আজকের দেশব্রতী বিশেষ বৈদ্যুতিন সংখ্যা (১৮ জুন ২০২০)
head

( হেডিং-এ ক্লিক করলে সেই লেখাটিই শুধুমাত্র দেখাবে )

border

aas

লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনের অনুপ্রবেশ ও ভারত-নিয়ন্ত্রিত গালওয়ান উপত্যকায় ঢুকে পড়ার খবরাখবর সামনে আসায় মোদি সরকার চীন ও ভারতের মাঝে বার্তালাপের ঝাঁঝ মৃদু করার কথা বলেছে। কিন্তু তারই মাঝে, ১৯৭৫ সাল থেকে চলা ভারত-চীন সীমান্ত সমস্যায়, এই প্রথম সশস্ত্র সংঘাতে তিন জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর খবর এল। আরও ভারতীয় সেনা চীনের হাতে বন্দি হওয়ার এবং চীনের কয়েকজন সেনা জওয়ানের মৃত্যুর খবরও এসেছে। মোদি সরকার যে তার চীন-নীতিতে ক্রমাগত জমি হারাচ্ছে তা স্পষ্ট এবং তা চাপা দিতে দেশের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে তীব্র চীন-বিরোধী বুলির আশ্রয় নিচ্ছে। সেই সাথে আবার, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা জলাঞ্জলি দিয়ে মোদি সরকার, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ঘটনাবলী ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতীয় জনতাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন চীন ও ভারত উভয়েরই জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে গভীর বোঝাপড়া ও সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া জরুরি তখন সীমান্ত সমস্যাকে প্রাণহানিকর সংঘাতের পথে যেতে দেওয়া ভারত ও চীন দুই দেশের পক্ষেই অবিবেচক ও ধিক্কারজনক কাজ হবে। দুই দেশের সরকারের কাছেই আমাদের দাবি, দ্রুত কূটনৈতিক পথে সমাধান খোঁজার, সীমান্ত বরাবর সেনা নিয়োগ দ্রুত কমিয়ে আনার এবং কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ নাকচ করে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে সমস্ত সমস্যা সমাধানের।

দীপঙ্কর ভট্টাচার্য 
সাধারণ সম্পাদক, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন 
নয়া দিল্লি 
১৬/০৬/২০২০ 

ammmbe

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ – ভারতে চলা লকডাউনের সুদীর্ঘ পর্বে যাঁর দেখা তেমন মেলেনি – গত ৭ জুন বিহারের উদ্দেশ্যে এক ডিজিটাল সভায় ভাষণ দিলেন। শাহর কথায় এটা শুধু ‘জন সংবাদ’ বা ‘জনগণের সঙ্গে সংযোগ’ হলেও এটা কিন্তু এ বছরের শেষে হতে চলা বিজেপির নির্বাচনী প্রচারকেই কার্যত শুরু করে দিল। এই সমাবেশ আবার মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বের ষষ্ঠ বছরের মহাসমারোহে উদযাপনের অংশও ছিল, যে উদযাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল কোভিড-১৯ অতিমারির মোকাবিলায় মোদীর তথাকথিত সাফল্যের ঢাক পিটিয়ে নিজেদের পিঠ চাপড়ানো। অমিত শাহ যেমন তাঁর ভার্চুয়াল সমাবেশ ঘটালেন, একইভাবে নীতীশ কুমারও সেদিনই জেডিইউ নেতৃবৃন্দ ও ক্যাডারদের সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে তাঁর প্রচার শুরু করলেন। অন্যভাবে বললে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী দুজনেই সরকারি পদাধিকারী হিসাবে নয়, নিজ-নিজ দলের নেতা হিসাবেই জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখলেন।

বিহারের পরিস্থিতি বিবেচনা করা যাক। ভারতের অন্য সব রাজ্যের মতো বিহারও মহামারী ও লকডাউনের জোড়া ধাক্কায় টলমল করছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংকট-জর্জরিত হওয়ায় বিহারে কোভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ রীতিমতো দুরূহ হয়ে উঠেছে, তবে লকডাউনই বিহারকে সাংঘাতিক ধাক্কাটা দিয়েছে। ভারতে সব রাজ্যের মধ্যে বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যাই সম্ভবত সর্বাধিক। এবং কী কেন্দ্র, কী রাজ্য, কোনো সরকারই পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থায় কোনো আন্তরিকতা না দেখানোয় বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করে নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। তাঁরা হয় পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, অথবা চেপেছেন কালিমালিপ্ত শ্রমিক স্পেশ্যালে। আর ফিরে এসে কোয়ারান্টিন কেন্দ্র নামধারী নির্যাতন কক্ষগুলোতে বন্দী হয়েছেন।

poli

 

গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো লকডাউন চলাকালীন বিহারে বিপক্ষ দলের কর্মীবৃন্দ, দলিত, মুসলিম, অন্যান্য নিপীড়িত সামাজিক গোষ্ঠী এবং নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। এবং অপরাধের এই সমস্ত ঘটনায় দায়ের হওয়া অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে, সামন্ততান্ত্রিক-সাম্প্রদায়িক-দুর্বৃত্ত গাঁটছড়ার পিছনে শাসক বিজেপি-জেডিইউ জোটের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। গোপালগঞ্জের তিন হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত স্বয়ং জেডিইউ বিধায়ক অমরেন্দ্র পাণ্ডে। তাকে গ্ৰেপ্তার  এবং বিধানসভা থেকে বরখাস্ত না করে নীতীশ সরকার সিপিআই(এমএল)-এর সেই সমস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতেই ব্যস্ত থাকছে যাঁরা হত্যাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলেছিলেন। এরপর মধুবনিতে দলিত হত্যার যে ঘটনা ঘটে তাতে মূল অভিযুক্ত বিজেপি নেতা অরুণ কুমার ঝা।

লকডাউনের গোটা পর্বেই বিহারের জনগণ এই সমস্ত ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বস্তুত, অমিত শাহ এবং নীতীশ কুমারের ডিজিটাল সমাবেশগুলোও সারা রাজ্যেই ধিক্কারের মুখে পড়ে। অনাহারগ্ৰস্তদের জন্য রেশন ও ত্রাণের ব্যবস্থা, কোয়ারান্টিন কেন্দ্রগুলোর সুযোগসুবিধা, আটকে পড়া শ্রমিক ও ছাত্রদের নিরাপদে ঘরে ফেরা, প্রকল্প কর্মী ও করোনা যোদ্ধাদের পিপিই এবং মহামারী বেতন প্রদান, লকডাউনে ক্ষতিগ্ৰস্ত শ্রমিক ও কৃষকদের জন্য রোজগার সহায়তা, এবং স্বনিযুক্তি প্রকল্পের গোষ্ঠীগুলোতে, মাইক্রোফিনান্স প্রকল্পগুলোতে এবং লাইভলিহুড মিশনে যুক্ত মহিলাদের ঋণ মুকুব – এই সমস্ত ইস্যুতে লকডাউনের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও ধারাবাহিক প্রতিবাদ হয়েছে। বিহার যথার্থ অর্থেই ‘ঘরে থাকুন’-এর বিধানকে রূপান্তরিত করে ‘ঘর থেকে প্রতিবাদ’-এর স্পিরিটের জোরালো আত্মঘোষণা ঘটিয়েছে।

vote

 

যেমন ভাবা গিয়েছিল সেরকম ভাবেই অমিত শাহ ও নীতীশ কুমার বিহারকে জর্জরিত করা এই সমস্ত জ্বলন্ত ইস্যুগুলো সম্পর্কে মুখে কুলুপ আঁটেন। এই সংকটের মধ্যে একটা সুযোগের সন্ধান পেয়ে তাঁদের মুখে বরং উল্লাসের ছটা দেখা গেছে। বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী গত দু-সপ্তাহ ধরে এই ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন যে, এবার বিহারে ডিজিটাল নির্বাচন হবে এবং ভোটারদের আর বুথে গিয়ে ভোট দিতে হবে না। অমিত শাহ বলছেন ডিবিটি (সুবিধার সরাসরি হস্তান্তর) দুর্নীতির অবসান ঘটিয়েছে, আর সুশীল মোদী বলছেন যে, ভোট গ্ৰহণ করার জন্য কোন বুথ যেহেতু থাকবে না, ডিজিটাল মাধ্যমে ভোট দান ব্যবস্থা তাই বুথ দখল প্রথার লোপ ঘটাবে! এই সমস্ত দাবি ও প্রস্তাব শুধু যে চূড়ান্ত রূপে অসত্য তাই নয়, এগুলো সম্পূর্ণরূপে দুরভিসন্ধিমূলক ও শঙ্কাজনক।

বস্তুত, ডিবিটি বা সুবিধার সরাসরি হস্তান্তরের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় শুধু বাজেট বক্তৃতায় ও নির্বাচনী জনসভায়। বাস্তব জীবনে ভারত এখন সমস্ত সাধারণ পরিবারগুলোর জন্যই ডিবিটির দাবি জানাচ্ছে। বর্তমান সংকটের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ যে প্রস্তাবটা উঠে এসেছে তা হল, রোজগারে মদত দিয়ে জনগণের ভোগব্যয় ও চাহিদাকে বাড়িয়ে তুলতে আয়কর দেয় এমন পরিবারগুলোকে বাদ দিয়ে অন্য সমস্ত পরিবারের কাছে ছ-মাস ধরে প্রতি মাসে নগদ ৭৫০০ টাকা হস্তান্তর করতে হবে। এর বিপরীতে সরকার কিন্তু শুধুই কিছু উদ্যোগের জন্য ঋণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আর, কোনো দুর্নীতিও বন্ধ হয়নি, উল্টে তাদের বহর বেড়েছে। সৃজন দুর্নীতির আকার পশুখাদ্য দুর্নীতির তুলনায় অনেক বড় বলে দেখা গেছে, তবে তাদের মধ্যে ফারাকটা থেকেছে শুধু সুকৌশলে দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতে পারার সামর্থ্যের মধ্যে! এখন আর তদন্ত হয় না, এবং অস্বস্তিকর সত্যের উন্মোচন যখন ঘটতে থাকে, তখন যারা দুর্নীতি ফাঁস করছে তাদের  এবং আরটিআই কর্মীদের নিয়মিতভাবেই দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেওয়া হয়, মামলাগুলো ও বিচারপতিদের নিমেষে বদল করা হয় এবং মিডিয়াকে নিজেদের দিকে টেনে শিরোনামগুলোকে পছন্দসই করে হাজির করা হয়। ইভিএম এবং ভিভিপিএটি ব্যবস্থা বুথ দখল এবং অন্যান্য নির্বাচনী দুর্নীতির অবসান ঘটিয়েছে বলে বিজেপি দাবি করলেও এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতা সম্পর্কে বড় ধরনের সংশয় কিন্তু রয়ে গেছে। এখন আবার নির্বাচনকে একটা ডিজিটাল কর্মকাণ্ডে পরিণত করে বিজেপি নির্বাচনকে আরও ঘোলাটে করে তুলতে চাইছে। কেননা, এই ধারায় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পাবে এবং তা আরও কম অংশগ্ৰহণমূলক হবে এবং ফলে অনেক বেশি সন্দেহজনক ও অগণতান্ত্রিক হয়ে উঠবে।

