আজকের দেশব্রতী : ২০ মে ২০২১ (অনলাইন সংখ্যা)
Ajker Deahabrati 20 May

Foil the BJP’s Conspiracy

ভারতের অধঃপতিত যে গণতন্ত্রকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র বলে অভিহিত করেছে, তা সবথেকে ভালোভাবে কাজ করে রাত্রি কালে। ছেচল্লিশ বছর আগে মধ্যরাত্রে গণতন্ত্রের সাংবিধানিক দরজায় ভয়াবহ আঘাত দিয়েই জারি হয়েছিল জরুরি অবস্থা। বর্তমানের ‘আচ্ছে দিন’-এর দুর্দশাগ্রস্ত জমানায় বিমুদ্রাকরণ ও লকডানের মত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাগুলো সবই হয় রাতের দিকে। পশ্চিম বাংলায় অভিভূত করে দেওয়ার মতো গণরায় আসার দু-সপ্তাহ পর এই রাজ্যকে এখন নিশিথে চালানো নতুন একদফা ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গত ১৭ মে সিবিআই পাঁচ বছরের পুরনো দুর্নীতির একটা মামলায় চার রাজনীতিবিদকে গ্ৰেপ্তার করে, যাদের মধ্যে কলকাতার বর্তমান মেয়র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় দফার মন্ত্রীসভার পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রীও রয়েছেন। দুপুরবেলায় তাঁরা এক সিবিআই আদালত থেকে জামিন পেলেও হাইকোর্ট মাঝরাতে এক একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে জামিনের ঐ আদেশে স্থগিতাদেশ জারি করে, ফলে চার অভিযুক্তকে গভীর রাতে জেলে পোরা হয়। যুক্তিসম্মত জামিনের আদেশে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ শুধু পদ্ধতিগত সমীচীনতাকেই লঙ্ঘন করেনি, অপ্রয়োজনীয়ভাবে অভিযুক্তদের জেলে পাঠিয়ে এক অশোভন দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে, সুপ্রিম কোর্ট যদিও করোনার এই পরিস্থিতিতে জেলে না পাঠানোর দ্ব্যর্থহীন পরামর্শ দিয়েছে।

পশ্চিম বাংলা জয় করার বিজেপির খোয়াবকে প্রবলভাবে প্রত্যাখান করা নির্বাচনী রায় বেরোনোর পর থেকেই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলতে থাকল যে, এই ফলাফলকে মেনে নিয়ে পরিস্থিতিকে শান্ত হতে দিতে বিজেপি রাজি নয়। নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাগুলোয় শয়তানি করে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়া হয় এবং জাল রিপোর্ট ও ভুয়ো ভিডিওর সাহায্যে সেগুলোকে অতিরঞ্জিত করে তোলা হয়। গণরায়কে ‘সংখ্যালঘু ভেটো’ বলে অভিহিত করা হয় এবং সারা দেশে ও বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে প্রচার চালানো হয় যে, পশ্চিম বাংলায় তথাকথিত হিন্দু- বিরোধী সন্ত্রাস ও গণহত্যা চলছে।

পশ্চিম বাংলায় একটা দলের প্রতি চূড়ান্ত আনুগত্য দেখানোর জন্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় কুখ্যাত হয়ে আছেন। বাংলার গণরায়ে অন্তর্ঘাত ঘটাতে তিনি এখন চেষ্টার কোনো কসুর করছেন না। উপরন্তু, নির্বাচিত সরকারের উপর দিয়ে এবং সাংবিধানিক ঔচিত্যের কোনো তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার এক স্বতন্ত্র কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে চলেছেন। নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনাগুলো প্রশমিত হলেও এবং ভয়াবহভাবে বেড়ে চলা কোভিড-১৯ সংক্রমণের ব্যাপকতার প্রতি রাজ্য সরকার মনোযোগ দিতে শুরু করলেও রাজ্যপাল শিতলকুচি ও নন্দীগ্ৰাম পরিদর্শনে গেলেন। বিধায়ক ও মন্ত্রীরা যখন শপথ নিচ্ছিলেন, সেই সময় তিনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে এবং স্পিকারকে কিছু না জানিয়েই নারদা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহণ চালিয়ে যেতে সিবিআই-কে অনুমতি দিলেন, আর এটা পশ্চিম বাংলায় প্রকাশমান চিত্রনাট্যের অঙ্গ হিসাবেই প্রতিভাত হল।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে নারদা স্টিং অপারেশন চালানো হয়েছিল ২০১৪ সালে, কিন্তু তার টেপগুলো প্রকাশ করা হয় ২০১৬-র নির্বাচনের ঠিক আগে, এবং তা সেবারের নির্বাচনে একটা বড় ইস্যু হয়ে ওঠে। কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৭ সালে মামলাটা সিবআই-এর হাতে তুলে দেয়। ইতিমধ্যে, মূল অভিযুক্তদের কয়েজন বিজেপিতে যোগ দেয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমানে বিজেপির অন্যতম সর্বভারতীয় উপসভাপতি ও বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায় এবং বিজেপি বিধায়ক সুভেন্দু অধিকারী, বর্তমানে যিনি বিজেপি বিধায়ক দলের এবং পশ্চিম বাংলা বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা। যে সিবিআই এতদিন এই মামলা নিয়ে তেমন তৎপরতা দেখায়নি, তারা সহসাই এই মামলা নিয়ে অমন উঠেপড়ে লাগল কেন, বিশেষভাবে পশ্চিম বাংলা যখন আট দফায় প্রলম্বিত নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে সদ্য বেরিয়ে এসেছে এবং অতিমারীর প্রবল প্রকোপ বৃদ্ধির মোকাবিলার চেষ্টা করছে? আর বিজেপিতে আশ্রয় নেওয়া অভিযুক্তদের পুরোপুরি বাদ দিয়ে বেছেবেছে শুধু তৃণমূল নেতাদেরই বা নিশানা বানানো হচ্ছে কেন? প্রসঙ্গত, যে চার নেতা গ্ৰেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ও রয়েছেন, যিনি ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা এবং যিনি কিছুদিন আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আবার বিজেপি ছাড়েন।

এই মুহূর্তে সিবিআই-এর হস্তক্ষেপের মধ্যে শুধুই অতীত, বর্তমান ও সম্ভাবনাময় দলবদলুদের নিয়ন্ত্রিত করা ছাড়াও আরও কিছু রয়েছে। সেই প্রশ্নাতীত বার্তাটা হল, যে রাজ্য বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের টোপ গিলতে অস্বীকার করবে, তাকে তার স্পর্ধার কারণে গুরুতর মূল্য চোকানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দিল্লীকে এর মূল্য দিতে হয়েছে। আম আদমি পার্টি বলতে গেলে কোনো বিরোধী ভূমিকার মধ্যেই যায়নি, জম্মু ও কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা হরণ থেকে দিল্লী দাঙ্গা এবং দাঙ্গা পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের একগুচ্ছ কর্মীদের গ্ৰেপ্তারের মত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যুগুলোতে বিজেপির বানানো বৃত্তান্তে সায় দেওয়ার পরও তাদের ঐরকমভাবে ভুগতে হয়েছে। আর এটাও তো ঠিক যে, বিজেপির কিছু নেতা ভোট দিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় না আনার জন্য পশ্চিম বাংলার জনগণকে এক ঐতিহাসিক ভুল করার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।

পশ্চিম বাংলায় যা ঘটল সেটাকে শুধু দুর্নীতি-অভিযুক্ত কয়েকজন রাজনীতিবিদকে কেন্দ্র করে রূপ নেওয়া আর একটা বিতর্ক বলে মনে করলে চূড়ান্ত ছেলেমানুষী হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সিবিআই-কে বা রাজ্যপালের দপ্তরকে কাজে লাগানোর বিরোধিতা করে কখনই দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের পক্ষ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে না কিংবা দুর্নীতির ঘটনাগুলোতে জড়িতদের শাস্তি থেকে অব্যাহতির পক্ষেও সওয়াল করা হচ্ছে না। আসল বিষয়টা হল, পশ্চিম বাংলার নির্বাচনে জয়ী হতে না পেরে বিজেপি গণরায়ে অন্তর্ঘাত হানতে চেষ্টার কোনো কসুর করছে না। সিবিআই ও রাজ্যপালের যুগপৎ হস্তক্ষেপ হল পশ্চিম বাংলা জয়ে বিজেপির ব্যর্থ প্রচেষ্টাকে অন্য উপায়ে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া।

বাংলার গণরায়ে বিজেপি আতঙ্কিত বিশেষভাবে এই কারণে যে, ঐ রায় মোদী সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা ও অযোগ্যতার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে সঞ্জীবিত করে তুলেছে এবং মোদী সরকারের সাপেক্ষে এক শক্তিশালী জাতীয় বিরোধী পক্ষ ও রাজনৈতিক বিকল্প লাভে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে দৃঢ়তর করেছে। এই জন্যই পশ্চিম বাংলার গণরায়ে অন্তর্ঘাত হানার ও তাকে বানচাল করার এই মরিয়া প্রচেষ্টা। পশ্চিম বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন চাপিয়ে দিলে তা হবে ভারতীয় রাষ্ট্র কাঠামোর সাংবিধানিক ভিত্তি ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে চালানো এক সার্বিক যুদ্ধ। তা শুধু কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের সর্বনাশা ব্যর্থতা থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগই হবে না, তা ভারতীয় গণতন্ত্রের ধ্বংসসাধনকেও নির্দেশিত করবে। আর তাই সারা ভারতের বিরোধী দলগুলো এবং জন আন্দোলনগুলোকে পশ্চিম বাংলায় মোদী সরকারের চক্রান্তমূলক হস্তক্ষেপকে ধিক্কার জানাতে হবে এবং পার্টিজান রাজ্যপালকে অবিলম্বে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলতে হবে।

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয়, ১৮ মে, ২০২১)

A new form of conspiracy

বিজেপি পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনে হার মেনে নিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, আসন সংখ্যার বিচারে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হতে হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার তুলনায়ও এবার বহু আসনে নেমে যেতে হয়েছে। ঘা খেতে হল উগ্র হিন্দুত্বের মেরুকরণের রাজনীতিতে, ডবল ইঞ্জিন সরকারের ওকালতিতে। সবকিছু ঢেলেও সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে দলের ফ্যাসিবাদী ধূর্তামীতে, দম্ভে, ঔদ্ধত্যে, আগ্রাসনে। এই সবকিছুকে প্রত্যাখ্যান করেছে গণরায়। ২০১৪-তে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে, বিশেষত ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এখানে অপ্রত্যাশিত ‘আগে রাম পরে বাম’ যোগফল পেয়ে, বিজেপি অনেক জাল বুনে আসছিল, কি করে এখানে ক্ষমতা হাসিল করা যায়, কেবল আরেকটা রাজ্য মাত্র দখল করা নয়, তা ছাড়াও আরও গভীর আরও ব্যাপক গেরুয়া নকশা রয়েছে। এযাবৎ বাংলার যা কিছু প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্য সবই পাল্টে দেওয়ার দৌরাত্ম্য শুরু করে দেওয়া, আর, অতীতের দেশভাগের যন্ত্রণা খুঁচিয়ে তুলে আরেকবার ধর্ম-রাজনীতির বিদ্বেষ-বিভাজনের জিগিরে গোটা দেশকে ভাসাতে পশ্চিমবঙ্গকে ব্যবহার করা। এত কিছু পরিকল্পনা একটা গণরায়ে এভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার পরিণতি বিজেপি কিছুতেই হজম করতে পারছে না। তাই তার শয়তানির শেষ নেই।

