আজকের দেশব্রতী : ১০ ডিসেম্বর ২০২০ (অনলাইন সংখ্যা)
ddddamladdwws

নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে চলমান কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে ও বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ছাত্র-যুব-কৃষক আন্দোলনের সাফল্যকে অভিনন্দন জানাতে ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল ‘সংবিধান বাঁচাও, দেশ বাঁচাও সমাবেশ’। আইসা ও আরওয়াই-র ডাকে কলকাতা কর্পোরেশন লাগোয়া চত্ত্বরে কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলি থেকে ছাত্রছাত্রী ও নাগরিকেরা সমাবেশিত হন। ৯ ডিসেম্বর ছিল নারী শিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃৎ রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যু দিবস। সঞ্চালক ও সভাপতি আইসার রাজ্য প্রেসিডেন্ট নীলাশীষ বসুর আহ্বানে সিপিআইএমএল লিবারেশনের পাঁচ জন বিধায়ক, পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং আইসা ও আরওয়াইএর রাজ্য সম্পাদকগণ রোকেয়া শাখাওয়াতের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে মঞ্চে উপবিষ্ট হন। আইসা নেত্রী অন্বেষা স্বাগত ভাষণে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন তথা রোহিত বেমুলার প্রাতিষ্ঠানিক হত্যাকাণদের পর শুরু হওয়া ছাত্রযুব আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বর্তমানে চলমান কৃষক আন্দোলনের সাথে মিশে যাওয়ার কথা বলেন। বিহারের সদ্য নির্বাচিত বিধায়কদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন যে সেই ছাত্র-যুব আন্দোলনের গর্জন এখন বিহার বিধানসভার অভ্যন্তরেও লড়াইয়ের বার্তা শোনাবে। রোকেয়া শাখাওয়াতের নারীমুক্তি নারীশিক্ষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে অন্বেষা বলেন যে চলমান আন্দোলনে মহিলা ও ছাত্রীরা ক্রমবর্ধমান হারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালম করে চলেছে। সমাবেশে উপস্থিত মানুষদের সামনে পাঁচ বিধায়ককে পরিচিত করার জন্য পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্যকে ডেকে নেন। কমরেড দীপঙ্কর বলেন নব নির্বাচিত ১২ জনের মধ্যে ৫ জন এই সমাবেশে এসেছেন। একে একে তিনি পাঁচ জনকে পরিচিত করান এবং তাঁদের চাদর পরিয়ে সম্বর্ধনা জানায় আইসা-আরওয়াইএ কমরেডরা।

মেহবুব আলম বিহার বিধানসভায় পার্টির বিধায়ক দল নেতা। বলরামপুর কেন্দ্র, যা আগে বারসোই কেন্দ্র ছিল, সেখান থেকে কমরেড মেহেবুব ৭৪ হাজার ভোটের রেকর্ড ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন এবং প্রতিপক্ষ ছিল বিজেপি, যদিও বিজেপি নিজের নামে প্রার্থি দেওয়ার বদলে ভিআইপি দল থেকে তাদের প্রার্থি দাঁড় করিয়েছিল। বীরেন্দ্র গুপ্তা নেপাল সীমান্তের পশ্চিম চম্পারণ জেলার সিকটা ক্ষেত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তৃতীয় পর্বে এখানে ভোট হয়েছিল এবং এই তৃতীয় পর্বে বিজেপি প্রবল সাম্প্রদায়িক বিভাজন করতে সক্ষম হয়, কিন্তু সেই বিভাজনকে পরাস্ত করেই পার্টি জেতে। বীরেন্দ্র গুপ্তা আয়ারলার নেতা, কৃষক গ্রামীণ শ্রমিকদের জনপ্রিয় আন্দোলন পরিচালনা করেন।

satya

 

সত্যদেও রাম উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর লাগোয়া সিওয়ান জেলার দরৌলি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিধায়ক রবং পার্টির দলের উপনেতা, গতবার ২০১৫-র নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপি-জেডিইউ চক্রান্ত করে মিথ্যা মামলায় তাঁকে কারাবন্দী করে, কিন্তু জেল থেকেই তিনি জিতেছিলেন। আড়াই বছর পর জামিন পান। আরেকজন কমরেড অমরজিত কুশোয়া এখনও জেলেই, এবং জেল থেকেই জিতেছেন। কমরেড দীপঙ্কর বলেন, ৯ ডিসেম্বরের এই সমাবেশ থেকে সত্যদেও ও অমরজিতের মামলা প্রত্যাহারের দাবি উঠুক। প্রশ্নটি কেবল বিহারের নয়। সারা দেশজুড়েই বিজেপি সমস্ত প্রতিবাদী কণ্ঠকে কারাবন্দী করছে। ভারভারা রাওয়ের মতো প্রবীণ কবি, সুধা ভরদ্বাজ বা বৃদ্ধ স্ট্যান স্বামীর মতো মানুষ মিথ্যা মামলায় জেলবন্দী। ভীমা কোরেগাঁওকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলা ও ইউএপিএ চেপেছে। সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আওয়াজ জোরালো করার আহ্বান রাখেন সাধারণ সম্পাদক। যুব নেতা মনোজ মঞ্জিলকে পরিচিত করিয়ে দিতে গিয়ে তিনি বলেন, রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর পর পার্টি এক মতাদর্শ অভিযান চালিয়েছিল ‘নই ভারত কি ওয়াস্তে, ভগত সিং আম্বেডকর কি রাস্তে’, মনোজ মঞ্জিল বিহারের বুকে এক অভূতপূর্ব শিক্ষা আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেন যা ‘সড়ক পর স্কুল’ নামে পরিচিত হয়। মনোজ ৬৩% ভোট পেয়ে জিতেছেন যা এবারের নির্বাচনে শতাংশের হিসেবে সর্বোচ্চ প্রাপ্ত ভোট। আইসার সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সৌরভকে পরিচিত করিয়ে দীপঙ্কর বলেন, জেএনইউ-তে আইসার দীর্ঘ আন্দোলনকে কৃষক আন্দোলনের সাথে একাত্ম করানোর প্রয়াস বরাবর থেকেছে। শহিদ কমরেড চন্দ্রশেখর ছিলেন এক দৃষ্টান্ত। জেএনইউ-এর ছাত্রনেতাকে প্রার্থি করায় বিজেপি ‘বহিরাগত’, ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ ইত্যাদি বলে ব্যাপক বিষোদ্গার করে, কিন্তু মানুষ বিভ্রান্ত হয়নি। লোকসভা নির্বাচনে কানহাইয়া কুমারকে জিতিয়ে আনতে আমরা পারিনি, কিন্তু এবার সন্দীপ জিতেছে। বিধানসভায় ছাত্র আন্দোলনের আওয়াজ পৌঁছবে, সন্দীপকে কেন্দ্র করে ১৮ থেকে ২৫, ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নব প্রজন্ম জাতিদম্ভের ঊর্ধে উঠে সক্রিয় হয়ে ওঠে শিক্ষার প্রশ্নে। এদের অনেকেই রাজপুত কমিউনিটির এবং দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে তাঁরা মেহেবুব আলমের জন্য কাজ করতে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন কারণ তাঁদের মতে বিগত দিনে মেহবুব আলম বিহার বিধানসভায় তাঁদের শিক্ষা ও কাজের প্রশ্নগুলি বারবার তুলে ধরেছেন। সবশেষে দীপঙ্কর বলেন যে, অধিকারের প্রশ্নে আন্দোলন জেডিইউ-বিজেপি শিবিরে ফাটল ধরিয়েছে, জাতিদম্ভ ভেঙ্গে যুবরা এভাবে এগিয়ে এসেছে — এই বার্তা বিহার থেকে বাংলায় আসুক, ছড়িয়ে পড়ুক। পাঁচ বিধায়ককে সম্বর্ধনার পর আইসা-আরওয়াইএর পক্ষ থেকে কমরেড দীপঙ্করকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্বর্ধনা জানান হয়।

