হুগলির সাঁচিতারায় অনুষ্ঠিত গণকনভেনশনের প্রস্তাবসমূহ
dddd

নরেন্দ্র মোদি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন।অথচ কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মোদি সরকার অর্থনীতির হৃৎপিন্ডগুলিকেই বড় বড় প্রাইভেট কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। আমাদের সকলের গর্ব ভারতীয় রেলের ১৪৯টি দূরপাল্লার ট্রেনকে পর্যন্ত মোদি সাহেব বিক্রি করে দিচ্ছেন। কয়লা খনি, খনিজ তেল, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্র, সরকারী ব্যাঙ্ক – ইত্যাদি সব কিছুই বড় বড় প্রাইভেট কোম্পানির দখলে চলে যাচ্ছে।দেশের সম্পত্তি বেচে খেলে-দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে কেমন করে? আপনি যখন এই প্রশ্ন তুলছেন ঠিক তখনই নরেন্দ্র মোদির সরকার সবথেকে ভয়ংকর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দেশের কোটি কোটি কৃষক, খেতমজুর যে কৃষিক্ষেত্রকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছেন সেই কৃষিকেও বড় বড় কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য মোদি সরকার সমস্ত বিরোধিতাকে অগ্রাহ্য করে নতুন তিনটি আইন মারাত্মক কৃষি আইন পাশ করিয়েছে। প্রথম আইনটি কৃষিপণ্যের বাণিজ্য সংক্রান্ত এবং দ্বিতীয় আইনটি চুক্তি চাষ সংক্রান্ত। মজুতদারীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেশের যে সাবেক আইন ছিল আমূল বদলে ফেলে তিন নম্বর আইনটি আনা হয়েছে।

মোদি সরকারের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা সাফাই গাইছেন : সরকারের কাছে ফসল বেচার সুযোগ দেশের মাত্র ৪% চাষি পেয়ে থাকে।নতুন আইনের ফলে বড় বড় কোম্পানি ফসল কিনতে আসবে। চাষিদের আর ফড়েদের খপ্পরে পড়তে হবেনা। তাঁদের সাফ কথা, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়ে গেছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা হস্তক্ষেপের আর তেমন দরকার নেই। এর অর্থ, সরকারী উদ্যোগে ধান, গম ইত্যাদি ফসল কেনা থেকে সরকার হাত গুটিয়ে নেবে। ফলে উপযুক্ত সহায়ক মূল্য না পেয়ে কৃষকদের দুর্ভোগ তো বাড়বেই, রেশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়ে কোটি কোটি দরিদ্র দেশবাসী আবার এক খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়বেন।

চুক্তি চাষের জন্য নতুন সরকারী আইনে বলা হয়েছে, যে সব কোম্পানি কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর জোগান দিতে এগিয়ে আসবে সরকার তাদের কার্যকলাপে বাধা দেবে না। চাষি আর এইসব কোম্পানি নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে নতুন নতুন ফসল চাষ করবে। এইসব ফসল কৃষকরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবে।

স্পষ্টতই বোঝা যায়, চুক্তি চাষের এই আইনে সরকার নীরব দর্শক হওয়ার ফলে দরকষাকষির সুযোগ থেকে ছোট কৃষক ক্রমেই পিছু হটবে। বিদেশে ফসল রপ্তানির সুযোগ নেবে তো কেবল বড় বড় কোম্পানি ও তাদের এজেন্টরাই। রপ্তানিমুখী শস্যের আবাদ বেড়ে যাওয়ায়, খাদ্যশস্যের আকাল দেখা দেবে এবং খাদ্যের জন্য দেশকে আবার বিদেশের মুখাপেক্ষী হতে হবে।

৬৫ বছরের পুরনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনকে বদলে যে নতুন আইন আনা হয়েছে সেখানে দানাশস্য, ভোজ্য তেল, আলু, পেঁয়াজ – এসব কিছুকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই সব নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী এখন যত খুশী মজুত করা যাবে এবং এগুলির দাম হু হু করে বেড়ে গেলেও “দু্ভিক্ষ, যুদ্ধ ইত্যাদির মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা দিলে” তবেই কেবল সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করবে।

সুতরাং ‘বিনিয়োগকারী খুশী হলে কৃষকও খুশী হবে’-মোদি সরকারের এহেন যুক্তিকে এই কনভেনশন তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে।

এই কনভেনশন কেন্দ্রের মোদি সরকারের আনা তিনটি কৃষি আইনকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করছে।একই সঙ্গে এই কনভেনশনের প্রস্তাবঃ পঃবঙ্গ বিধানসভায় কেন্রীয় কৃষি আইন বাতিল করার জন্য সত্বর প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে।

সাথে সাথে কনভেনশন দাবি জানাচ্ছে –
১) গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করে, কৃষকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ধান সরকারকে উপযুক্ত সহায়ক মূল্যে ক্রয় করতে হবে।      
২) ভাগচাষি ও গরিব ঠিকা চাষিদের ফসলও সরকারকে ক্রয় করতে হবে।
৩) ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ বেশি দামে সরকারকে ফসল কিনতে হবে।
৪) ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক ক,ষকদের সমস্ত কৃষিঝণ সহ মাইক্রো ফিনান্স ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ঝণ মকুব করতে হবে।     
৫) সার, বীজ, কৃষিতে ব্যবহার্য বিদ্যুৎ ও ডিজেল সুলভে সরবরাহ করতে হবে।
৬) এনআরইজিএ প্রকল্পে বছরে ২০০ দিনের কাজ ও দৈনেন ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন   
-মুকুল কুমার   

খণ্ড-27
সংখ্যা-46