সংকেতগুলো যথেষ্ট জোরালো ও সুস্পষ্ট হয়েই দেখা দিচ্ছে। যে শক্তিগুলো কয়েক দশক আগেও বুথ দখল করে দরিদ্রদের ভোট দিতে দিত না, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর যারা রায়কে ছিনিয়ে নিয়েছিল, তারাই আজ নির্বাচনকে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিহারের বিজেপি-জেডিইউ সরকার খুব ভালো করেই জানে যে, লাগাতার অকর্মণ্যতা এবং ধারাবাহিক বিশ্বাসঘাতকতা ও ব্যর্থতার জন্য তারা জনগণের বিপুল ক্রোধের মুখে দাঁড়িয়ে। মুজফ্ফরপুরের আশ্রয় শিবিরে ধর্ষণ ও সৃজন কেলেঙ্কারি থেকে সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং পরের পর দলিত ও অন্যান্য সমাজ কর্মীদের হত্যা, বিহারের বিভিন্ন অংশের শ্রমিক ও নারীদের গণআন্দোলনের পাশবিক দমন, জনগণের ওপর চলতে থাকা ‘করোনা যুদ্ধ’ – এ সবই নীতীশ-মোদী সরকারকে বিহারের সম্ভবত সবচেয়ে নির্মম ও দরিদ্র-বিরোধী সরকার রূপে উন্মোচিত করে দিয়েছে।

এই সরকার যদি মনে করে থাকে যে জনগণকে অপ্রস্তুত এবং অধিকার বর্জিত করে তুলে তারা নির্বাচনকে হাতিয়ে নিতে পারবে, তবে সরকারকে ভুল প্রমাণিত করে তোলার দায়টা বিহারের অদম্য গণতান্ত্রিক স্পিরিট এবং জনগণের আন্দোলনের গৌরবময় ঐতিহ্যের ওপরই বর্তাচ্ছে।

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয় ৯ জুন ২০২০)

arrrdad

করোনা জর্জরিত ও আমফান বিধ্বস্ত বাংলার পরিস্থিতি দাবি জানাচ্ছে মানুষের জরুরি আর্থ-সামাজিক সুরক্ষা চাই। সেই অধিকার আদায়ে যে সমস্ত সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তি আন্তরিক তাদের প্রতি পদে পদে যুঝতে হচ্ছে কেন্দ্র-রাজ্যের দুই সরকারের বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে, বিজেপি তার তৎপরতাকে চরম মাত্রা দিয়ে চলেছে ২০২১-এর বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের নিশানায়। চৌতরফা চাপ বাড়ানোর নেটওয়ার্কে সক্রিয় কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যপাল ধনখড়, রাজ্য বিজেপি সংগঠন এবং আরএসএস। নেপথ্যে আছে বিজেপির আই টি সেল।

করোনা আসার ঠিক আগের পরিস্থিতিতে বাংলায় বিজেপি সম্মুখীন হচ্ছিল সিএএ-এনপিআর-এনআরসি প্রশ্নে প্রবল প্রতিবাদী ঝড়ঝঞ্ঝার। অতঃপর লকডাউনের পরিবেশ চলল দীর্ঘ সময় ধরে এবং তার অবশেষ থাকতে থাকতে বিজেপি উঠেপড়ে লেগেছে হাওয়াটা সপক্ষে ঘোরাতে। বিক্ষোভ ও প্রচারের লক্ষ্যে সমন্বয় করে তুলছে মূলত চারটি দিকের। রাজ্যের সমস্ত অসন্তোষকে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে দেওয়া, পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক নানা অশান্তি ও হাঙ্গামা ছড়ানো; একইসাথে বাংলার অতীত থেকে হিন্দু জাতিয়তাবাদী ‘আইকন’ যে ক’টি মেলে তাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মরীয়া হওয়া, এর সাথে প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বপ্ন ফেরী’ করা আর অমিত শাহর হুমকি। এই হল বিজেপির বাংলা দখলের সমরাস্ত্র। বলাবাহুল্য, মেরুকরণের ব্রহ্মাস্ত্র।

এরাজ্যে বিজেপি দৌরাত্মের বিপদ বেড়ে যাওয়ার জন্য তৃণমূল জমানার দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করে চলার পলিসি দায়ী। করোনা পরিস্থিতিতেও দেখা গেল বিশেষত স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মানবিক ব্যবস্থা গ্রহণে তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতা, ধরা পড়ে যাওয়া সত্বেও তথ্য চেপে যাওয়ার কৌশল, একটা মিথ্যা ঢাকতে আরেকটা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া। এইসমস্ত কদর্যতা থেকে ফায়দা লুঠতে অনবরত সক্রিয় হয়েছেন রাজ্যপাল ও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু কেন্দ্রের কাছে এই সময়ের যে দাবিগুলো উঠেছে সেব্যাপারে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। শুধু প্রচার করেছেন কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের তরফে লিস্ট ঠিকমতো যাচ্ছে না, তাই কেন্দ্র বহু কিছু করতে পারছে না। খুব বেশি প্রশ্নের মুখে পড়লে বলছে কেন্দ্র পর্যাপ্ত অর্থ দিয়েছে, খাদ্যশস্য পাঠিয়েছে, তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে তা মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। মানুষও কমবেশি প্রভাবিত হয়ে পড়ছে এই অর্ধসত্য ও মিথ্যা মেশানো প্রচারে। কারণ, তৃণমূলী দুর্নীতি-দাদাগিরি-তোলাবাজি সবই যে বহু আগে থাকতেই অতি চেনা প্রবণতা।

তৃতীয়ত, বিজেপির যদিও স্বাধীনতা আন্দোলনের দর্পণে দর্প দেখানোর বিশেষ সুযোগ নেই, তবু মরীয়া অল্প কিছু ব্যক্তিত্বকে ‘আইকন’ হিসেবে তুলে ধরতে। যেমন শ্যামাপ্রসাদ, ঋষি বঙ্কিম, ঋষি অরবিন্দ প্রমুখকে, যারা হিন্দু জাতিয়তাবাদী দর্শন-মতাদর্শ-মননের বিশ্বাসী ছিলেন এবং যাদের এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতার পরম্পরা রয়ে গেছে  বিশেষত শিক্ষিত ও প্রচ্ছন্ন বা সুপ্তভাবে হিন্দু জাতিয়তাবাদে আবিষ্ট বাঙালি মধ্যবিত্তের একাংশের মধ্যে। আরএসএস প্রচার করছে, স্বাধীনতা আন্দোলনে তিরিশের দশকের সময় থেকে কমিউনিস্ট ধারা সামনে আসতে শুরু করার আগে পর্যন্ত সামাজিক ধ্যানধারণায় প্রভাব ছিল প্রধানত হিন্দুত্বের। এইসব বিষয়কে প্রচারে খুঁচিয়ে তুলে আরএসএস-বিজেপি চাইছে বাংলায় ব্রাত্য দশা কাটিয়ে উঠতে।

corp

 

জাতীয় অর্থনীতির আরও একপ্রস্থ কর্পোরেটমুখী বেসরকারীকরণের পদক্ষেপ করার পরপরই মোদী শুরু করে দিলেন বাংলার শিল্পীয় পুনরুজ্জীবনের ‘স্বপ্ন’ ফেরীর বাত শোনাতে। তার প্রচারযন্ত্র হিসেবে বেছে নিলেন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের দুই সর্বভারতীয় সংস্থা সিআইআই ও আইসিসি-র সভামঞ্চকে। বোঝাই যাচ্ছে বাংলায় ক্ষমতা আসার রাস্তা তৈরি করতে কর্পোরেট পুঁজির ওপর ভীষণভাবে ভরসা করছে এবং ক্ষমতায় এলে রাজ্যটাকে কর্পোরেট পুঁজির কাছে বিকিয়ে দেবে। রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতিতে প্রচন্ড খরা, শ্রমশক্তির বেকারির সংকট ব্যাপক।

এই দুরবস্থাকে বিজেপি তার মাথা তোলার স্বার্থে ব্যবহার করছে। ভুললে চলে না, এমনকি করোনা সংক্রমণ ছড়ানোকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বার্থসর্বস্বতায় ব্যবহার করতে বিজেপি এতটুকু বিরত থাকেনি। এটা করে এসেছে যেমন গঙ্গাপাড়ের শিল্পাঞ্চলে, তেমনি গ্রামবাংলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা উপলক্ষ্যেও। এই মহড়ার বিপদ তাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সুতরাং বিজেপির মোকাবিলায় কোনো ঢিলা দেওয়া নয়।

ggadda

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অনুমতি দানের যে সিদ্ধান্ত সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। ঐ চিঠিতে বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় সরকারের তথাকথিত ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সময় অর্থমন্ত্রী প্রতিরক্ষা শিল্প সম্পর্কে যে দুটি অত্যন্ত আপত্তিকর ঘোষণা করেছেন তা লক্ষ্য করে আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেছি। আগের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের দেওয়া এবং অতি সম্প্রতি ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে প্রতিরক্ষা শিল্পে যুক্ত কর্মীদের ঐতিহাসিক ধর্মঘটের পর দেওয়া প্রতিশ্রুতির খেলাপ করে অর্থমন্ত্রী অস্ত্রশস্ত্র তৈরির কারখানাগুলোর কর্পোরেটিকরণ করার নীতির ঘোষণা করেন। এই প্যাকেজকে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নির্মাণের এক উপায় রূপে উপস্থাপিত করা হলেও অর্থমন্ত্রী স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বের এই ক্ষেত্রকে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের কাছে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন।”

“এই দুই পদক্ষেপ যেমন অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ শিল্পের কাছে মারাত্মক ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে, তেমনই সেই বোঝাপড়ার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলেও প্রতিপন্ন হবে যার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মীরা তাঁদের ২০১৯ সালের ঐতিহাসিক ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। গোটা দেশই এখন ভাইরাস ঘটিত ভয়ানক মহামারীর কবলে এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মীরা সমস্ত ঝুঁকি এবং প্রতিকূলতাকে অগ্ৰাহ্য করে জাতীয় স্বার্থে তাঁদের যথাসাধ্য অবদান রাখছেন, বাড়তি ভূমিকা পালন করে পিপিই এবং জীবন সুরক্ষার অন্যান্য সামগ্ৰী উৎপাদনে নিজেদের নিয়োজিত করছেন। এমন সময়ে লকডাউনকে লাইসেন্স করে তুলে এই পশ্চাদমুখী পদক্ষেপগুলো ঘোষণা করে সরকার প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মী এবং জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাই করল।