দিল্লিতে কৃষকদের যে নাছোড়বান্দা লড়াই চলছে সেখানে ইতিমধ্যে পাঁচজন শহিদ হয়েছেন। উত্তর প্রদেশে যোগি সরকারের পুলিশ এক আন্দলনকারি কৃষককে হেফাজতে হত্যা করেছে। এইসব কৃষক শহিদদের স্মরণে স্পমাবেশে উপস্থিত সকলে উঠে দাঁরিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর ‘নৈহাটি অগ্নিবীণা’ সংগীত পরিবেশন করে এবং তারপর বিভিন্ন বক্তারা পরপর বক্তব্য রাখেন।

আরওয়াইএ-র রাজ্য সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ বলেন, সংবিধান ধ্বংস করা ও সংঘীকরণের বিরুদ্ধে মুখোমুখী লড়াইয়ে আছে ছাত্রযুবরা, বিজেপি ইচ্ছেমতো ঠিক করে সংবিধানের কোনটা মানবে আর কোনটা মানবে না। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ লাগু না করে কৃষিকে কর্পোরেটদের হাতে দেওয়ার আইন বানায়, রেল নিযুক্তি ধ্বংস করে। ২কোটি চাকরি কোথায় গেল! নতুন বেকার তৈরি হল। লোকাল ট্রেন চালু হয়েছে, কিন্তু অফিস টাইমে ভিড় নাই, কারণ কাজই নাই, চাকরি উধাও। পশ্চিমবঙ্গকেও গোটা ভারতের সাথে সুর মিলিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালাতে হবে।

sad

 

সন্দীপ সৌরভ বলেন, একের পর এক হামলা চলছে সংবিধান ও গণতন্ত্রের ওপর। দিল্লির কৃষক জমায়েত অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে সন্দীপ বলেন যে দিল্লির উপকণ্ঠে প্রায় দুই কোটি মানুষ বিভিন্নভাবে সামিল আছে। দিল্লির দরজা থেকে বিশ কিলোমিটার পর্যন্ত কৃষকদের দখলে এবং প্রতিদিন আরও দুইতিন কিমি যুক্ত হচ্ছে। কৃষি আইন তিনটি খতম না হওয়া পর্যন্ত কৃষকেরা লড়বেন। সরকার বিভিন্ন কথা বলে কেবলই অপমান করে চলেছে, কিন্তু কৃষকরা বলছেন যে তাঁরা ঠাণ্ডায় মরে যাবেন তবু আদানি আম্বানির গুলামি করবেন না। কৃষির ওপর, কৃষকের উৎপাদনের ওপর নজর পড়েছে কর্পোরেটদের। সব গ্রাস করতে চায়। এই আইনগুলির ফলে তো রেশনও বন্ধ হয়ে যাবে। কৃষকদের প্রতিটা আহ্বানে ছাত্রসমাজ তথা আইসা আগ বাড়িয়ে যোগ দেবে বলে জানান সন্দীপ। তিনি বলেন, রোকেয়া ছিলেন নারীশিক্ষার অগ্রদূত, সরকার এখন মেয়েদের শিক্ষাজগত থেকে বের করে দিতে চাইছে, প্রতিটা ইউনিভার্সিটিতে আক্রমণ হানছে, ক্যাম্পাসগুলোকে ওয়ার জোন বানিয়ে ফেলেছে, প্রতিদিন নতুন নতুন সার্কুলার। অনেক আগেই আরএসএস তাদের এক মিটিং থেকে সর্বশিক্ষা খতম করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সংবিধান ... দেশ বাঁচাও সমাবেশ একের পাতার পর এবং ‘স্বচ্ছ ভারত’ সামনে এনেছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠক্রম, এডমিনিস্ট্রেশন ও কন্ট্রোল — তিন লেবেলেই একাধিপত্য কায়েম করতে চায় তারা। বাংলাতেও ওদের নজর পড়েছে, ওরা শিক্ষা ও গণতন্ত্রকে সহ্য করতে পারে না। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ওরা ১৯ লক্ষ চাকুরির কথা বলেছিল। বিধানসভার অধিবেশনে প্রশ্ন তুললে এখন ওদের সরকার বলছে যে আগামি পাঁচ বছরে মোট পাঁচ লক্ষ চাকুরি দেবেন তারা! পশ্চিমবঙ্গেও নির্বাচন আসছে, ওরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ওদের হারাতে হবে। বিজেপি আরএসএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ছাত্রযুবদের বড় ভূমিকায় থাকতে হবে।

man

 

মনোজ মঞ্জিল বলেন, ভোজপুর ও পুরো বিহার রাজ্যে সরকারী স্কুলের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীণ। কমজোর সমাজের বাচ্চাদের সীক্ষার কোনও সুযোগ নাই। পিছড়ে বর্গের জন্য সংরক্ষিত পৌনে চার লাখ পদ খালি পড়ে আছে। বুনিয়াদি সুবিধা নাই, জমি বা ভবন নাই, খোলা আকাশের নীচে চলে স্কুল। সামন্তি জুলুমের বিরুদ্ধে লড়েছে ভোজপুর, শিক্ষার জন্যও লড়বে। তাই শুরু হল গ্রামে গ্রামে লাল ঝাণ্ডা নিয়ে শিক্ষা নাদোলন। সরকার বলে, জমি দিলে স্কুল হবে। স্কুলের জন্য গ্রামের গরিব দলিতদেরই জমি দান করতে হবে নইলে স্কুল হবে না। আদানি আম্বানিদের জন্য গুলি চালিয়ে জমি দেয় সরকার, আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে বনের জমিও দিয়ে দেয়, কিন্তু গরিবদের স্কুল খোলার জন্য সরকারের জমি নাই। ফলত শুরু হয় ‘সড়ক পর স্কুল’ আন্দোলন। গ্রামে গ্রামে সব ছেলেমেয়েরা, সব পরিবার, যে দলেরই হোক না কেন, যখন আইসা বা পার্টি গেছে তখন তারা সকলে এসে সামিল হয়েছে এই আন্দলনে। হাজার হাজার মানুষ সামিল হয়েছে। ডিএম দপ্তরের সামনে এমনকি বিএড কলেজও চালানো হয়েছে। জেডিইউ-বিজেপি সরকার গ্রেপ্তার করেছে, জেলে পাঠিয়েছে, কিন্তু গরিব দলিত মানুষের শিক্ষার আকাঙ্খা দমন করতে পারবে না। এক সময় লাল ঝাণ্ডাকে যারা ঘৃণা করত তারাও লাল ঝাণ্ডাকে ভালোবাসতে শুরু করে, সব ধর্ম জাতি এক সুরে বলে “পড়াইকে লিয়ে বিহার কি বিধানসভায় লড়াই চাহিয়ে”। তাঁরা আমাকে নির্বাচিত করেছেন, নিশ্চিতরূপে সেই লড়াই চলবে, আম্বেদকরের স্বপ্ন সফল করার লড়াই চলবে, আওয়াজ উঠবে রাস্তাতেও দেশ জুড়ে।

mes

 

