শুধু অর্থনীতিকেই রসাতলে নয়, আইএলও-র একেবারে সাম্প্রতিক রিপোর্ট প্রকাশ করলো মোদীর ‘কোভিড মোকাবিলার’ বিপর্যয়কারী ফলাফলের আরেকটা নমুনা।
“ওয়েজ অ্যান্ড মিনিমাম ওয়েজ ইন দ্য টাইমস অফ কোভিড১৯”-এর যে বিশ্ব রিপোর্ট আইএলও প্রস্তুত করেছে, তাতে বলা হয়েছে ভারতে ইনফর্মাল শ্রমিকদের মজুরি এই পর্যায়ে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে ২২.৬ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ, আর সংগঠিত ক্ষেত্রে মজুরি সংকোচন হয়েছে ৩.৬ শতাংশ -- এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে যা সর্বনিম্ন, এমনকি তা পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের থেকেও কম। সংঘ পরিবারের চিরশত্রু পাকিস্থান এ প্রশ্নে মোদীর ‘আত্মনির্ভর’ ভারতকে ও টেক্কা দিল।
এটাও আংশিক সত্য। দিল্লির ইকনমিক গ্রথ-এর অধ্যাপক অরূপ মিত্রর মতে, আইএলও-র এই রিপোর্ট প্রস্তুত হয়েছে লকডাউনের প্রথম পর্বে। লকডাউনের আট-ন মাস পরে অনুসন্ধান করলে দেখা যেত, শুধু মাত্র সংগঠিত ক্ষেত্রে ৩.৬ শতাংশ মজুরি সংকোচনের অনুমান একান্তই অবমূল্যায়ন। যে হারে চাকুরি গেছে, যেভাবে মজুরি কমানো হয়েছে, তাতে এটাই প্রকটভাবে সামনে আসে।
ভারতে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার প্যান্ডেমিকের বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই এমনকি পাকিস্থানের থেকেও কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে আইএলও-র এই রিপোর্ট। পাকিস্থানে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার ২০১৫ সালে বেড়ে হয় ৮.৯ শতাংশ আর তার পরপর তিন বছরে বাড়ে ৪ শতাংশ হারে। এদিকে, মোদীর ভারতে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সেই বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২.৮, ২.৬ এবং ২.৫ শতাংশ ছিল। ২০১৮ সালে তা ছিল একই জায়গায়। ২০১৯-র তথ্য আইএলও দেয়নি। এরই সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ক্রয়, ক্ষমতায় সমতা সংক্রান্ত (পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি) দিকটি। ভারতের মূল মাসিক বেতন বা মজুরির গড় ২১৫ ডলার যা ২০১৯ সালের এশিয়া প্যাসিফিক-এর মোট ৩০ দেশের মধ্যে একেবারে নীচ থেকে ধরলে ভারতের স্থান দুটি দেশের উপরে, ভারতের নীচে রয়েছে বাংলাদেশ ও সলোমন দ্বীপ!!
২০১৫ থেকে ২০১৭র মধ্যে ভিয়েতনামের মজুরি বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৩.৭ শতাংশ থেকে ১২.৪ শতাংশ। চিনের গত চার বছরে বেড়েছে ৫.৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ হারে।
আইএলও রিপোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, মজুরি বৃদ্ধির এই শোচনীয় হার, কোভিড উত্তর আর্থিক বৃদ্ধিকে নীচের দিকে টেনে নামাবে, কারণ, প্রাক কোভিড পর্বেই মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত মন্থর, আর কোভিড পর্বেতো একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
আত্মনির্ভতার বুজরুকি দিয়ে অতলান্ত অন্ধকারের কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে নিক্ষিপ্ত মোদীর ভারত।