“আপনার সরকারের তরফে বিশ্বাসভঙ্গের এই ঘটনার পর প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মীদের ইউনিয়নগুলির ফেডারেশন যে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিতে ব্যালট প্রয়োগের ডাক দিয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। আমরা তাই অবিলম্বে আপনাকে হস্তক্ষেপ করতে বলছি, যাতে এই দুই পদক্ষেপকে ফিরিয়ে নিয়ে এবং আগের বোঝাবুঝির স্পিরিটকে সম্মান জানিয়ে কর্মীদের উদ্বেগের নিরসনে উদ্যোগ নেন। প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্পোরেটিকরণ এবং স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বের এই ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগকে নির্বিচারে এগিয়ে নিয়ে গেলে তা ভারতের প্রতিরক্ষা কুশলতাকে দুর্বল করেই তুলবে। আর ভারতের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে সুস্পষ্টরূপে হানিকর একটা পদক্ষেপের কথা ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলার নামে যে বিবেচনা করা হচ্ছে তা আমাদের কাছে নিতান্তই অসমীচীন হয়েই দেখা দিচ্ছে। আশা করি, আপনি কর্মচারিদের মতামতে এবং দেশপ্রেমিক ভারতবাসীদের ব্যাপকতর অভিমতে গুরুত্ব দিয়ে ওই পশ্চাদমুখী পদক্ষেপগুলোকে কার্যকরী করা থেকে বিরত করবেন।”

প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মচারীদের ইউনিয়নগুলো ধর্মঘট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যালট-ভোটের উদ্যোগ নিয়েছে এবং এর মধ্যে দিয়ে তাদের যে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে, সিপিআই(এমএল) তার প্রতি সংহতি জানিয়েছে।

srpddda

কোভিড-১৯ সংক্রমণ যখন চীনের উহান থেকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েনি, তখনই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) রেড এলার্ট জারি করে। মার্চ মাসের শুরুতে ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন সহ গোটা ইউরোপ যখন অতিমারির কবলে, তখনও নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্বর্ধনায় ব্যস্ত। এমনকি ১৪/১৫ মার্চ, ২০২০ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ভারতের মানুষকে কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কিত না হবার বাণী বিতরণ করেছে। সেই সময় ইউরোপ ও আমেরিকার মতো কোভিড আক্রান্ত দেশগুলি থেকে আন্তর্জাতিক উড়ানগুলিতে কয়েক লাখ মানুষ মুম্বাই, আমেদাবাদ, চেন্নাই,দিল্লি বিমানবন্দরে নামছেন, তখনও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার (rtPCR) ব্যবস্থা না করে কোভিড সংক্রামিত ব্যক্তিবর্গকে অবাধে দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। ইতিমধ্যে রাজস্থানের জয়পুরে বিদেশি পর্যটকদের কোভিড আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে গেছে। অথচ কর্পোরেট পুঁজিপতিদের চাপে পরিযায়ী/প্রবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা না করে (সস্তা মজুরের অভাব হবে বলে) কয়েক ঘণ্টার নোটিশে লকডাউন ঘোষণা করা হল। এমনকি ট্রেন লাইনে কাটা পড়ে ঘুমন্ত শ্রমিকদের মৃত্যুর পর মহামান্য আদালতের চিরস্মরণীয় উক্তি ট্রেন লাইন তো আর ঘুমোনোর জায়গা নয়। দেশবাসীকে হতবাক করেছে। মৃত শ্রমিকদের অসম্মান করেছে। একমাত্র বামপন্থী-গণতান্ত্রিক দলগুলি, বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন ও গণসংগঠনগুলির চাপে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসা শুরু হলে, কেন্দ্রীয় সরকার ট্রেনের ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করেছে বিন্দুমাত্র খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা ছাড়াই। আর অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এখন ‘লোকে বলে তাই বলেছি’ বললেও, শ্রমিক ভর্তি গাড়িগুলিকে করোনা এক্সপ্রেস বলে স্টিগমাটাইজড করে গেছেন। ন্যূনতম আর্থিক সহায়তা কোনো সরকারের এজেন্ডায় নেই। একমাত্র বামপন্থী দলগুলো ও ট্রেড ইউনিয়ন ও অন্যান্য গণসংগঠনের পক্ষ থেকে এই কাজহারা মানুষদের জন্য ন্যূনতম মাসিক ১০০০০ টাকার দাবি তুলেছে। আজ রাজ্যে রাজ্যে সেই অসম্মানের নতুন নতুন নজির সৃষ্টি হচ্ছে। মৃতদের পরিবারের মানুষজনকে দেখতে দেওয়া হবে না থেকে শ্মশান ঘাটের অবমাননাকর দৃশ্য দেখে যেতে হচ্ছে। কো-মরবিডিটির বোগাস তত্ত্ব এখন এরাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে রাজ্যে রাজ্যে এমনকি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কোভিড-১৯ টেস্টের ভেজাল কিট কে আমদানি করল, আর মুনাফাই বা কে করল, অধরাই থেকে গেল!!

রাজ্য সরকারগুলিকে বিন্দুমাত্র আর্থিক সহায়তা না করে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় টিমের ভ্রমণ বৃত্তান্ত কি ফল দিয়েছে, তার ফলাফল আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিত্রোঁ নরেন্দ্র মোদী হাত ধরাধরি করে চলার দিকে (যদিও মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও নির্ধারিত শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই) এগিয়ে যাচ্ছে।

মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত প্রধান আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়ে সহযোগীদের যতই নোটিশ পাঠান না কেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলতে পারে, স্কোর বোর্ডে নম্বর উঠতে পারে, তাতে কোভিড মহামারী বা ক্ষুধার জ্বালা কোনোটাই মিটবে না। মানুষকে ভিন্ন পথের সন্ধান করতেই হবে ।

ধন্যবাদান্তে, 
পার্থ ঘোষ 
রাজ্য সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন 

kirggd

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার কৃষিপণ্য বানিজ্য অর্ডিন্যান্স জারি করেছে যাতে স্বাধীনতার পর কৃষি ও কৃষকদের এক নজিরবিহীন সংকটের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের কৃষকদের দাবিকে মেনে নিয়ে ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দাম সুনিশ্চিত করা হলো না। ঋণমুক্তির জন্য নেওয়া হলো না কোনো পদক্ষেপ। লকডাউন ক্ষতিপূরণের কোনো ঘোষণাই নেই। শস্যবীমা বা নানারকম কৃষক কল্যাণ প্রকল্পগুলিকে কাগজে কলমে রাখা হলো। এখন লকডাউন সংকটের সময় কালে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় অর্ডিন্যান্স চাপিয়ে দিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে কর্পোরেট পুঁজিপতিদের দখলদারী কায়েম করা হলো। ওদের হাতে কৃষি পণ্যের ব্যবসা বানিজ্যের সমগ্র ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়া হলো। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ সহ কৃষকের স্বার্থরক্ষায় যতটুকু সরকারী বিধি ব্যবস্থাগুলি ছিল সেগুলিকে উঠিয়ে দেওয়া হবে, ফলে কৃষকদের কর্পোরেট পুঁজিপতিদের গোলামে পরিণত করা হবে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধনের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের মজুত ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উঠিয়ে দেওয়ার কারণে বড় ব্যবসায়ীরা যত খুশী পণ্য মজুত করতে পারবে। কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে তারা নিজেদের সুবিধা মতো কৃষি পণ্যের দাম বাড়াবে, অথচ চাষিরা তাঁদের রক্ত ঘামে উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম পাবে না। দেশী বিদেশী পুঁজিপতি-ব্যবসায়ী-সরকারী আমলা- অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের চক্র কৃষিপণ্যের ব্যবসা থেকে মুনাফার পাহাড় তৈরি করবে। কৃষিপণ্য বাজার কমিটি আইন (এপিএমসি) তুলে দেওয়ার ফলে কৃষিপণ্যের ফাটকাবাজি মজুতদারী বাড়বে। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলির যে অধিকার রয়েছে অর্ডিন্যান্সে তাকে খর্ব করা হয়েছে।

বী

 

কৃষি পণ্যের বাজার বা কিষাণ মান্ডিগুলি সীমিতভাবে হলেও চাষিদের দরকষাকষি ও ফসলের সরকারী ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত। সেই ব্যবস্থাটা তুলে দিয়ে চাষিদের চরম লোকসান ও ঋণফাঁদের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। ব্যবসায়ী ও পু্ঁজিপতিদের চুক্তিচাষের অবাধ অধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে ঘুরপথে কৃষিজমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করে চালু করা হবে কর্পোরেটদের জমি-গ্রাস অভিযান। বাস্তবে ওরাই কৃষি উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ফলে আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হয়ে পড়বে মারাত্মক ভাবে বিপন্ন। বিগত বছরগুলিতে আমাদের দেশে কৃষিপণ্যের আমদানী ক্রমশ রপ্তানির থেকে বেড়ে চলেছে। আগামীদিনে সেটা আরও বেড়ে যাবে। উন্নত দেশের অত্যধিক পরিমাণে কৃষি ভর্তুকিযুক্ত পণ্য আমাদের দেশের কৃষি পণ্যের বাজারকে নষ্ট করে দেবে। ফলে নতুন নিয়ম বিধির মধ্য দিয়ে চাষিদের ফসলের ভালো দাম পাওয়ার যে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সমগ্র কৃষি ক্ষেত্রে ৫০-৬০ শতাংশ ছোট ভাগ চাষি-চুক্তি চাষিরা রয়েছে। চুক্তি চাষের প্রভাবে এদের জীবন জীবিকা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হবে। কৃষিমজুরদের জীবিকাও হয়ে উঠবে বিপন্ন। তীব্রতর হয়ে উঠবে গ্রামীণ বেকারী। সব মিলিয়ে এই কৃষি সংস্কারে লাভবান হবে বড় বড় কোম্পানিরা। তৈরি হবে কোম্পানি রাজ।

এ রাজ্যে আমপান ঘূর্নিঝড় কৃষক ও গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জীবন জীবিকা বিরাট এক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ত্রাণ ও পূনর্বাসনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার চরম ব্যর্থ। লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকরা অমানবিক দূর্দশার মধ্যে রয়েছে। তাঁদের ঘরে ফেরানো, স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা, সুরক্ষা দেওয়া,কাজ খাদ্য সরবরাহ করা প্রভৃতি প্রশ্নে চলছে চুড়ান্ত সরকারী অব্যবস্থা।

পিএম কিষাণ নিধির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের বছরে তিন দফায় ৬ হাজার টাকার যে সহায়তা প্রকল্প চালু করেছে এ রাজ্যে সেটাকেও কার্যকরী করা হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে সম্পূর্ণ বেসরকারীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে,যা কৃষকদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