মেহেবুব আলম বলেন, ২০০০ সাল থেকে জিতছি। এবারে মুখ্য লড়াই ছিল বিজেপির সাথে। বিজেপি ওখানে সিপিআই(এমএল)-কে মুসলমানদের পার্টি বলে, আমরা খুশিই হই। উত্তর দিনাজপুর ও মালদার লাগোয়া বারসই। নির্বাচনে প্রথম থেকেই আমাদের শ্লোগান ছিল আক্রমণাত্মক। আমরা বলেছিলাম বারসইকে ফ্যাসিবাদী বিজেপির কবরস্থান বানাও। বিজেপি ভেগেই গেল। নিজের নামে প্রার্থি দেওয়ার সাহসই হল না। গতবার ওদের যে প্রার্থিছিল তাকেই ফেক পার্টি ‘ভিআইপি’র টিকিটে দাঁড় করায়। বাংলা থেকেই কমিউনিস্ট অনুপ্রেরণা পেয়েছি, সিপিএম ছেড়েছি প্রকৃত কমিউনিস্ট হতে। সংবিধানের ওপর এখন হামলা চলছে। কিছু না মেনে জবরদস্তি চালাচ্ছে ওরা। বিধানসভাতেও আইন পাশের ক্ষেত্রে ওরকম করে। এমনকি বিধায়ক নন এমন ব্যক্তিকেও সভাকক্ষে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তারপর আর বিধায়কেরা ঢুকতে পারেন না। এখন নতুন লড়াই। তবে জমির লড়াইও আছে। কেবল চম্পারণেই সাড়ে তিন লাখ একর খাস জমি আছে। বেগুসরাইয়ে একটি ১৭ হাজার একরের লেক ছিল যা এখন পাঁচ হাজার একরে নেমে এসেছে, বাকি ১২ হাজার একর কারা দখল করল তার জবাব নীতিশ কুমারকে দিতে হবে। আমার মা বাঙালি, ছোটবেলায় একটা কবিতা শুনেছি — হও ধরমেতে ধীর, হও করমেতে বীর, হও উন্নত শির নাহি ভয়। বাংলার প্রথম শত্রু বিজেপি, বিজেপিকে তাড়িয়ে দিন। মাইনরিটি মানে মুসলমান। ওরা মুসলমানদের ভাগাবে বলছে! চাকরির প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? আমরা যখন বিহারে ১০ লক্ষ চাকরির কথা বললাম তখন ওরা ব্যাঙ্গ করে বলল পয়সা কোথায়? তারপর ওরাই বলতে শুরু করল ১৯ লক্ষ চাকরি দেওয়ার কথা। এখন তো তা দিতে হবে। নইলে সরতে হবে। বাংলা থেকেই শিখেছি। এখানে বিজেপি চলবে না। ওরা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। সেই যুদ্ধ লড়তে হবে। আমরা শান্তির পক্ষে, কন্তু কেউ যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে আমরাও সেই যুদ্ধ চালাব খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য।

কাজী কামাল নাসের দুটি গান শোনান। ফ্রিজে মাংস থাকার জন্য আখলাককে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সময়ে লেখা একটি গান। ‘তোমার ইচ্ছে আমার অনিচ্ছে তল্লাশি নিচ্ছে যারা’ তাদের চিনে নেওয়া রুখে দেওয়ার গান। আরেক গানে চলমান কৃষক আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে ‘আমরা ফসল ফলাই বলেই সবার পাতে সবজি ভাত’… জানতে হলে সঙ্গে থাকো দাও বাড়িয়ে তোমার হাত। সমাবেশকে অভিনন্দিত করে কামাল নাসের লড়াইয়ের বার্তা শোনান। সমাবেশ তাঁকে সম্বর্ধিত করে।

dip

 

শেষ ও প্রধান বক্তা সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ভারত জুড়ে চলমান আন্দোলন, ভারত বন্ধ, ধর্মঘট সম্পর্কে বলেন, হঠাৎ করে এত আন্দোলন কেন তা ভাবতে হলে অন্যভাবে ভাবুন যে এত অন্যায় কেন? এত অন্যায় এত অত্যাচার কেন? কৃষকেরা তো সেই অর্ডিন্যান্সের সময় থেকেই বলছেন, কিন্তু সরকার কান দেয়নি, সেই অর্ডিনান্সগুলোকেই বিল হিসেবে এনে তারপর জোর করে সেগুলি আইনে পরিণত করল। এখন যখন কৃষক রাস্তায় তখন ওরা ক্ষতির কথা বলছে। একটা সরকার কৃষকদের আটকাতে রাস্তা খুঁড়ল। ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে এলেন কৃষকেরা। বিজেপি বলছে ওঁরা নাকি নকল কৃষক। আসল কৃষককি তাহলে আদানি আর আম্বানি? বলছে কৃষকেরা কৃষি আইন বোঝে না। পাঞ্জাব হরিয়ানার সবুজ বিপ্লবের কৃষকেরা না বুঝলে কি হাফ প্যান্ট পরে আরএসএস হয়ে বুঝতে হবে? বলছে শুধু পাঞ্জাব। এখন দেখা যাচ্ছে সারা দেশের কৃষকেরা পথে। বলছে শুধু কৃষক। কিন্তু ভারত বন্ধ করল সমস্ত রকম মানুষ। সরকার এখন পিছু হঠছে। গতকাল বৈঠকে আমাদের কৃষক নেতাও ছিলেন। সরকার বলছে সংশোধন করবে। বলছে মলাট একই থাকুক, ভেতরটা বদলান হবে। কৃষক বলেছে পুরো বইটাই জ্বালিয়ে দাও। ন্যায্য কথা বলছেন তাঁরা। এবং তাঁরা শুধু নিজের জন্য বলছেন এমন নয়। আমাদেরও সেটা বুঝতে হবে। তাঁরা আমাদের সকলের জন্যই বলছেন। আলু পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন? তার পেছনেও ওই আইন। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করে চাল ডাল আলু পেঁয়াজ সহ খাদ্যদ্রব্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এগুলো কি মানুষের বিলাসিতা? এসবের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা থাকবেই, যোগান দেওয়ার ক্ষমতা হাতে থাকবে আদানি আম্বানিদের। কৃষকের কাছ থেকে সস্তায় কিনে যত খুশি স্টক করে রাখবে, তারপর ইচ্ছেমতো দাম নিয়ন্ত্রণ করবে। কৃষকের সাথে আমরাও মরব। আমাদের টাকা যাবে আদানিদের পকেটে। গণবন্টন ব্যবস্থা উঠে যাবে। আদানিরা ব্যবসা করলে রেশন বলে আর কিছু থাকবে না। স্থায়ি দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি বিরাজ করবে, কিন্তু ওদের গোডাউন ভর্তিথাকবে। এত বড় চক্রান্ত করছে বিজেপি। বিজেপি বলছে দালালদের সরাতেই নাকি এই ব্যবস্থা করছে ওরা, আর বলছে দালালরাই নাকি আন্দোলন করছে! কৃষকেরা বলেছে, দালাল তো তোমরাই আদানি আম্বানির, এই দালাল সরকারকেই সরাতে হবে। কৃষক আন্দোলনের ভিত্তিতে যে সংগ্রামী ঐক্য গড়ে উঠছে তার থেকে ভালো কিছু গণতন্ত্রের জন্য আর কিছু হতে পারে না।

mmmm

 