স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে উঠে-পড়ে লাগা হচ্ছে নিত্যনতুন ‘ইস্যু’ পাকিয়ে। পরিকল্পনা ও পরিচালনায় রয়েছে দলের দিল্লীর সদর-দপ্তর, মোদী-শাহ-নাড্ডা-মালব্যরা। মওকা তৈরি করতে দফায় দফায় দলের টিম পাঠানো হয়েছে রাজ্যপালের কাছে। কখনও সন্ত্রাস ও হিংসার অভিযোগে নালিশ ঠুকতে। কখনও ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’-এর ছুতোয়। অনতিবিলম্বেই ধরা পড়তে থাকে পরের ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি পর্ব। রাজ্যপালের কেবল বিজেপির সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে চরকি মারা, টুইট করা, সংবাদ মাধ্যমে খবর করা চলতে থাকে। মাঝে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুসন্ধানকারী দলকে। এসব করে চলার সাথে সাথে তৃণমূলের ক্ষমতাধীনে ‘আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে’, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দরকার রাষ্ট্রপতির শাসন’ — বলা হতে থাকে এমনসব কথা। কিন্তু এতসব করেও পরিবেশ যখন ঘেঁটে দেওয়া সম্ভব হল না, তখন অতর্কিতে নামানো হল ‘নারদ’ ধরার অভিযান। গেল গেল রব ওঠে এমন বিশাল সংখ্যায় কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী সহযোগে সংঘটিত হল সিবিআই হানা ও গ্রেপ্তারী। এ নিছক দুর্নীতিতে যুক্ত শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের শায়েস্তা করার অভিযান নয়। নতুন করে ছলে-বলে- কৌশলে রাজ্যের ওপর কেন্দ্রের নতুন চাপ চাপিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ, রাজ্য পরিস্থিতির ও রাজনীতির রাশ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। এই অপচেষ্টায় বিজেপি এতই মরীয়া যে, আইনকানুন ও গণতন্ত্রের চোখ-কানের মাথা খেয়ে হানা নামিয়েছে, বর্তমান ও প্রাক্তন মিলিয়ে তৃণমূলের চার মন্ত্রী-নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে, ধর্তব্য মনে করেনি এর সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে। এই গ্রেপ্তারীর তীব্র নিন্দা করেছে বাকী সমস্ত রাজনৈতিক দল। বিজেপি পড়েছে একঘরে। বিরোধিতায় সরব হয়েছেন এমনকি সদ্য নির্বাচনে বিজেপির প্রতি আনুগত্য দেখানো টলিউড ও টেলিউডের কিছু মুখ। এরা কোনো পক্ষই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় বা আড়াল দিতে, দুর্নীতির মূলোৎপাটনে বাগড়া দিতে চান না। যদিও নাগরিক জনতার ব্যাঙ্কে সঞ্চিত সম্পদ হাতিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে না পারা, আটকাতে না চাওয়া, কার্গিল কফিন বরাত-ভ্যাপম (মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি)-রাফায়েল যুদ্ধ বিমান কেনা সংক্রান্ত দুর্নীতিতে কলঙ্কিত হওয়া, এরকম একটিও কেলেঙ্কারীর কার্যকরী তদন্ত না করে যারা ‘সুশাসন চালানো’র স্বঘোষিত দাবিদার, যারা আম্বানী-আদানীর মতো স্যাঙাত পুঁজিমালিকদের কাছে দেশবেচার দালাল বলে জনারণ্যে চিহ্নিত হচ্ছে, যতই হাইকোর্টের নির্দেশে হোক, তারা যে নারদ কেলেঙ্কারীর প্রকৃত তদন্ত করবে তা সহজবোধ্য নয়। প্রথম চার্জশীট দিতে ‘আঠারো মাসে বছর’ লাগিয়ে দিল। গোটা নির্বাচনী প্রচার প্রক্রিয়ায় একবারও ‘নারদ’ রগরানির প্রসঙ্গ তোলা হয়নি। তবু এই মামলা ঠিক এখন কেন নামানো হল অপারেশান চালাতে? মুখে কুলুপ এঁটেছেন মোদী-শাহরা! বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বলছেন সিবিআই হানার সাথে তাদের দলের কোনো সম্পর্ক নেই! ওরা যে প্রতিক্রিয়াই দেখান, এই হানাদারির মধ্যে দিয়ে প্রতিহিংসা, পক্ষপাতদুষ্টতা, নব নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে অজ্ঞাত রাখা, রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকে আগাম বুঝতে না দেওয়া, বিধানসভার স্পীকারের অনুমোদন নেওয়ার স্বীকৃত প্রথার পরিবর্তে ডিঙিয়ে রাজ্যপালের থেকে অনুমোদন নিয়ে গ্রেপ্তারীর অপারেশান — এভাবে ক্ষমতার দাপাদাপি চালানো হয়েছে। গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে যথেচ্ছ লঙ্ঘন করা হয়েছে।

সদ্য নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে ফের নতুন অস্থিরতা তৈরির পিছনে ক্ষমতায় আসতে না পারাটা যেমন বিজেপির গাত্রদাহের একটি কারণ, তেমনি অন্য কারণটি হল কোভিড সংকট থেকে জনতার দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরানোর চেষ্টায় কেন্দ্রের ফিকির খোঁজা। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তার মোকাবিলার প্রশ্নে মোদীরাজ তত অমানবিকতা, উদাসীনতা, অপদার্থতা দেখিয়ে চলছে। দেশজুড়ে চিকিৎসার পরিত্রাণ পেতে হাহাকার অবস্থা, থামছে না মৃত্যুমিছিল। ধিক্কার উঠছে মোদীতন্ত্রর বিরুদ্ধে। এই সংকট থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে কেন্দ্র এবং বিজেপি সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সোরগোল তুলে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। মানুষজন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছে বিজেপির এহেন কেন্দ্র-রাজ্যের আচরণকে। ওদের এই উদ্দেশ্য ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া দরকার।

Prime Minister Modi will have to resignModi Must Resign

প্রাণঘাতী কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ আর সেই মৃত্যুগুলোর জন্য ভারত সমবেতভাবে শোক জ্ঞাপন করছে। এই মৃত্যুগুলোকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন গভীর শোক ও মানসিক আঘাত দেখা যাচ্ছে, অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে ভারত সরকারের চরম হৃদয়হীনতা।

ধর্মীয় এবং নির্বাচনী জমায়েত সংগঠিত করার মধ্যে দিয়ে “সমস্ত কোভিড বিধিকে জলাঞ্জলি দেওয়া” এবং মেডিক্যাল অক্সিজেনের ভয়াবহ ঘাটতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে ইণ্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘সুপার স্পেরডার’ আখ্যায় ভূষিত করেছেন। দিল্লী হাইকোর্ট মেডিক্যাল অক্সিজেনের অভাবের কারণে মৃত্যুগুলোকে “গণহত্যার চেয়ে কম নয়” বলে অভিহিত করে দায়ী করেছেন মোদী সরকারকে। কিন্তু নিজেদের সর্বনাশা পথকে শুধরে নিতে উদ্যোগী হওয়া দূরে থাক, মোদী ও তাঁর মন্ত্রীসভা এবং তাঁর দল এই তীব্র ভর্ৎসনাগুলোকে এমনকি মানতেও রাজি নয়। এর বিপরীতে মোদী সরকার এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলোর কাছে জনগণের জীবন রক্ষার চেয়ে নিজেদের “ভাবমূর্তি” রক্ষাই একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। মেডিক্যাল অক্সিজেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সাহায্যগুলোকে যথাযথভাবে বন্টন করার জন্য অনেক দিন থেকেই জরুরি হয়ে ওঠা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনাকে গড়ে না তুলে মোদী সরকার এবং আরএসএস “পজিটিভিটি আনলিমিটেড” শীর্ষক প্রচারাভিযান শুরু করেছে।

“কোনো নেতিবাচক মনোভাব” প্রকাশ করলেই এই প্রচারাভিযান আমাদের ভর্ৎসনা করছে। এই প্রচারাভিযান বলছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে প্রতিদিন যে বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন তা নিয়ে আমরা যেন উদ্বিগ্ন না হই; শ্মশানগুলোতে সারি-সারি যে মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে আতঙ্কিত যেন না হই; যে বায়ু থেকে শ্বাস নিই তা যে চিতার ছাইয়ে পরিপূর্ণ, সে কথা যেন স্বীকার না করি; সাংবাদিকরা তাঁদের প্রতিবেদনে হাসপাতালে মানুষের খাবি খাওয়া এবং অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়ার কথা তুলে ধরলে আমরা যেন সেগুলোতে নজর না দিই এবং শেয়ার না করি; আমরা যেন কোভিড সংক্রমণে মারা যাওয়া সেই মৃতদেহগুলোকে না দেখি, যেগুলো উত্তরপ্রদেশের গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং যেগুলো ভেসে-ভেসে পৌঁছেছে বিহারের কূলে; প্রাক্তন এক রাষ্ট্রদূত অক্সিজেন যুক্ত শয্যার জন্য বৃথাই অপেক্ষা করে হাসপাতালে গাড়ি রাখার জায়গায় মারা গেলেন, সেই সংবাদ আমরা যেন না পড়ি এবং শেয়ার না করি; হাসপাতালে শয্যা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, ইত্যাদি আছে কি নেই সে সম্পর্কে খবরাখবর নিয়ে অন্যদের যেন না জানাই। হাতুড়ে দাড়িয়াল “গুরুরা” এবং সরাকারের প্রচারবিদ হিসাবে কাজ করা সুবেশি টিভি সঞ্চালকরা আমাদের বলছেন, এগুলো সবই “নেতিবাচকতা”’ ছাড়া অন্য কিছু নয়। যাঁরা “নেতিবাচকতা” ছড়াচ্ছেন তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হচ্ছে, তাঁরা হলেন দেশপ্রেম বর্জিত, এবং “গুজব ছড়ানো” ও “দেশের নিরাপত্তার” প্রতি বিপজ্জনক হওয়ার জন্য তাঁদের গ্ৰেপ্তার করা হতে পারে। কেউ যাতে শ্মশানে জড়ো হওয়া সারি-সারি মৃতদেহ এবং সদাজ্বলন্ত চুল্লির দৃশ্য দেখতে না পান তার জন্য শ্মশানের চারদিকে অস্থায়ী দেওয়াল তোলার দায়িত্ব পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।

আজ ভারতে প্রায় প্রতিটি পরিবারই কোভিড-১৯ সংক্রমণে কোনো না কোনো সদস্য মারা যাওয়ার জন্য শোকবিহ্বল। সরকারি ভণ্ড “সদগুরু” আমাদের বলছেন যে, মৃতের সংখ্যাটা “তাৎপর্যহীন”। এই কথা এটাই বোঝাচ্ছে যে, এমনকি পরিসংখ্যানেও, শুধু একটা সংখ্যা হিসাবেও আমাদের প্রিয়জনদের ধর্তব্যের মধ্যে আনা হবে না। সরকারের হাতে ছেড়ে রাখলে তাদের হিসেবের মধ্যেই নেওয়া হবে না। রাজ্য সরকারগুলো স্বল্প সংখ্যককেই দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বলে প্রকাশ করলেও খবরের কাগজগুলোতে পাতার পর পাতা ভর্তি শোক সংবাদ বেরোচ্ছে, এবং গাড়ি রাখার জায়গায়, জনসাধারণের জন্য নির্দিষ্ট পার্কে, এবং এমনকি রাস্তাতেও শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখ বলে সরকার স্বীকার করেছে। প্রকৃত মৃত্যুর হার এর তিন থেকে আট গুণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর অর্থ অতএব হল, কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং সরকারের অবহেলায় নিহত মানুষের সংখ্যা ২০ লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে — অর্থাৎ, দুই মিলিয়ন মৃত্যু! সোজা কথায়, এটা গণহত্যা ছাড়া কিছু নয়।

ভারতে কোভিড সৃষ্ট গণহত্যাকে মোদী সরকারের ফ্যাসিবাদী নীতিগুচ্ছ এবং অগ্ৰাধিকারগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করেও দেখা যাবে না। গত বছর বহু দেশের সরকারই দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় চিকিৎসা পরিকাঠামোকে উন্নত করা এবং টিকা আরও বেশি করে সংগ্ৰহ করার ওপর জোর দেয়। আর মোদী ও তাঁর মন্ত্রীসভা গত বছরটা কাটিয়েছেন করোনার ওপর বিজয়ী হওয়ার দম্ভ প্রকাশ করে; যে যুব ছাত্ররা এবং সমাজ আন্দোলনের মুসলিম কর্মীরা ভারতের সংবিধানের রক্ষায় হিন্দুশ্রেষ্ঠত্ববাদী এবং দরিদ্র-বিরোধী নাগরিক আইন ও নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়েছিলেন, এমন বহুসংখ্যককে গ্ৰেপ্তার করার মধ্যে দিয়ে; তাঁর নিজের দলের যে দাঙ্গাবাজরা মুসলিমদের গণহত্যায় উন্মত্ত জনতাকে পরিচালিত করেছিল, তাদের সুরক্ষার বন্দোবস্ত করে; অবৈধ পথে সংসদে তিনটে কৃষক-বিরোধী আইন জোরজবরদস্তি পাশ করানোর মধ্যে দিয়ে; যে সমস্ত কৃষক, ছাত্র ও অন্যান্যরা এই আইনগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় তাদের গ্ৰেপ্তার করে ও তাদের কালিমালিপ্ত করার তোড়জোড়ের মধ্যে দিয়ে; করোনিল, গোবর এবং কোভিড “নিরাময়ের” অন্যান্য হাতুড়ে ব্যবস্থাকে মদত জুগিয়ে; এবং ধর্মীয় সমাবেশ ও নির্বাচনী প্রচার সংগঠনের মধ্যে দিয়ে এই বার্তা পাঠিয়ে যে কোভিডের জন্য পালনীয় বিধির প্রতি মৌখিক আনুগত্য দেখালেই চলবে। এই অপরাধগুলোর জন্য জবাবদিহি প্রধানমন্ত্রী না করলে অন্য কে করবে?

মোদী টিকা সরবরাহের প্রথম বরাতটি দেন ভারতে কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচী শুরু হওয়ার মাত্র পাঁচ দিন আগে -- অন্যান্য দেশ টিকা মজুত করে ফেলার বেশ কয়েক মাস পর। নির্বাচন হতে চলা রাজ্যগুলোকে মোদী প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁর দল নির্বাচনে জিতলে রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে, এবং এইভাবে তিনি টিকার মধ্যে রাজনীতিকে ঢোকান। কিন্তু মোদী প্রকৃতই যেটা করলেন তা হল, কেন্দ্র যে দামে টিকা কেনে, রাজ্যগুলোকে তার চেয়ে বেশি দামে টিকা কিনতে বাধ্য করে টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে টিকা বিক্রি থেকে প্রচুর মুনাফা করতে দেওয়া। মোদী সরকার ভারতের ১৫০টা জেলায় অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির কথা ঘোষণা করে, কিন্তু এর জন্য দরপত্র ডাকতে সময় নেয় দীর্ঘ আট মাস। ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬২টা প্লান্ট তৈরির কথা থাকলেও তৈরি হয়েছে মাত্র ৩৩টা প্লান্ট। এখন আবার ভারতে শ্বাসরোধ হয়ে কাতারে-কাতারে মানুষ যখন মারা যাচ্ছে, মোদী তখন দিল্লীর কেন্দ্রস্থলের ঐতিহাসিক সৌধগুলোকে ধ্বংস করে “সেন্ট্রাল ভিস্টা” প্রকল্প গড়ে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছেন যা হবে তাঁর নিজের স্মারকসৌধ। এই অমানবিকতা ও অবহেলা দেখানোর জন্য মোদী ছাড়া অন্য কাউকে কি দায়ী করা যায়?

তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিং-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কেলেঙ্কারিগুলোতে “মৌন” থাকার অভিযোগ এনে মোদী ক্ষমতায় আসেন। আজ মোদী কুড়ি লক্ষ ভারতবাসীর মৃত্যু নিয়ে মুখ বুজে রয়েছেন – আর মৃত্যুর এই সংখ্যাটা দিনদিন বেড়েই চলেছে। শুধু অক্সিজেন নয়, এমনকি প্রাথমিক তথ্যগুলোর জন্যও যে জনগণ তাঁর সরকারের চেয়ে বিরোধী দলের যুব শাখা এবং নাগরিকদের নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করছেন, সে সম্পর্কেও মোদী মৌন। এবং তিনি স্পষ্টতই আশা করছেন, তাঁর এই অপরাধগুলোর জন্য সমস্ত দায় তিনি নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন। তিনি এবং তাঁর বশংবদ মিডিয়া যদি এই অপরাধগুলো এবং সেগুলো সৃষ্ট মৃত্যুর ব্যাপ্তি ও ধ্বংসকে মেনে নিতে অস্বীকার করেন, সে ক্ষেত্রেও মোদী আশা করছেন যে পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণ সবই ভুলে যাবে।

তবে, মোদীর দ্বিতীয় দফা এবং কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সর্বনাশ থেকে রেহাই পেতে ভারত কিন্তু আর একটা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে না। মৃত্যুর তাণ্ডব নৃত্য এই মুহূর্তেই বন্ধ হওয়াটা ভারতের কাছে জরুরি -- আর তার জন্য প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মোদীর অবিলম্বে পদত্যাগ। তাঁর সঙ্গেই পদত্যাগ করতে হবে তাঁর সহকর্মী সুপারস্পেরডার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষবর্ধনকে। বিরোধী দল এবং শাসক দলের সদস্যদের নিয়ে এক জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে যারা কোভিড-১৯ সঙ্কটের দায়িত্বভার নিতে আগ্রহী : যেটা হবে দলীয় আনুগত্য বর্জিত এক সরকার যা পার্টি লাইন নির্বিশেষে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে। যে সরকার জনপ্রিয়তা আদায়ের লক্ষ্যে নিজেকে চালিত করার পরিবর্তে জোর দেবে জনগণের জীবন রক্ষার ওপর। ভারতবাসীর জীবন রক্ষায় মোদী সরকারকে অবিলম্বে সরিয়ে তার স্থানে নিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন দলের সদস্যদের নিয়ে গঠিত জাতীয় সরকারকে।

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয়, ১১ মে ২০২১)

vindictive government be removed

কোভিড-১৯ সংক্রমণের ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে পরিষেবা যত অমিল হচ্ছে, মানুষ তত মরিয়া হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানাচ্ছেন — শয্যা-অক্সিজেন-জীবনদায়ী ওষুধের জন্য; টিকা কবে ও কোথায় মিলবে তার হদিস পাওয়ার জন্য। কিন্তু কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার বা উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকারের কাছে এগুলো সবই সরকারকে অপদস্থ করার সংগঠিত প্রয়াস রূপে দেখা দিচ্ছে। এবং যাঁরা এই আবেদনগুলো জানাচ্ছেন বা অক্সিজেন, ওষুধ, টিকা না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তাদের শায়েস্তা করতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো উঠে পড়ে লাগছে। সমাজ মাধ্যমে ব্যক্ত টুইট বা সাহায্যের আবেদনগুলোকে জনগণের যন্ত্রণা বা অসহায়তার প্রকাশ রূপে বিবেচনা না করে সবাইকেই শত্রু জ্ঞানে সরকার সেই অসহায় মানুষগুলোর বিরুদ্ধে তার পরাক্রম জাহির করছে।

সম্প্রতি টিকা সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিয়ে ভারতীয় জনগণের সামনে হাজির হয়েছে। যাঁরা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয় ডোজ কবে কোথা থেকে পাবেন তা নিশ্চিতভাবে জানতে পারছেন না। আর যাঁরা প্রথম ডোজও পাননি, নির্দিষ্ট অ্যাপে নাম তুলেও টিকার ঠিকানা পাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না (সমস্ত প্রাপ্ত বয়স্কর ক্ষেত্রেই এটা ঘটছে)। এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দিল্লীতে সম্প্রতি অনেক জায়গাতেই কিছু পোস্টার দেখা গেল। পোস্টারগুলোতে লেখা ছিল -- “মোদীজি, আমাদের সন্তানদের টিকা কেন বিদেশে পাঠিয়েছেন?” সাধারণ মানুষ এর মধ্যে সরকারের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াসের পরিবর্তে ভ্রান্ত টিকা নীতির প্রতিফলন দেখতে পেলেও অমিত শাহর পুলিশ এটাকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ধরে নিয়ে রাস্তায় নামল। পোস্টার ছেঁড়া হল, অন্ততপক্ষে ২৫টা এফআইআর হল, ২৫ জনকে গ্ৰেপ্তার করা হল। যাঁদের গ্ৰেপ্তার করা হল তাঁরা সবাই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ – অটোচালক, দিনমজুর, ছাপা কারখানার শ্রমিক, ইত্যাদিরা। লকডাউনের পরিস্থিতিতে রুটি-রুজি অর্জনের উপায় বন্ধ হওয়ায় তাঁরা শুধু পোস্টারগুলো লাগানোর বিনিময়ে কিছু অর্থ উপার্জনেই প্রয়াসী হয়েছিলেন। গ্ৰেপ্তারের এই অভিযানের পর রাহুল গান্ধি সহ বিভিন্ন বিরোধী নেতা বললেন, তাঁরা ঐ পোস্টার শেয়ার করছেন, কেউ নিজের বাড়ির দেওয়ালে ঐ পোস্টার লাগালেন। আপ দলের নেতা দুর্গেশ পাঠক আবার দাবি করলেন, দিল্লীতে পোস্টার তিনিই লাগিয়েছেন। বিরোধী নেতারা মোদী সরকারের কাছে আহ্বান জানালেন, পোস্টারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য পুলিশ তাঁদের গ্ৰেপ্তার করুক। পুলিশের হাত অবশ্য পোস্টার লাগানো ঐ দরিদ্র মানুষগুলোর বাইরে বিরোধী নেতাদের দিকে আর এগোয়নি।

উত্তরপ্রদেশে গঙ্গার জলে কোভিডে মৃত শত-শত লাশের ভেসে যাওয়া এখন পুরনো খবর। এখন বরং জনসাধারণকে আলোড়িত করছে গঙ্গার সুদীর্ঘতীর বরাবর হাজার-হাজার মৃতদেহ বালিতে পুঁতে রাখার খবর। সংবাদে প্রকাশ, উত্তরপ্রদেশের ২৭টা জেলায় গঙ্গার ধারে কবর দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েক হাজার মৃতদেহ। কনৌজের মহাদেবী গঙ্গার ঘাটে বালিতে পোঁতা হয়েছে ৩৫০টার বেশি দেহ, কানপুরে শেরেশ্বের ঘাটে কবর দেওয়া হয়েছে অন্তত ৪০০টা দেহ, উন্নাওয়ের দুটো ঘাটে বালির নীচে চাপা পড়েছে অন্তত হাজার খানেক মৃতদেহ — এমনটাই জানিয়েছে ১৭ এপ্রিলের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন। মৃতদেহগুলোকে প্রথাগত পথে সৎকারের সামর্থ্য যাদের হয়নি, কাঠ-চুল্লির খরচের জোগান যাদের ক্ষমতার বাইরে থেকেছে, তারাই এই পথে মৃতদেহের সৎকারকে বেছে নিয়েছে। আর মৃতদেহগুলোকে বালির নীচে থেকে তুলে ছিঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছে কুকুর-শিয়ালের বাহিনী, অপরিমেয় আহারের সন্ধান পেয়ে আকাশে মেতেছে চিল-শকুনের দল। মরণের পরেও মৃতদের সম্মান-মর্যাদা পাওয়া উচিৎ বলে চর্চা কিছুদিন ধরে কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু মৃতদেহ নিয়ে শিয়াল-কুকুর, চিল-শকুনের টানাটানি মৃতের প্রতি কোনো সম্মানকে নির্দেশিত করে? যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন আশাকরি এ সম্পর্কে অবহিত আছেন। সেক্ষেত্রে, এই পথে মৃতদেহের সৎকারকে আটকাতে সক্রিয় হওয়ার কোনো ব্যগ্ৰতা কি তাঁরা দেখাচ্ছেন? নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব নিয়ে তোলা আঙুল কি যোগী আদিত্যনাথ সহজভাবে নেবেন? শোনা যাচ্ছে, কোভিড মোকাবিলা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের ওপর অসন্তুষ্ট হলেও রাজ্যের বিজেপি বিধায়করাও সে কথা প্রকাশে ভয় পাচ্ছেন, কারণ, তাঁদের ওপর জাতীয় সুরক্ষা আইনের প্রয়োগ হবে!

এই কদিন আগেই রায়বেরিলি জেলা প্রশাসন তিন সাংবাদিকের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে। তাঁদের অপরাধ, জেলায় অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলা একটা পোস্ট তাঁরা শেয়ার করেন। ঐ পোস্টে বলা হয়েছিল, রায়বেরিলির জন্য নির্ধারিত অক্সিজেনের কোটাকে কাটছাঁট করে অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে অন্য জেলায়। প্রশাসনের পাঠানো নোটিসে হুমকি দেওয়া হয়েছে, কেন তাঁরা ঐ পোস্ট শেয়ার করেছিলেন সে সম্পর্কে সন্তোষজনক উত্তর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে না পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অল্প কিছুদিন আগেও আমেথি জেলায় শশাঙ্ক যাদব নামে ২৬ বছরের এক যুবককে পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হয়। অসুস্থ দাদুর জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে না পেরে ঐ যুবক অক্সিজেন পাওয়ার জন্য টুইটারে আবেদন জানিয়েছিলেন। পুলিশ দাবি করেছিল, ঐ আবেদন ছিল অসৎ উদ্দেশ্য প্রসূত। জেলায় অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই, আতঙ্ক ছড়াতেই অক্সিজেনের ঐ আবেদন পোস্ট করা হয়েছিল! তারপর মহামারী আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারায় ঐ যুবক অভিযুক্ত হল।

দিনের কথা নয়, গত ৩০ এপ্রিল ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়, এল নাগেশ্বর রাও ও এস রবীন্দ্র ভাটকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ এক রায়ে বলে, কোভিড চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় কোনো সামগ্ৰীর জন্য কেউ সামাজিক মাধ্যমে আবেদন জানালে বা ক্ষোভ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। বেঞ্চ প্রধান চন্দ্রচূড় বলেন, “নাগরিক বা বিচারপতি হিসাবে আমার কাছে এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। নাগরিকরা ইন্টারনেটে বা সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করলে, তার বিরুদ্ধে কোনো দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। আমরা চাই না প্রকাশ করা কোনো তথ্যকে চেপে দেওয়া হোক। এটা সঙ্কট মোকাবিলার সবচেয়ে জঘণ্য পথ।” তিনি আরও বলেন, এরকম ঘটলে “আমরা এটাকে আদালত অবমাননা বলে গণ্য করব।”

এ সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা, যোগী আদিত্যনাথরা সুপ্রিম কোর্টকে অবজ্ঞা করে ক্ষোভ প্রকাশকারী নাগরিকদের বিরুদ্ধে এক হাত নিতে উদ্যত হচ্ছেন। এর আগেও সরকারের সমালোচক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে গ্ৰেপ্তার করে জেলে পোরা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলো বলতে চাইছে — অক্সিজেন-ওষুধ-টিকার অভাব নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যক্ত ক্ষোভকে সুনজরে দেখা হবে না। সবকিছু ঠিক আছে (উত্তরপ্রদেশে অক্সিজেনের চরম হাহাকারের মধ্যে যোগী আদিত্যনাথ যেমন অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই বলে দাবি করেছিলেন) এমন মনোভাব প্রকাশ করে সরকারের ভাবমূর্তিতে পালিশ লাগানোই নাগরিকদের পক্ষে অভিপ্রেত। আর এর বিপরীতটা ঘটলে সরকার দাঁত-নখ বার করতে দ্বিধা দেখাবে না। টিকার অভাব নিয়ে দিল্লীতে পোস্টার লাগানোর পরিপ্রক্ষিতে দিল্লী পুলিশ এই ছেঁদো যুক্তি দিল যে, পোস্টার লাগিয়ে জনগণের সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে, দৃশ্যদূষণ ঘটানো হচ্ছে। আর অক্সিজেন-ওষুধের অমিল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের ক্ষেত্রে আদিত্যনাথ প্রশাসনের যুক্তি হল – যারা এগুলো করছে তারা সব সমাজবিরোধী, কোনো অভাব না থাকা সত্ত্বেও এরা গুজব ছড়াচ্ছে, রাষ্ট্রের দমনই এদের প্রাপ্য। নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার, বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলো এভাবে সমালোচনার প্রতি আক্রোশপরায়ণ এবং ক্ষোভ প্রকাশকারী নাগরিকদের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ বলে নিজেদের প্রতিপন্ন করছেন। তবে আমরা, ভারতীয় নাগরিকরা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে, প্রশ্ন করার অধিকারকে কোনোভাবেই খর্ব হতে দেব না। নিজেকে সংশোধন করার কোনো অভিপ্রায় সরকারের আছে বলে দেখা যাচ্ছে না। তাদের অপসারণে আমাদের তাই সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে।

May 26 is called Black Day

২৬ মে কালা দিবস হিসেবে পালন করার আবেদন রেখেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা (এসকেএম)। ভারতীয় গণতন্ত্রে ২৬ মে এক কালা দিন। ২০১৪ সালের ঠিক এই দিনে আর তারপর আবার দ্বিতীয় বারের জন্য ২০১৯-র ৩০ মে তারিখে নরেন্দ্র মোদী শপথ নেন। ২৬ মে হল সেই দিন, যেদিন “ চলো দিল্লি” কিষাণ আন্দোলন তার ছ’মাস পূর্ণ করবে। ওই দিনেই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলো সারা ভারত ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল গরিব মানুষদের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়া, সমস্ত দুঃস্থ পরিবারকে নিখরচায় রেশনের দাবিতে, শহরাঞ্চলে মনরেগার প্রকল্পকে সম্প্রসারিত করতে, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা ও সরকারি দপ্তরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে, এনপিএস বাতিল ও আগেকার পেনশন প্রকল্প বহাল রাখা প্রভৃতি দাবিতে, আর সেটাও ৬ মাস পার হবে।