আমাদের দাবি -

  • ১) কৃষি বানিজ্য অর্ডিন্যান্স বাতিল করতে হবে।
  • ২) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করে কালোবাজারি, মজুতদারীকে বৈধ করে তোলা চলবে না।
  • ৩) কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম গ্যারান্টি করতে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। উৎপাদন খরচের দেড়গুন দামে গ্রামে ক্যাম্প করে প্রকৃত চাষিদের থেকে ফসল কেনা সুনিশ্চিত করতে হবে।
  • ৪) চুক্তিচাষের নামে কৃষিকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।
  • ৫) সমস্ত কৃষকদের সব ধরনের কৃষিঋণ মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ৬) ফসলের সরকারী সংগ্রহ ও গণবন্টনকে উঠিয়ে দিয়ে কর্পোরেটদের হাতে কৃষিবাণিজ্যকে তুলে দেওয়া চলবে না।
  • ৭) সুপার সাইক্লোন আমফানকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করতে হবে। দ্রুত ও যথাযথ ত্রাণ ও পূনর্বাসন প্যাকেজের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ৮) লকডাউন এবং আমপান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কৃষকদের এ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার টাকা লকডাউন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভাগ ও চুক্তি চাষিরা যাতে সমস্ত রকম সরকারী সুবিধা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
  • ৯) বনাধিকার আইন কার্যকরী করে আদিবাসী ও বনবাসীদের জল জঙ্গল জমির অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।
  • ১০) এ রাজ্যে পিএম কিষাণ প্রকল্পের ৬ হাজার টাকা ও কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ৫ হাজার টাকা প্রতিটি কৃষককে দিতে হবে।
  • ১১) কৃষিমজুর ও গ্রামীণ গরিবদের জব কার্ডে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
  • ১২) কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের কাজ চালু করতে হবে। কৃষিকাজকে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ২০০ দিনের কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে।
  • ১৩) বিদুৎ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বেসরকারীকরণ করে কৃষিক্ষেত্রে মাশুলবৃদ্ধি ও রাজ্যের অধিকার খর্ব করা চলবে না।

ধন্যবাদান্তে, 
এআইকেএসসিসি পঃ বঙ্গ শাখার পক্ষে 
অমল হালদার, আহ্বায়ক; কার্তিক পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক 

che ache

 

beha

 

প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই চে গেভারার জন্মদিবসে লকডাউনের ফলে শহীদ পরিযায়ী শ্রমিক, করোনায় সরকারের স্বাস্থ্য অব্যবস্থার ফলে মৃত এবং বিশ্বজুড়ে করোনোয় মৃত মানুষদের স্মরণে আইসা (AISA)-র বেহালা জোনাল কমিটির শহীদ স্মরণ ও পথসভা সভায় বক্তব্য রাখেন আইসার পক্ষে সংগঠক কমরেড অত্রি, AICCTU-এর পক্ষে কমরেড মিথিলেশ সিং এবং সমাজকর্মী কমরেড সলিল ঘোষ ও আইসা কলকাতা জেলা সভাপতি কমরেড অভিজিত।

cpimlssa

১৫ জুন ২০২০, কামারহাটি সাগর দত্ত হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণার পর থেকেই অচলাবস্থা চলছে। স্থানীয় নাগরিকরা ন্যূনতম চিকিৎসার দাবি নিয়ে হাসপাতালের গেটের সামনে জমায়েত হয়ে ছিলেন তখন তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের আক্রমণের শিকার হন। মহিলাদের উপরও হামলা চালানো হয়। পুলিশ ও সিভিক বাহিনী দুষ্কৃতিদের সাথে মিলে প্রতিবাদীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। লাঠির ঘায়ে বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ আহত হন।

এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ধ্যায় বেলঘরিয়া থানায় সিপিআই(এম), সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, জাতীয় কংগ্রেস এবং সিপিআই স্মারকপত্র দিতে যায়। স্থানীয় প্রায় ২০০ জন মানুষ এই কর্মসূচীতে শামিল হন। থানার সামনেই পুলিশ ও সিভিক বাহিনী বিনা প্ররোচনায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে লাঠি চার্জ করে। লাঠির ঘায়ে বিধায়ক মানস মুখার্জী সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের ছাড়া না হলে অবস্থান চলবে ঘোষণা করা হয়। এরপর চাপে পরে পুলিশ প্রশাসন ধৃতদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সংক্ষিপ্ত সভায় বিধায়ক মানস মুখার্জী বলেন – (১) আমরা কোভিড হাসপাতালের বিরোধী নই। (২) হাসপাতালের ৫৩৬টি বেডের মধ্যে ২০০ বেড কোভিড হোক এবং বাকি ৩৩৬টি বেডে অন্যান্য চিকিৎসা চলুক। (৩) মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি পাঠিয়েছি তার কোনো উত্তর নেই। (৪) পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদলের পরিসর প্রতিদিন সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। এমন কী সাগর দত্ত হাসপাতাল নিয়েও কামারহাটির বিধায়কের সাথেও সরকার কথা বলছে না। বিধায়কের বক্তব্যের পর প্রতিবাদ সভা শেষ হয়।

ssa

কামারহাটি ১১-১৩ জুন পরপর তিনদিন সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন পক্ষ থেকে সাগরদত্ত হাসপাতালে যাওয়া হয়। সেখানে কর্মচারী, ছাত্র ও রোগী এবং তাদের পরিবারের সাথে কথা বলে কোভিড হাস পাতাল নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়। তাদের কথা অন্য রোগের চিকিৎসাগুলো চালু রেখে কোভিড হাসপাতালে তাদের বিরোধিতা নেই। হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে এলাকার মানুষের সমস্যা ও চিকিৎসার সঙ্কট নিরসনে টেলিফোনে ১২ ও ১৩ জুন দীর্ঘক্ষণ কথা হয়।

sagg

 

১২ জুন হাসপাতাল সুপার সহ উচ্চপর্যায়ের স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকাক এবং তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেনের উপস্থিতিতে উচ্চ পর্যায়ে প্রশাসনিক মিটিং হয়। সংবাদ মাধ্যমে খবর মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয়েছে – (১) আপাতত ৫০টি বেডে করোনার চিকিৎসা হবে। এরপর চাহিদা বাড়লে পর্যায়ক্রমে বেড বাড়ানো হবে। (২) স্ত্রী রোগ এবং শিশু বিভাগ এখন চালু থাকবে। (৩) অন্যান্য বিভাগগুলি নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে।

পার্টির পক্ষ থেকে যে দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে তা নীচে দেওয়া হল

মাননীয়
অধীক্ষক
কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগরদত্ত হাসপাতাল
৫৭৮, বি টি রোড
কামারহাটি
কলকাতা - ৭০০০৫৮

মহাশয়,
বিষয়: সাগর দত্ত হাসপাতালের বন্ধ হয়ে যাওয়া আউটডোর সহ অন্য বিভাগুলো অবিলম্বে পুনরায় চালু করার আবেদন।

আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম 'কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতাল'কে 'কোভিড ১৯ হাসপাতাল' হিসাবে ঘোষণা করে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ সহ সব বিভাগগুলো বন্ধ করে দেওয়া হল।

অতিমারির সঙ্কটে নতুন নতুন করোনা হাসপাতাল গড়ে তোলার ব্যাপরে আমাদের নীতিগত কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বর্তমানে করোনার জেরে প্রতিটি অঞ্চলে বেসরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিকগুলি বন্ধ থাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ কোভিড ছাড়া অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য সাগর দত্ত হাসপাতালের উপর আগের থেকেও অনেক বেশি নির্ভারশীল হয়ে পড়েছেন। এখন ‘কোভিড হাসপাতাল’ করে সাধারণ রোগীদের জন্য হাসপাতলের দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় কয়েক লক্ষ রোগী ও তাদের পরিজনরা ভয়ঙ্কর সঙ্কটে পড়ে গেলেন।

আসন্ন প্রসবা থেকে শুরু করে যারা দীর্ঘদিনের জটিল বা মারণ রোগে আক্রান্ত বা বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আছেন এবং আকস্মিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের দরজা খোলা রাখতে হবে।

তাই আমরা চাই হাসপাতালের মধ্যেই অন্যান্য সংক্রামক রোগের মতো কোভিড ১৯-এর জন্যও আলাদা বিল্ডিং চিহ্নিত করে সেখানে তার চিকিৎসা চলুক। পাশাপাশি নিরাপত্তাবিধি মেনে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসাও যথারীতি চালু থাক।

রাজ্য সরকার আপৎকালীন পরিস্থিতে বেশ কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতাল, নার্সিংহোম, লজকে কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছে, যা এখানেও সম্ভব। তাই আমরা কিছু দাবি ও প্রস্তাব রাখছি। আমরা আশাকরি আপনার মাধ্যমে তা স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে পৌঁছাবে এবং আমাদেরও তার ফলাফল অবগত করাবেন।

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি ও প্রস্থাব
১) সাগর দত্ত হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ সহ অন্য বিভাগগুলো অবিলম্বে পুনরায় চালু করতে হবে।
২) পাশেই রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের অধীন ইএসআইসি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সেখানে শয্যাসংখ্যা এবং ওপিডি বাড়ানো হোক।
৩) পানিহাটি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ বাড়াবার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হোক।
৪) সরকারকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কোভিডের জন্য এই অঞ্চলের বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল যেমন জেনিথ, ক্ষুদিরাম, মিডল্যান্ড, গুরুনানক মেডিকেল কলেজ সহ অন্য আরও কয়েকটি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে টেক ওভার করতে হবে।

ধন্যবাদান্তে, 
সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন 
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি'র পক্ষে 
নবেন্দু দাশগুপ্ত 
১২ জুন ২০২০ 
বেলঘরিয়া 

প্রতিলিপি
১) মাননীয়া শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
নবান্ন হাওড়া

২) অপর স্বাস্থ্য সচিব
স্বাস্থ্য ভবন
বিধান নগর
কলকাতা-৭০০০৯১

৩) মুখ্য জেলা স্বাস্থ্য সচিব
বারাসাত
উত্তর ২৪ পরগণা

attraata

১২ জুন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার কুসুমগ্রাম বাজারে সারা ভারত কৃষক মহাসভা, ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত হয়। ৫০ জনের বেশি মানুষ এই বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হন। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক যাদের বিভিন্ন প্রদেশে থাকাকালীন লকডাউন-এর সময় পার্টির উদ্যোগে সহযোগিতা করা হয়েছিল তাদের ভাল সংখ্যক অংশগ্রহণ গ্রহণ করেছিলেন। মিছিল বাজার পরিক্রমা করে জমায়েত হয়ে বক্তব্য রাখা হয়। খালি গলায় বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির জেলা সম্পাদক কমরেড আনসারুল আমন মন্ডল।

উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত কৃষক মহাসভার জাতীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য কমরেড সলিল দত্ত ও আর ওয়াইএর জেলা নেতা কমরেড সমির বসাক। বিক্ষোভ মিছিল মানুষের মধ্যে ভাল উৎসাহ সৃষ্টি করে। শেষে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধনী বিল পুড়িয় বিক্ষোভ দেখানো হল।

kalna

 

কালনা ২নং ব্লক-এর বৈদ্যিপুর বাস স্ট্যান্ড বাজারে শতাধিক লোকের মিছিল ও বিক্ষোভ সংগঠিত করা হল। মিছিল বাজার পরিক্রমা করে বাস স্ট্যান্ড-এ জমায়েত হয়। মিছিল সংগঠিত করেন এআইকেএম, আয়ারলা ও আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের পক্ষ থেকে। বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন এর কালনা লোকাল কমিটির সম্পাদক কমরেড রফিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন আয়ারলা জেলা সভাপতি কমরেড হরেকৃষ্ণ ঘোষ, এআইকেএম এর জেলা কমিটির সদস্য কমরেড প্রদ্যুত ঘোষ ও আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের কমরেডরা।

অর্ডিন্যান্স পুড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কর্মসূচী সমাপ্ত হয় ।

pand

 