কমরেড দীপঙ্কর বিজেপির মিথ্যাচার ও বিপর্যয়কর রাজনীতিকে উন্মোচিত করেন। সংবিধানে যে প্রত্যেকের জন্য সমান নাগরিকত্বের অধিকার ছিল তা ধ্বংস করতে চায়। পশ্চিমবাংলার যে পারস্পরিক মিলমিশের সংস্কৃতি, নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানের মাঝে মহান মিলন, যত মত তত পথের সহিষ্ণুতা — বাংলার মনন ও সংস্কৃতির সেই সুদীর্ঘ ইতিহাস স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন যে বিজেপি-আরএসএস বাংলার বৌদ্ধিক জগতের সেই উদার ধারাকে ধ্বংস করে দিতে চায়। আমাদের ধর্ম ও ভালোবাসার অধিকার সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। বিজেপি সরকার ধর্ম বেছে নেওয়ার অধিকারকে আঘাত করতে আইন বানাচ্ছে। হিন্দু মেয়েদের অধিকারের যে সুদীর্ঘ অর্জন তাকে ধ্বংস করতে আইন আনছে। হিন্দু নারী নিজের পছন্দে ভালোবাসতে পারবে না, বিয়ে করতে পারবে না। আজ বলছে ধর্মের বাইরে বিয়ে করতে পারবে না। কাল বলবে নিজের জাতের বাইরে বিয়ে করতে পারবে না। পরশু বলবে হিন্দু মেয়েরা ভালোবেসে বিয়ে করতে পারবে না। অন্য ধর্মে বিয়ে করলে উত্তর প্রদেশের বিজেপি বলছে ৫ বছর জেলে ঢোকাবে তো মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার বলছে ১০ বছরের জন্য জেলে পাঠাবে। বিজেপি মানেই আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়। বাংলার ছাত্র যুব সমাজকে এই বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রাচীর হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। এরাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তারপরই বিজেপির আসল রূপ মানুষ বুঝবে — এমন অসাড় তো বাংলার মানুষ এখনও হয়ে যায়নি। ঠেকেই শিখতে হবে এমনটা ভাবার মুর্খামি নয়, দেখেই তো শিখতে পারছে বাংলার মানুষ। রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি সরকারগুলি এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দেখেই শিখতে হবে কোন বিপর্যয় বিজেপি আনতে চলেছে। বহু মানুষ বহুভাবে ওদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। কেই কলম নিয়ে, কেউ ছবি এঁকে, কেউ ফেসবুক টুইটারে লিখে, কেউ মিছিল কেই জমায়েত কেউ মিটিং করে লড়ছেন। কিন্তু এই সবকিছুর সাথে সাথে কৃষক ও মেহনতি মানুষের সাতগে একাত্ম হওয়ার কাজ সকলকেই চালিয়ে যেতে হবে। চারু মজুমদার এক সময় ছাত্রযুবদের প্রতি এই আহ্বান রেখেছিলেন, আজ পাঞ্জাবের কৃষকেরাও সেই বার্তাই দিচ্ছে। শহরের ছাত্র যুবদের আবার সেই আহ্বানকে জীবন্ত করতে গ্রামে যেতে হবে, গ্রামে যেতে হবে কেবল মিটিং করতে নয়, কৃষক সাধারণের সাথে একাত্ম হতে। শ্লোগানে অঙ্গীকারে সমাবেশ শেষ হয়।

kurdder

সরকারকে “তিন নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহার করতেই হবে”! এর অন্যথা কিছুতেই মানা হবে না। কৃষক আন্দোলন জারী থাকবে। প্রতিরোধে পণ করা কৃষক জনতা প্রতিদিন প্রমাণ করছেন দাবির প্রশ্নে কত সাচ্চা, আন্দোলনের প্রশ্নে কত দৃঢ়চেতা, রণকৌশলে কত কুশলী, আর যে কোনও কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারে — এমনকি আত্মত্যাগে আজ তাঁরা এক কদম পিছু হটার নন। পাঞ্জাব-হরিয়ানা-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কৃষক জনারণ্যে আওয়াজ উঠেছে “দিল্লী চলো”! সবচেয়ে কাতারে কাতারে ঢল নেমেছে শহীদ-ঈ-আজম ভগৎ সিং ও অসংখ্য শহীদের রক্তেভেজা আর বহতা পাঁচ নদীর প্রদেশ পাঞ্জাব থেকে। আন্দোলন জোর সমর্থন কুড়োচ্ছে দেশের পাঁচ শতাধিক কৃষক সংগঠনের সংঘর্ষ সমন্বয় মঞ্চের পক্ষ থেকে। সংহতি অর্জন করছে দেশের নানা মতের রাজনৈতিক দলগুলোর। নৈতিক সহমত পেয়ে চলেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, সমাজের সমস্ত বঞ্চিত-লাঞ্ছিত-শোষিত-পীড়িত অংশ ও সম্প্রদায়গুলো থেকে। সমর্থন সংহতি মিলছে বিশ্বের দেশে দেশে। সবদিক থেকেই ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে এক বিরাট সংগ্রামী কৃষক শক্তি হয়ে ওঠার।

বিপরীতে, মোদী সরকার আর বিজেপি একঘরে। এনডিএ-তেও ঘটেছে ভাঙন।

কৃষকের এই আন্দোলনকে ক্ষমতার অতি দম্ভে মোদী সরকার তুচ্ছ জ্ঞান করেছিল। যখন ধাক্কা খেলো তখন নামালো নির্মম প্রতিআক্রমণ। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, শারীরিক, মানসিক সবদিক থেকে চালালো হামলা। কুৎসা ছড়ানো হল, এর পিছনে কাজ করছে ‘খালিস্তানী সন্ত্রাসবাদ”-এর চক্রান্ত ষড়যন্ত্র, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’-এর হাত, আর বিরোধী দলগুলোর তরফে উস্কে দেওয়া। আরও কি ক্ষমাহীন ধূর্তামি আর ন্যক্কারজনক উপেক্ষা দেখিয়েছে! সংগ্রামরত কৃষকদের প্রতি সংহতিতে সারা ভারত সর্বাত্মক ধর্মঘটের দিন মোদী ভার্চুয়াল লেকচার দিলেন মোবাইল পরিষেবা প্রদানে সরকার কত নিবেদিত! পাশাপাশি পাতাজোড়া রঙীন বিজ্ঞাপনের বাহার প্রদর্শিত হল, মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার কৃষক স্বার্থে কতই না কি সব করেছে! কৃষক আন্দোলনের প্রশ্নে ‘নমনীয়তা প্রদর্শন’ বা ঝক্কি ‘আপসে মিটিয়ে নেওয়া’র নামে সরকারপক্ষ বস্তুত তথাকথিত সংশোধনীর টোপ দিয়েছে। তা আসলে নয়া আইনফলিত নাভিশ্বাস ওঠা থেকে বেঁচেবর্তে যাওয়ার নতুন ফন্দি আঁটা প্রতিশ্রুতি মাত্র। এপর্যন্ত তিন মন্ত্রীমশাই — কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরপর পাঁচটি বৈঠক করেছেন। অমিত শাহ আলোচনায় বসার পূর্বশর্ত দিয়েছিলেন আগে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে হবে। ব্যর্থ হয় সেই হম্বিতম্বি। তারপরে শর্তদেন আলোচনায় বসবেন নিজের পছন্দের নেতাদের সাথে। উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনের যৌথ নেতৃত্বের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও ভাঙন ধরানো। তাতেও ব্যর্থ হয়েছে। কৃষক নেতারা দ্ব্যর্থহীনভাবে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারের ওসব ‘সংশোধনী’ প্রস্তাব জারিজুরি মাত্র, নয়া তিন আইন কৃষি ও কৃষককে কর্পোরেট পুঁজির খাসতালুক ও দাসে পরিণত করার দলিল, সরকারের সংশোধনী সংযোজন ঐ সর্বনাশা আইনগুচ্ছকে আড়াল দেওয়ার আবরণ, তাই তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিরোধী দলগুলোর এক প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির কাছে কৃষকদের দাবির প্রতি উপর্যুপরি ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে। প্রতিবাদী কৃষকরা আগেই আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপতির কাছে, তাদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে, সংসদের ভিতরে ও বাইরে থাকা সমস্ত বিরোধী পক্ষকে, দেশের ও সমাজের বৃহত্তম অংশের কথা না শুনে যে নয়া আইনে শীলমোহর দিতে বলে মোদী মন্ত্রীসভা, যাতে এমনকি এনডিএ সরকারের কোন এক শরিকদলেরও সায় নেই, তাতে যেন রাষ্ট্রপতি সম্মতি না দেন। কিন্তু শোচনীয় পক্ষপাতিত্ব করেন দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর কাছে কৃষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবির পরিবর্তে সরকারের তৈরী অন্যায় আইন গ্রাহ্য হয়ে যায়। তিনি ও তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট সরকার দিবাস্বপ্ন দেখেছিলেন এভাবেই হয়ত ইতি টানা গেল। কিন্তু না, পাল্টা প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মারে বল আবার বারেবারে সরকার আর রাষ্ট্রপতির ডাবল কোর্টেফেরত যাচ্ছে।

