প্রয়াত কমরেড বিডি লাল সেলাম
Late Comrade BD Lal Salam

২৩ ডিসেম্বর ২০২০ খড়দহে নিজের বাড়িতে বাবলু দাস (বিডি) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বয়সজনিত কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন।

কমরেড বাবলু দাস ছিলেন নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলন সহায়ক কমিটির সময়কার রাজনৈতিক কর্মী। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন সিপিএমের ছাত্র সংগঠন বিপিএসএফ-এর কর্মী। ১৯৬৬/৬৭ সালে বেলঘরিয়া যতীন দাস নগরে কংগ্রেসের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল বিডি’ও সেই লড়াইয়ে অন্যতম সৈনিক ছিলেন। এরপর নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলন, ডাক্তারির ছাত্র বিডি পড়াশোনা ছেড়ে দেশের মুক্তির জন্য আরও বহু কমরেডকে সঙ্গে নিয়ে বিপ্লবের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

বহু রাজনৈতিক ঘটনার তিনি সাক্ষী ছিলেন। বাবলুদা আমাদের কাছে ছিলেন রাজনৈতিক ‘হিরো’। সেই সময়ে সিপিএম বা কংগ্রেসের সাথে সংঘর্ষ আমরা জড়িয়ে পড়েছি। এগিয়ে যাওয়া বা পিছু হটা চলছে। আশ্রয় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে অঞ্চলে ফিরে আসার পরিকল্পনা প্রস্তুতি সবকিছুতেই বাবলু দাস।

১৯৭৪ সালে পার্টি ধাক্কায় পড়েছে। টিঁকে আছে যতীন দাস নগরে, নেতৃত্বে বিডি। প্রতিদিন কংগ্রেস ও পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। পুলিশের গুলিতে শহীদ হলেন ২০ বছরের যুবক কমরেড তপন শুর, এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণ ঘটে গেল। এই সময়ে বাবলুদা ছোট বড়, মহিলা-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী সবার প্রিয়, আশা ভরসার স্থল। বাবলুদার জন্যে প্রতিটি বাড়ির দরজা ছিল খোলা, যখন তখন যে কোন সময় তিনি সেখানে এসে থেকে গেলে; বাড়ির মানুষ নিজেকে ধন্য মনে করতেন। সেই সময় কলোনির কাঁচা রাস্তা, গলি তস্যগলি, বেড়ার বাড়ি, হারিকেনের আলোতে ছিল বিডি’র বিচরণ। বিডি নিজে নয়, বিডি’র সাথে আসা যেকোন কমরেডের থাকা খাওয়ার জন্যে কোনো চিন্তা ছিল না। বাবলুদার তত্বাবধানে কেন্দ্রীয় কমিটি, রাজ্য কমিটির বহু মিটিং সেই সময় যতীন দাস নগর, উদয়পুরে হয়েছে।

যখন পার্টির মধ্যে স্কোয়াড রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত, তখন বাবলুদা গুন্ডা, দালাল ও পুলিশের নজর এড়িয়ে জননেতা হয়ে উঠেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতা থেকে খুন, জখম গণ্ডাগণ্ডা মামলা পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজে বেরাচ্ছে, বাবলুদা ধরাছোঁয়ার বাইরে। জনগণের নিরাপদ আশ্রয়ে তিনি নিশ্চিন্তে আছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পুলিশ তাঁর হদিস পায়নি।

বিডি গোপন পার্টির রাজনীতির মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রেখেছিলেন। পার্টির কাজে দার্জিলিং ও নদীয়া জেলায় সংগঠক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলেন। এরপর পার্টি প্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু করলে বিডি তা মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। বাবলুদার মনের মধ্যে গেঁড়ে বসেছিল যে কোনো সময় তার অতীতের মামলাগুলো চালু হবে এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে। যতীন দাস নগরে যাতায়াত করতেন, কিন্তু নিজের বাসস্থান গোপন রেখেছিলেন। যার ফলে ওনার মৃত্যু সংবাদও আমাদের কাছে গোপন ছিল। এখন প্রয়াত কমরেড রামুর স্ত্রী মায়াদির কাছে বাবলুদার মৃত্যু সংবাদ শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অনেক স্মৃতি ভেসে ভেসে আসছিল। বিডি আমাকে চিরকাল লং বলেই ডাকতো। মনে পড়ে যায় যতীন দাস নগরে কমরেড পানুদার ‘মাও’ গুহার কথা। কমরেড বাবলু দাস লাল সেলাম।

- নবেন্দু দাশগুপ্ত 

খণ্ড-28
সংখ্যা-14