হুগলীর পান্ডুয়া ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম থেকে গরিব কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও আজ বিডিও অফিসে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে সামিল হন। মজুতদারীকে বৈধতা দেওয়া, চুক্তি চাষের নামে কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া এবং অতিকায় খাদ্য ব্যবসায়ীদের হাতে ফসল কেনার দায় সঁপে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের আনা অর্ডিনান্সের কপি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে অর্ডনান্সগুলি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা প্রতিবাদ পত্র বিডিওর হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিডিওর নিকট একশ দিনের কাজের জব কার্ড সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়,পঞ্চায়েতের উদ্যোগে তৈরি শৌচাগারের দুরবস্থা ইত্যাদি স্থানীয় সমস্যাগুলিও জানানো হয়। নিরঞ্জন বাগ, ইউসুফ মন্ডল, শিবলাল হাঁসদা, ময়না সরেন প্রমুখ কৃষক ও কৃষিমজুর নেতৃত্ব ডেপুটেশন টিমে ছিলেন।বিক্ষোভ কর্মসূচীতে আদিবাসী মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো ।

bala

 

বলাগড়েও এই কর্মসূচী পালিত করে ও ডেপুটেশন দেওয়া হয়।

মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের টেক্সটাইল মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এবং অর্ডিন্যান্স বিল পোড়ানো হয়। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যেই কর্মসূচী কার্যকর করতে হয়। কর্মসূচী পরিচালনা করেন জেলা সম্পাদক কমরেড রাজীব রায়। উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সদস্য কমরেড অপুর্ব লাহিড়ী, বহরমপুর শহরের সম্পাদক কমরেড রবি মন্ডল, যুবনেতা মনভোলা চৌধুরী, বেলডাঙার কমরেড আবুল হোসেন, আয়ারলার রাজ্য সভাপতি কমরেড সজল পাল ও অন্যান্য কয়েক জন। তারপর এআইকেএম ও আয়ারলার পক্ষ থেকে প্রধান মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারক লিপি জেলাশাসক মারফত পাঠানো হয়। এবং জেলাশাসকের উদ্দেশ্যে ও একটি স্মারক লিপি দেওয়া হল। জেলাশাসকের পক্ষ থেকে কেউই ডেপুটেশন গ্রহণ করেন নাই।দপ্তরে জমা দেওয়া হল ।

vad

 

কৃষি বাণিজ্য অর্ডিন্যান্স ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংশোধনী বাতিলের দাবিতে নদীয়ার ধুবুলিয়ায় সুবিমল সেগুপ্তের নেতৃত্বে ও কৃষ্ণনগরে জয়তু দেশমুখ ও অন্যান্য কৃষক নেতাদের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়।

আয়ারলা ও এআইকেএম-এর পক্ষ থেকে হাওড়া জেলাশাসকে মেইল করে পাঠানো হয় ডেপুটেশন এবং বাগনানের বাঙ্গালপুর এলাকায়  বিক্ষোভ দেখানো হয় স্থানীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। এআইকেএম-এর পক্ষে কমঃ দিলীপ দে আয়ারলার কমঃ সনাতন মনি ও নবীন সামন্ত বক্তব্য রাখেন।

bis

 

দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুুপুরে ডেপুটেশন সংগঠিত করা হয়। উপস্থিত ছিলেন কমরেড দিলীপ পাল।

জলপাইগুড়ি জেলায় কৃষক সমিতি ও আয়ারলার পক্ষ থেকে ঐদিন একই ইস্যুতে কর্মসূচী পালিত হয়।

bank

 

বাঁকুড়ায় এই দাবিতে কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী পালন করা হয়।

দাবিগুলি হল :

  • ১৷ কৃষি বাণিজ্য অর্ডিন্যান্স ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংশোধনী বাতিল করতে হবে।
  • ২৷ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধন করে কালোবাজারি ও মজুতদারীকে বৈধ করে তোলা চলবে না।
  • ৩৷ কৃষকদের ফসলের লাভজনক দাম গ্যারান্টি করতে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দামে গ্রামে ক্যাম্প করে প্রকৃত চাষিদের থেকে ফসল কেনা সুনিশ্চিত করতে হবে।
  • ৪৷ ২৫০০ টাকা কুইন্টাল দরে ধান ও ৬০০০ টাকায় পাট কিনতে হবে।
  • ৫৷ চুক্তি চাষের নামে কৃষিকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।
  • ৬৷ কৃষি পণ্য বাণিজ্যের সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ বৃহৎ পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।
  • ৭৷ সমস্ত ধরনের কৃষকদের সমস্ত রকম ঋন মুক্তির ব্যবস্থা  করতে হবে।
  • ৮৷ ভাগচাষি ও চুক্তিচাষিদের সমস্ত সরকারী সুযোগ সুবিধার গ্যারান্টি করতে হবে।
  • ৯৷ কৃষি জমি সুরক্ষা আইন চালু করতে হবে।
  • ১০৷ কৃষি পরিকাঠামোর উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
kolbac

১৬ জুন ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলসমূহের আহ্বানে আমফান ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত বাংলায় ‘জাতীয় বিপর্যয়’ ঘোষণা প্রভৃতি  দাবিতে, এবং করোনা সংক্রমণ রোখার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্ত কর্মসূচীর আহ্বান ছিল রাণী রাসমণি রোডে বিকেল ৩টে থেকে। কর্মসূচী শুরু হওয়ার আগেই সমস্ত কমরেডদের গ্রেফতার করে লালবাজার নিয়ে যায় পুলিশ। কমরেড কার্তিক পাল, বাসুদেব বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র যারাই সভাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন, তাঁদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগণার নৈহাটি পাওয়ার হাউস মোড়ে শতাধিক বামপন্থী কর্মী প্ল্যাকার্ড সহ শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ও হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য রাখে।

পানপুর বারাকপুর ব্লক-১ অফিসের সামনে বক্তব্য সহ বিক্ষোভ প্রদর্শন ও বিডিওর কাছে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে ডেপুটেশন‌ প্রদান করা হয়।

belg

 

বেলঘরিয়া রথতলায় প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে মানব বন্ধন করা হয়। অশোকনগর শহরে ১ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন। বসিরহাট টাউন হলের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচী চলে।

sili

 

শিলিগুড়ি প্রধান ডাকঘরের সামনে বিক্ষোভ অবস্থানে সামিল হন নেতৃত্ব ও কর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, পুলক গাঙ্গুলী, অপু চতুর্বদী, মোজাম্মেল হক, রুবী সেনগুপ্ত, শাশ্বতী সেনগুপ্ত।

duh

 

নদীয়ার ধুবুলিয়া বাম দলসমূহের যৌথ কর্মসূচী পালিত হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক সুবিমল সেনগুপ্ত ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং পার্টির কর্মীরা।

হুগলীর কোন্নগর চলচ্চিত্রম মোড়ের এবং হিন্দমোটরের ধাড়সা পাম্পে বামদল সমূহের যৌথ কর্মসূচী পালিত হয়।

মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে বাম দলগুলোর যৌথ কর্মসূচী পালন করা হয়।

mamt

 

পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান শহর, কালনা, মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী ১ ও ২ নং প্রভৃতি জায়গায় ১৬টি বাম দলের যৌথ কর্মসূচী পালিত হয়। মন্তেশ্বর কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির জেলা সম্পাদক কমরেড আনসারুল আমন মন্ডল।

ban

 

বাঁকুড়ার পুয়াবাগান মোড়ে এবং মাচানতলায় বাম দলসমূহের যৌথ কর্মসূচী পালিত হয়।

দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাঁকড়াহাটে সিপিআই(এমএল) ও সিপিআই(এম)-এর যৌথ মিছিল হয়।

পশ্চিম বর্ধমানের চিত্তরঞ্জন সন্নিহিত ডাবর মোড়ে (রূপনারায়ণপুর) ১৬টি বাম দলের আহ্বানে পূর্বঘোষিত দাবিতে যৌথ কর্মসূচী পালিত হয়।

এছাড়াও অন্যান্য অনেক জায়গায় এই কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।

baraarr

১৩ জুন, ২০২০, বিকাল ৫টায়, উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাত কলোনী মোড়ে AIPF ও APDR এর উদ্যোগে আমেরিকায় বর্ণ বৈষ্যেমের শিকার জর্জ ফ্লয়েড এর হত্যাকান্ড ও বর্ণ বৈষ্যেমের বিরুদ্ধে আমেরিকার জনগনের লড়াইয়ের সমর্থনে সংহতি জানাতে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হলো। বর্ণ বৈষয়মের বিরুদ্ধে এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতীয় বন্ধু মোদী-অমিত শাহ জুটির ফ্যাস্টিস রেজিমের বিরুদ্ধে, মোদী সরকারের দলিত হত্যা ও সাম্প্রদায়িক ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে  এবং অপরিকল্পিত লকডাউনের জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের বিপদের মুখে ফেলে দেওয়ার অবিমিশ্রকারী পদক্ষেপ, বহু শ্রমিকের পথদুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত মোদি সরকারের কাছে দাবি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত রেশন এবং প্রতিমাসে নগদে ১০,০০০ টাকা প্রদান করতে হবে, এছাড়াও বর্তমান পরিস্থিতিতে সুধা ভরদ্বাজ, আনন্দ তেলতুমবে, গৌতম নওলখা, কবি ভার ভারা রাও সহ সকল বন্দীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো বারাসাত কলোনী মোড়। প্রতিবাদ সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন AIPF এর পক্ষে কমরেড সুজিত ঘোষ। তিনি তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “আমেরিকায় যে ভাবে বর্ণ বৈষয়মের শিকার জর্জ ফ্লয়েড এর উপর পাশবিক অত্যাচারকে সংগঠিত করেছে সেদেশের পুলিশ, গোটা বিশ্বের মানুষ সেই ঘটনার ভিডিও দেখে স্তম্ভিত, ব্যথিত; এজাতীয় অমানবিক ঘটনার নিন্দা জানবার আমাদের কোনো ভাষা নেই।