এই জন্য ওইদিনটা কালা দিবস হিসাবে পালন করার ডাক দেওয়া হয়েছে কারণ, বিগত সাত বছর ধরে যে মোদী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, সেই সরকারটি মসনদে আসার আগে যে লম্বা চওড়া প্রতিশ্রুতি গুলো দিয়েছিল তা পূরণ করতে নিদারুণ ভাবে ব্যর্থই শুধু হয়নি, বরং খেটে খাওয়া মানুষের সমস্ত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধেই খোলাখুলি কাজ করেছে। সংসদে বর্বর সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোহাই দিয়ে কোভিডের মারাত্মক দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে চলেছে।

* মোদী সরকার নিজের কাঁধ থেকে সমস্ত দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে কোভিড মোকাবিলায় অসহায় মানুষদের যাবতীয় মেডিকাল সংক্রান্ত পদক্ষেপ রাজ্য সরকারগুলোর উপর চাপিয়ে দিয়েছে — টিকা নেই, নেই অক্সিজেন ও হাসপাতালের বেড, এমনকি শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জোগানেও হাহাকার দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। ১৮-৪৪ বয়সিদের টিকা দেওয়ার দায়হীন ঘোষণা করার অব্যবহিত পরেই তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। বোঝাই যাচ্ছে, এই গভীর সংকটকে কিভাবে সামাল দেওয়া হবে সে ব্যাপারে সরকার সম্পূর্ণ অন্ধকারেই রয়েছে। এই মারণ ভাইরাসের সাথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে সরকারের অপরাধসম অবহেলা আজ উন্মোচিত।

* এই অতিমারীর সুযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট স্বার্থবাহী আইনগুলোকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা তিনটি কৃষি আইন বা চারটি শ্রমকোড হোক না কেন। সরকারী ক্ষেত্র বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঢালাও বেসরকারীকরণ, রেল-বন্দর ও পোর্টের সব সম্পদ বিক্রি, ইতিমধ্যে ৫০০ টি কয়লা ব্লককে নিলামে তোলার জন্য সনাক্ত করা হয়ে গেছে, ৪০টি ব্লক নিলাম হয়ে গেছে, যার মধ্যে ৩৯টি গেছে আদানি, বেদান্তদের খপ্পরে, জলের দরে বেসরকারি সংস্থার কাছে বেচে দেওয়া হয়েছে ছ’টি বিমানবন্দর। প্রতিরক্ষা ও রেলের সমস্ত উৎপাদন ইউনিটগুলো কর্পোরেশনের অধীনে আনা হবে, ব্যাঙ্ক-বিমা ও খুচরো ব্যবসায় অবাধে ঢুকবে এফডিআই, বিপিসিএল-এমটিএনএল, ইস্পাত, খনিজ ও বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নীতি আয়োগ এমন ১০০টি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে যেখান থেকে কিছু  “আয়” করা যায়। মনেটাইজ হল সেই নতুন শব্দবন্ধ, যার আড়ালে বেসরকারীকরণ বা বেচে দেওয়ার কাজটা করা হচ্ছে।

* পরিযায়ী শ্রমিক সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষদের জন্য প্রয়োজন বেঁচে-বর্তে থাকার জন্য খাদ্য সামগ্রি, হাতে নগদ টাকা ও কর্মসংস্থান। এই বিরাট চ্যালেঞ্জটা হাতে নিতে গেলে সরকারকে তার এক্তিয়ারে থাকা নানা উৎসগুলোকে কাজে লাগাতে হবে — এফসিআই-এর মজুত খাদ্যশস্য বিতরণ, সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যে কোভিড যোদ্ধারা লড়ছেন তাঁদের জন্য বিমা, নরেগার খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, শহরাঞ্চলের জন্য নরেগা ধরনের কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প, ইত্যাদি। এই সমস্ত ব্যাপারে সরকার হাত পা গুটিয়ে নিশ্চল হয়ে বসে রয়েছে।

* কেন্দ্রীয় সরকার এমন সমস্ত আইন পাস করালো যা কেউ দাবি করেনি। তা কৃষি আইন হোক বা শ্রম কোড, সিএএ বা নয়া শিক্ষা নীতি, ঢালাও বেসরকারীকরণ ইত্যাদি, কিন্তু যে সমস্ত জনপ্রিয় দাবিগুলো সামনে এসেছে, যেমন, কৃষি পণ্যের জন্য এমএসপি সুনিশ্চিত করা, জিএসটি-র আওতায় পেট্রল ডিজেলকে নিয়ে আসা ইত্যাদি তা মেনে নিতে অস্বীকার করে চলেছে।

* কোভিড অতিমারিকে মোকাবিলা করার জন্য নাকি রাজকোষ ফাঁকা, অথচ, নির্লজ্জ ভাবে কুড়ি হাজার কোটি টাকা খরচ করে সরকার “সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রজেক্ট”এর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে যেখানে থাকবে নতুন সংসদ ভবন। নির্বাচনী বন্ড, পিএম কেয়ার্স-এর মতো অস্বচ্ছ মার্কা তহবিল থেকেই হয়তো বা যার খরচ মেটানো হচ্ছে। এই সরকার চরম অগণতান্ত্রিক পন্থায় চালিয়ে যাচ্ছে তার কর্মধারা — সরকারকে সমালোচনা করার অপরাধে যে কাউকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, ত্রিপাক্ষিক আলাপ আলোচনা করতে অস্বীকার, বিরোধীদের দমন করতে সাংবিধানিক সংস্থা গুলো ব্যবহার ইত্যাদি। দেখা গেল, সিবিআই-ইডি-এনআইএ-সুপ্রিম কোর্ট-আরবিআই-রাজ্যগুলোর রাজ্যপালদের কাজে লাগাচ্ছে রাজনৈতিক বিরোধীদের শায়েস্তা করতে, দল ভাঙিয়ে নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে হয়রান করতে অর্থবল ও ওই সমস্ত সংস্থাগুলোকে কাজে লাগাতে এই সরকার উঠেপড়ে লেগেছে।

এই তালিকায় আরও অনেক কিছু যুক্ত করা যায়। এখন সময় এসেছে কোদালকে কোদাল বলা। আসুন, আমরা ভারতীয় গণতন্ত্রে ২৬ মে তারিখটাকে কালা দিবস হিসাবে পালন করি। সেদিন কালো ব্যাজ পরে, কালো পতাকা নিয়ে সংঘটিত করি এই কালা দিবস।

ওই দিন শপথ নিই, যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হয়, ততদিন ক্লান্তিহীনভাবে আমরা চালিয়ে যাব আমাদের লড়াই। একটা বার্তা আমরা সর্বত্র পৌঁছে দেব যে মোদী তাঁর ইচ্ছে মতো যা খুশি তাই করে যাবে, আর শ্রমজীবী মানুষেরা নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুপচাপ এটা দেখবে, তা হতে দেওয়া যাবে না।

আমাদের দাবি —

১) নিখরচায় সর্বজনীন টিকাকরণ
২) সমস্ত স্তরে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে মজবুত করতে হবে।
৩) সমস্ত অসংগঠিত, ইনফর্মাল সেক্টরের শ্রমিকদের ও কর্মহীনদের বিনা মূল্যে খাদ্য শস্য ও মাসে নগদ ৭,৫০০ টাকা দিতে হবে।
৪) তিনটি কৃষি আইন বাতিল কর, বিদ্যুত (সংশোধনী) বিল, ২০২১ প্রত্যাহার কর, কৃষি পণ্যের উপর এমএসপি সুনিশ্চিত কর।
৫) ৪ শ্রম কোড ও খসড়া কেন্দ্রীয় নিয়ম বিধি (রুলস্) প্রত্যাহার করে অবিলম্বে ভারতীয় শ্রম সম্মেলন আহ্বান কর।
৬) সরকারী বিভাগ ও রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলোর বেসরকারীকরণ, কর্পোরেশন বানাবার নীতি থেকে সরে এসো।
৭) যে সমস্ত বিজেপি শাসিত রাজ্য বা তাদের দোসর নিজেদের খেয়ালখুশি মতো ৩৮টি শ্রম আইন মুলতুবি রেখেছে, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার কর — যেগুলো আন্তর্জাতিক শ্রম সনদকে লঙ্ঘন করে, যেমন, সংগঠিত হওয়ার অধিকার কনভেনশন ৮৭, যৌথ দরকষাকষির কনভেনশন ৯৮, ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ও আলাপ আলোচনা সংক্রান্ত কনভেনশন ১৪৪ প্রভৃতি।

১০ টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের সমস্ত অন্তর্ভুক্ত ইউনিট, সমমনোভাবাপন্ন সমস্ত স্বাধীন ইউনিয়ন বা ফেডারেশন এখন থেকে কোমর বাঁধুক আগামীতে আরও সরাসরি অনির্দিষ্টকালের অ্যাকশনের জন্য। ইউনিয়নের কর্মী বাহিনী ও সাধারণ জনতাকে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিরোধী, কৃষক বিরোধী জনবিরোধী জাতীয় স্বার্থ বিরোধী নীতিগুলোর মর্মবস্তু সম্পর্কে আলোকিত করতে হবে।

এআইসিসিটিইউ, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি,

এইচএমএস, সিআইটিইউ, এআইইউটিইউসি, টিইউসিসি, সেবা,

এলপিএফ, ইউটিইউসি এবং সমস্ত স্বাধীন সেক্টারভিত্তিক ফেডারেশন/সমিতি।

Demand letter

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী,

পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মোকাবিলা করতে রাজ্য সরকার যে একগুচ্ছ ঘোষণা সামনে নিয়ে এসেছে, তাকে কার্যত লকডাউন বলেই মনে করা যায়। কোভিড প্রশমনে গতবছর সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হবার সময় থেকেই শ্রমজীবী মানুষ প্রবল সমস্যার মধ্যে আছেন। রাজ্য সরকারের বর্তমান পদক্ষেপে চা-বাগান বা জুট মিল অল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে চলার ছাড়পত্র পেলেও বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন সঙ্কট ভয়ানকভাবে বেড়ে যাবে। এ মতো পরিস্থিতিতে আমরা মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর রাজ্য সরকার ও রাজ্য প্রশাসনের কাছে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি রাখতে চাই।

১) লকডাউন’এর প্রথম দিন থেকেই রাজ্যের সমস্ত পুরসভা ও পঞ্চায়েতে ৫ টাকার সুলভ পেটভর্তি খাবারের ক্যান্টিন চালু করতে হবে, যার প্রতিশ্রুতি শাসক দল নির্বাচনের আগেই দিয়েছিল।

২) প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবিলম্বে দুয়ারে সরকার কর্মসূচী শুরু করতে হবে, ঘরে ঘরে প্রশাসনের তরফে রেশন পৌঁছে দিতে হবে এবং সেই রেশনের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। শ্রমজীবী জীবনে প্রোটিনের চাহিদা যত বেশি, জোগান তত কম। সেইসঙ্গে অতিমারীর সময়ে প্রোটিনের অধিক প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে পরিবার-পিছু মাসিক অন্তত তিন কেজি ডাল বিনামূল্যে দিতে হবে।

৩) স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা কোভিড-রোগীরা পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ নানা জায়গা থেকেই আসছে। এই সুবিধা অবিলম্বে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪) কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনে ত্রাস নেমে এসেছে। গ্রামাঞ্চলে দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তাঁদের এই সঙ্কটকে তীব্র করে তুলেছে। তাই অবিলম্বে --

  • প্রতি ব্লকে অন্তত একটি করে অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল করতেই হবে। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি সেগুলোকে পরীক্ষাকেন্দ্র ও প্রয়োজনমতো উচ্চতর পর্যায়ের হাসপাতালে পাঠানোর সহায়তা কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে গ্রামবাসীদের তাৎক্ষণিক পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চতর স্তরের হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমানো যাবে এবং মৃত্যুহার কমানো যাবে।
  • গ্রামস্তরে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্যের জন্য স্থানীয় স্তরের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে যাতে গ্রামে স্বাস্থ্যবিধির প্রচার থেকে শুরু করে রোগ নির্ণয়ের এবং চিকিৎসার প্রাথমিক কাজটা স্থানীয় স্তরেই সেরে ফেলা যায়। প্রয়োজনীয় ওষুধেরও জোগান রাখতে হবে।
  • প্রতিটি গ্রামে পালস অক্সিমিটার ও প্রাথমিক ওষুধপত্র সহ একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী/স্বেচ্ছাসেবক থাকতেই হবে।

৫) শহরের পাড়াগুলোতেও রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রাথমিক কাজগুলো করে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে - এরজন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করার জন্য পাড়া থেকেই স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা যেতে পারে।

৬) অতিমারী মোকাবিলায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন নানারকম কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন। এই কাজে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সবরকমের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা যাতে প্রয়োজনমতো রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিনা বাধায় যোগাযোগ করে উঠতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭) রাজ্য ও জেলা স্তরের বড় বড় স্টেডিয়ামগুলোকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করতে হবে।

৮) যথেষ্ট সংখ্যক স্কুল ও কলেজকে অক্সিজেন পার্লার ও সেফ হোম হিসেবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯) অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য গাড়ি, অ্যাপ ক্যাব যাতে যথেষ্ট পরিমাণে ও সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

১০) ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচীকে ভিড় এড়িয়ে সুষ্ঠু ও সুস্থভাবে পরিচালনা করতে হবে। বর্তমানে এই নিয়ে যে অব্যবস্থা চলছে, তা সংক্রমণকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করছে।

