হাজারিবাগ জেলার চৌপারান থানার মাছলা গ্ৰামের ছক্কন ভুঁইয়া নামে এক দলিত যুবককে পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলে। নৃশংস এই ঘটনাটা ঘটে ২৮ এপ্রিল। পুলিশি নির্মমতার খবর পেয়ে সিপিআই(এমএল)-এর এক প্রতিনিধি দল তথ্যানুসন্ধানে করমা গ্ৰামে যায়। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিহত যুবকের স্ত্রী ববিতা দেবী, তার বড় ছেলে সুরজ ভুঁইয়া, প্রতিবেশী সানি ভুঁইয়া ও বিজয় ভুঁইয়া এবং অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলেন। যে স্থানে পুলিশি নৃশংসতা সংঘটিত হয় সেই স্থানটিও তাঁরা পরিদর্শন করেন। তাঁদের তদন্তে ঘটনাটা এই রকম বলে জানা যায়।
গত ২৮ এপ্রিল ছক্কন ভুঁইয়া স্ত্রী এবং ভাই শঙ্কর ভুঁইয়াকে মোটর বাইকে চাপিয়ে যাচ্ছিলেন পার্শ্ববর্তী গ্ৰাম মানগড়ে, এক আত্মীয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। মোটর বাইকে পেট্রল ভরতে তাঁরা গ্ৰামেরই এক পেট্রল পাম্পে থামেন। সেই সময় চৌপারান থানার পুলিশ দুটো গাড়িতে সেখানে পৌঁছয় এবং সেখানে উপস্থিত সবাইকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। সবাই পালাতে থাকে এবং ভয় পেয়ে ছক্কনের ভাই শঙ্কর ভুঁইয়াও ছুটে পালায়। পুলিশ ছক্কন ও তার স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। ছক্কন বিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা বললেও পুলিশ তাতে কান দেয় না। পুলিশের মারে ছক্কন বালির স্তুপে পড়ে গেলেও পুলিশের পৈশাচিকতা থামে না। পুলিশের মারে একটু পরে ছক্কন মারা যায় আর তার স্ত্রী আহত হয়। এরপরই পুলিশ ঐ স্থান থেকে পালিয়ে যায় এবং সেখানে মৃতদেহ কয়েক ঘন্টা পড়ে থাকে। রাত সাড়ে এগারটার সময় বরহির এসডিও এবং ডিএসপি সেখানে পৌঁছে মৃতদেহ তুলে নিয়ে যায়। ময়নাতদন্তের পর ২৯ এপ্রিল পুলিশ ছক্কনের দেহ গ্ৰামে নিয়ে আসে এবং পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
ছক্কনের পরিবারের লোকজন তদন্তকারী দলের সদস্যদের জানান, স্থানীয় বিধায়ক সাহায্য স্বরূপ পরিবারের হাতে ১০০০০ টাকা তুলে দিয়েছেন। আর চৌপারান থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সাহায্যের নামে ৫০০০০ টাকা দিয়ে ছক্কনের ভাইকে দিয়ে একটা কাগজে সই করিয়ে নেয়। কাগজে কি লেখা ছিল পরিবারের কেউ জানে না।
তদন্তকারী দলে ছিলেন সারা ভারত কিসান মহাসভার ঝাড়খণ্ড সম্পাদক পূরণ মাহাতো, সিপিআই(এমএল)-এর হাজারিবাগ জেলা কমিটির সদস্য শের মহম্মদ, শেখর রাই এবং খুরশিদ আনোয়ার আনসারি। তদন্তকারী দলের প্রধান পূরণ মাহাতো বলেন, পুলিশ অকারণেই পাশবিক আচরণ করেছে, ঐ রকম নির্মমভাবে লাঠি চালানোর কোনো কারণই ছিল না। ওদর বিয়ে বাড়ি যেতে না দিলেও ঘরে ফিরতে দিতে পারত। ছক্কনের ভাইকে দিয়ে একটা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে পুলিশ ঐ পরিবারের সঙ্গে প্রতারণাও করে। পুলিশ যা করেছে সেটা এক নির্ভেজাল ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া অন্য কিছু নয়।