১. দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীন এলাকাবাসীর কাছে ১৭ জানুয়ারী প্রিয়জন হারানো বেদনার এক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনেই কংগ্রেসি সিআরপি-র নির্মম অস্ত্রের আঘাতে প্রকাশ্যে খুন হন, এলাকার কয়েকজন তরুণ। তারা জোতদার ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত শোষণের বিরুদ্ধে সারা দেশজুড়ে চলা ছাত্র-কৃষকের চলমান লড়াইয়ের শরিক ছিলেন। তারা প্রাণের বিনিময়ে সমস্ত বাঘাযতীন এলাকায় সামন্ততন্ত্র ও তার সহায়ক ষড়যন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষের একতার যে অনির্বাণ শিখা জ্বালিয়ে গেছিলেন, তা আজও বহ্নিময়।
গত ১৭ জানুয়ারী ২০২১ পার্টির বাঘাযতীন ব্রাঞ্চ ও টালিগঞ্জ কমিটির উদ্যোগে বারোভুতের মাঠ এলাকায় কমরেড শান্তনু ভট্টাচার্যের পরিচালনায় শহিদবেদীতে মাল্যদানের মাধ্যমে শহিদদের স্মৃতিচারণ করে ৩য় বাঘাযতীন ব্রাঞ্চ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর লোকাল কমিটির বাবুন চ্যাটার্জী সহ অন্যান্য নেতৃত্বরাও। ফসল ও জমির উপর কৃষকের অধিকার আদায় তথা কৃষিবিপ্লবের শহিদ কমরেড দিলীপ দাসের অনুজ দীপক দাসের আবেগঘন স্মৃতিচারণে উপস্থিত সদস্যরা কর্পোরেট তোষণকারী এবং কৃষকবিরোধী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে মেহনতি মানুষের লড়াইয়ে আরও বেশি করে একাত্ম হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। কমরেড তমাল চক্রবর্তী বলেন যে এমন বহু নৃশংস হামলা মোকাবিলা করেই পার্টি তার সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে চলেছে। জেলা সম্পাদক কমরেড অতনু চক্রবর্তী ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের বিভিন্ন দিকগুলি উল্লেখ করে প্রতিরোধ গড়ার শপথের কথা বলেন। কমরেড মলয় তেওয়ারি স্মরণ করিয়ে দেন যে ১৭ জানুয়ারী রোহিথ ভেমুলার শহীদ দিবস। তিনি বলেন যে নকশালবাড়ি থেকে ভোজপুরের পথ বেয়ে দলিত গরিব প্রান্তিক মানুষের উত্থানের সাথে সিপিআইএমএল রাজনীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।
২. শহিদবেদীতে মাল্যদানের পর গাঙ্গুলিবাগান এলাকায় সম্মেলনের অধিবেশন শুরু হয়। পার্টির জেলা কমিটির তরফে পর্যবেক্ষক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক কমরেড অতনু চক্রবর্তী। প্রথমেই রাজ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সার্কুলার পাঠ করা হয় ও তা নিয়ে মতামত বিনিময় হয়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে কমরেড জেলা সম্পাদকের সাবলীল ব্যাখ্যায় সম্মেলন এগিয়ে চলে। বিদায়ী ব্রাঞ্চ সম্পাদিকা কমরেড চন্দ্রাস্মিতা সহ প্রত্যেক ব্রাঞ্চ সদস্য বিগত বছরে এলাকায় পার্টির কাজ, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে পার্টির প্রচারবৃদ্ধি, বিভিন্ন লোকাল দাবিদাওয়া সংক্রান্ত লড়াইয়ে পার্টির উপস্থিতি, বিবিধ যৌথ কর্মসূচী ইত্যাদী বিষয়ে আলোচনা করেন। চলতি বছরের আসন্ন বিধানসভা ও কর্পোরেশন ভোটকে কেন্দ্র করে পার্টির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এলাকায় রুপায়নের বিষয়ে পন্থাগুলির পর্যালোচনা ও প্ল্যানিং নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলে। ওয়ার্ড ভিত্তিক পার্টির কাজ বৃদ্ধি, প্রয়োজনে ওয়ার্ড কমিটি গঠন, এলাকার বিভিন্ন বামপন্থী শক্তির সাথে নিবিড় যোগাযোগ বৃদ্ধি, বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূলস্তরে এলাকাভিত্তিক সার্ভে, এইসমস্ত বিষয়ে আলোচনা হয়। এলাকার নিজস্ব দাবিদাওয়া ও সে বিষয়ে সরকারী উদাসীনতাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রচার ও জনমত গঠনে চোখে পড়ার মতো উদ্যোগ নিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৩য় বাঘাযতীন ব্রাঞ্চ সম্মেলনে উপস্থিত সমস্ত সদস্য কমরেড চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরীকে পুনরায় ব্রাঞ্চ সম্পাদিকা হিসাবে মনোনীত করেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনতার লড়াইকে তীব্রতর করার ডাক দিয়ে সম্মেলন শেষ হয়।
৩. সম্মেলনের শেষে সকল সদস্য বাঘাযতীন মোড়ে এক যৌথ প্রচারাভিযানে সামিল হন। ব্যানার, ফেস্টুন, গান ও স্লোগান সমন্বিত এই প্রচারাভিযানে বন্ধুপ্রতিম সংগঠনগুলির তরফে এপিডিআর, অরিজিত মিত্র স্মারক কমিটি, গণতান্ত্রিক উদ্যোগ ও বিভিন্ন ব্যাক্তি বর্গ সামিল ছিলেন। এআইসিসিটিইয়ু’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কমরেড বাসুদেব বসু এই প্রচারাভিযানে উপস্থিত ছিলেন। তিনটি কৃষিবিল বাতিলের দাবিতে ও সারা দেশজুড়ে চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে এই প্রচারাভিযান যখন স্থানীয় আই ব্লক এলাকায় পৌঁছায় তখন সারা দেশের সবথকে বড় অন্যায়কারী দল বিজেপি তাদের বিচিত্র শব্দদূষণ সমন্বিত ‘আর নয় অন্যায়’ ট্যাবলো নিয়ে আমাদের প্রচারাভিযানের পথে এসে বাধা সৃশটি করে। উপস্থিত সব গণসংগঠনের সদস্যরা মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ান। এলাকার মানুষও আমাদের পাশে দাঁড়ান। দৃশ্যতই বিজেপি গ্যাঙের দিকে ধাবমান আগ্রাসী লাল পতাকার আগুয়ান রূপ দেখে বিজেপি কর্মীরা এলাকা ছাড়েন। এরপর বাঘাযতীন-রানিকুঠি মেইন রোড ধরে একাধিক জায়গায় ধারাবাহিক পথসভা করে পল্লিশ্রী মোড়ে এই প্রচারাভিযান শেষ হয়।
- সংগ্রাম মণ্ডল