খবরা-খবর
রেলের অরাজকতা বনাম জনগণের একগুঁয়েমি
stubbornness-of-the-people

১১ মার্চ ২০২৩, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া : লকডাউনের পর থেকেই মোদী সরকার লোকাল ট্রেনের ভাড়া বাড়িয়ে দেয় কোভিড স্পেশাল নাম দিয়ে, লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয় এবং রাতের দিকে একমাত্র ট্রেন হাওড়া থেকে পুরুলিয়া গামী চক্রধরপুর ট্রেনটির স্টপেজ বিষ্ণুপুর স্টেশনে বন্ধ হয়ে যায়। বিষ্ণুপুর স্টেশনে আবার স্টপেজ চালু করতে আইসাকে সামনে রেখে একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মেমোরেন্ডাম জমা করা হয় ২১ জুলাই ২০২১-এ। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংগঠন এই একই দাবিতে লড়াই আন্দোলন করে আসছিলেন।

গত ১০ তারিখ দুপুরের পর থেকে শুরু হয় প্রতিবাদী বিষ্ণুপুর নাগরিক মঞ্চের পক্ষ থেকে অনশন ও ধর্ণা কর্মসূচি। যোগ দেন রাজনৈতিক পরিচয় থাকা এবং না থাকা প্রায় ১২০০ সাধারণ মানুষ। দুইজন ব্যাক্তি টানা অনশন চালিয়ে যান। রেলের পক্ষ থেকে তাঁদের মিনিমাম হেল্থ চেকআপের ব্যবস্থাও হয়নি। ২৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরে মঞ্চ থেকে জনপ্রতিনিধিদেরও যুক্ত হয়ে বক্তব্যের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে আবেদন করার ঘোষণাও করা হয়। অবশেষে ১১ তারিখ সন্ধ্যায়, রেল কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে আশ্বাস দেয় আগামী দু’মাসের মধ্যে বিষ্ণুপুর স্টেশনে চক্রধরপুর ট্রেনটির স্টপেজ চালু করার। এই ঘোষণার পর অনশন ও ধর্ণা প্রত্যাহার করা হয়।

“আগামীতে রেলের বেসরকারিকরণ থেকে শুরু করে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে জনগণ এইভাবেই একত্রিত হয়ে আন্দোলনে যুক্ত হবেন বলে আশা রাখি”, বলে মন্তব্য করেন সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির নেত্রী কমরেড তিতাস গুপ্ত। এআইসিসিটিইউ নেতা ফারহান খান বলেন, “৩৬ ঘন্টার অধিক সময় ধরে অনশন করে মরে গেলেও এই কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের গণ-সেন্টিমেন্টাল ইস্যুতে নুন্যতম দাবি একটি ট্রেনের একটি স্টপেজ চালুর দাবিতেও অনড়, তাদের ব্যাবহার নিষ্ঠুর ও অমানবিক। আজ এই আন্দোলন, কৃষক আন্দোলনের মতোই একমাত্র দিশা দেখাচ্ছে যে, সর্বদল ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ লাগাতার আন্দোলন এই ফ্যাসিবাদী সরকারকেও টলাতে সক্ষম।”

এই আন্দোলনের মেজাজ শেষ অবধি বিজেপির বিরুদ্ধে গেল। এই আন্দোলনে অল পার্টি ইউনিটিরও একটা পরিবেশ তৈরি হয়। সকলে মিলে লাগাতার জনগণের দাবীতে আন্দোলন করতে পারলে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব। আরো বড় কথা, একটা মামুলী দাবিও কিন্তু সেন্টিমেন্টাল হয়ে যায়। এখান থেকে শুরু করে সামগ্রিকভাবে রেলকে বাঁচানোর লড়াই যদি নাগরিক মঞ্চের মাধ্যমে হয়, তবে সেটারও প্রয়োজনীয়তা আছে।

সর্বোপরি এর আগে এই ধরনের কিছু বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা বা এই মঞ্চের আয়োজকের একাংশ যা কিছু করেছে সেটা আখেরে বিজেপির লাভ হয়েছিল এবং এই প্রথম এই নতুন নামের মঞ্চে আমাদের সাথে আগেভাগেই যোগাযোগ রেখে শুরু করায় শেষ পর্যন্ত কিছুটা আশার আলো দেখা গেছে। ভবিষ্যতে এই মঞ্চকে কাঠামো প্রদানের চেষ্টাও করা হবে বলে আহ্বায়করা ঠিক করেছেন।

- ফারহান

খণ্ড-30
সংখ্যা-6