আজ গোটা আমেরিকা ও ইউরোপের দেশে দেশে বর্ণ বৈষয়ম্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছেন, উত্তাল গণ বিক্ষোভে হাজারে হাজারে মানুষ অংশগ্রহণ করছেন, সে দেশের নাগরিকদের বিক্ষোভ আন্দোলনকে সংহতি জানাই।” তিনি আরো বলেন, “সাথে সাথে আমাদের দেশেও যেভাবে দলিত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, তাঁদের জল জমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে, গোটা দেশ জুড়ে লকডাউনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র সরকার একের পর এক শ্রমিক কৃষক স্বার্থ বিরোধী আইন লাগু করছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। দাবি জানাই অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।” সমগ্র সভাটি পরিচালনা করেন এপিডিআর বারাসাত শাখার পক্ষে বাপ্পা। এই প্রতিবাদ সভা স্থানীয় মানুষ জনকে যথেষ্ট উৎসুক করে তোলে।

gargaaar

তেত্রিশ ফুট গাছের ডালে ঝুলছে ঘরের চাল। ঝড় এসেছিল কুড়ি বাইশ দিন আগে। এখনও ঘর সারাই করা যায়নি। ঘরের ঝুলন্ত চালের দিকে আঙুল তুলে মাহিরা বেওয়া বলল, ‘কেমন আছি বুঝতে পারছেন তো?’ ইঁটের সরু রাস্তাটা মূল রাস্তা থেকে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে নদী বাঁধ পর্যন্ত। পথের দু’পাশে নীচু চাষের জমির আর অস্তিত্ব নেই। পুরোটাই জলের তলায়। মাথা উঁচিয়ে থাকা রাস্তাটাও জলে থইথই। হাঁটু অব্দি জলে ডোবা ঐ পথেই পৌঁছলাম নদীবাধের কাছে। হিঙ্গলগঞ্জের লস্করভেড়ির মানুষ গুলো বাঁধ বাঁচানোর লড়াইটা শুরু করেছেন আবার। দিন চারেক আগে বাঁধা হয়েছিল ভাঙা বাঁধটি। নতুন করে ভেঙে পড়া বাঁধের সামনে মানুষের জটলাটা এখনো একই রকম। লড়াইটা জারি রেখেছেন আজো। চোখেমুখে সব হারানোর হতাশা। চারপাশে জলে ভাসছে মরা গরু, ছাগল, মাছ। খাবার নেই। জল নেই। খালি পেটে বমি ওঠার যোগাড় দুর্গত মানুষগুলোর।

da

 

এর মধ্যেই চোখে পড়ল চেনা মুখ। সুভাষ দাশ। হতাশ চোখে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সুভাষ বললেন, জমিটা বাঁচাতে পারলাম না। ঐ দেখুন আমার জমি। সম্বচ্ছরের চালটা ওখান থেকেই হয়ে যায়। এখন সেখানে জোয়ারের পানি। কথা হল শিবচন্দ্রপুরের গোপাল নস্করের সঙ্গেও। প্রতিবেশির বাড়িতেই রয়েছেন গোপালবাবু পুরো পরিবার সহ। কোনো ত্রিপল এখনো জোটেনি তাঁদের। এর আগেও বেশ কয়েকবার ঝড়ে উড়েছিল বাড়ির চাল। কোনো এক রাজনৈতিক প্রতিনিধি এসে বলেছিলেন একটু শক্তপোক্ত করে খুঁটি পুঁততে পারেন না যাতে ঝড় বৃষ্টি এলেই এভাবে ক্ষতির শিকার হতে না হয়। ইটভাটায় ফাইফরমাশ খাটা গোপালবাবু সেই রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলকে বোঝাতেই পারেননি যে ইটভাটায় কাজ করলেও নিজের বাড়ি তৈরির জন্য একটা ইট কেনার সামর্থ্য ও তাঁর নেই, শক্তপোক্ত বাড়ির স্বপ্ন তাই তাঁর কাছে অধরাই থেকে যায়। উত্তর ২৪ পরগণার দেগঙ্গায় পূজা দে-র উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এখনও বাকি আছে দুটো। আমপানে বইপত্র তো বটেই, অ্যাডমিট কার্ড ও ভেসে গেছে। পাশের গ্রাম নস্করঘেরির প্রভাত নস্করের বড় ছেলে সুবলের বড় পছন্দ পূজাকে। ছেলেটার মাথায় একটু ছিট মতো আছে। তাই এতদিন পূজার মা বিরোধ করছিল, কিন্তু আর বোধহয় ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। আর ঠেকিয়ে হবেই বা কী? মনে আশা ছিল মেয়েটা পাশ দিলে কোথাও একটা কাজ-টাজে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। তিনু দাদা ওরকম বলেছিল। এখন কোথায় কী? তিনু দাদা নাকি বিজেপিতে লাইন মারছে। তার চেয়ে বরং এই ভালো। প্রভাত নস্করের জমিজিরেত আছে অনেকখানি। মেয়েটার ভাতের অভাব হবে না। আর মেয়েমানুষের কপালে যা লেখা আছে তাইতো হবে।

fish

 

একটু এগোতেই দেখা গেল রাস্তার দু’পাশে মাটিতে মিশে গেছে মেছোভেড়ির আলঘর। মিষ্টি জলের পুকুরে নোনা জল ঢুকে মাছ মরে গেছে। হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারী পঞ্চায়েত এলাকায় বাগধারা গ্রামের ছবিটা এখন এমনই। আমপানে ঘর ভেঙেছে। বাঁধ ভেঙে ভাসা নদীর জল ভাসিয়েছে জমিজিরেত। আপাতত বাঁধের উপরে কাটছে দিনরাত। চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মৃত পশুর দেহ, মরা মাছ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এভাবে জমা জলে মরা পশু পড়ে থাকলে যেকোনও সময় সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এই জল পেটে গেলে তো আর রক্ষা নেই। কিন্তু কোনো উপায় নেই। স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, প্রতিটি মানুষের কাছে দ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে হবে। পানের অযোগ্য জল খেয়ে পেটের রোগ ছড়াবে। বাচ্চারা দ্রুত আন্ত্রিক জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে। রূপমারী গ্রামের বাদল ঘোষ জানান, জমিটা বাঁচাতে পারলাম না। ঝড়ের পর থেকে খাবার নেই। জল নেই। ত্রাণ নিয়ে রাজনীতির পুরোনো খেলা মাথাচাড়া দিচ্ছে ইতিউতি। তা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। তবে সব হারানো মানুষগুলোর হা-হুতাশ ঐ জলে ডুবে যাওয়া ধান আনাজের জমি ঘিরে।

স্থানীয় বাসিন্দারাই হিসাব দিলেন এলাকায় প্রায় এক হাজার বিঘা চাষের জমি জলের তলায় চলে গেছে। ধানের জমি তো বটেই, গাছ ভরা উচ্ছে, ঝিঙে, ঢেড়শ সবই জলের নীচে। বিঘের পর বিঘে জমি জুড়ে ভাসছে পানের বরজ। বিস্তীর্ণ সেই জমির ওপর দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের জল। জমি এখন নদীই। জমিতে জোয়ার ভাটা খেলছে। কংক্রিটের বাঁধ ছাড়া এ জমিতে রাখার কোনো উপায় নেই। ফেরার পথে দেখা হয়ে গেল হকার ভাইদের দলটির সঙ্গে। মুড়ি-ঘুগনির ব্যবসাদার স্বরূপ ঘোষ মুড়ি এনেছেন, মুদিখানার দোকানদার সঞ্জু দেবী শাহ মুদিখানার জিনিসপত্র চাল গাল আলু পিঁয়াজ সয়াবিন এনেছেন, ফাস্টফুডের দোকানদার রাম নস্কর পেটি ভরে ডিম এনেছেন আমপান-ধ্বস্ত স্বজনদের জন্য। তাই নিয়েই ঘুনি শকুন্তলার সোমাইয়া বিবি, ঝর্ণা বৌদি, কিশোরী ঝাঁরা বেশ খুশি। তবে ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে প্রচুর জায়গাতেই। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে পর্যাপ্ত চিঁড়ে গুড় চাল ডাল তেল নুন পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন চাল ডাল যে ফুটিয়ে খাব তার জ্বালানি কোথায়? একটুকরো শুকনো কাঠের টুকরোও তো নেই।

dad

 

নদী বাঁধ ভাঙার পর থেকেই নেতারা এসেছেন। বাঁধ পরিদর্শন করে ফিরেও গেছেন। দ্রুত বাঁধ মেরামতির আশ্বাস দিয়ে গেছেন। মানুষ বলছেন, খাবারের ব্যবস্থা হয়তো হবে, মাথা গোঁজার একটা ঠাঁইও হয়ে যাবে। কিন্তু নোনা জল ঢোকা চাষের জমিতে চাষ কি আর হবে? এরই মধ্যে কোত্থেকে একটা প্লাস্টিক যোগাড় করে সেটা চাল উড়ে যাওয়া ঘরের একদিকে টাঙানোর চেষ্টা করছিলেন সুধীন মন্ডল। চারপাশে খোলা হাওয়ার সঙ্গে যুঝে যাওয়ার একটা ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। কথায় ঝরে পড়ছিল চূড়ান্ত হতাশা – এই হল আমাদের ভবিতব্য। বারবার ঘর ভাঙবে। আর আমরা জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব।

-- সুতপা চক্রবর্তী
(লেখিকা কালান্তর পত্রিকার সাথে যুক্ত) 

tte

 

gggga

মানেটা কী? “সারে যাঁহাসে আচ্ছা ....” এ তো গান, বহু বার শোনা দিকপাল সব শিল্পীদের কণ্ঠে। তারান্নুমের কণ্ঠে শুনেছেন? সেটা কে? তারান্নুম পারভীন, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ওকে গান শোনাতে বলায় বললো যে এই একটাই নাকি গান ওর মুখস্থ! এক নিঃশ্বাসে গেয়ে ফেললো! আচ্ছা ওকেও কি দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট নিতে হবে তাদের থেকে? যারা কিছুদিন আগেই (১২ মে) ওদের সব সম্বল ভেঙে গুঁড়িয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে! উচ্চমাধ্যমিক এখনও শেষ হয়নি, তারান্নুমদের এডমিট কার্ড সহ সব জরুরি নথি পুড়ে ছাই!

ছাত্র সংগঠন আইসা (এআইএসএ)-র তরফ থেকে গত ১২ জুন ওকে আর ওর মতোই ছাত্রছাত্রীদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভদ্রেশ্বর থানায় ডায়েরী করাতে, এরপরে যেতে হবে শিক্ষাদপ্তরে ... যদিও ঘরবাড়ি হারিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের থেকেও জীবনের অনেক বড় পরীক্ষা দিয়েই ফেলেছে ওরা! আইসা ও এআইপিএফ ওদের জন্য কিছু জামাকাপড়ের ব্যবস্থাও করেছে কারণ প্রাণ বাঁচাতে এক কাপড়ে ঘর ছাড়তে হয়েছিল ওদেরকে, আশ্রয় শিবিরে সেই পোষাকেই দিনের পর দিন কাটানো!

জীবনের পরীক্ষা খুশিরাও দিচ্ছে, গোঁদলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক মহল্লায়। কারখানা বন্ধ ছিলই, তার উপর প্রতিদিন মালিকপক্ষ বিদ্যুতের লাইন কেটে দিতো লেবার লাইনে! গরমে, আলোর অভাবে পড়তে পারতোনা খুশি, রাজ, রোহনরা ... আইসা লড়াই করে ফিরিয়েছে বিদ্যুত, এখন মোটামুটি সারাদিন কারেন্ট থাকে ... আইসার ফ্রি কোচিং ক্যাম্পে পড়ে ওরা ... লক ডাউনের মধ্যে সবাই যখন আরো কষ্টে তখন এলাকায় নানা ছুঁতোনাতায় অশান্তি লাগালো আরএসএস, বিজেপি ... মানুষে মানুষে কী তীব্র ঘৃণা, কী বিদ্বেষ! ... তেলিনিপাড়ার নাম শুনলে আঁতকে ওঠে খুশিরা আর গোঁদলপাড়ার নাম শুনলে সন্ত্রস্ত তারান্নুমরা! এই পরিস্থিতিতে আরএসএসের লক্ষ্য ছিল পালানো, যা তাদের অভ্যাস – স্বাধীনতা সংগ্রাম ছেড়ে পালানো, দাঙ্গা লাগিয়ে, মানুষ খুন করে পালানো!

dee

 

আর আইসার ইচ্ছা ছিল মেলানো, এক বৃন্তের দুটো কুসুমকে আবার কাছাকাছি আনা ... খুশি প্রথমে একটু থমকে যায়, তারপর দুর্দিনের সাথী আইসার কমরেডদের দেখে বৃষ্টির মধ্যেও এক ছুটে চলে এলো তেলিনিপাড়ার দিকে ... পাইকপাড়ার যে আশ্রয় ক্যাম্পে সাবানা, শাহিদ, তারান্নুমরা আছে সেখানে এসে অজানা ভয় কাটিয়ে সামনে থেকে দেখলো ওদেরকে প্রথমবার ... শারীরিক দূরত্ব রেখেও লাজুক হাসির যে বন্ধুত্বের সেতুটা তৈরি হচ্ছিল সমবয়সী ফুলগুলোর মধ্যে সেই সেতুই চলে গেছে বিনোদ মিশ্রের মতো আরো অনেকের স্বপ্নের ভারতবর্ষের দিকে ... এখন আশা করি বোঝা গেল শুরুর ঐ কথাটার মানে!