কুর্ণিশ এই কিষাণ জোয়ারকে। এ এক নয়া দৌড়। এ লড়াইয়ের সাথে থাকতে হবে দেশজুড়ে কৃষক জনতাকে, পাশে থাকতে হবে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে। হিম্মৎ রাখতে হবে। এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াইয়ে জিততে হবে।

kisssddar

কৃষক সংগঠনগুলো একযোগে সরকারের নতুন দেওয়া রফাসুত্র খারিজ করে জানিয়েছে যে চাষিদের এই আন্দোলন আরো জোরদার হবে।

১২ ডিসেম্বর - সারা দেশের টোলপ্লাজাগুলোকে টোল-মুক্ত করে দেওয়া হবে।

১২ ডিসেম্বর - দিল্লী জয়পুর হাইওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

১৪ ডিসেম্বর - উত্তর ভারতের সমস্ত চাষীদের উদ্দেশ্যে “#দিল্লি_চলো” আহ্বান।

১৪ ডিসেম্বর - অন্য সমস্ত রাজ্যে চাষীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান আঞ্চলিক স্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচী নেওয়ার।

সমস্ত জিও প্রোডাক্ট, আম্বানি/আদানিদের শপিং মল, পেট্রোল পাম্প বয়কটের ডাক।

সারা দেশ জুড়ে বিজেপি নেতৃত্ব, তাদের জেলা ও রাজ্য অফিস ঘেরাও।

আন্দোলনের নতুন স্লোগান — “সরকার কি আসলি মজবুরি — আদানি, আম্বানি, জমাখোরী”।

দড়িতে এবার টান পড়েছে। এসপার, নয় উসপার। ইয়ে ইনকিলাব হ্যায়।

ddddaaaamuiii

দেশ আজ এক চরম বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি, আচম্বিত লকডাউন, বেহিসেবি অর্থনৈতিক নীতি, গণতন্ত্র ও সংবিধানের জলাঞ্জলী, তীব্র সামাজিক ও ধর্মীয় বিভাজন, সর্বোপরি, কৃষক ও শ্রমিকের জীবন-জীবিকার ওপর সার্বিক আক্রমণে আজ জনজীবন সন্ত্রস্ত ও এক অতি সংকটের বলয়ে নিমজ্জমান। এ নিয়ে সংবেদনশীল মানুষের মধ্যে আর কোনও সংশয়ই নেই যে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে এনে তিলে তিলে দাঁড় করিয়েছে যে রাজনৈতিক সত্তাটি তার নাম বিজেপি এবং তাদের মতাদর্শ ও উদ্দেশ্য এক কঠিন-কঠোর রাষ্ট্রীয় হিন্দুত্ববাদের নেতৃত্বে কর্পোরেট স্বার্থের বিকাশ।কর্পোরেট বাহিনীর আর্থিক শক্তির ওপর নির্ভর করেই এ দলের প্রচার-প্রসার ও টিকে থাকার প্রয়াস। সারা দেশ জুড়ে তারা যে আজক্ষমতাশালী হয়েছে তার পিছনে এই কর্পোরেট সহায়তা এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী হিন্দুত্বের এক সবিশেষ মিশ্রণ ও রাজনীতি নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এ বাদে এ কথাও অনস্বীকার্য, বিরোধী রাজনীতি, বিশেষত কংগ্রেসের তথাকথিত উদারবাদী অর্থনীতি, রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ও চরমতম দুর্নীতি জনসাধারণের মনে এক অন্যতর বিকল্প সন্ধানের জন্যও প্ররোচিত করেছিল। সেই শূন্যস্থানটি অবশ্যই কতকটা ভরাট করতে পেরেছে বিজেপি তাদের নব-উত্থাপিত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি দিয়ে যা মানুষের মনে তার নতুনতর আঙ্গিকের জন্য কিছুটা ছাপ ফেলেছে। অবশেষে এই ভরাট হয়ে ওঠা জনমানস ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আজ একযোগে তার হিংস্রতম রূপে সমাজের সামনে যুদ্ধরত অবস্থায় দণ্ডায়মান।

তাহলে উপায়? এই মুহূর্তে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী কোনও জাতীয় দলের অনুপস্থিতি, বিভিন্ন বিরোধী দলগুলির মধ্যে সার্বিক ঐক্যের অভাব এবং বিজেপি’র সুচারু ও সুগঠিত প্রচারযন্ত্রের আক্রমণাত্মক অভিযানের সামনে বিরোধীদের কতকটা দিশেহারা অবস্থা গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক মানুষের সামনে এক চ্যালেঞ্জ উপস্থিত করেছে। সে চ্যালেঞ্জ হল, এক যথাযথ বাস্তবানুগ কর্মসূচি ও আন্দোলন নির্মাণ করা, মানুষের চলমান আন্দোলনগুলির পাশে দাঁড়ানো এবং অধিষ্ঠিত মৌলবাদী বাতাবরণকে নির্মূল করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পুনঃস্থাপিত ও বিকশিত করা। আর এ কাজে অগ্রণী ভুমিকা নিতে পারে বামপন্থী শক্তিসমূহ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে জারিত মানুষেরাই।

এইরকম এক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যতটা উত্তেজনা ও আকচাআকচি দেখা যাচ্ছে, তা জনসাধারণের মধ্যে ততটা নয়। তা খুব স্বাভাবিক। কারণ, বুঝতে হবে, মানুষ এখন অনেক সচেতন এবং তাঁরা নির্বাচনগুলিকে অনেক সময়েই নিজ অবস্থার উন্নতিকল্পে দরকষাকষির মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে তার জন্য বামপন্থীরা বসে থাকতে পারে না। সারা দেশ জুড়ে যে ভয়ঙ্কর রাজনীতির আধিপত্য চলেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এ রাজ্যেও নির্বাচনী সংগ্রামকে দেখতে হবে।

এ দেশের রাজনীতিতে বিজেপির যে প্রাথমিক সাফল্য তা হল এমন কিছু ইস্যুকে তারা আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে যেখান থেকে সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনের রাজনীতির সূত্রপাত হয়। বিরোধীরাও সেই ফাঁদে পা দিয়ে ওদের তোলা ইস্যুগুলিতে বিবাদবিতর্কে জড়িয়ে বিজেপির পাল্লাকে আরও ভারী করেছে। সাম্প্রতিক বিহার নির্বাচনে অবশ্য বিজেপির এই সুকৌশলী রণনীতিকে জোর ধাক্কা দেওয়া গেছে। রাম মন্দির, ৩৭০ বা পুলওয়ামা নয়, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য তার জীবন-জীবিকার মুদ্দাই যে প্রধান অক্ষ তা বিহার নির্বাচনে বিরোধীদের সবল ঐক্যের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা গেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে সম্ভবত এই প্রথম, নির্বাচনের ইস্যু নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিজেপি নয়, বিরোধীরা নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছে। ফলে, নির্বাচনী যুদ্ধে জোর টক্করও দেওয়া গেছে। সরকার গঠন না করা গেলেও এক প্রবল বিরোধীপক্ষের অস্তিত্বকে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভারতীয় রাজনীতিতে এই সময়ে এক যুগান্তকারী ঘটনা। আর এর পরপরই এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন, যার গুরুত্ব সর্বভারতীয় আঙ্গিনায় অসীম। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ হল এমন এক রাজ্য যা মুক্তচিন্তা ও বাম রাজনীতির অন্যতম উৎসস্থল। এ রাজ্যে যদি বিজেপি জয়ী হয় বা নিদেনপক্ষে আসনের বিচারে প্রবল প্রতিপক্ষও হয়ে ওঠে তাহলে তা তাদের পক্ষে পোয়াবারো ও গোটা দেশের পক্ষে অশনি সংকেত হবে। এটা অনুধাবন করে সংঘ পরিবার ও আরএসএস এই মুহূর্তেই এ রাজ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই উদ্দেশ্যে যে যদি পশ্চিমবঙ্গে বাম ও মুক্তধারাকে পরাস্ত করা যায় তবে মতাদর্শগতভাবে তার ভারত বিজয় সম্পূর্ণ হতে পারে। তাই, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন আজ বামপন্থীদের কাছে এক দুর্জেয় চ্যালেঞ্জ।