ধন্যবাদান্তে,
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন,
ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ, জনস্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী
দিলীপ ঘোষ, প্রাক্তন আইএএস
মৌসুমি ভৌমিক, গায়িকা
প্রদ্যোত নাথ, গণআন্দোলনের কর্মী
কুমার রাণা, সমাজ-গবেষক ও প্রবন্ধকার
রাজা পুনিয়ানি, কবি
মীর রেজাউল করীম, ডিন - কলা ও ভাষা অনুষদ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ডাক্তার অতনু রায়, জনস্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী
দেবাশিস চক্রবর্তী, নাট্যকর্মী, বাদল সরকার নাট্যচর্চা কেন্দ্র
কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, গণআন্দোলনের প্রবীণ কর্মী
ডাক্তার দেবাশিস মুখার্জী, ফোরাম ফর পিপলস হেলথ
মেরুনা মুর্মু, অধ্যাপক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
শামিম আহমেদ, লেখক ও গণআন্দোলন কর্মী
অর্জুন গৌরিসারিয়া, চলচ্চিত্র নির্মাতা
মহাশ্বেতা সমাজদার, সম্পাদক ও গণআন্দোলন কর্মী
অভিজিত মজুমদার, অধ্যাপক ও গণআন্দোলন কর্মী
সাইফুল্লা সামিম, অধ্যাপক, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
সৌমিত্র ঘোষ, অধিকার আন্দোলনের কর্মী
মির্জা মোসারফ হোসেন, সাংবাদিক
সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্লগার প্রবন্ধকার, গুরুচণ্ডালি
মারুফ হোসেন, প্রকাশক ও গণআন্দোলন কর্মী
আশিসকুসুম ঘোষ, গণআন্দোলন কর্মী
সামিরুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ
সিদ্ধব্রত দাস, জাতীয় বাংলা সম্মেলন।

 protest across the country at the call of AIARLA

রাজ্যে যখন কোভিড ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরছে, তখনই সিবিআই’কে দিয়ে গণরায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত, কোভিড সতর্কতাকে মান্যতা দিয়ে বিকল্প অভিনব উপায় ও পদ্ধতিতে প্রতিবাদ চলুক।

দেশজুড়ে (আয়ারলা’র) সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির ডাকে সংগঠিত হল প্রতিবাদ দিবস। দেশজুড়ে দাবি উঠছে কৃষক-ক্ষেতমজুর-শ্রমিক-ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে।

১) দেশে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করে বিনা খরচে স্ক্রিনিং, টিকা দেওয়া, চিকিৎসার এবং খাদ্যের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। গরিব মেহনতী পরিবারগুলিকে মাসিক ন্যূনতম ৬,০০০ টাকা করে ৬ মাস সহায়তা করতে হবে।

২) সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে কোভিড কেয়ার সেন্টার তৈরী করে বিনা খরচে স্ক্রিনিং, ভ্যাকসিন ও কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও জেলা হাসপাতালে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা, অক্সিজেন সমৃদ্ধ শয্যা, আইসিইউ, পর্যাপ্ত বেড, উপযুক্ত ডাক্তার ও পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩) মহামারীর সময়ে সমস্ত মৃত্যুকে কোভিড মৃত্যু হিসাবেবিবেচনা করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অনাথ শিশুদের লালনপালনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

৪) কোভিডকে ঘিরে ভুল ধারণা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরকার থেকে প্রচার করতে হবে। গোবর বা গোমুত্র দিয়ে কোভিড চিকিৎসার কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও সরকারী প্রচার মাধ্যমকে সরব হতে হবে।

৫) মহামারী চলাকালীন ৫০টি শ্রম দিবসের মজুরি এমএনআরইজিএ শ্রমিকদের দিতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিক সহ সমস্ত কাজ হারানো মেহনতীদের কাজ দিতে হবে। ৫০ বছর বয়সসীমা নির্ধারণের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে।

৬) সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক, আশা, অঙ্গনওয়ারী ও মিড-ডে-মিল কর্মীদের জন্য ১০,০০০ টাকার করোনা ভাতা দিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মাসিক ৫,০০০ টাকা পেনশন দিতে হবে।

৭) রেশন কার্ডধারী সহ সমস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারী কৃষকদের পরিবার পিছু মাসিক ৩৫ কেজি দানাশস্য ও ৫,০০০ টাকা মাসিক বিশেষ সহায়তা দিতে হবে। কৃষকদের লাভজনক দামে ফসল ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮) তিন মাসের মধ্যে শিশু সহ সমস্ত নাগরিককে বিনাখরচে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯) সরকারী বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষার্থীদের স্মার্ট মোবাইল দিয়ে অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

১০) কৃষক ও গরিব মেহনতীদের সমস্ত ঋণ মকুব করতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীসহ মাইক্রোফিনান্স সংস্থার ঋণ মকুব করতে হবে। ঋণ আদায় ও কিস্তির টাকা আদায় স্থগিত রাখতে হবে।

নদীয়া

বিজেপির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচী নদীয়া জেলায় সংগঠিত হয়েছে। নাকাশীপাড়ায় গাছা বাজারে কৃষক কর্মীরা সমাবেশিত হন। লকডাউন বিধি মেনে হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডনিয়ে প্রতিবাদ করা হয়। কেন্দ্রের চক্রান্তর পাশাপাশি করোনা সংকটকালে রেশনে গরীব পরিবারগুলিকে ৩৫ কেজি খাদ্যদ্রব্য, সমস্ত জবকার্ডধারী গরিব মানুষকে ৭৫০০ টাকা লকডাউন ভাতা, সরকারী দরে ধান কেনা প্রভৃতি দাবীও তুলে ধরা হয়। বেথুয়াডহরী পার্টি কার্যালয়ের সামনেও অনুরূপ কর্মসূচী হয়।

২০ মে নদীয়া জেলার চাকদায় বসন্ত স্মৃতি পাঠাগারের সামনে এক প্রতিবাদ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সকাল ৯টায় স্থানীয় কর্মীরা আধঘন্টাব্যাপী স্লোগান দিয়ে বুকে দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডনিয়ে এই কর্মসূচী সংগঠিত করে, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

বজবজে এআইএআরএলএ-র কর্মসূচী সারা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে বজবজ গ্ৰামাঞ্চলে গত ১৭ মে প্রতিবাদ কর্মসূচী হয়। উপস্থিত ছিলেন সমিতির জাতীয় কাউন্সিল সদস্যা দেবযানী গোস্বামী, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বজবজ গ্রামীণ লোকাল কমিটির সদস্য শ্যামসুন্দর গোস্বামী সহ আরো অনেকে‌। শ্লোগান ওঠে অতিমারী পরিস্থিতিতে সমস্ত মাইক্রোফাইনান্স ঋণ মকুব করতে হবে, অবিলম্বে সকলের করোনা টিকাকরণ নিশ্চিত করতে হবে।

Protests across the state demanding the removal of Governor

১৮ মে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছিল সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও তার সহযোগী বিভিন্ন গণসংগঠন। দিনের কর্মসূচী শেষ হওয়ার পরে পার্টির রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, প্রায় সমস্ত জেলায় এবং বিভিন্ন এলাকায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও গণসংগঠনগুলি (এআইএসএ, আরওয়াইএ, আ্যপোয়া এবং এআইসিসিটিইউ)’র ডাকে প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। কোভিড প্রটোকল ও বিধিনিষেধ মেনেই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। কোভিড অতিমারিতে রাজ্যের জনজীবন বিপর্যস্ত, যখন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ও কোভিড আক্রান্ত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন রাজ্য জুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে সদ্য নির্বাচিত সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা এবং রাজ্য দখলে বিজেপি’র চরম ব্যর্থতা ও হতাশা আড়াল করতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বিজেপি-আরএসএস। শিশুর সারল্যে কোনো কোনো মহল থেকে প্রচার করা হচ্ছে, দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা যাতে পর্দার আড়ালে না চলে যায় তাই এই সিবিআই অভিযান। সারদা নারদা দুর্নীতির তদন্ত চলছে প্রায় পাঁচ বছর ধরে। কি এমন ঘটনা ঘটল যে ভয়াবহ কোভিড সংক্রমণে রাজ্যবাসী যখন বিপর্যস্ত, তখনই এই সিবিআই অভিযান চালাতে হবে? সারদা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত দুই অত্যন্ত পরিচিত মুখ যারা দলবদলু হয়ে কেন্দ্রের শাসক দলের বিভিন্ন উঁচু পদে আসীন, তারা এই সিবিআই অভিযানের বাইরে থেকে গেল কেন, তারও কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা মেলেনি। সিবিআই’র এই অভিযানের পাশাপাশি রাজ্যপাল পদের সম্পূর্ণ অপব্যবহার করে মোদী-অমিত শাহের এজেন্ট হিসাবে জগদীশ ধনখড় রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থির অশান্ত করে তুলছেন, যাতে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এই অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়িয়ে তোলা যায়। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির শাসনের ওকালতি করা যায়। বিগত শতাব্দীর ৬০’র দশক থেকে রাজ্যপাল পদটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। রাজ্যপাল ধর্মবীর, ধাওয়ানের কথা সকলের মনে আছে। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন জগদীশ ধনখড়।

রাজ্যবাসীকে বিজেপি-আরএসএস’এর এই চক্রান্ত সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। কোভিড সংক্রমণ ও লকডাউনে বিপর্যস্ত জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা সর্বতোভাবে চালাতে হবে।

Repeatedly three times

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে তৃতীয় বারের জন্য মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ক্ষমতায় এনেছেন রাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। স্বাভাবিক আশা, মাননীয়া রাজ্যের মানুষের এই রায়কে সম্মান দেবেন এবং আগামী দিনে রাজ্যে আর্থ-সামাজিক সমস্যাগ্রস্ত মানুষের কথা শুনবেন ও তার সমাধানে সচেষ্ট হবেন।

করোনা অতিমারীর কারণে ইতিমধ্যেই আংশিক লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। ৫ মে থেকে ১৫ মে সরকারের পক্ষ থেকে লোকাল ট্রেন, পরিবহন, দোকান-বাজার, সরকারী অফিস সম্পর্কিত কিছু বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। যা কার্যত বড় মাত্রায় লকডাউনে পরিণত হয়েছে। রাজ্যের মানুষও করোনা মোকাবিলায় সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করতে সচেষ্ট রয়েছেন। কিন্তু, মানুষের খাদ্য, মজুরি ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা ব্যাতিরেকে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব নয় বলেই আপামর জনগণ মনে করছেন। গতবছর সরকারি আদেশনামা অনুযায়ী সরকারী প্রতিষ্ঠানে লকডাউন পর্যায়ে কর্মচারীদের বেতন প্রদান করা হলেও বেসরকারী সংস্থা এবং অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিকদের বেতন বা মজুরি দেওয়া হয়নি। এমনকি বহু শ্রমিককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে, আজও তারা বেকার। বহু মানুষ অর্থ, খাদ্য এবং চিকিৎসার অভাবেও মারা গেছেন। গতবছরের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার আংশিক লকডাউন শুরু হওয়ায় রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষ আশঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।

এই রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সকল শ্রমজীবী মানুষের খাদ্য, বেতন/মজুরি/ চাকরির নিশ্চয়তা এবং চিকিৎসার দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। যে সকল অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিকরা কাজে যেতে পারছেন না তাঁদের মাসিক ৭,৫০০ টাকা এবং বাড়ীর দুয়ারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

বিগত দু’দফায় ‘দিদিকে বলো’ বা নবান্নে আবেদন নিবেদন করে যারা কোন সমাধান পাননি তাদের কথা শোনায় মনযোগী হতে হবে। কয়েকটি ক্ষেত্রের অসহায় শ্রমিক কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা ও দাবিগুলি আজও অমীমাংসিত থেকে গেছে, যে শ্রমিক কর্মচারীরা তৃতীয় দফায় মা-মাটি-মানুষের সরকার গঠনে বিশেষ ভুমিকা নিয়েছেন। তাঁদের সমস্যাগুলি নিম্নরূপ।

(১) সরকারী পরিবহন শিল্পের শ্রমিক

এই শিল্পের শ্রমিকরা অত্যন্ত ঝুঁকির সাথেই কাজ করে চলেছেন। ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে একাধিক শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে। এই শিল্পের সকল শ্রমিকদের করোনা অতিমারী চলাকালীন ৩০ লক্ষ টাকার জীবনবীমা চালু করা অত্যন্ত জরুরি। মৃত শ্রমিক পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি এবং করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করতে হবে।

ধ্বংসপ্রায় এই শিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য সংস্থার সকল ইউনিয়নগুলির সাথে আলোচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সকল কন্ট্রাক্টর, অস্থায়ী ও ফ্রাঞ্চাইজি সংস্থার অধিনস্ত কর্মীদের অবিলম্বে স্থায়ীকরণ প্রয়োজন।

এই শিল্পের কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে যখন তখন যাকে ইচ্ছা কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়ার যে নিয়ম চালু করেছিল তাতে আজ শতাধিক শ্রমিক তাঁদের পরিবার নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এবিষয়ে প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রীর কাছে ‘অল ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের’ (এআইসিসিটিইউ) পক্ষ থেকে বিস্তারিত লিখিতভাবে জানানোও হয়েছে। কিন্তু, কোন সমাধান হয়নি। আপনার কাছে অনুরোধ এই বিষয়টিতে আপনি হস্তক্ষেপ করুন যাতে ঐ শতাধিক শ্রমিক তাদের কাজ ফিরে পান এবং বকেয়া বেতন পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের অনাহারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন।

