লকডাউনের মাঝে অনিয়মিত বেতন পাওয়া, কোনোরূপ স্বাস্থ্য বা জীবন সুরক্ষার সামগ্রী ছাড়া কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া বিষ্ণুপুর পৌরসভার সাফাই ও জল বিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা কর্তৃপক্ষকে বিক্ষোভের কথা জানাতে যান কর্মীরা। কিন্তু পাওয়া গেল ধমক, ‘টাকা ছাড়া কাজ করতে হয় করো নইলে কেটে পড়ো’ – এমন কথা এবং কাজ থেকে ছাঁটাই এর হুমকি। শ্রমিকদের ক্ষোভ দানাবাঁধা শুরু করে সাথে সাথে, এআইসিসিটিইউ-র সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন তাঁরা, এবং আমাদের হস্তক্ষেপে শহর জুড়ে মিছিল করে এসডিও অফিসে ধর্না দিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। আন্দোলন এরপর ক্রমাগত সংঘবদ্ধ হতে থাকে এবং এআইসিসিটিইউ-র হস্তক্ষেপে তৈরি হয় ‘বিষ্ণুপুর পৌরসভা সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’। যার সম্পাদক হন এআইসিসিটিইউ-র নেতা দিলবার খান। এরপর আন্দোলন এতটাই জোরদার চলে, প্রচার এতটাই জোরালো ছিল যে নভেম্বরের মধ্যে, নবান্ন থেকে যে বেশ কিছু পৌরসভার প্রশাসক মণ্ডলী পরিবর্তনের তালিকা তৈরি হয় তাতে বিষ্ণুপুরের প্রশাসক শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকেও সরিয়ে দিতে হয়।
নতুন প্রশাসক মণ্ডলী তৈরি হয়। তার প্রশাসক হন দিব্যেন্দু ব্যানার্জী, যিনি দায়িত্ব গ্রহন করেন যে দিন, সেই দিনই ইউনিয়নের তরফ থেকে তাঁকে ডেপুটেশন আকারে আন্দোলনরত ইউনিয়নের দাবিসনদ জমা করা হয়। আন্দোলনের গতিতেই ক্ষমতা যখন শ্রমিকদের তুঙ্গে এবং যখন পুজোর উৎসব বোনাসের টাকাও কর্তৃপক্ষ মেটাতে অক্ষম, তখন প্রবল চাপে পড়েই নতুন প্রশাসক তার অন্যান্য সহকারী সদস্যদের নিয়ে কর্মীদের আশ্বাস দেন বেতন নিয়মিত মিটিয়ে দেওয়ার। ডিসেম্বরে নতুন দায়িত্ব নিয়ে তাঁরা জানিয়ে দিল আন্দোলনের প্রতিটি দাবিই ন্যায্য, মজুরী বৃদ্ধি থেকে স্থায়ীকরণ, পিএফ থেকে পেনশন সবই মেটানোর চেষ্টা হবে ধাপে ধাপে। এরপর ইউনিয়ন সাধারণ সভা ডেকে ১২০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয় যে, নিয়মিত বেতন মেটানো সহ অন্যান্য দাবিগুলি আদায় নিয়েও কড়া নজর রাখা হবে, প্রয়োজনে আরো তীব্র সংগ্রাম চালানো হবে। আপাতত, পৌরসভা চত্বরের সামনেই খোলা ময়দানে একদিন ইউনিয়নের সবাইকে নিয়ে প্রশাসক মণ্ডলীর সাথে দাবি আদায় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হবে। সেই আলোচনাতে এআইসিসিটিইউ-র বিষ্ণুপুরের নেতৃত্বও উপস্থিত থাকবেন, যদিও এর দিনক্ষণ এখনো ইউনিয়ন ঠিক করেনি। এখনও পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাস ধরে হয়ে চলা লাগাতার আন্দোলন ও ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা হওয়ার চাপ শাসককে অনেকটা রূপ বদলাতে বাধ্য করেছে, তবে এই রূপের বদল দেখিয়েই সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের শক্তিকে খাটো করে দেখলে সেটা শাসকের ভুল হবে বলে ইউনিয়নের নেতারা জানিয়েছেন। লড়াই জারি আছে, সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, দাবিগুলো যে আদায় করা যেতে পারে, সেই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তবুও এখনো পাওয়া গেছে যা তা হল, নিয়মিত বেতন মেটানো আর বোনাসের টাকা পাওয়ার আশ্বাস, এর সাথে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টা নিয়ে মশকরা হচ্ছে, কারণ প্রতিদিন মাত্র ২০ টাকা করে বেতন বাড়ানো হয়েছে, এভাবে তাঁদের বেতন হবে ঐ পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা, যেখানে ইউনিয়নের দাবি ন্যূনতম বারো হাজার টাকা মজুরি স্থির করা হোক। তায় অনেকটা পথ এখনো চলা বাকি, ফ্যাসিজমের যুগে কাজ হারানোর সম্ভাবনাও যত গাঢ় হচ্ছে শ্রমিকদের ইউনিয়নে সংযুক্ত হওয়ার পরিমাণও তত বেড়ে চলেছে।
- ফারহান হোসেইন খান