কিন্তু চ্যালেঞ্জ এসে পড়া আর তাকে গ্রহণ করার সক্ষমতা -- এই দুইয়ে দুস্তর ফারাক আছে। কারণ, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মধ্যে শুধু সদিচ্ছা থাকাটাই যথেষ্ট নয়, চাই যথাযথ বাস্তববোধ ও লড়াইয়ের রণকৌশল। সেই দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ঠেকাতে বামপন্থীদের কী রণকৌশল হতে পারে তা ইতিমধ্যেই চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজ্যের শাসনক্ষমতায় যেহেতু তৃণমূলের সরকার রয়েছে তাই শুধুমাত্র বিজেপি’র বিরুদ্ধে বললে তৃণমূল বিরোধী যে ক্ষোভ তা বামেদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। অতএব, বিজেপি ও তৃণমূল এই দুই শক্তির বিরুদ্ধেই একযোগে বলতে হবে এবং এইভাবে বামপক্ষ শক্তিশালী হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, যারা এই কথাগুলি বলছেন, সেই বামপন্থীরা কি বামফ্রন্ট বা বামফ্রন্ট-কংগ্রেস জোটের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট আস্থাবান? ভাবের ঘরে চুরি না করে এই কথাটি আগে একটু পরিষ্কার করে নেওয়া যাক। সবচেয়ে বড় কথা, এ রাজ্যে ক্রমাগত বিজেপি’র যে ভোট বেড়েছে ও বামফ্রন্টের ভোট কমেছে- এই দুই প্রবণতায় কোনও যোগসূত্র নেই বলে কি তাঁরা নিশ্চিত? তাই যদি হবে তাহলে ফিসফিসে এ কথা শোনা যায় কেন: ‘একুশে রাম ছাব্বিশে বাম’?আর আশ্চর্যের কথা হল, রাজ্য সরকার বিরোধী পরিসরে বিজেপিই বা কীভাবে প্রধান জায়গা দখল করে নিল যেখানে এক দশক আগেও তারা প্রান্তিক শক্তি হিসেবেই এ রাজ্যে বিচরণ করত? অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে তাই নিজেদের দিকেও প্রশ্ন ছুঁড়তে হবে! বামপন্থার মর্মবস্তুতে কোনও ভেজাল মিশে ছিল না তো!

তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি অত সহজ নয়, যেভাবে এক পক্ষ ভাবতে চাইছেন। চ্যালেঞ্জ যদি আজ গ্রহণ করতে হয় তাহলে সে চ্যালেঞ্জ হল বামপন্থার পুনরুত্থানের চ্যালেঞ্জ। এ রাজ্য বরাবরই সজল-শ্যামল ভূমি। এখানকার আলো-বাতাস মুক্ত ও উদার। আর সে পুষ্টিতেই বামপন্থার শিকড় গভীরে প্রোথিত। সেই সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আজ আক্রান্ত ও বিপন্ন। এক শুষ্ক, কঠোর ও হিংস্র মতাদর্শে বলীয়ান বর্গীরা এসেছে এ রাজ্যকে লুঠ করতে। এই লুঠ শুধু অর্থনীতির নয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরম্পরারও। যা একবার চলে গেলে তাকে পুনরুদ্ধার করতে অনেক রক্তক্ষয় ও যুগ-যুগান্তের সময় চলে যাবে। তাই এই ভয়াবহ বিপদ থেকে বাঁচতে প্রতি- আক্রমণের বর্শামুখকে নির্দিষ্ট করতে হবে বর্গীদেরই দিকে।

নির্বাচন আসতে এখনও চার-পাঁচ মাস বাকি। তাই এই মুহূর্তে এ জোট সে জোটের আলোচনা প্রাসঙ্গিক নয়। যা জরুরি তা হল, উগ্র হিন্দুত্ববাদের মোড়কে বিজেপির যে কর্পোরেটতন্ত্র প্রতিষ্ঠার খোয়াব, তার বিরুদ্ধে মানুষের জীবন-জীবিকার মুদ্দাকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করতে হবে এমন এক ‘গণ এজেন্ডা’ যা আগত নির্বাচনের মূল চরিত্রটাকেই বদলে দেবে। অর্থাৎ, পুলওয়ামা নয়, পাকিস্তান চীন নয়, রামমন্দির নয়, হিন্দু-মুসলমানের বিভাজন নয়, আগামী নির্বাচনের মুদ্দা হবে বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও গণতন্ত্র। সাম্প্রতিক বিহার নির্বাচন এই শিক্ষাই দিয়েছে আর সে কারণে বামপন্থীদের আপেক্ষিক সাফল্যও এসেছে। যদি এই মৌলিক দাবি-দাওয়ার ওপর নির্বাচনী ঝড় তোলা যায় তাহলেই বামপন্থীদের নতুন করে জাগরণ ও ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কিন্তু এই বিষয়গুলিকে বাদ দিয়ে যদি শুধুমাত্র অমুক পার্টি তমুক পার্টি, হেন জোট তেন জোট – এইসব কূটকচালিতে বামপন্থীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে নির্বাচনের এজেন্ডাও কিন্তু হাতছাড়া হয়ে যাবে। তখন বিজেপি নির্মিত বিভাজনের রাজনীতির মুদ্দার ওপরেই খেলতে হবে যা বিপর্যয়ের সামিল।

আজ সারা দেশ জুড়ে কৃষক জাগরণ এক অনুকূল পরিস্থিতি নির্মাণ করেছে। আদানি-আম্বানির হাতে কৃষিব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার মোদি সরকারের ফন্দি কৃষকেরা ধরে ফেলেছেন। এই আন্দোলনের রাশকে শক্ত হাতে ধরে এবং শ্রমজীবী মানুষ ও ছাত্রযুব সমাজের সমস্যাকে প্রধান অক্ষ করে যদি এ রাজ্যে নির্বাচনী এজেন্ডাকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্মাণ করা যায় তাহলে বামপন্থার পুনরুত্থান ও সদর্থক লড়াই সময়ের ক্ষণিক অপেক্ষা মাত্র। তাই, দৃষ্টিভঙ্গি এমনটা হওয়া কাম্য নয় যে আগে তৃণমূলের বিদায় তারপর বিজেপিকে মোকাবিলা (যা আত্মহত্যার সামিল), বরং জীবন-জীবিকার মুদ্দাগুলিকে হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি নির্মাণ করার যে বিজেপি মতাদর্শ, তাকেই বর্শামুখ করে সর্বাত্মক লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তবেই বামপন্থার আলাদা মাত্রা, তাৎপর্য ও গুরুত্ব নির্মিতহবে যা তাকে নতুন করে শক্তি ও কাজের বিস্তৃত পরিসর দেবে। বামপন্থার পুনর্জাগরণের এই হল আজকের পথ। লড়াই কঠিন কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল।

- অনিন্দ্য ভট্টাচার্য     

assbbar

মাত্র তিনদিন আগে ঘোষিত ভারত বনধ যেভাবে সর্বাত্মক মাত্রায় সফল হয়েছে সেটা প্রমান করেছে যে, কৃষক আন্দোলনের প্রতি দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে বিপুল সমর্থন ও সংহতি। বনধকে সফল করে তুলতে সারা দেশে এবং এই রাজ্যের বুকে হাজার হাজার কৃষকরা পথে নেমেছেন, অসংখ্য মিছিল,সমাবেশ,সড়ক ও রেলপথ অবরোধ প্রভৃতি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা তুলে ধরেছেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বার্তা। চরম কৃষি সংকটে আক্রান্ত দেশের কৃষকদের মূল মূল দাবিগুলি,যথা ফসলের ন্যায্য দাম গ্যারান্টি, কৃষি পণ্যের বিপণনে সরকারের ভুমিকা বাড়িয়ে তোলা, ক্ষুদ্র কৃষি সহ সমগ্র কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বিনিয়োগ বৃদ্ধি -- এ সমস্ত প্রশ্নকে সমাধান না করে সেগুলিকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া চলবে না। কর্পোরেট পুঁজিপতিদের কৃষকের ত্রাণকর্তা বানিয়ে সরকারী ভুমিকাকে উঠিয়ে দেওয়া চলবে না। কৃষির কর্পোরেটমুখী পুনর্গঠন অর্থাৎ কৃষি উৎপাদন - বানিজ্য, কৃষিজমি, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র এ সমস্ত কিছুকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া মানছি না।