(২) কলেজ ক্যাজুয়াল কর্মচারী

পশ্চিমবঙ্গের কলেজগুলির প্রায় ৫ হাজারের অধিক ক্যাজুয়াল কর্মচারী পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন কলেজে দীর্ঘ ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কাজ করে আসছেন। কলেজ ভিত্তিক গভর্নিং বডির মাধ্যমে এঁদের নিয়োগ করা হয়েছে। বেতনেরও কোন নির্দিষ্ট কাঠামো না থাকায় ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা বেতন দেওয়া হয়। লকডাউন পর্যায়ে অনেক কলেজের কর্তৃপক্ষ এঁদের বেতনও দেননি। এঁরা বিগত ৪ বছরেরও অধিককাল যাবত তাঁদের সমস্যার কথা সরকারের কাছে জানিয়ে আসছেন। বেশ কয়েকবার ‘পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ক্যাজুয়াল কর্মচারী সমিতি’র পক্ষ থেকে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর সাথে দেখা করে তাঁদের দাবিগুলি জানিয়েছেন। এখনো কোনো সমাধান না হওয়ায় আপনার হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী। অবিলম্বে -- (১) গত বছরের লকডাউন পর্যায়ের বেতন প্রদান করা হোক, (২) গেস্ট টিচারদের কলেজ গভর্নিং বডি নিয়োগ করলেও, তাঁদের যেমন বেতন কাঠামো আছে সেরকম ক্যাজুয়াল কর্মীদের জন্যও বেতন কাঠামো চালু করা, এবং (৩) যতদিন না স্থায়ীকরণ হচ্ছে ততদিন রাজ্য সরকারের সার্কুলার ৩৯৯৮F(p2) অনুযায়ী এঁদেরকে স্বীকৃতি ও সুবিধা প্রদান করা হোক।

(৩) স্বনিযুক্ত শ্রম সংগঠক (এসএলও)

রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তরের অধিনে প্রায় ৫ সহস্রাধিক কর্মীরা (এসএলও) বছরের পর বছর কাজ করে আসছেন। রাজ্যের বিভিন্ন কর্পোরেশন, পৌরসভা, পঞ্চায়েত এলাকার অসংগঠিত শ্রমিকদের কাছ থেকে সামাজিক সুরক্ষা যোজনার ২৫ টাকা সংগ্রহ করলে ২ টাকা কমিশন হিসাবে তারা পেতেন। কিন্তু গত ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখের সরকারি সার্কুলারের (৬৪৮/৪৮/ WBUSWWB) পরিপ্রেক্ষিতে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে শ্রমমন্ত্রীর সাথে ঐ কর্মচারীদের প্রতিনিধিরা দেখা করে ডেপুটেশন দেন। শ্রমমন্ত্রী কর্মচারিদের আগামীদিনে নির্দিষ্ট কাজ এবং নির্দিষ্ট বেতন প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তার সমাধান হয়নি। গতবছর লকডাউন পর্যায় থেকে এঁরা পরিবার পরিজন নিয়ে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এমতাবস্থায়, আপনার হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। এইক্ষেত্রের কর্মচারীদের অবিলম্বে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা ও আগামীদিনে নির্দিষ্ট কাজ ও নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।

(৪) বেসরকারী পরিবহন শিল্পের শ্রমিক

আমাদের রাজ্যে হাজার হাজার বেসরকারী পরিবহন শিল্পের শ্রমিক আছেন। যারা লকডাউন পর্যায়ে খাদ্য এবং আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছেন। এঁদের কারুর রেশন কার্ড না থাকলেও আগামী ছ’মাস সবাইকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হোক এবং ৭,৫০০ টাকা করে দেওয়া হোক। অতিমারীর পর্যায়ে এই সকল কর্মীদের ৩০ লক্ষ টাকার জীবনবীমা করা হোক।

(৫) বেসরকারী সংস্থার শ্রমিক কর্মচারী

গতবছর সরকারী নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বহু বেসরকারী সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিক কর্মচারীদের লকডাউন পর্যায়ের বেতন দেয়নি, এমনকি কাজ থেকে বসিয়েও দিয়েছে। এইসব কর্তৃপক্ষ যাতে বকেয়া বেতন প্রদান করে, কাজে ফিরিয়ে নেয় এবং বর্তমান আংশিক লকডাউন পর্যায়ে তাদের বেতন ও চাকরির নিশ্চয়তা থাকে তারজন্য আপনার হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

(৬) সরকারী-বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, পৌরসভার কর্মী, ‘আশা’ ও আইসিডিএস ও মিড-ডে-মিল কর্মী

অতিমারির পর্যায়ে সরকারী, বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, পৌরসভার সাফাই বিভাগে কর্মরত সকল স্থায়ী, অস্থায়ী কর্মী, ‘আশা’ ও আইসিডিএস ও মিড-ডে-মিলে কর্মরত কর্মীদের ৩০ লক্ষ টাকার জীবনবীমা করা এবং করোনা আক্রান্ত কর্মীদের বেতন সহ চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা প্রয়োজন।

(৭) স্ট্রীট হকার, রেল হকার, রিক্সা চালক, ছোট দোকানদার তথা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষ

লকডাউনের ফলে এইক্ষেত্রের হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ গতবছর অসহায় এবং অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটিয়েছেন। ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের টাকা সবাই পাননি। সকলকে আগামী ৬ মাস বিনা পয়সায় রেশন ও ৭,৫০০ টাকা আর্থিক সাহায্যের জন্য আপনার হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে অফলাইন ও অনলাইনে ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হোক এবং অর্থের পরিমাণ ১০,০০০ টাকা করারও আবেদন তারা জানিয়েছেন।

আশা করব এই সমস্ত বিষয়ে তৃতীয় দফার সরকার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করবে। অবশ্যই আশা করব মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিক কর্মচারী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতে আলোচনা করবেন। গত দু’দফার মতো কারো সাথে দেখা না করার ঔদ্ধত্য পরিহার করবেন এবং জনগণের উপর ভরসা বাড়িয়ে আমলা নির্ভরতা কাটিয়ে উঠবেন।

- দিবাকর ভট্টাচার্য 

chatkal workers

রাজ্যের চটকল শ্রমিকদের প্রতিনিধিস্থানীয় ২৩টি ইউনিয়ন এক যৌথ আবেদন মারফত সদ্য নবনির্বাচিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একটি দাবিপত্র পেশ করেছে। ঐ দাবিপত্রে বলা হয়েছে, গোটা দেশ সহ এই রাজ্যজুড়ে কোভিড-২’র প্রবল সংক্রমণকে মোকাবিলা করতে আপনার সরকার একপ্রস্থ পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, কোভিডের থাবা একই সাথে শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট আঘাত নামিয়ে এনেছে। আমরা এই রাজ্যের চটশিল্পে, দলমত নির্বিশেষে নিম্নস্বাক্ষরিত ২১টি ট্রেড ইউনিয়ন চটকল শ্রমিকদের বেশ কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরে তা সমাধানের জন্য আপনার কাছে পেশ করছি।

১) রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, প্রতিটি চটকলে ৩০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে মিল চলবে। আপনি জানেন, এরফলে বিরাট সংখ্যক শ্রমিক নিয়মিত কাজ না পেয়ে চরম আর্থিক দুর্দশার কবলে পড়বেন। প্রতিটি মিলে প্রতিটি শিফটে ৩৩ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে ৮ ঘন্টা মিলগুলো চালাতে হবে। সাধারণত চটকলগুলোতে শ্রমিকরা তাদের কাজেরধরন অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই কাজ করেন, তাই মিলে প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণের সময় দূরত্ববিধি বজায় রাখার উপর বিশেষ নজরদারি রাখা প্রয়োজন।

যে সমস্ত শ্রমিকরা কাজ পাবেন না, তাঁদের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইন অনুসারে পুরো মজুরি বা লে-অফ দিতে হবে।

২) ইতিমধ্যেই কাঁচা পাটের অভাব দেখিয়ে মালিকপক্ষ রাজ্যের প্রায় ৮টি চটকল বন্ধ করেছে। বেশ কিছু মিল চলছে দু’টো শিফটে। আমরা এবিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে গত ২৮ এপ্রিল চিঠি দিয়েছিলাম। জুট কমিশনার, কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনারের কাছেও একই বিষয়ে চিঠি দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই সমস্যার সমাধান হলো না।

আমরা আপনার কাছে আবেদন করছি, জুট কমিশনারের দপ্তরের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে কাঁচা পাট সরবরাহের সমস্যা সমাধানে আপনি ইতিবাচক ভূমিকা নেবেন, সমস্ত বন্ধ চটকল খোলা এবং রাজ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ শ্রমনিবিড় শিল্পকে সংকটের হাত থেকে রক্ষা করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

৩) চটকল শ্রমিকদের নিজ নিজ কর্মস্থলে টিকাকরণের জন্য ইএসআই’কে দায়িত্ব নিতে হবে। সমস্ত চটকল শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারকেও দ্রুতই টিকাকরণের আওতায় আনতে রাজ্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কোভিড স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা তার উপর নজরদারি রাখা একান্তই প্রয়োজন।

৪) বিভিন্ন জেলার ইএসআই হাসপাতালগুলো কোভিড হাসপাতাল হওয়ায় কোভিড বহির্ভূত অসুখের জন্য শ্রমিকদের পাঠানো হচ্ছে মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালে। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায়, বাস চলাচলও অনিয়মিত হওয়ায় শ্রমিকরা রীতিমতো হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

আমরা আবেদন করছি, জেলাগুলোতে ইএসআই’র সাথে যে সমস্ত হাসপাতালের টাই-আপ আছে, সেখানে নন- কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই বর্তমানে এই চলতে থাকা হয়রানি বন্ধ করা যাবে।

৫) গতবছর লকডাউনের সময় মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য এসটিএল থেকে বঞ্চিত করে। সেই বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য আপনার কাছে আবেদন রাখছি।

অতিমারি সৃষ্ট এই মারাত্মক পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষকেই একযোগে পথে নামতে হবে। সামাজিক সংহতিকে আরও মজবুত করতে শ্রমিকদের আর্থিক বিপন্নতা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংকটকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমাধান করাটা আজ পরিস্থিতির দাবি।

আশাকরি, আপনি গুরুত্বের সাথে সমস্ত ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

BCMU, NUJW, FCMU, RCMU, JTWU, BPCMU, PBCMF, AIJTWF, NUJW, AIJWF, INJWF, BCMF, IFJTW, WBNJMSU, JWF, AIFJW, BJMS, BJMWU, WBCSKU, NUJTW, NUJTW, NFJW, BJSS.

The position of CPI (ML) Liberation

সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ প্রসঙ্গত দলের গৃহীত অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাবকে আমরা অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিক মনে করি। এই মুহূর্তে কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলা করা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা যেখানে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সেখানে এর ফলে সরকারের আশু কাজে বাধা পড়বে এবং আর্থিক সম্পদের অপচয় ঘটবে।

বিধান পরিষদ গঠিত হলে পরোক্ষ নির্বাচন ও মনোনয়নের মাধ্যমে বিধায়কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু গণতন্ত্রের কোনো সম্প্রসারণ ঘটবে না। গণতন্ত্রের সম্প্রসারণের জন্য চাই ক্ষমতা ও প্রশাসনের আরও বেশি বিকেন্দ্রীকরণ এবং আরও বেশি অধিকারপূর্ণ গণ অংশগ্রহণ। প্রশাসনকে আরো বেশি গণমুখী ও দায়বদ্ধ করে তুলতে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জনগণের অবাধ ও নির্ভীক অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করতে চাই উপযুক্ত পরিবেশ। গ্রামসভা ও ওয়ার্ড স্তর পর্যন্ত পঞ্চায়েত ও পৌরসভা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলা, সর্বস্তরে সরকারি তথ্য পরিসংখ্যানকে জনসাধারণের সামনে স্বচ্ছভাবে রাখা এবং সর্বস্তরে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের গ্যারান্টি চাই।

উল্লেখযোগ্য আদিবাসী জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও পঞ্চম তফসিল ও পেসা আইন এ রাজ্যে কোথাও বলবৎ নয়। বিধান পরিষদ গঠনের পরিবর্তে সরকারের এই দিশায় উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

CRPF's Cruelty to Indigenous Peoples in Bijapur

সিআরপিএফের প্রকাশ্য গুলিচালনায় ৩ জন আদিবাসী খুন হয়েছেন এবং ১২ জনের বেশি জখম হয়েছেন!

ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে বিস্তীর্ণ এলাকার জঙ্গল ধ্বংস করে বেআইনীভাবে সিআরপিএফ ক্যাম্প নির্মাণের একটি সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রতিবাদরত সহস্রাধিক আদিবাসীর উপর সিআরপিএফ প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছে।

বিজাপুর ও সুকমা জেলার সীমানায় একটি জঙ্গল কেটে নবনির্মিত সিআরপিএফ ক্যাম্পের বিরুদ্ধে বিজাপুরের সিলগার গ্রামে মে মাসের ১২ তারিখ থেকে কয়েক হাজার স্থানীয় আদিবাসী প্রতিবাদে নামেন। কিন্তু ১৭ মে, নিরাপত্তা বাহিনী অকুস্থলে প্রতিবাদরত আদিবাসীদের উপর খোলাখুলি গুলি চালায় যাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়। গ্রামবাসীদের মতে, নিরাপত্তা বাহিনী গায়ের জোরে তাঁদের জমি ও জঙ্গল বেদখল করছিল এবং লাগাতার গ্রামবাসীদের হেনস্থা করছিল।

এলাকার মানুষের আরো অভিযোগ যে, ঘটনার পর থেকেই বেশ কিছু প্রতিবাদী নিখোঁজ হয়ে যান। পরে বস্তারের আইজি, পি সুন্দারাজ সাফাই দেন, আটজন আদিবাসীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক করা হয়েছে। কিন্তু ১৮ মে রাতে গ্রামবাসীরা জানান যে, তাদের সকলকেই জেলে ভরা হয়েছে। ১৯ মে জানা যায় যে, এই নৃশংস ঘটনার পর ৫০ ঘন্টার বেশি সময় কেটে গেলেও বিজাপুরের জেলা কালেক্টর রীতেশ আগরওয়াল গ্রেফতার হওয়া আদিবাসীদের মুক্তির পূর্বশর্ত হিসাবে গ্রামের মানুষকে আর প্রতিবাদ না চালানোর মুচলেকা দিতে বলেন।

ঐতিহাসিকভাবে ঐ জমি আদিবাসীদের মালিকানাধীন এবং অভিযোগ এটাই যে, ঐ সিআরপিএফ ক্যাম্প নির্মাণের পূর্বে স্থানীয় গ্রাম সভার থেকে কোনোপ্রকার অনুমতি নেওয়া হয়নি। সুতরাং প্রশ্ন উঠেছে যে, গ্রামবাসীরা না চাইলেও সরকার কেন ঐ ক্যাম্প তৈরি করছিল?

