ভারতে সমান নাগরিকত্বের ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ২০১৯-এর শেষ এবং ২০২০’র শুরুতে। সেই আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিজেপি-আরএসএস-এর প্রতিক্রিয়া ছিল দিল্লী দাঙ্গা। পুলিশ প্রশাসনকে বসিয়ে রেখে বিজেপি-আরএসএস-এর ক্যাডার লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল মুসলমান মহল্লার ওপর। দিল্লীর জনতাকে বোঝানো হয় যে এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে হিন্দুবিরোধী ষড়যন্ত্র, হিন্দুদের মুসলমানরা মারছে।
এই দিল্লী দাঙ্গার কাণ্ডারী দিল্লীর বিজেপি নেতা কপিল শর্মা। সে একের পর এক উসকানি মূলক বক্তৃতা দিয়েছিল তা মানুষের কাছে অজানা নয়। কিন্তু দিল্লী পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করে তারা দেখাতে চায় যে এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনের নেতারাই ষড়যন্ত্র করে এই দাঙ্গা করিয়েছে। একের পর এক বিজেপি-বিরোধী নাগরিক সমাজের নেতাদের জেলে পোড়া হয়। এ যেন ভীমা-কোড়েগাঁও ঘটনা এবং তদন্তের পুনরাবৃত্তি৷
এরকম বিভিন্ন দাঙ্গার ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন মেহমুদ প্রচা৷ গত ২৪ ডিসেম্বর তার অফিসে দিল্লী পুলিশের স্পেশাল সেল তল্লাশি চালায়। ১৫ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চলে৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে সে নোটারি অনুমোদিত কাগজে জাল সই করিয়েছে এবং দিল্লী দাঙ্গা কেসে একজন ব্যক্তিকে ভুল সাক্ষ্য দিতে জোর করেছে।
এই তল্লাশির ফলস্বরূপ প্রচার সাথে তার ক্লায়েন্ট দের যা যা কথোপকথন হয়েছিল তা পুলিশের হাতে চলে গেল। ভারতীয় আইন ব্যবস্থার ভিত্তি হল উকিল-ক্লায়েন্টের ভেতর কথোকথন সম্পূর্ণ গোপনীয় থাকবে। এই ক্ষেত্রে সেই ভিত্তিতেই আঘাত হানা হল। উকিলদের এক অংশের দাবি যে সরকার বিরোধী পক্ষের উকিলদের অফিসে তল্লাশি করার অর্থ হল দেশে আর আইনের শাসন নেই। সরকার যেই সময় বিরোধী নেতাদের জেলে ঢোকাচ্ছে, সেই একই সময় উকিলদের অধিকারের ওপর এই হামলা বোঝায় যে দেশে আইনি ব্যবস্থার হাল শোচনীয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল যে একজন জাজ এই তল্লাশির অনুমতি পুলিশকে দিয়েছে।
এই ওয়ারেন্টে যদিও বিশেষ কিছু কাগজের তল্লাশি নেওয়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু দিল্লী পুলিশ প্রচার কম্পিউটারের সমস্ত নথির তল্লাশি চালিয়েছে যা বেআইনি।
- প্রত্যুষ নন্দী