রাজ্যে রাজ্যে কৃষির বৈচিত্র বা ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ঠ রয়েছে কিন্তু সারা দেশের কৃষকরা তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই সাধারণ দাবির ভিত্তিতে পথে নেমেছেন। খুলে দিয়েছেন মোদী সরকারের মিথ্যাচারের মুখোশ। প্রমাণিত হয়েছে কৃষকদের এই আন্দোলন কেবল পাঞ্জাব হরিয়ানার নয়, সমগ্র দেশের মানুষের। কোন সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নয়, আন্দোলনের প্রতি দেশের কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের রয়েছে বিপুল সমর্থন। পাঞ্জাব কিংবা বাংলা, বিহার বা তামিলনাড়ু সমস্ত রাজ্য থেকেই সামনে উঠে এসেছে দেশের কৃষক সমাজের এক সংগ্রামী একতা। পাঞ্জাবের চাষিরা ফসলের সরকারী দর পায়। অথচ বাংলার কৃষকরা সেটা আদৌ পায় না। পাঞ্জাবে সরকারী ক্রয় কেন্দ্র তথা কিষাণ মান্ডি ব্যবস্থা রয়েছে, এর বিপরীতে পঃ বাংলার ক্ষুদ্র ভারত বনধ তুলে ধরেছে দেশব্যাপী প্রতিরোধ ও সংহতির বার্তা চাষিরা সেসব কিছু চোখেই দেখেনি। কিন্তু নয়া কৃষি আইনের ফলে আগামীতে ফসলের সরকারী দর নির্ধারণ বা ক্রয় ব্যবস্থাটাই যে উঠে যাবে এবং তার ফলে সমস্ত চাষিরাই যে এক সাথে-একই রকমভাবে আক্রান্ত হবেন -- এই প্রশ্নে গড়ে উঠেছে এক সাধারণ উপলব্ধি। তাই বনধের দিন দেখা গেলো রাস্তায় নেমে পঞ্জাব হরিয়ানার চাষিদের সুরে সুর মিলিয়ে বাংলার চাষিরা বলেছেন, ফসলের দাম পড়ে যাওয়া ঠেকাতে সরকারের ভুমিকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, হিমঘর বা ফসল সংরক্ষণের পরিকাঠানো সরকারকেই করতে হবে। চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় এসব কাজ পুঁজিপতিরা আদৌ করবে না। চুক্তি চাষ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে প্রবল বিরোধীতা। কৃষকের চাষ করার স্বাধীনতা চলে যাবে, অদুর ভবিষৎ এ তাদের জমি হাতছাড়া হয়ে যাবে এ জায়গা থেকেই তারা কৃষি আইন বাতিলের দাবি তুলে ধরেছেন। এনআরসি বা কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রীয় শাসক দলের পান্ডাদের যে মাত্রায় আক্রমণাত্মকভাবে বিষাক্ত প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কৃষি আইন নিয়ে তাদের ব্যাপক মানুষের বিরোধীতার মুখে পড়তে হচ্ছে। শ্রেণীর প্রশ্নে বিভাজনের রাজনীতি কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে এটা নিশ্চিত।

বনধের দিনে দেশের বড় বড় শহর থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চল কিংবা মফস্বল গঞ্জ-শহর সর্বত্রই ব্যাপক শ্রমিক শ্রেণী সহ মেহনতি মধ্যবিত্ত মানুষ কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতি জানিয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তি কর্মী থেকে শুরু করে শিক্ষক অধ্যাপক, আইনজীবী সমাজের সর্বক্ষেত্রেই অন্নদাতাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেখা গেছে। সব মিলিয়ে যে গণরায় উঠে এসেছে তা হলো মোদী সরকারকে অবিলম্বে নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। সরকার যতই গায়ের জোরে কর্পোরেট স্বার্থবাহী নয়া কৃষি আইন পাশ করুক না কেন, কৃষকের জীবন-মরণের প্রশ্নগুলির ফয়সালা রাস্তার লড়াইয়ের মাধ্যমেই করতে হবে। মোদী সরকারকে এই গণরায়কে মেনে নিতেই হবে।

- জয়তু দেশমুখ    

ssa8dec

দার্জিলিং

২৬ নভেম্বর শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটের ১২ দিনের মধ্যে দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল কৃষক সংগঠনগুলি। বিজেপি বিরোধী সমস্ত পার্টি, গণ সংগঠনগুলি এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু এত কম সময়ে ধর্মঘটকে সফল করে তোলার চ্যালেঞ্জ টা মোটেই সহজ ছিলো না। প্রচারের সময় কম ছিল! তবুও ৭ ডিসেম্বরের শিলিগুড়ি শহরে ভ্রাম্যমান প্রচার, ডাবগ্রাম ফকদইবাড়ির প্রচার সভা, জলপাইমোড়ে শক্তিগড় ব্রাঞ্চ কমিটির পক্ষ থেকে কৃষকদের সংহতিতে বিক্ষোভ কর্মসূচী, রাঙাপাণিতে এ আই কে এম সহ কৃষক সংগঠনগুলির যৌথ মিছিলের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে ধর্মঘট সফল করার আহ্বান, কৃষকদের সংহতিতে পাশে দাঁড়ানোর বার্তা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে জোরের সঙ্গে।

সাত তারিখের উত্তরকন্যা অভিযানে বিজেপি যতই সংগঠিত লুম্ফেন রাজ, পরিকল্পিত সন্ত্রাস তৈরি করার চেষ্টার মাধ্যম মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গ বনধ ডাকলেও কৃষক সংহতিতে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে, কোম্পানি রাজের বিরুদ্ধে ভারত বনধে মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই রাঙাপাণিতে রেল অবরোধ ঘোষপুকুর টোলপ্লাজা অবরোধ, শিলিগুড়ি শহরে বনধের সমর্থনে মিছিল হয়। রাঙাপাণিতে রেল অবরোধের সময় আরপিএফ কর্মীদের সমর্থন, রেল বেসরকারীকরণে তাদের উদ্বেগ উল্লেখযোগ্য।

রাঙাপাণির রেল অবরোধে এআইকেএম জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ, শরত সিংহ, পৈষানজু সিংহ, নেমু সিংহ, পঞ্চা বর্মণ, দীপক ঘোষ প্রমুখ নেতৃত্ব দেন। সিআইটিইউ-র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সমন পাঠক, কমরেড সুদীপ সহ এআইকেএস-র স্হানীয় নেতৃত্ব। ঘোষপুকুর টোলপ্লাজা অবরোধে ছিলেন জেলা সম্পাদক অভিজিত মজুমদার, কৃষ্ণপদ সিংহ, নেমু সিংহ, দীপক ঘোষ প্রমুখ। ছিলেন সিআইটিইউ-র সমন পাঠক, এসএফআই-এর সাগর শর্মা।

raaa

 

অভিজিত মজুমদার, সমন পাঠক, জীবেশ সরকার, মোজাম্মেল হক, রামজী প্রমুখর নেতৃত্বে ধর্মঘটের সমর্থনে একটি মিছিল হিলকার্ট রোড শিলিগুড়ি প্রধান রাস্তাগুলি পরিক্রমা করে। শ্লোগান ওঠে কৃষক বিরোধী সরকার, আর নেই দরকার। সবমিলিয়ে উত্তরের শিলিগুড়ি শহর সহ সন্নিহিত গ্রামাঞ্চলে বনধ চিত্র সর্বাত্বক।