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন গ্রেফতার হওয়া আদিবাসীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং বর্বর গুলিচালনার সমস্ত চক্রীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছে। আরো দাবি করছে যে, অবিলম্বে কংগ্রেস পরিচালিত ছত্তিসগড় সরকারকে এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং বেআইনী ক্যাম্প নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।

Police beat a Dalit youth

হাজারিবাগ জেলার চৌপারান থানার মাছলা গ্ৰামের ছক্কন ভুঁইয়া নামে এক দলিত যুবককে পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলে। নৃশংস এই ঘটনাটা ঘটে ২৮ এপ্রিল। পুলিশি নির্মমতার খবর পেয়ে সিপিআই(এমএল)-এর এক প্রতিনিধি দল তথ্যানুসন্ধানে করমা গ্ৰামে যায়। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিহত যুবকের স্ত্রী ববিতা দেবী, তার বড় ছেলে সুরজ ভুঁইয়া, প্রতিবেশী সানি ভুঁইয়া ও বিজয় ভুঁইয়া এবং অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলেন। যে স্থানে পুলিশি নৃশংসতা সংঘটিত হয় সেই স্থানটিও তাঁরা পরিদর্শন করেন। তাঁদের তদন্তে ঘটনাটা এই রকম বলে জানা যায়।

গত ২৮ এপ্রিল ছক্কন ভুঁইয়া স্ত্রী এবং ভাই শঙ্কর ভুঁইয়াকে মোটর বাইকে চাপিয়ে যাচ্ছিলেন পার্শ্ববর্তী গ্ৰাম মানগড়ে, এক আত্মীয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। মোটর বাইকে পেট্রল ভরতে তাঁরা গ্ৰামেরই এক পেট্রল পাম্পে থামেন। সেই সময় চৌপারান থানার পুলিশ দুটো গাড়িতে সেখানে পৌঁছয় এবং সেখানে উপস্থিত সবাইকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। সবাই পালাতে থাকে এবং ভয় পেয়ে ছক্কনের ভাই শঙ্কর ভুঁইয়াও ছুটে পালায়। পুলিশ ছক্কন ও তার স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। ছক্কন বিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা বললেও পুলিশ তাতে কান দেয় না। পুলিশের মারে ছক্কন বালির স্তুপে পড়ে গেলেও পুলিশের পৈশাচিকতা থামে না। পুলিশের মারে একটু পরে ছক্কন মারা যায় আর তার স্ত্রী আহত হয়। এরপরই পুলিশ ঐ স্থান থেকে পালিয়ে যায় এবং সেখানে মৃতদেহ কয়েক ঘন্টা পড়ে থাকে। রাত সাড়ে এগারটার সময় বরহির এসডিও এবং ডিএসপি সেখানে পৌঁছে মৃতদেহ তুলে নিয়ে যায়। ময়নাতদন্তের পর ২৯ এপ্রিল পুলিশ ছক্কনের দেহ গ্ৰামে নিয়ে আসে এবং পরিবারের হাতে তুলে দেয়।

ছক্কনের পরিবারের লোকজন তদন্তকারী দলের সদস্যদের জানান, স্থানীয় বিধায়ক সাহায্য স্বরূপ পরিবারের হাতে ১০০০০ টাকা তুলে দিয়েছেন। আর চৌপারান থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সাহায্যের নামে ৫০০০০ টাকা দিয়ে ছক্কনের ভাইকে দিয়ে একটা কাগজে সই করিয়ে নেয়। কাগজে কি লেখা ছিল পরিবারের কেউ জানে না।

তদন্তকারী দলে ছিলেন সারা ভারত কিসান মহাসভার ঝাড়খণ্ড সম্পাদক পূরণ মাহাতো, সিপিআই(এমএল)-এর হাজারিবাগ জেলা কমিটির সদস্য শের মহম্মদ, শেখর রাই এবং খুরশিদ আনোয়ার আনসারি। তদন্তকারী দলের প্রধান পূরণ মাহাতো বলেন, পুলিশ অকারণেই পাশবিক আচরণ করেছে, ঐ রকম নির্মমভাবে লাঠি চালানোর কোনো কারণই ছিল না। ওদর বিয়ে বাড়ি যেতে না দিলেও ঘরে ফিরতে দিতে পারত। ছক্কনের ভাইকে দিয়ে একটা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে পুলিশ ঐ পরিবারের সঙ্গে প্রতারণাও করে। পুলিশ যা করেছে সেটা এক নির্ভেজাল ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া অন্য কিছু নয়।

‘Zero Tolerance’ against disrespect

সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ কড়া বার্তা দিয়েছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু দেশজুড়ে অব্যাহত এই মানুষ-বিরোধী শক্তির উল্লাস, সমাজকর্মী থেকে লেখিকা সবার উপর অব্যাহত আক্রমণ। বত্রিশ বছর বয়সী নাতাশা নরওয়াল। দেশের নাগরিকদের ভোটে জিতে আসা বিজেপি সরকারের দেশেরই নাগরিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ মেনে নেননি, মেনে নেননি নাতাশার মত আরও বহু তরুণ তরুণী, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী মানুষ। প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দেশ। নাতাশাকে এনআরসি, সিএএ বিরোধী লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের জন্য ও দেশের নাগরিকদের ‘বেনাগরিক’ করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ‘অপরাধে’ ভুয়ো মামলায় ছ’মাস ধরে কয়েদ করে রেখেছে মোদী সরকার। এত নির্যাতন, এত অত্যাচারের পরও তাকে ভয় পাওয়াতে পারেনি বিজেপি সরকার। এই চরম ফ্যাসিস্ট শক্তির মুখে দাঁড়িয়ে সন্তানের লাশ শনাক্ত করতে ভয় পাননা সন্তানগর্বে গর্বিত পিতারাও, যে বার্তা খোদ নবারুণ দিয়েছিলেন। নাতাশার পিতা মহাবীর নারওয়াল বরং দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন যেখানেই মানুষ কষ্ট পাবে, বিপদে পড়বে আমার মেয়ে নাতাশাকে পাবেন। এই সরকার মহিলাদের যৌন বস্তু, উপভোগ বা সেবার উপকরণ ছাড়া কিস্যু ভাবে না! ক্রমাগত নির্যাতন করা হচ্ছে নাতাশাকে। সংগ্রামী বাবার শেষ মুহূর্তটাও দেখার ছাড় মেলেনি। কিন্তু তার বাবার এই বার্তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে বার্তা দিয়েছে ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ মনোভাবাপন্ন বাবা মায়েদের, উদ্বুদ্ধ করেছে হাজার হাজার নাতাশাকে। কারণ,

কবিতা এখনই লেখার সময়
ইস্তেহারে দেয়ালে স্টেনসিলে
নিজের রক্ত অশ্রু হাড় দিয়ে কোলাজ পদ্ধতিতে
এখনই কবিতা লেখা যায়
তীব্রতম যন্ত্রণায় ছিন্নভিন্ন মুখে
সন্ত্রাসের মুখোমুখি—ভ্যানের হেডলাইটের ঝলসানো আলোয়
স্থির দৃষ্টি রেখে
এখনই কবিতা ছুঁড়ে দেওয়া যায়
’৩৮ ও আরো যা যা আছে হত্যাকারীর কাছে
সব অস্বীকার করে এখনই কবিতা পড়া যায়।

শুধু নাতাশা নয়, দেশজুড়ে মহিলাদের উপর নেমে আসা নির্যাতন ও হিংসার বিরুদ্ধে সবসময়ই ‘জিরো টলারেন্স’এর বার্তা দেয় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এবং আইপোয়া, আইসা, আরওয়াইএ-র মতো গণসংগঠনগুলি। দেশের সিঙ্ঘু বর্ডারে অবস্থানরত কৃষকরাও সেই বার্তা দিলেন সম্প্রতি উঠে আসা একটি ধর্ষণের অভিযোগের প্রতি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে টিকরি বর্ডারে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়া এক তরুণীর কোভিড সংক্রান্ত অসুস্থতার কারণে মৃত্যুর পর তার বাবা উক্ত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংযুক্ত কিষান মোর্চার তরফে বিবৃতি দিয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হয় অভিযুক্তদের এবং যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে। হঠিয়ে দেওয়া হয় অভিযুক্ত ‘কিসান সোশ্যাল আর্মি’র তাঁবু ও ব্যানার। আইনি দিক থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ে তরুণীর পরিবারের পাশে দাঁড়ায় দেশের কৃষকরা। প্রবল প্রতিরোধের মুখে পদক্ষেপ নেয় কমিশন, হরিয়ানা পুলিশ। অনেক সময়ই সংশোধনবাদী জায়গা থেকে প্রশ্ন ওঠে যে মহিলা অধিকারের আন্দোলনের সঙ্গে খেটে খাওয়া মানুষের আন্দোলনের সম্পর্ককি? উত্তরটা এখানেই। পিতৃতান্ত্রিকতার গোড়া থেকে সমূলে উৎপাটন না করলে সমাজব্যবস্থা তথা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই কখনই সম্ভব নয়। আজ দেশজুড়ে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই নাতাশার মতো মেয়েরাই।

- সৌমি জানা 

with the resistance of the Palestinian

ইজরায়েলের দখলদারির পরিকল্পনা এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রতিরোধের প্রতি সংহতি

(নয়া দিল্লী থেকে ১১ মে এই বিবৃতিটি দেন সিপিআই(এমএল)-এর পলিটব্যুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণাণ)

ইজরায়েল ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজাতে প্যালিস্তিনীয়দের যে সমস্ত অঞ্চল দখল করে আছে, সেই সমস্ত অঞ্চলে প্যালেস্তিনীয় জনগণকে ইজরায়েলি বর্ণবৈষম্যবাদী জমানার নতুন করে চালানো পৈশাচিক হামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গত ১০ মের রাতে ইজরায়েলি সেনারা গাজার ওপর একের পর এক বিমান হানা চালিয়ে ২৬ জন প্যালেস্তিনীয়কে হত্যা করে, যার মধ্যে ৯ জন শিশুও ছিল। মানবতার বিরুদ্ধে ইজরায়েলের এই হামলার সর্বকনিষ্ঠ শিকারটির বয়স ছিল ১০ বছর। ইজরায়েল বেশ কিছুকাল ধরে গাজার ওপর স্থল-আকাশ-সমুদ্র ঘিরে অবরোধ চালাচ্ছে এবং লাগাতার বোমা ফেলছে যার ফলে গাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক এই আগ্ৰাসন গাজাবাসীর মানবিক সঙ্কটে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।

পর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজার ওপর পূর্ণ শক্তি নিয়ে আক্রমণের হুমকি দিয়েছেন, আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গাঞ্জ সহস্রাধিক সংরক্ষিত সেনাদের সমাবেশিত করেছেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং তিনি এক নির্বাচনী সঙ্কটের মুখেও পড়েছেন। দেশের দক্ষিণপন্থী অংশগুলোকে নিজের দিকে টানার লক্ষ্যেই নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে প্যালেস্তিনীয়দের বিরুদ্ধে হিংস্র আক্রমণ চালিয়ে আসছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি ইতিমধ্যেই ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ৩০ শতাংশ, বিশেষভাবে জর্ডন উপত্যকার এলাকা দখলের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। পরিকল্পিত এই দখলদারি চালানো হবে মূলত দখলীকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ‘সি’ অঞ্চলে, যেখানে অধিকাংশ বেআইনি ইজরায়েলি বসতিগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।

পূর্ব জেরুজালেমে ইজরায়েল যে দখলদারী চালিয়েছে, সেখানের এক অঞ্চল সেখ জারাকে নিজেদের অধিকারে নেওয়ার ইজরায়েলি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্যালেস্তিনীয়রা প্রতিরোধ চালিয়ে আসছিলেন। এই পৃষ্ঠভূমিতেই ইজরায়েলের বিমান হানা শুরু হয়। সেখ জারা অঞ্চলে ৩০০-রও বেশি প্যালেস্তিনীয় পরিবার বাস করে। অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইজরায়েলি বসতিগুলির বাসিন্দারা এদের ওপর লাগাতার সহিংস হামলা চালায়, এবং ইজরায়েলি সেনারা তাদের বাসস্থান থেকে উৎখাত করে এবং তাদের সম্পদের ওপর ধ্বংসকাণ্ডও চালায়।

গত ৭ মে আল আক্সা মসজিদে যে ভক্তরা সমবেত হয়েছিলেন, তাঁরা সেখ জারাতে উৎখাতের হুমকির মুখে পড়া পরিবাবরগুলোর প্রতি সংহতি জানান। ইজরায়েলি সেনারা মসজিদের ভিতর ঢুকে মসজিদ চত্বরে থাকা উপাসকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মম আক্রমণ চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে এবং বন্দুক থেকে রবারের বুলেট চালায়।

