শ্রমজীবী মহিলাদের সাক্ষাৎকার
working women

গত ১৪-১৫ নভেম্বর ২০২২ চন্দননগরের রবীন্দ্র ভবনে পালিত হলো আয়ারলা বা সারা ভারত কৃষক ও গ্রামীণ মজুর সমিতির সপ্তম সম্মেলন। সেখানে একত্রিত হন সারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা হরেক রকম মানুষ। তাঁদের পোশাক তাঁদের ভাষা এক একজনের এক এক রকম।

কথা হলো বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা কয়েকজন মহিলার সঙ্গে। জানতে চেষ্টা করা হল তাঁদের সামাজিক পরিস্থিতি কী? তাঁদের বেতন কেমন বা তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা কতোটা? তাঁরা সারাদিন মাঠে কাজ করেন, এরপর তাঁদের বাড়ি ফিরে কাজ করতে হয়। তাই সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক সুরক্ষা এবং সমানাধিকারও দরকার।

ঝাড়খণ্ডের জামতলা জেলা থেকে আসা এক মহিলা কমরেড জানান তাঁদের বেতনের বৈষম্যতা। এর বিরুদ্ধে তাঁরা প্রতিবাদও করেন। মাঠে সারাদিন খাটুনির পর তাঁদের আবার বাড়িতেও কাজ করতে হয়। তাঁদের দাবি তাঁরা এই যে মাঠে কাজ করে মজুরি পান এতে নিজের জন্য ব্যয় করা দূরে থাক, এতে তো তাঁদের সংসার চলেই না। আবার তাঁদের বক্তব্য ছিল, যেসব পুরুষরা তাঁদের এইসব মাঠের কাজে নিযুক্ত করেন, যদি মহিলারা তাঁদের কথা না শোনেন তাঁদের নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকী ওই পুরুষের কথা না শুনলে তাঁদের কাজ দেয় না। এর প্রতিবাদ তাঁরা সংগঠন থেকে করে থাকেন। আর তাই এই প্রতিবাদের ডাকেই তাঁরা উপস্থিত ছিলেন এই সম্মেলনে।

আবার পাঞ্জাবের বর্ধন জেলা শেরপুর থেকে কামরিত পুর্ভিন্দর কৌরের দাবি এই যে, তাঁরা পুরুষদের মতো সমানাধিকার পান না। তাঁরা চান কোনোরকম কোনো পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই তাঁরা যে পুরুষদের সমান কাজ করেন, তারজন্য তাঁরা যেন সমান মজুরি আর সমান সম্মান পান।

আবার বিহারের জুহি নিশা, যিনি বিহার আইপোয়া’র সহসচিব, তিনি জানান মহিলারা কীভাবে তাঁদের পরিবারকে দেখাশোনা করার জন্য বিভিন্নরকম কাজে নিজেকে নিযুক্ত করে থাকেন। কিন্তু তারপরেও তাঁদের বেতন কিছুতেই পুরুষদের সমান হয় না। পুরুষকে যদি সেই কাজের জন্য ৩০০ টাকা দেওয়া হয়, একজন মহিলা সেই একই কাজের বিনিময়ে ২৫০ টাকা পান। এছাড়াও তাঁদের ওপর নানারকম শারীরিক নির্যাতন এমনকী তাঁরা বলাৎকারেরও শিকার হন। তিনিও চান পুরুষ মহিলার মধ্যে এই পার্থক্য দূর হোক। তিনি এও বললেন মহিলারা চাইলে সব করতে পারেন। তাই ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার কিছু নেই। এগিয়ে আসতে হবে তাঁদের এবং লড়াই লড়তে হবে। একই কথা বললেন কেরালার কোন্নর জেলার কে রত্নকুমারী দেবীও। পুরুষের সমান কাজ করেও তাঁরা আজ একই মজুরি পাননা। পেতে হয় নানারকম বাধা, এমনকী নিগ্রহের শিকার। কিন্তু আর কতদিন এইভাবে চলবে? দূর হোক এই বৈষম্য, ঘুচে যাক নারী পুরুষের এই পার্থক্য। গড়ে উঠুক নতুন সমাজ। যে সমাজে পুরুষ মহিলা সকলের বেতন সমান হবে, থাকবে সকলের সমানাধিকার, সম্মান দান এবং যেখানে থাকবে সামাজিক ও পারিবারিক সুরক্ষা।

– অবন্তী ভট্টাচার্য

খণ্ড-29
সংখ্যা-44