সাইন বোর্ড পাল্টালে কি আর বাস্তবটা পাল্টাবে?
If the sign board changes

টিভিতে ‌দেখা গেল, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুব জনমোহিনী কায়দায় জেলায় জেলায় বৈঠক করে বোঝাতে চাইছেন, রাজ্যজুড়ে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে এবার গ্রাম বাংলার স্বাস্থ্য পরিষেবার ভোল পাল্টে দেওয়া হবে। কিন্তু আসলে পাল্টানো হচ্ছে শুধু নামটা — প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে এখন থেকে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বলা হবে। কিন্তু নামে কি আসে যায়? এই কেন্দ্রগুলোতে কি নিয়মিত ডাক্তার, নার্স, বেড সংখ্যা বৃদ্ধি, নিয়মিত সবরকম ওষুধের সরবরাহ, সাপ্তাহিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে? না, এসবের কোনও পরিকল্পনাই সরকারের নেই। নতুন যেটুকু ব্যবস্থা হচ্ছে তা হল, সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে একজন করে অভিজ্ঞ নার্সকে নিযুক্ত করা হচ্ছে। তাঁকে একটা গালভরা নাম দেওয়া হচ্ছে: কমিউনিটি হেলথ অফিসার (সিএইচও)। উনি প্রাথমিক ‌পরিষেবা দেবেন। কোনও জটিল কেসে তিনি নাকি ভিডিও কলে রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের কথা বলিয়ে দেবেন, সেইমত ডাক্তার টেলিমেডিসিনে ওষুধ প্রেসক্রাইব করবেন। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের যে হাল তাতে এ ব্যবস্থা কতটা কার্যকরি হবে তা সহজেই অনুমেয়। অতএব সবটাই‌ ঢক্কানিনাদ।

এহেন অবস্থায়, গত আগস্ট-অক্টোবরে ছয়টা ব্লকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কিছু দাবি নিয়ে বিডিও এবং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর সারা ভারত‌ প্রগতিশীল মহিলা সমিতির হুগলি শাখা গত ২২ নভেম্বর চুঁচুড়ায় জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে ডেপুটেশন দেয়, বিক্ষোভ দেখায়। মা ও সদ্যোজাতের যথাযথ চিকিৎসার ওপর জোর দিয়ে কয়েকটি দাবি রাখা হয়,

১) মগরা ও বলাগড় ব্লক হাসপাতালে‌ সিজারিয়ান ডেলিভারি ও পান্ডুয়ায় সপ্তাহে একদিন নয়, দু’দিন সিজারিয়ানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক ব্লক হাসপাতালে শিশু চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

২) ব্লক হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স, বেড সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩) প্রাথমিক (‘সুস্বাস্থ্য’) ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত ডাক্তার আসা ও সমস্ত রকম শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং সবরকম ওষুধ সুনিশ্চিত করতে হবে।

৪) হাসপাতালে ভর্তি না হলেও চিকিৎসায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড কার্যকরি করতে হবে।

৫) মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য সরকার ঘোষিত যোজনার ‌বকেয়া প্রাপ্য অর্থ প্রসূতিদের মিটিয়ে দিতে হবে।

৬) গর্ভবতীদের সমস্ত পরিষেবা দেওয়া সত্ত্বেও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব না হলে আশা কর্মীদের প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত করা চলবে না।

৭) ধনিয়াখালির বাগনান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ও এইসব দাবি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার সময়ে, সিএমওএইচ বলেন, আপনারা সঠিক দাবিগুলোই তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে হুগলি জেলায় ৬৭২টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, আরো ১৬২টি চালু করা হবে। এই কেন্দ্রগুলোতে ডাক্তার থাকবেনা এটাই সরকারি নীতি। এখানে এএনএম (অক্সিলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফ)-রাই পরিষেবা দেবেন। গর্ভবতীদের‌ জটিল অবস্থা হলে হাসপাতালে রেফার করবেন। তিনি আরও জানান,‌ হাসপাতালে ভর্তি না হলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড কার্যকরী হবেনা। তাছাড়া ‘জননী সুরক্ষা’, ‘মাতৃ বন্দনা’ যোজনা, ‘বাংলা মাতৃ প্রকল্প’ গত ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে গেছে।

ডেপুটেশনে প্রতিনিধিত্ব করেন‌ জেলা সম্পাদিকা‌ শিপ্রা চ্যাটার্জি ও চৈতালি সেন। সভা পরিচালনা করেন সভানেত্রী শোভা ব্যানার্জি ও সংগঠক অর্পিতা রায়।

আমরা বুঝলাম, সরকার একহাতে যখন সামান্য কিছু দিচ্ছে, তখন অন্য হাতে অনেক বেশি কেড়ে নিচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের এটাই কৌশল। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের হাতে কোনও ক্ষমতাই নেই, সুতরাং রাজ্যজুড়ে — অন্তত একসাথে কয়েকটি জেলায় — জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে প্রায় কোনও দাবিই আদায় করা যাবে না। তাই সে লক্ষ্যেই আমাদের এগোতে হবে এবং কলকাতার স্বাস্থ্যভবনে বড় ধরনের বিক্ষোভ সহ ডেপুটেশন দিতে হবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-41