বিবৃতি
রাজস্থানের উদয়পুরে সদ্যসমাপ্ত জাতীয় সম্মেলন: সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির বিবৃতি

এবিভিপি-র আক্রমণের মুখে পড়া মোহনলাল সুখরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকা তথা আইপোয়া নেত্রীদের পাশে দাঁড়ান

সম্প্রতি এবিভিপি মোহনলাল সুখরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি জমা দিয়ে দাবি করে যে উদয়পুরে মহিলা সমিতির জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করার জন্য এআইপিডব্লিউএ-র সহ সভাপতি তথা ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সুধা চৌধুরী সহ অন্যান্য অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হোক।

গত ৮-৯ ফেব্রুয়ারি উদয়পুরে সফল ভাবে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত সাংবাদিক রাণা আয়ুব, থিয়েটার শিল্পী ডি স্বরস্বতী, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রীরা সহ সারা দেশ থেকে আসা এআইপিডব্লিউএ-র প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে এই সম্মেলনে শুরুতে হওয়া মিছিলে তুলে ধরা হয় নথির অভাবে আসামের এনআরসি-তে বাদ পরা মানুষের ৭০ শতাংশই মহিলা। সম্মেলন থেকে সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার ও সারা দেশে সমস্ত শাহীন বাগের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নেওয়া হয়।

পাটনার কোরাস দল এক নাটকের মধ্যে দিয়ে সিএএ, এনপিআর, এনআরসি-র সংবিধান বিরোধী, গরিব বিরোধী ও মহিলা বিরোধী স্বরূপ তুলে ধরে।

এবিভিপি দাবি করেছে যে এআইপিডব্লিউএ ‘সংবিধান বিরোধী’ ও ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ কারণ তারা সিএএ বিরোধী স্লোগান তুলেছে। এ এক চরম স্ববিরোধীতা যেখানে সরকার এবং অন্যায্য আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভের অধিকারকে ভারতের সংবিধান দ্বারাই চিহ্নিত ও সুরক্ষিত করা হয়েছে। বস্তুত, রাষ্ট্রদ্রোহের আইন, সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি-ই হল আসলে সংবিধান বিরোধী, কারণ এগুলো ভিন্ন মতকে, প্রতিবাদকে দমন করে।

এটা প্রথম বার নয় যখন এবিভিপি কমরেড সুধা চৌধুরীকে নিশানা করছে। ৫ বছর আগে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে ধর্ম সংক্রান্ত একটি সেমিনারে পেপার পড়তে আমন্ত্রণ জানান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন বামপন্থীদের সমালোচক, এমনকি হিন্দু ধর্মের বিষয়ে পাশ্চাত্যের গবেষকদের প্রতিও তাঁর সমালোচনা ছিল। সুধার রাজনীতির বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ঐ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানান।

কিন্তু এবিভিপি সুধা ও ঐ আমন্ত্রিত অধ্যাপক দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করে ও শাস্তি দাবি করে। তারা একটি ভিডিও ক্লিপ প্রচার করে দাবি করে ঐ আমন্ত্রিত অধ্যাপক ‘হিন্দু দেবতাদের অসম্মান’ করেছেন, বাস্তবে তিনি পাশ্চাত্য গবেষকদের কাজ দেখিয়ে তাদের সমালোচনা করছিলেন।

এটা আপাতভাবে অদ্ভুত হাস্যকর হলেও বাস্তবে পুলিশ এই অভিযোগের ভিত্তিতে ঐ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কেস ফাইল করে।

এবিভিপি এবং সংঘ পরিবারের ঘরানায়, বিদ্যাচর্চা (সমালোচনা করার জন্য বই পড়া বা তার উল্লেখ করা সহ) এক নিষিদ্ধ বস্তু, ভিন্ন মতও তাই।

আমরা সুধা তথা এআইপিডব্লিউএ সহ এবিভিপি-র নিশানায় আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত অধ্যাপকদের সংহতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

রতি রাও, সভানেত্রী
মীনা তেওয়ারী, সাধারণ সম্পাদিকা
কবিতা কৃষ্ণাণ, সম্পাদিকা

খণ্ড-27
সংখ্যা-3