সংযোজন :

wwtea

 

১৮ জুন, চন্দননগর মহকুমা শাসকের কাছে দাবিপত্র জমা দিলেন দাঙ্গাবিধ্বস্ত তেলিনিপাড়ার ছাত্রছাত্রীরা। সংগঠিত দাঙ্গায় যে কেবল তাঁদের বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে তাই নয়, বাড়ির সমস্ত কাগজপত্র টেনে বের করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় শিবিরে আছেন এখন তাঁরা। অনেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড সহ সমস্ত ডকুমেন্ট, বইখাতা, স্কুলড্রেস পুড়ে গেছে দাঙ্গার আগুনে। গত সপ্তাহে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। আজ মহকুমা শাসকের কাছে দাবি জানানো হয় : পড়াশোনা চালানোর জন্য এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের অবিলম্বে ১০,০০০ টাকা করে সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে, অবিলম্বে অ্যাডমিট কার্ড সহ সমস্ত ডকুমেন্টের ডুপ্লিকেট কপি তৈরি করে দিতে হবে, বই খাতা স্কুলড্রেস সহ সমস্ত সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে এবং যাবতীয় ফি মকুব করতে হবে, আশ্রয় শিবিরে ইলেক্ট্রিকের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে পরিবার সহ তাঁরা যাতে নিজের বাড়িতে ফিরে নির্ভয়ে বসবাস ও পড়াশোনা করতে পারে তার বন্দোবস্ত প্রশাসনকে করতে হবে, করোনা স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত মাস্ক গ্লাভস ইত্যাদি সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। আইসা ও এআইপিএফের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে এই লড়াই চলছে। আইসার পক্ষ থেকে সৌরভ রায় জিনিয়েছেন যে এই ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই তথাকথিত ‘প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী’ এবং চটকলের শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়ে হিসেবে এমনিতেই প্রতিকুল আর্থিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে পড়াশোনা চালাতে হয় তাঁদের, বর্তমানে একে তো করোনা-লকডাউন এবং তদুপরি এই সংগঠিত দাঙ্গায় তাঁদের শিক্ষার অধিকার লুট হয়ে যেতে বসেছে, সরকারের প্রথম কর্তব্য হল এইসব ছাত্রছাত্রীর শিক্ষার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা

– সৌরভ 

dersea

একই সাথে বয়ে চলেছে দুই লড়াই। যেমন বয়ে চলে মিসিসিপি-মিসৌরি বা আমাদের পদ্মা-মেঘনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের বন্দর-নগরী সিয়াটেলেও মিলেমিশে একাকার হয়ে বয়ে চলেছে দু’টি আপাত-দৃষ্টিতে স্বতন্ত্র গণআন্দোলন।

মিনিয়াপোলিসে প্রকাশ্য রাস্তায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জর্জ ফ্লয়েডের নির্মম হত্যাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদী ঝড় যখন আছড়ে পড়ছে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে তখন তার তীব্রতম অভিব্যাক্তি অনুভূত হচ্ছে সিয়াটেল অঞ্চলেই। আবার, অতিমারী মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ চিকিৎসা-ব্যবস্থা ও সংকটে জর্জরিত কর্পোরেট স্বার্থবাহী অর্থনীতির বিরোধিতাতেও আমরা সম্মুখ সমরে দেখতে পাই মার্কিন মুলুকের এই প্রখ্যাত শহরকেই। এখানে আজ একই খাতে প্রবাহিত হচ্ছে বর্ণ-বৈষম্য ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, রেসিজম ও ক্যাপিট্যালিজম, দু’ইয়েরই বিরুদ্ধে এক প্রতিস্পর্দ্ধি গণ-উত্থান। পাশাপাশি বয়ে চলা দু’টি নদী যেমন প্রবল প্লাবনে ফুলে-ফেঁপে উঠে, কুল ছাপিয়ে, মিলিয়ে যায় এক অবিচ্ছেদ্দ স্রোতধারায়, সিয়াটেলে তেমনই ঢেউয়ে ঢেউ মিলিয়ে একই ধারায় লীন হয়ে গেছে মানবাধিকারের লড়াই এবং শ্রেণীসংগ্রাম, এই দু’ইয়েরই মহাপ্লাবন।

সিয়াটেলের ইতিহাসেই আছে এই মহামিলনের সক্রিয় উপাদান। সাগর, পাহাড় আর চিরসবুজ জঙ্গলে ঘেরা ওয়াশিংটন রাজ্যের এই বৃহত্তম নগরীর পত্তন হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। ওই শতক জুড়েই, বিশেষ করে ১৮৬৫-১৮৯০ সালে, ঔপনিবেশিক প্রস্পেক্টররা – ইউরোপ থেকে আগত শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীর দল – পুঁজি আহরণের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে একের পর এক অভিযান চালিয়েছিল – ‘গোল্ড রাশ’ – বিস্তীর্ণ পশ্চিম অঞ্চলে – ‘দ্য ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’। ১৯৩০ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত অসংখ্য হলিউড ছবিতে প্রতিফলিত হয়েছে এই দুঃসাহসিক অভিযানগুলি – সিনেমার এক অনন্য শিল্পরূপ হিসাবে ছবিগুলির পরিচয় ‘ওয়েস্টার্ন’ নামে। জন ফোর্ডের ‘স্টেজকোচ’ কিংবা ‘মাই ডারলিং ক্লেমেন্টাইন’, জন হাস্টনের ‘মলটিজ ফ্যাল্কন’, হাওয়ার্ড হকসের ‘রেড রিভার’, ফ্রেড জিনেমানের ‘হাই নুন’ এবং আরও অনেক ছবি তো ক্ল্যাসিকের মর্যাদাও অর্জন করেছে। বলা বাহুল্য, ছবিগুলিতে রচিত হয়েছে শ্বেতাঙ্গ বসতিকারীদের জয়গাথা, তাদের বীরত্বের কল্প কাহিনী। যা বলা হয়নি তা হল ওই শ্বেতাঙ্গ অভিযাত্রীরা কী ভয়ংকর হিংসা, অত্যাচার ও হত্যালীলা চালিয়েছিল ওইসব অঞ্চলের জঙ্গলবাসী মানুষজনের ওপর। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম, জঙ্গল সাফ করে, পাহাড় গুঁড়িয়ে দিয়ে, নদী-ঝর্না দূষিত করে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ওই লাল-মুখো মানুষগুলির – রেড ইন্ডিয়ানদের – বেঁচে থাকার রসদ, চিরতরে ধ্বংস করা হয়েছিল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রীতিনীতি, সংস্কৃতি। ডি ব্রাউন রচিত ‘ব্যেরি মাই হার্ট এট উন্ডেড নী’ নামক গবেষনামূলক ইতিহাসের বইতে এর প্রভূত বিবরণ পাওয়া যায়।

দেখা যাচ্ছে, বর্ণ-বিদ্বেষের ওপর দাঁড়িয়েই গড়ে উঠেছিল মার্কিন পুঁজিবাদী সভ্যতা। সেটলার কলোনিয়ালিজম যে বর্ণের আধারেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করে তা সিয়াটেলের ইতিহাস ঘাঁটলেই পরিষ্কার হয়ে যায় : দুওয়ামিশরা ছিল এখানকার আদি জনগোষ্ঠী। নগর পত্তনের সাথে শুধু এদের জঙ্গল-জমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি, বঞ্চিত করা হয়েছিল মানুষের অধিকার থেকেও। এমনকি, ১৮৬৫ সালে সিয়াটেল বোর্ড অফ ট্রাস্টি একটি অর্ডিনান্স পাশ করে শহর-সীমার মধ্যে ইন্ডিয়ানদের বসবাস নিষিদ্ধ করে দেয়। এবং আজ অবধি মার্কিন সরকার সিয়াটেলের আদিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিচিতি স্বীকার করেনি। যদিও সিয়াটেল নামটা রাখা হয়েছিল তৎকালীন দুওয়ামিশ প্রধান সি’আহল-কে স্মরণ করেই।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিল্প ও উচ্চ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশের মাধ্যমে দেশে দেশে পুঁজিবাদ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় এবং পুঁজির বিশ্বায়িত হওয়ার তাড়নায় বেঁধে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এরই সুযোগ নিতে ১৯১৬ সালে সিয়াটেলে চালু হয় বিমান প্রস্তুতকারী শিল্প – কম্পানির নাম বোয়িং। এরই প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম বোয়িং আনুষঙ্গিক কয়েকটি আইন তৈরি করেন যার ফলে অ-শ্বেতাঙ্গদের কাছে শহর ও শহরতলির কোনও রিয়েল এস্টেট বিক্রয় নানান বাধানিষেধের গণ্ডিতে আটকে দেওয়া হয়। বর্ণবাদের যে একটা অর্থনৈতিক ভিত্তি আছে তা এর থেকেই পরিষ্কার।

ccca

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দু-এক দশক আপাত-স্থিতিশীল থাকলেও পুঁজিবাদের আরও গভীর সংকট ক্রমশ ঘনিয়ে আসতে থাকে। এরই মোকাবিলায় ১৯৯০-এর শুরুতে বিশ্ব জুড়ে চালু করা হয় নয়া-উদারনীতিবাদ। যা আসলে পুঁজিবাদের সবচেয়ে আগ্রাসী, দাঁত-নোখ বার করা, হিংস্র, ধ্বংসাত্মক রূপ। এবং যা পুঁজির সঞ্চয়ন বাড়িয়ে দেয় শত শত গুণ, আপামর সাধারণ মানুষকে নিংড়ে, শুষে, নিঃস্ব করে দিয়ে।

