খবরা-খবর
হাউস্টনে মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ

নরেন্দ্র মোদীকে সংবর্ধিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজেপি ও আরএসএস-র নেটওয়ার্ক “হাউডি মোদী" নাম দিয়ে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঐ অনুষ্ঠান আবার মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের সভা হয়েও ওঠে যিনি ২০২০ সালে পুনরায় নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। ঐ সভায় ট্রাম্প উপস্থিত ছিলেন, মোদী তাঁকে “প্রার্থী ট্রাম্প" বলে সম্বোধন করেন এবং শ্লোগান দেন, “অব কি বার ট্রাম্প সরকার"। এইভাবে তিনিই হয়ে উঠলেন কোনো দেশের নির্বাচিত নেতা যিনি সর্বপ্রথম বিদেশের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার চালালেন।

সভায় মোদী তাঁর ভাষণে পরিহাসময়ভাবে ভারতের ভাষা, ধর্মীয়, খাদ্য বৈচিত্র্যর কথা বলেন — যে বৈচিত্র্যের বিরুদ্ধে দেশে তিনি ও তাঁর সরকার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন! তিনি দাবি করেন, “কাশ্মীরের জনগণ যাতে অবশিষ্ট ভারতের জনগণের মত সমান অধিকার পায়" তা সুনিশ্চিত করার জন্যই তাঁর সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে। কাশ্মীর এখন যে একটা কারাগার, সমস্ত ধরনের সংযোগ, সচলতা, রাজনৈতিক কার্যকলাপ, প্রতিবাদ থেকে বঞ্চিত এবং সেখানকার জনগণকে বেআইনি গ্ৰেপ্তারি ও অত্যাচার ভোগ করতে হচ্ছে, সে কথা মাথায় রাখলে এই দাবি আমাদের বিস্ময়বিমূঢ় করে। ট্রাম্প তাঁর ভাষণে “সীমান্ত নিরাপত্তা’’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্বেগের শরিক। ট্রাম্প এইভাবে “অবৈধ অভিবাসীদের’’ বিরুদ্ধে বিদেশী আতঙ্ক সঞ্জাত নির্বাচনী বুলির প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে বিজেপির দুরভিসন্ধিমূলক এন আর সি প্রকল্পের প্রতি অনুমোদন যা লক্ষ-লক্ষ মানুষকে রাষ্ট্রহীন করে তোলার উপক্রম করছে।

তবে হাউডি মোদী অনুষ্ঠান আন্দোলনের কর্মীদের কাছে দুয়ের মধ্যে একটা সংযোগকে উন্মোচিত করার সুযোগও এনে দেয়, ট্রাম্পের সমর্থনকারী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী (কু ক্লাক্স ক্লান-এর মতো — কে কে কে) এবং ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুশ্রেষ্ঠত্ববাদীদের মধ্যে সংযোগ।

এই অনুষ্ঠানের আগের সপ্তাহে হাউস্টনের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং নাগরিকদের সভা হাউস্টন সিটি কাউন্সিলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের “মোদী ফিরে যাও’’, “কাশ্মীরকে রক্ষা কর” এবং “কাশ্মীরের পাশে দাঁড়ান” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা গেল। ঐ সভায় দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে বিশ্লেষক পিটার ফ্রিডরিক “মানব জাতির বিরুদ্ধে মোদীর অপরাধে সহায়তাকারী” আমেরিকানদের তিরস্কার করেন। কাউন্সিলের ১৬ জন সদস্যের প্রত্যেককেই ফ্রিডরিক একটি ফোল্ডার দেন যাতে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে আরএসএস, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী এবং নাজিদের সম্পর্কে গবেষণা করে লেখা তিনটি নিবন্ধ থাকে। ফ্রিডরিক জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁরা যেন হাউডি মোদী না বলে “এডিয়স মোদী” বা বিদায় মোদী বলে তাঁকে সম্ভাষিত করেন।

অনুষ্ঠানের দিন সহস্রাধিক মানুষ সভাকক্ষের বাইরে প্রতিবাদ দেখান। তাঁদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে কাশ্মীর এবং সংখ্যালঘুদের সমর্থনে বক্তব্য লেখা ছিল, তাঁরা শ্লোগান দিচ্ছিলেন — “বিদায় মোদী”, “তুমি যে গণহত্যা করেছিলে, মোদী তুমি তা লুকোতে পারবেনা” এবং “আরএসএস হল কে কে কে, আরএসএস ফিরে যাও”।

একই ধরনের জোরালো প্রতিবাদ নিউ ইয়র্কেও অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে অবরুদ্ধ কাশ্মীরীদের মানবতাবাদী সহায়তা দানের লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ কর্মসূচিও নেওয়া হয়। “কাশ্মীর নিয়ে আওয়াজ তোলা” এবং মোদীর পরিদর্শনের বিরোধিতা করতে বিভিন্ন বাদক দল সমবেত হয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেয়। প্রতিবাদ কর্মসূচির অন্যতম সংগঠক কৌততুকাভিনেতা অরিশ সিং এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার মনে হয়, মোদীর উৎপীড়নমূলক কাজকর্ম সম্পর্কে আমেরিকার বেশিরভাগ মানুষের অজ্ঞতা রয়েছে, তবে আসাম এবং কাশ্মীর নিয়ে খবরাখবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ায় এবং হাউস্টনের মতো প্রতিবাদী কর্মসূচি সংগঠিত হওয়ায় ঐ অজ্ঞতা এখন পাল্টাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার যে সমস্ত মানুষ মোদীর সমালোচনা করেন তাঁরা এখন আরও সোচ্চার হচ্ছেন।” প্রতিবাদ কর্মসূচির আর এক সংগঠক ভারত-মার্কিন পাঙ্ক ব্যাণ্ড-এর এক সদস্য সংঘ বাহিনীর চালানো ট্রোলগুলি সম্পর্কে বলেন, “এগুলো হল সার যা আমাদের সৃজনশীলতাকে উর্বর করে।”

খণ্ড-26
সংখ্যা-31