ঘটনা ও প্রবণতা

বিদ্বেষ-বিভাজনের পরিবেশ জিইয়ে রাখার কানুনী ইন্ধন যোগানো চলছেই

প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ এর সাথে যুক্ত করেন নবতর শ্লোগান, ‘ সবকা বিশ্বাস’। তার তিন মাসের মাথায় অসমে নামলো এনআরসি। যার বিশেষ লক্ষ্য হল সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিকদের হয় ‘বিদেশী’ তকমা দিয়ে বিতাড়ন করা, নয়তো সেই ভয়ে তটস্থ রেখে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় প্রতিদিন হুঙ্কার দিচ্ছেন সারা দেশে এনআরসি হবে।

পরিবেশ কেমন বিষিয়ে তোলা হচ্ছে তার এক নমুনা লক্ষ্যণীয় মোদী-অমিত শাহ’দের গুজরাটের বদোদরায়। সেই গুজরাট, যেখানে এই শতকের গোড়ার দিকে কয়েকদিন ধরে সংগঠিত হয়েছিল দুই সহস্রাধিক সংখ্যালঘু আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার গণহত্যা।

বদোদরার বসনা রোডে রয়েছে সমর্পণ সোসাইটি নামে এক হাউসিং কমপ্লেক্স। ঐ আবাসনে আছে ১৭০টি ঘর, তার মধ্যে দুটি ঘর দুই মুসলিম পরিবারকে বিক্রি করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। আর একটি ঘর ৯৯ বছরের লিজ চুক্তিতে দেওয়া হয় অন্য একজন মুসলিমকে। এ নিয়ে সেখানে এতদিন কোনো জটিলতা হয়নি। আপত্তির সূত্রপাত সাম্প্রতিক এক হস্তান্তরকে উপলক্ষ্য করে। মহেশ পালানি নামে এক হিন্দু আবাসিক তার ফ্ল্যাটটি একজন মুসলিমকে বিক্রি করার অনুমোদনের জন্য আবেদন করেও সোসাইটি সদস্যদের চাপে পুলিশী ভেরিফিকেশনের আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। সোসাইটির চাপ হল, এভাবে একজন মুসলিমকে ফ্ল্যাট বিক্রি করলে এলাকার আবাসনের বিক্রয় মূল্য কমে যাবে। এলাকাটি একটি আইনের আওতাধীন। আইনটি হল, ‘গুজরাট প্রহিবিশন অব ট্রান্সফার অব ইমমুভেবল প্রপার্টি এ্যান্ড প্রভিসনস্ ফর প্রোটেকশন অব টেনান্টস্ ফ্রম এভিকশন ফ্রম প্রেমিসেস ইন ডিস্টার্বড্ এরিয়াস্ (এ্যামেন্ডমেন্ট) এ্যাক্ট। সংক্ষেপে, স্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তর বা সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের বিধিনিষেধের আইন আছে। এই আইন মোতাবেক ফ্ল্যাট বেচাকেনার ক্ষেত্রে সোসাইটি প্রেসিডেন্ট ও ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরের থেকে অনুমোদন (এনওসি) নেওয়া বাধ্যতামূলক। উপরোক্ত উপদ্রুত এলাকা আইনানুসারে হিন্দু এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত বা মুসলিম এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত কেউ নিজ সম্প্রদায়ের সকলের সম্মতি ছাড়া সম্পত্তি বেচাকেনা করতে পারবেন না। স্থানীয় থানার এক সাব ইম্সপেক্টরের কথা হল বিষয়টি আপসে মিটে গেছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে পুলিশের যা বলার তা জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হবে। সমর্পণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের কথা হল, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঝোঁক হচ্ছে কম দামে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করতে করতে পরবর্তীতে এলাকায় সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য কমিয়ে দেওয়া। অন্যদিকে, ঘরবাড়ির মালিকানায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা বেড়ে গেলে হিন্দুদের ঝোঁক থাকে মহল্লা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার।”

— দি টেলিগ্রাফ, ২৬ নভেম্বর ’১৯

ধারা ৩৭০ বাতিল পরবর্তী অবরুদ্ধ কাশ্মীর সমাচার যে তিমিরে ছিল সেরকমই থাকছে। বিন্দুমাত্র স্বাভাবিকতা নেই

নবনিযুক্ত রাজ্যপাল লেফটেনান্ট গভর্ণর গিরিশ চন্দ্র মুর্মুর প্রথম জনসভা ছিল ৩০ নভেম্বর কাশ্মীর উপত্যকার সেন্ট্রাল এলাকায় বুদগামের অন্তর্ভুক্ত সোনপাহ গ্রামে। তাতে সাধারণ নাগরিকের উপস্থিতি ছিল খুব হলে ৩০০-র সামান্য বেশি। সংশ্লিষ্ট চারপাশের এলাকাবাসীরা সভায় অংশগ্রহণ বয়কটই করেছে। অবশ্য ছয়লাপ ছিল নিরাপত্তা বাহিনীতে। সঙ্গে যা অসামরিক লোকজন ছিল তারা প্রশাসনের স্টাফ এবং পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি। রাজ্যপালকে দিয়ে এই সভা করার কর্মসূচীকে সরকারের দিক থেকে গ্রামীণ প্রচারের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তা একরকম মাঠেই মারা গেল। মিথ্যুক সরকার অবশ্য প্রচারে কার্পণ্য রাখছে না, বলেছে “রাজ্যপাল বিশাল সমাবেশে” বক্তব্য রেখেছেন। রাজ্যপাল মুর্মু তো তার মতো বলে গেছেন কেন্দ্র এখন পঞ্চায়েত রাজ আইনের ৭৩ ও ৭৪ তম সংশোধনী রূপায়ণে সচেষ্ট যা পঞ্চায়েত রাজের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। প্রায় ২৫০০-র মতো প্রকল্প রূপায়ণ না হয়ে স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে, সেগুলো এবার কার্যকরী করা শুরু হবে।

হায়রে প্রতিশ্রুতি প্রদানের ঠিকেদার সরকার! রাজ্যের স্বাধিকারের ৩৭০ ধারা কেড়ে নিয়ে এখন পঞ্চায়েতরাজকে শক্তিশালী করতে আইন সংস্কার রূপায়ণের দরদ দেখানোর গল্প শোনাতে শুরু করেছে। জীবন-জীবিকা, মানসম্মান, অর্থনীতি, জন নিরাপত্তা, শান্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছু তছনছ করে বন্দী কাশ্মীর করে রেখে ‘প্রকল্প রূপায়ণের’ গল্প শোনানো হচ্ছে।

— দি টেলিগ্রাফ, ৩০ নভেম্বর ’১৯

খণ্ড-26
সংখ্যা-39