এর পর থেকে মসজিদের ওপর ইজরায়েলি সেনাদের হামলা বেড়ে চলে, অবৈধভাবে এলাকা আত্মসাৎ করা এবং ইজরায়েলি সেনাদের দখলদারির অবসানের দাবিতে প্যালেস্তিনীয়দের প্রতিবাদ আন্দোলনের ওপরও নামিয়ে আনা হয় নির্মম দমন। ইজরায়েলি সেনারা ইজরায়েলি বসতিগুলির সশস্ত্র অধিবাসীদের প্যালেস্তিনীয়দের ওপর আক্রমণ চালানোর অবাধ অধিকার দিয়েছে। ইজরায়েলি সেনাদের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, গাজা ও জেরুজালেমে ৭০০-রও বেশি প্যালেস্তিনীয় আহত হয়েছেন।

ইজরায়েলের দখলদারির এই পরিকল্পনার পিছনে স্পষ্টতই রয়েছে জাতির বিশুদ্ধকরণ এবং নিজেদের বাসভূমি থেকেই প্যালেস্তিনীয়দের বিতাড়নের অভিপ্রায়।

***

Palestinian people


দক্ষিণ আফ্রিকায় যে বর্ণবৈষম্যবাদ বিরোধী আন্দোলন চলেছিল তার প্রতি সমর্থনের সমাবেশ ঘটাতে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম বাণিজ্য সম্পর্ক ছেদ করেছিল যে দেশগুলো, ভারত ছিল তার অন্যতম, এবং পরবর্তীতে ঐ দেশটার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞাও ভারত জারি করে। আজ ইজরায়েলি বর্ণবৈষম্যবাদী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার ইতিহাসের বিকারই ঘটাচ্ছেন। মোদী সরকার ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারিত করে চলেছে, তার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং কৌশল আমদানি করছে যেগুলো ব্যবহার করা হবে কাশ্মীরী জনগণের বিরুদ্ধে এবং ভারতে চলা গণতান্ত্রিক ও জনগণের আন্দোলনের দমনে।

বর্তমান সময়ের দাবি হল, গাজার ওপর ইজরায়েলের পাশবিক দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে এবং প্যালেস্তিনীয়দের ওপর চালানো যথেচ্ছ অপরাধেরও সমাপ্তি ঘটাতে হবে। এর জন্য ইজরায়েলি বর্ণবৈষম্যবাদী জমানার বিরুদ্ধে ভারত এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রকে সামরিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে হবে।

প্যালেস্তিনীয় জনগণ যখন ইজরায়েলি বর্বরতা, বর্ণবৈষম্যবাদ এবং সামরিক দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন তখন প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রতি এবং তাঁদের মুক্তি সংগ্ৰামের প্রতি পরিপূর্ণ সংহতি পুনরায় জ্ঞাপন করছে। ইজরায়েলকে বয়কট করা, তার ক্ষমতাকে খর্ব করা এবং তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে আহ্বান বিশ্বের কাছে প্যালেস্তিনীয়রা জানিয়েছেন, তাকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সমর্থনও আমরা পুনরায় ব্যক্ত করছি।

Covid Volunteers in Bankura

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালীন ১৬ মে থেকেই বিষ্ণুপুর মিউনিসিপ্যালিটি অঞ্চলের মধ্যেই করোনা আক্রান্ত পরিবার গুলির নিকট রান্না করা খাবার-ঔষুধ ও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিষ্ণুপুরেরই কিছু তরুণ প্রজন্মের ছাত্রদল। আইসা কোভিড ভলেন্টিয়ার এই উদ্যোগ শুরু করেছে লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই। একইসাথে তারা খ্রিস্টান কলেজের অধ্যাপক এবং ‘উত্তরণ’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় বাঁকুড়া মিউনিসিপ্যালিটির ভিতরেও রান্না করা খাবার সহ ঔষুধপত্র বা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী প্রদানের কাজ শুরু করেছে ১৮ মে থেকে। সন্ধ্যাকালীন ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেও এই কাজ অনবরত চলছে শুধুমাত্র সংকট ও দুরবস্থায় থাকা সহনাগরিকদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যই। একটি শেলে যোগাযোগ করা যাচ্ছে ভলেন্টিয়ার টিমের হেল্প ডেস্কে। কোভিড ও নন-কোভিড পেশেন্টদের অক্সিজেন, হাসপাতালে বেড, অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ, ডাক্তার মারফত ফোনে যোগাযোগ করে দেওয়া, টেস্টিং সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের কাজ বিগত ৫ মে থেকেই সারা বাঁকুড়া জেলা জুড়ে শুরু করেছে ‘কোভিড ভলেন্টিয়ার্স আইসা (বাঁকুড়া)’। ইতিমধ্যে (১৮ মে পর্যন্ত) ৪০-এর অধিক রোগীর সহযোগিতা করা গেছে ফোন মারফত। একইসাথে নতুন উদ্যোগে কোভিড আক্রান্ত পরিবারের কাছে খাবার ও আনুসাঙ্গিক দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করে আরো মানুষকে সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা আমরা করছি।

যোগাযোগ –
বিষ্ণুপুর – ফারহান - ৮৩৪৮৯১২৭৯৮, সুনন্দা - ৮৯১৮৫১২৩১৯, মঙ্গল – ৮৫৯৭৯৮৩০১৮
বাঁকুড়া - আয়ূশ - ৯৫৪৭৮১৮৬৬৮, মহেশ্বর - ৮৬১৭২৮৭৩৫৪

Ganges carrying dead bodies

(সাহসিনী গুজরাতি কবি)

মৃতদেহগুলি একসাথে বলে “সব চাঙ্গা চাঙ্গা,”
সাহেব, তোমার রামরাজ্যেতে শববাহিনী গঙ্গা।
জ্বলে খাক হল শ্মশান যত, কাঠের জোগান শেষ
কাঁধগুলো সব ক্লান্ত, শুকিয়ে গেছে অশ্রুর রেশ
দুয়ারে দুয়ারে যমদূত নাচে মৃত্যুর নাচ নাঙ্গা,
সাহেব, তোমার রামরাজ্যেতে শববাহিনী গঙ্গা।
শ্মশানের চিতা ধকধক জ্বলে বিরাম চাই যে তার
মুছছে সিঁদুর ঘরে ঘরে শুধু বুক চাপড়ানো সার
আগুন লাগিয়ে বাঁশরী বাজায়, বাঃ রে “বিল্লা রঙ্গা”,
সাহেব, তোমার রামরাজ্যেতে শববাহিনী গঙ্গা।
সাহেব, তোমার দিব্য বস্ত্র, আহা কি দিব্য জ্যোতি,
আসল রূপটি দেখছে সবাই, বুঝছে তোমার মতি
হিম্মত হোক, আজকেই বল “আমার সাহেব নাঙ্গা”,
সাহেব, তোমার রামরাজ্যেতে শববাহিনী গঙ্গা।

Events and trends

উত্তরপ্রদেশে এক সুপরিচিত শিক্ষক সংগঠন জানাচ্ছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেড় হাজারের বেশি শিক্ষক। সংখ্যাটা প্রথমে নথিভুক্ত হয়েছিল ৭০৬ জন, পরে সংশোধিত হিসাবে দাঁড়িয়েছে ১,৬২১ জন।

- দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ১৯ মে ২০২১

Comrade Shanti Banerjee

গত ১৪ মে বর্ধমানের নিজ বাসভবনে দীর্ঘদিনের পার্টি কমরেড শান্তি ব্যানার্জী (খুকুদি) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার দুদিন আগে বাড়িতে পড়ে গিয়ে চোট পান। কমরেড খুকুদি ৭৩ সালে নবদ্বীপে পার্টির সাথে যুক্ত হন। তাঁর বাড়ি ছিল নবদ্বীপের তেঘড়ি পাড়ায়। সিপিআই(এমএল) পুনর্গঠনের সময় নবদ্বীপ শহর ছিল পার্টির কাজের অন্যতম কেন্দ্র। খুকুদি’র বড় দাদা বামপন্থী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। ৭০ সালে ছোট ভাইও পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার বাড়ি পার্টির কমরেডদের আশ্রয়স্থল ছিল। পোড়ামাতলায় বড়দার দোকানে খুকুদিও দর্জির কাজ করতেন। তার রোজগারের অর্থ দিয়ে পার্টির পেশাদার ক্যাডারদের আর্থিক সাহায্য করতেন। একটা সময় পুলিশের অত্যাচারের জন্য নবদ্বীপ শহর ছেড়ে বর্ধমান শহরে গিয়ে থাকতে হয়। তারপর বেলঘরিয়া, কোন্নগর ও অন্যান্য জায়গায় থেকেছেন। মহিলা আন্দোলনের সাথে সক্রিয় থেকেছেন। খুবই দরদী ও মানবিকবোধ সম্পন্ন কমরেড ছিলেন। পার্টি নীতিতে সবসময় দৃঢ থাকতেন। যখন শরীর সুস্থ ছিল তখন পার্টির সব কর্মসূচীতে অংশ নিতেন। কমরেড শান্তি ব্যানার্জির মৃত্যু পার্টির কাছে বেদনাদায়ক। বর্ধমান জেলা কমিটি, বিশেষ করে কমরেড পরেশ ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র ও তার পরিবার পরিজনদের শোকের সাথে আমরাও শোকাহত।

কমরেড শান্তি ব্যানার্জি লাল সেলাম। কমরেড শান্তি ব্যানার্জি অমর রহে।

- সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটি 

 

In memory of Comrade Shanti Banerjee


কমরেড খুকুদি’র সাথে আমার প্রথম দেখা ১৯৭০ দশকের মাঝে, কমরেড পরেশদার সূত্রে। পার্টি তখন গোপন অবস্থায় কাজ করত, খুকুদি’রও তখন সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী হওয়ার উদ্দেশ্য। খুবই মিশুকে ও আন্তরিক কমরেড। আবার দেখা হল ’৮০ র দশকে। তখন সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী-মায়েদের অন্য এক লড়াই চোখে পড়ল। কমরেড মিনাদি ও খুকুদি’কে কেন্দ্র করে একটা আস্তানা গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই আস্তানার একটা বিচিত্রতা ছিল। সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা বলতে খুকুদি, একটা বাচ্চা মেয়ে (মিঠু) আর আমি। মিঠুর মা মীনাদি কাজে যেতেন কিন্তু রোজ সেখানে ফিরতেন না। খুকুদি’রও এক শিশু সন্তান ছিল। সে থাকতো আবার অন্য এক জায়গায়। তাকে মাঝে মাঝে এনে দিন কয়েক রেখে আবার সে যেখানে থাকতো সেখানে পাঠানো হত। দুই শিশুর বাবারা মাঝে মাঝে এসে দু’এক দিন থেকে আবার চলে যেতেন। কারণ তাঁরাও সর্বক্ষণের কর্মী। টিকে থাকার জন্য, গোপনীয়তা বজায় রেখে শ্রমজীবী মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য খুকুদি ও আমি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা নিলাম। খুকুদি সেলাইয়ের কাজ, আর আমি ছোট বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করলাম। এখানে দেখলাম এক অন্য খুকুদি - পরিশ্রমী, কষ্টসহিষ্ণু ও দরদী। একসময় আস্তানাটা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। কারণ এরকম আস্তানা একটানা বেশিদিন রাখা সম্ভব ছিল না।

আমাদের আবার দেখা হয়, যখন আমি মা হলাম। তখন অন্য দুই মা (মীনাদি ও খুকুদি) বেঁধে বেঁধে থাকার মতো এগিয়ে আসে আরেক মা’কে সাহায্য করতে। কারণ আমি তখন একলা। আমি জানতাম ওই দু’জন মা তাঁদের সেই সময়ে উপযুক্ত সাহায্য পাননি। উপযুক্ত শেল্টারের অভাব, আর্থিক সঙ্কট, গোপনীয়তা বজায় রাখা - সব মিলিয়ে এক অদম্য লড়াই। আমি আমার শিশু সন্তানকে নিয়ে যখন মায়ের সাথে দেখা করতে যাই তখনও খুকুদি আমার সঙ্গী ছিলেন। খুকুদির সাথে শেষ দেখা বর্ধমানের টাউন হলের এক পার্টি প্রোগ্রামের শেষে। সেবার অনেক সাথী মিলে একসাথে দেখা হয়। পরেশদাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই।

খুকুদি’কে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। লাল সেলাম।

- মলিনা বক্স 

The late Anjan Banerjee

বাংলার সংবাদ জগতের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব, প্রাক্তন ‘আবসা’ এবং সিপিআই(এমএল) সদস্য অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।

Comrade Subir Bhattacharya

১৯ মে, ৬৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বালির দীর্ঘদিনের পার্টি সমর্থক কমরেড সুবীর ভট্টাচার্য (বেটোদা)। কয়েকদিন আগে কোভিড আক্রান্ত হয়ে তিনি দমদমের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও দীর্ঘদিনের হৃদরোগ এবং সুগারের সমস্যা কাহিল করে দিয়েছিল ভিতর থেকে। সদাহাস্যময় প্রাণোচ্ছ্বল এই মানুষটি পার্টি সদস্য না হলেও পার্টি পরিবারেরই ছিলেন। বালি জোড়া-অশ্বত্থতলা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর আরও একটা বড় পরিচয়, বালি-বেলুড়-উত্তরপাড়া জুড়ে তাঁর অবাধ সাংস্কৃতিক যাতায়াত। সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে ওপপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। গড়ে তুলেছিলেন নাটকের দল। বালি এলাকার প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার এবং নাট্যাভিনেতা হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। ছিলেন শখের ছড়াকার। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ‘বেটোদা’র প্রয়াণে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের বালি-বেলুড় লোকাল কমিটি গভীর শোকপ্রকাশ করেছে।

The late Shikha Saha

বেহালা অঞ্চলের এক সময়ের পার্টি কর্মী শিখা সাহা গত ১৭ মে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাঁর অকালপ্রয়াণ অত্যন্ত দুঃখজনক। শিখাদের পরিবার নকশালবাড়ির গোড়ার পর্ব থেকেই পার্টির সাথে জড়িত ছিল। কমরেড শিখা লাল সেলাম।

- সমাপ্ত -

খণ্ড-28
সংখ্যা-18