নব্বই দশকের শুরুতেই, নয়া-উদারনীতির হাত ধরে, ঘটে যায় তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) বা ডিজিটাল বিপ্লবও। ঘরে ঘরে পৌঁছয় কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেট, আরও কত কী। এর প্রভাবে ব্যাপকভাবে পালটে যেতে থাকে স্বাভাবিক জীবনযাপন। এই আইটি বা ডিজিটাল বিপ্লবকে পাথেয় করে আসরে নামে একঝাঁক নয়া-পুঁজিপতি, যারা মাত্র দু-আড়াই দশকেই বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নয়া-উদারনীতিবাদ ও ডিজিটাল বিপ্লবের জোট যে অনেকটাই পালটে দিয়েছে পুঁজিবাদের মৌলিক চরিত্রকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আজকের এই ‘নয়া দুনিয়া’-য় সিয়াটেলের গুরুত্ব এইখানেই। একদিকে মার্কিনি পুঁজিপতিদের কাছে তাদের প্রাণের এই শহরটি যেন নয়া-উদারনৈতিক বিশ্বপুঁজির বেস ক্যাম্প, অপরদিকে ডিজিটাল বিপ্লবের কান্ডারীদের এটাই আঁতুড়ঘর, এটাই মুল ঘাঁটি। বিল গেটস্-এর সফটওয়্যার কম্পানি মাইক্রোসফট্ কিংবা জেফ বেজস-এর অনলাইন সার্ভিস প্রোভাইডার আ্যমাজন-এর হেড আপিস তো এই সিয়াটেলেই। এরাই সিয়াটেলের সমৃদ্ধশালী অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক, দুনিয়ার অর্থনীতির স্টিয়ারিংও এদের হাতে। প্রসঙ্গত, গত পাঁচ বছর ধরে দুনিয়ার প্রধান বিত্তশালীদের তালিকায় একেবারে প্রথম স্থানে আছেন বিল গেটস্ ও জেফ বেজস (আ্যমাজনের সমস্ত সম্পদের মূল্য প্রায় $১৪০ বিলিয়ন; করোনা ভাইরাস আগমনের পরে, লকডাউনের জমানাতেও, এদের আয় $৩৩ বিলিয়ন – সূত্রঃ ইন্টারনেট)।

এই নয় যে সাড়ে সাত লক্ষ জনসংখ্যার মেগা-নগরী সিয়াটেল কেবলমাত্র ধনশালী ও পুঁজিবাদীদের শহর। ন্যুনতম অধিকার-বর্জিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথা তো আগেই বলা হয়েছে। এছাড়াও এই শহরাঞ্চলে রয়েছে শিল্পে ও বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োজিত সাধারণ মজদুর ও মাইনে-পাওয়া কর্মী, যারাও নানা উপায়ে শোষিত, বঞ্চিত। একেবারে গরিব, সর্বহারা না হলেও, পৃথিবীর বৃহত্তম ধনকুবেরদের নিজেদের জায়গায় এদের আয়ের হিসেব নিলে ভয়ানক অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্রটি পরিষ্কার ফুটে ওঠে। সিয়াটেলে তাই সব সময়েই চলে আসছে পুঁজি ও শ্রমের স্বার্থের সংঘাত। এখানকার র‍্যাডিক্যাল আ্যকটিভিজমের সূত্রপাত সেখান থেকেই। ১৯১৯ সালে যুক্ত রাষ্ট্রে বিংশ শতাব্দীর প্রথম সাধারণ ধর্মঘট হয়েছিল এ অঞ্চলেই। আবার ১৯৯৯ সালে নয়া-উদারনীতির বিরুদ্ধে জ্বলে উঠে বিশ্ব জুড়ে আন্দোলনের সূচনা করেছিল সিয়াটেলই।

১৯৭০ সালে একদিন ব্ল্যাক প্যান্থার-এর নেতৃত্বে এখানকার ইন্ডিয়ান ও শ্রমজীবী মানুষেরা শহরের সমৃদ্ধশালী এলাকা ম্যাগনোলিয়া দখল করে নেয়। পুলিশ নির্দয় আঘাত হানে কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদীরাই জয়ী হয়। এ ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটে গেল জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে, আরও বিশাল পরিসরে : অন্যান্য শহরের মতো সিয়াটেলেও কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষ চলছিল। ৫ জুন বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটল হিল এলাকায় পুলিশ সদর দপ্তর ঘেরাও করে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ থানা পরিত্যাগ করে চলে যায়। জনতার দখলে চলে যায় ক্যাপিটল হিল। ব্যারিকেডের মুখ ঘুড়িয়ে মুক্ত এলাকাটি পাহারা দিতে থাকে সশস্ত্র যুবকেরা। খোলা রাস্তায়, চত্বরে বক্তৃতার সাথে চলতে থাকে বাচ্চাদের হুটোপুটি, সিনেমা দেখা, গিটারের ঝংকার, গণ-হেঁসেলে রান্না আর একসাথে খাওয়াদাওয়া।

caz

 

এলাকাটির নাম দেওয়া হয়েছিল : ‘ক্যাপিটল হিল অটোনমাস জোন’ (চ্যাজ)। পরে নাম পালটে হয় : ‘ক্যাপিটল হিল অক্যুপায়েড প্রোটেস্ট’ (চপ)। কোনো একটি পোস্টারে আবার লেখা ছিল : ‘পিপলস রিপাবলিক অফ ক্যাপিটল হিল’। স্লোগান উঠেছিল : ‘নো কপ, কো-অপস’ – ‘পুলিশ নয়, সমবায়’। অর্থাৎ, পুলিশের সাথে নয়া-উদারনৈতিক চেতনার ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদকেও বিদায় জানানো, যৌথ জীবনেই খুঁজে নেওয়া মুক্তির স্বাদ। এটাই কি ছিল মার্কসের সমাজতন্ত্র – ‘ফ্রী আ্যসোসিয়েশন অফ ফ্রী ইন্ডিভিজুয়ালস্’!

ডোনাল্ড ট্রাম্প সিয়াটেলের আন্দোলনকারীদের ‘ডোমেস্টিক টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন, মিলিটারী নামিয়ে দমন করার হুমকিও দিয়েছেন। প্রতিবাদীরা অবশ্য পিছিয়ে যাচ্ছেন না, দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। তারা বুঝেছেন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক লড়াইকে শ্রেণিসংগ্রামের আলোকে পরিচালিত করতে পারলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অন্তরে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব। জাতি-প্রথায় জীর্ণ ভারতবর্ষে আমাদের কি শেখার কিছুই নেই?

-- সুমিত 

howhow

হাওড়া ময়দানে বিগত ১০ জুন সিপিআই(এম এল), সিপিআই(এম), সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক সহ ১৬টি বাম ও সহযোগী দলের সভা হয় আমেরিকায় চলমান বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের সংহতিতে। লকডাউন পরবর্তীতে উপস্থিতি ছিল যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের হাওড়া জেলা সম্পাদক কমরেড দেবব্রত ভক্ত। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআইএম, সিপিআই, ফারওয়ার্ড ব্লক, লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতৃবৃন্দ।

১২ জুন বালি সাধারণ গ্রন্থাগারের সামনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এবং আইসা-র উদ্যোগে আমেরিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের সংহতিতে, ভারতে সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে এবং ভারভারা রাও, আনন্দ তেলতুম্বে, সাফুরা জারগার, অখিল গগৈ সহ সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে তুমুল বৃষ্টির মধ্যেই বিক্ষোভ কর্মসূচী সংগঠিত হয়।

cas

করোনার জন্য লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা, রথতলা, বাঁশদ্রোণী বাজারে, দুধ সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি হতে থাকে এবং কোনো কোনো জিনিস হঠাৎই বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। ওই সময় অরিজিৎ মিত্র স্মারক কমিটি ও ‘আজ শুক্রবার’ পত্রিকার পক্ষ থেকে বোরো অফিসে বিষয়টি জানাতে যায়। পরবর্তীতে সাবান ও মাস্ক সংগ্রহ করে অঞ্চলের কিছু বাড়িতে স্মারক কমিটি পৌঁছে দেওয়ার পর, বুঝতে পারে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে একটা বিপদ আসছে। অঞ্চলের দুজন রিকশাচালক বন্ধুর সহযোগিতায় এরপর স্মারক কমিটি বাড়ি বাড়ি চাল ডাল সংগ্রহ করে। বেশ কিছু মানুষ এই কাজে আমাদের সাহায্য করে। স্মারক কমিটি এককভাবে নাকতলা, বিধান পল্লী, কালীবাজার, এই সমস্ত অঞ্চলের ভ্যানচালক, রিকশাচালক, পরিচারিকা, নাট্যকর্মী বন্ধুদের ৫৫টি পরিবারকে ৬ বার (চাল, ডাল, তেল, আটা, সোয়াবিন, আলু, বিস্কুট) খাবার দিতে পেরেছে। এছাড়া সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এবং এআইসিসিটিইউ লকডাউন ও আমপান-এর কারণে যে ত্রাণ বিলি করে, সেখানে স্মারক কমিটি চাল, ডাল, শুকনো খাবার, ওষুধ ওনাদের হাতে তুলে দেয়। স্মারক কমিটি ত্রাণের কাজটি অঞ্চলের কয়েকজন এগিয়ে থাকা মানুষ এবং বেশ কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষের নির্ভয়ে এগিয়ে আসার জন্য করতে পেরেছে। সবথেকে বড় কথা আমাদের রিকশাচালক বন্ধুরা ত্রাণ দেওয়ার সময় সবাইকে বলছিলেন – “শুধু এইভাবে হবে না, সবাই মিলে সরকারের কাছে দাবি জানাতে হবে।”

chasss

গত ১৪ জুন রবিবার ভোরে সিপিআই(এমএল) লিবারেশানের আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটির অন‍্যতম সদস্য, পেশায় আইনজীবী বর্ষীয়ান কমরেড রঞ্জিত কুমার সরকার (চন্দনদা) আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ মস্তিষ্কের ক‍্যান্সারে ভুগছিলেন।

পার্টির আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটি কমরেড চন্দনদার প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত, তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে এবং কমরেডের স্ত্রী ও একমাত্র ছেলের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।

কমরেড চন্দনদা ১৯৯০-এর দশকের গোড়ায় সিপিএম ত্যাগ করে প্রথমে তদানীন্তন আইপিএফ, তারপরে সিপিআই(এমএল) লিবারেশানে যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে গণআন্দোলনে সংগঠকের ভূমিকা পালন করা সহ নানা জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। একবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন।

পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ এক শোকবার্তায় বলেন একজন বর্ষীয়ান, দৃঢ়চেতা, অমায়িক কমরেড চন্দনদার প্রয়াণ গভীর বেদনাদায়ক। মাঝে মধ্যে চিকিৎসার বিষয় নিয়ে কথা হোত। কিন্তু যে মারণ রোগ মস্তিষ্কে হানা দিয়েছিল, তার সাথে কমরেডের এই বয়সে লড়াইয়ের অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা বিজ্ঞান পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিল। তাই কমরেডকে এই অসময়ে চলে যেতে হল। একজন দৃঢ়চেতা কমিউনিস্ট বিপ্লবীর প্রয়াণে পার্টির রাজ্য কমিটি গভীর ভাবে মর্মাহত। তাঁর পরিবার পরিজন ও আলিপুরদুয়ার এবং উত্তরবঙ্গের সমস্ত কমরেডদের শোকের আমরা সমব্যথী। লাল সেলাম কমরেড চন্দনদা।

খণ্ড-27