জাত-ধর্ম নির্বিশেষে নারীরা লড়াইয়ের সামনের সারিতে

ফ্যাসিস্ট মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে নারীরা আজ লড়াইয়ের সামনের সারিতে। এবারের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সারা দেশে সভা মিটিং মিছিল সে লড়াইয়ের বার্তাই বহন করলো। পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলায় আইপোয়ার উদ্যোগে সভা, মিছিলের আয়োজন করা হয়, সেখানে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য আলোচনার সাথে সাথে আলোচনা করা হয় সিএএ-এনপিআর-এনআরসি’র মতো বিপর্যয়পকর আইন সম্পর্কে। এগুলি আমাদের দেশের মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের বেঁচে থাকার উপর কিভাবে আক্রমণ নামিয়ে আনছে, সে বিষয়ে। বেশ কিছু ছাত্রী সহ মহিলারা উৎসাহের সাথে এইসব আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

৭ মার্চ অশোকনগর বাণী পীঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির অশোকনগর শাখা এক আলোচনা সভা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করে। সমাজের নানাস্তরের মহিলাদের উপস্থিতিতে বর্তমান সময়ে মহিলাদের উপর সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক হামলা ও তার প্রতিরোধ বিষয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা করেন চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী ও মিতালি বিশ্বাস। সভার সূচনা করেন আঞ্চলিক সম্পাদক রিনা মজুমদার। এই অনুষ্ঠানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন যে, নাগরিকত্ব নিয়ে আন্দোলন নারী আন্দোলনে আজ সারা দেশে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সংগঠনের সদস্যা ছাত্রী অঙ্গনা বসাক আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন। শোভনা নাথ আলোচনা করেন বাল্যবিবাহের বিপদ এবং প্রতিরোধ নিয়ে। সংগঠনের রাজ্য নেত্রী জয়শ্রী দাস তাঁর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যায় বলেন – নারী  আন্দোলনকে শুধু দৈহিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ না থেকে মর্যাদা, সম মজুরি ও ক্ষমতার সর্বস্তরে সমানাধিকারের লড়াইতে উত্তীর্ণ করতে হবে। আলোচনার শেষে ‘সিনেমা অফ রেজিস্ট্যান্স’-এর পক্ষ থেকে নারী নির্যাতন, এনআরসি ও ডিটেনশন ক্যাম্প বিষয়ক তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

hoog

 

হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় চৈতালি সেনের নেতৃত্বে এনআরসি বিরোধী সভা করা হয় ৮ মার্চ। বহু দলিত, আদিবাসী, মুসলিম মহিলা এবং ছাত্রীদের উপস্থিতিতে সিএএ-এনপিআর-এনআরসি বিষয়ে বুঝিয়ে বলেন চন্দ্রাস্মিতা। তার প্রাণবন্ত আলোচনা উপস্থিত সকলকে প্রশ্ন করতে ও বক্তব্য রাখতে উৎসাহিত করেছে। আদিবাসী নেত্রী সরস্বতী বেসরা দৃঢ় রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন। তেভাগা আন্দোলনের অহল্যাকে নিয়ে সাথী সংগ্রাম ব্যানার্জি (ভিয়েত)-এর ‘শপথ’ কবিতা পাঠ সকলকে স্তব্ধ করে রেখেছিল। আলোচনার শেষে মিছিল সংগঠিত হয়।

how

 

হাওড়া জেলায় কল্যাণী গোস্বামীর নেতৃত্বে আলোচনা গান-নাচ-কবিতায় পালিত হয় রানীহাটি হাকোলা হাইস্কুলে। উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন শ্রেয়া কোলে। নৃত্য পরিবেশন করেন তমালী রায়, রুনুশ্রী খাড়া, নমিতা পাল। কবিতা পাঠ করেন বৈশাখী ঘোষ ও সোনা দাস। সঙ্গীত পরিবেশন করে বালি সংযোগ সংস্থা ও সুপর্ণা কোলের গানের সংস্থা। উপস্থিত ছিলেন রূপালী বাগ, অঞ্জনা মন্ডল,‍ দেবব্রত ভক্ত, নিলাশীষ বসু ও ডাঃ দেবাশীষ মুখার্জী সহ অনেকে। ‘চীৎকার করো মেয়ে’ গানটিকে নাচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন আশা কর্মীরা, যা অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রা দেয়। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শিখা গায়েন ও রুনু হালদার।

s 24

 

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে রাজ্যনেত্রী কাজল দত্তের পরিচালনায় এবং শিলিগুড়িতে কমরেড মীরা চতুর্বেদীর নেতৃত্বে সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে নারী দিবসে মহিলাদের অধিকার এবং বর্তমান সময়ে মানুষের ভাষা ও ধর্মের উপর আক্রমণ নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বজবজে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখেন উপস্থিত ছাত্রীরা।

bdn

 

বর্ধমানের আগরাদহে রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্তের নেতৃত্বে নারীদিবসের তাৎপর্য এবং এনআরসি-সিএএ-এনপিআর বিষয়ে বৈঠক হয়। কলকাতায় স্বপ্না চক্রবর্তী,শীলা দে সরকার, মমতা ঘোষের নেতৃত্বে রেনিয়া, রাজাবাজার অঞ্চলে এবং যাদবপুরের অম্বুজা আবাসনে নারীর সমানাধিকার, সমতা এবং এনআরসি বিষয়ক আলোচনাসভা করা হয়। কলকাতা জেলায় ‘নারী স্বাধিকার মঞ্চ’-এর পতাকাকে সামনে রেখে সমস্ত বামপন্থী মহিলা সংগঠনের উদ্যোগে একটি সুসজ্জিত মিছিল সংগঠিত হয়। এই মিছিল পার্ক সার্কাস এনআরসি-বিরোধী ধর্না মঞ্চে পৌঁছানোর পর সেখানে মানববন্ধন এবং মশাল প্রজ্জ্বলন করা হয়।

metia

 

মেটিয়াব্রুজ অঞ্চলের আইসার সংগঠক ছাত্রী আফসা’র নেতৃত্বে এই প্রথমবার ৮ মার্চ কর্মসূচী পালিত হল। সেখানে আইপোয়ার পক্ষ থেকে মিতালি এবং এআইপিএফ-এর পক্ষ থেকে মধুরিমা বক্তব্য রাখেন। উল্লেখযোগ্য দিক হল এইখানে কয়েকজন মহিলা জীবনে প্রথমবার মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখেন, এবং পরিবারের মধ্যে তারা কিভাবে শোষণের শিকার হন তার বর্ণনাও দিয়ে বলেন ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা জরুরী এবং নিজেদের অধিকার লড়েই অর্জন করে নিতে হবে। ছাত্রীরা তাদের শায়েরী আর গানের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন যে নির্ভয় স্বাধীনতার এই লড়াই লড়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত।

খণ্ড-27
সংখ্যা-7