মানতে বাধ্য হয়েছেন। ২ অক্টোবর পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক সবাই স্থানীয় কৃষকদের প্রতিবাদ ও অবরোধের মুখে পড়েছিলেন। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ডাকা ঐ প্রতিবাদ বিক্ষোভ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল। ১১ অক্টোবর ধান সংগ্রহ শুরু করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে হাজার হাজার কৃষক অংশ নিয়েছিলেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীও ছাড় পাননি, কারনালে তার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছিল। ভিওয়ানিতে কৃষিমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছিল। সোনেপত, জিন্দ্ সিরসা, কুরুক্ষেত্র, পানিপত, আম্বালা, পঞ্চকুলা এবং আরো বহু জায়গায় প্রতিবাদ হয়েছে। ক্রুদ্ধ কৃষকরা কারনাল ও কৈথালে মান্ডি কমিটির অফিসে তালা দিয়ে দিয়েছিল। কিছু জায়গা যেমন কারনালে আর্থিয়া অ্যাসোসিয়েশন প্রতিবাদকে সমর্থন জানাতে এগিয়ে এসেছিল। পাঞ্জাবের বহু জায়গায় কংগ্রেসী মন্ত্রীরা বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। মন্ত্রী বিধায়ক ও সংসদরা জলন্ধর গুরুদাসপুর হোশিয়ারপুর, পাতিয়ালা এবং পাঞ্জাবের অন্যান্য জেলাতেও কৃষক বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। কিছু জায়গা যেমন মানসা ও সাঙ্গুরে ডিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির সততা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার ইচ্ছা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা বলেছে সংগ্রহ ব্যবস্থার যেন কোনও হেরফের না হয়, যদিও আগের সিদ্ধান্ত বদল করে তারা বলেছে আগের মতই সংগ্রহ অভিযান চলবে। “এটা কৃষকদের যৌথ আন্দোলনের ফসল” বলেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।

কৃষক আন্দোলন মহাত্মা গান্ধী এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মবার্ষিকী অত্যন্ত সম্মান এবং নতুন অনুপ্রেরণার সাথে পালন করেছে। এই উপলক্ষে মোর্চায় আজ একদিনের উপবাস পালন করা হয়। কৃষক গোষ্ঠী এই দুই মহান নেতা, যারা দেশবাসীর স্বাধীনতা, ভাগ্য এবং গ্রামীণ ভারতের নৈতিকতা ঠিক করে দিয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণে দেশজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করেছে। ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ জনপ্রিয় শ্লোগানটি শাস্ত্রীজির দেওয়া এবং এটি কৃষক আন্দোলনে প্রতিধ্বনিত হয়। এই স্লোগান কৃষকদের দেশের প্রতি তাদের বিশাল অবদানের জন্য গর্বিত করে এবং স্বীকৃতি দেয়। কৃষক এবং কৃষকদের সমবায়ে বিনিয়োগ করে জাতি-নির্মাণ করার চেষ্টা লাল বাহাদুর শাস্ত্রী করেছিলেন। গান্ধীজির সত্যাগ্রহের আদর্শ সত্য ও অহিংসার শক্তির উপর ভিত্তি করে কৃষক আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। সত্যাগ্রহের নীতি এই আন্দোলনকে প্রতিনিয়ত পথ দেখায়।

২ অক্টোবর প্রবল বর্ষণের মধ্যেই হাজার হাজার কৃষক তাদের সমর্থকসহ নরসিংহ বাবা স্টেডিয়ামের এক সমাবেশ থেকে বিহারের চম্পারণ থেকে বারাণসী পর্যন্ত ১৮ দিনের পদযাত্রা শুরু করেছে। মহাত্মা গান্ধীর কর্মভূমি চম্পারণ থেকে, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কর্মভূমি বারাণসী পর্যন্ত এই যাত্রাপথ। বিদেশী কোম্পানি এবং শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১০৪ বছর আগে নীল চাষিদের সংগ্রামের স্মরণে এই ‘কিষাণ জনজাগরণের জন্য লোকনীতি সত্যাগ্রহ পদযাত্রা’। ভারতে কৃষকদের বর্তমান সংগ্রাম ভিন্ন নয়। যাত্রাটি ঐতিহাসিক চন্দ্রাহিয়া গ্রামে পৌঁছাবে। ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী মোদীর নির্বাচনী এলাকা বারাণসীতে এই যাত্রা শেষ হবে। পথে, এটি সমাজতান্ত্রিক নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের গ্রাম সিতাব দিয়ারা দিয়েও যাবে।

একইভাবে, উত্তরাখণ্ডের উধম সিং নগরের রুদ্রপুর থেকে প্রতিবাদী কৃষকদের একটি বড় কাফেলা রওনা হয়েছে। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই কিষাণ যাত্রাটি গাজীপুর সীমান্তে রওয়ানা হয়েছে এবং উত্তরপ্রদেশের রামপুর, মোরাদাবাদ, আমরোহা এবং হাপুর দিয়ে যাওয়ার পর গাজীপুর পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বিভিন্ন ইস্যুতে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং অন্যান্য রাজ্যের অসংখ্য জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে। আর কোনও দেরি না করে অবিলম্বে ধান সংগ্রহ শুরু করা নিশ্চিত করার দাবিতে এসকেএম বিক্ষোভের আয়োজন করে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বিভিন্ন জেলায় গোলাপী পোকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তুলো চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কৃষক ইউনিয়নগুলিও বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এই বছর বাজরা না কিনে, কেবলমাত্র শর্তাধীন মূল্য ঘাটতি দেওয়ার হরিয়ানা সরকারের নতুন নীতির বিরুদ্ধেও কৃষকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। দেশে ফসল কেনার ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, মোদী সরকারের এই আশ্বাস সত্ত্বেও, কৃষকরা সঠিকভাবেই ইঙ্গিত করছেন যে এই পদক্ষেপটি অশুভ। এই রাজ্যের পাশাপাশি অন্যত্রও, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জন্য দুর্যোগজনিত ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষক প্রতিবাদ করছে। তেলেঙ্গানায় ভাগচাষি সহ সব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট এবং কৃষক সংগঠনগুলি দাবি করছে যে প্রক্রিয়াটি অবিলম্বে শুরু করা উচিত।

হরিয়ানার আম্বালা, কুরুক্ষেত্র এবং ঝাজ্ঝরে, গতকাল বিজেপির অনুষ্ঠানগুলিতে এবং নেতাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের কালো পতাকাসহ বিক্ষোভ জলকামান ব্যবহার করে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাদের ওপর জলকামান ব্যবহার সত্বেও কৃষকরা নিরুৎসাহিত ও ছত্রভঙ্গ হয়নি এবং এই ধরনের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ তারা চালিয়ে যাবে।

৩ অক্টোবর, লখিমপুর খেরীর টিকুনিয়াতে উত্তর প্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত কালো পতাকাসহ বিক্ষোভে কৃষকদের বিপুল সংখ্যায় যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানায় উত্তরপ্রদেশের এসকেএম নেতৃত্ব। সাম্প্রতিক অতীতে কৃষক নেতাদের বিরুদ্ধে মিঃ টেনির দেওয়া খোলা হুমকির বিরুদ্ধে কৃষকদের আপত্তি এবং প্রতিবাদ জানানোর জন্য এই বিক্ষোভ দেখানোর ডাক।

খণ্ড-28
সংখ্যা-36