৬ ডিসেম্বর একদিকে বাবরি ধ্বংসের দিনে বিভাজনে রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি মিছিল অন্যদিকে দিল্লতে চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে কৃষক বিরোধী কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ৮ ডিসেম্বর ধর্মঘটকে সফল করার প্রত্যয়। লাল পতাকা, ব্যানার, চাইনিজ হাতে বাম নেতা কর্মীরা যখন বাঘাযতীন পার্কথেকে মিছিল শুরু করছে, বহুদিন পর পথচলতি মানুষ থেকে রাস্তর পাশে দোকানদার সকলেই মিছিলের দিকে চোখ রেখেছে উত্সাহ নিয়ে ...! মুহুর্মুহু শ্লোগানে তখন ‘ খেপেছ কৃষক, জাগছে দেশ, শাসক তুমি এবার শেষ’ কৃষক মেরে দেশপ্রম, নরেন মোদী শেম শেম এর সম্মিলিত আওয়াজ। মিছিল যত এগিয়েছে, দীর্ঘ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার, কৃষক বিরোধী, শ্রমিক বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে ৮ ডিসেম্বরের ভারত বনধ সফল করে তোলার সমস্ত রসদ কুড়িয়ে নিয়েছে সেদিনের মিছিল।

৮ ডিসেম্বর ধর্মঘট সফল করার আহ্বানে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দিবসে যৌথ মিছিল।

৬ ডিসেম্বর একদিকে বাবরি ধ্বংসের দিনে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি মিছিল অন্যদিকে দিল্লতে চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে কৃষক বিরোধী কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ৮ ডিসেম্বর ধর্মঘটকে সফল করার প্রত্যয়। লাল পতাকা, ব্যানার, চাইনিজ হাতে বাম নেতা কর্মীরা যখন বাঘাযতীন পার্ক থেকে মিছিল শুরু করছে, বহুদিন পর পথচলতি মানুষ থেকে রাস্তর পাশে দোকানদার সকলেই মিছিলের দিকে চোখ রেখেছে উত্সাহ নিয়ে! মুহুর্মুহু শ্লোগানে তখন ‘খেপেছ কৃষক, জাগছে দেশ, শাসক তুমি এবার শেষ’ কৃষক মেরে দেশপ্রম, নরেন মোদী শেম শেম এর সম্মিলিত আওয়াজ। মিছিল যত এগিয়েছে, দীর্ঘ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার, কৃষক বিরোধী, শ্রমিক বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে ৮ ডিসেম্বরের ভারত বনধ সফল করে তোলার সমস্ত রসদ কুড়িয়ে নিয়েছে সেদিনের মিছিল। নেতৃত্ব দেন অপু চতুর্বদী, মোজাম্মেল হক, মীরা চতুর্বদী, লক্ষ্মী দাস, শান্তা পাসওয়ান, ময়না সূত্রধর, রুবী সেনগুপ্ত, মধুবন্তী বসু, শাশ্বতী সেনগুপ্ত।

pur

পূর্ব বর্ধমান

২ ডিসেম্বর পুর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের কুসুমগ্রাম বাজারে যৌথভাবে মিছিল করে বাস স্ট্যান্ড এ রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়। বক্তব্য রাখেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমান মন্ডল ও সিপিএমের কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ৫ ডিসেম্বর বর্ধমান সদর থানার পালসীটে ২নং জাতীয় সড়ক যৌথভাবে অবরোধ করা হল। বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অবরোধ হয়। বক্তারা দিল্লির ২৬ নভেম্বর থেকে রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভ রত লক্ষ লক্ষ কৃষক জনগণের আন্দোলন এর সংহতি সমর্থন জানান। আন্দোলন কারীদের অভিনন্দন জানান। নয়া কৃষি আইন ও বিদ্যুত বিল ২০২০ বাতিলের দাবি জানান। কৃষি আইন বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। এআইকেএসসিসি-র ডাকা ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার আহ্বান রাখেন। ৬ ডিসেম্বর কালনা ২নং ব্লকের অকালপোষ অঞ্চলের আগ্রাদহতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে মিছল করে কোম্পানির দালাল নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা, বক্তব্য রাখা হয়। ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার জন্য শ্লোগান তোলা হয়। বক্তব্য রাখেন রফিকুল ইসলাম। নয়া কৃষি আইন বাতিল ও ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার আহ্বান জানান। ৬ ডিসেম্বর নাদনঘাট থানার ইসলামপুর চৌমাথায় পার্টির পক্ষ থেকে মিছিল করা হয়। ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ্ সফল করার জন্য শ্লোগান তুলে ফ্যাসিস্ট নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়। ৭ ডিসেম্বর পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের মেড়তলা গ্রাম পঞ্চায়েত ও ফলেয়া বাজারে ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার জন্য প্রচার ও বক্তব্য রাখা হয়। ৭ ডিসেম্বর পুর্বস্থলী ১নং ব্লকের নাদনঘাট পঞ্চায়েত এলাকায় ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার জন্য যৌথ প্রচার সংগঠিত করা হল এবং বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য রাখা হয়। ৭ ডিসেম্বর মন্তেশ্বর ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামে গ্রামে ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার জন্য যৌথভাবে প্রচার করা এবং কুসুমগ্রাম বাজারে সভা করা হয়। ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার জন্য পুর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লক এলাকায় পিকেটিং, রাস্তা অবরোধ ও কুশপুতুল দাহ করা হয়। পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের কালেখাতলা সব্জি বাজারে যৌথ ভাবে রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়। রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের সব্জি ও ধান রাখা হয় ৩ শতাধিক মানুষ জমায়েত হয়েছিল। তিন ঘণ্টা অবরোধ চলার পর কৃষক বিরোধী কোম্পানির দালাল নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়। অবস্থান বিক্ষোভে বিভিন্ন বক্তা বক্তব্য রাখেন ।তারপর অবরোধ তুলে নেওয়া হল পুলিশের অনুরোধে।

পুর্বস্থলী ১নং ব্লকের নাদনঘাট নওপাড়া মোড়ে যৌথভাবে অবরোধ করা হয়। ৩০০-৪০০ জন মানুষের উপস্থিতি ছিল। তিন ঘণ্টা অবরোধ চলার পর ফ্যাসিস্ট নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।পুলিশ বারবার অনুরোধ করেন অনুরোধ তুলে নেওয়ার জন্য। কিন্ত জমায়েত দেখে জোর করতে সাহস পায়নি। সমস্ত প্রাইভেট বাস বন্ধ ছিল, সরকারী বাস ও অন্যান্য যানবাহন অনেক দূর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিল। দোকান বাজার সমস্ত বন্ধ ছিল। অবরোধ দেখতে প্রচুর সাধারণ মানুষ জমায়েত হয়। মন্তেশ্বর ব্লকের কুসুমগ্রাম বাজারে যৌথভাবে মিছিল ও পথ অবরোধ করা হয়। দীর্ঘ সময় অবরোধের পর পুলিশের অনুরোধে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। কুসুমগ্রাম গ্রাম বাজার সম্পুর্ণ বন্ধ ছিল। মানুষের মধ্যে বন্ধ সম্পর্কে ভালো উৎসাহ ছিল। মেমারী ১নং ব্লকের নিমো বটতলায় যৌথভাবে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। বারবার পুলিশ অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকে, ২ ঘন্টা অবরোধ চলে। শ্লোগান ওঠে কৃষক বিরোধী নয়া কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। জনবিরোধী বিদ্যুত বিল ২০২০ বাতিল করতে হবে। পুলিশ আসে, বাজার সম্পুর্ণ বন্ধ থাকে। কালনা বৈদ্যিপুর গ্যারেজ বাসস্ট্যান্ড যৌথভাবে রাস্তা কিছু সময় অবরোধের পর পুলিশের অনুরোধে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তারপর মিছিল করে বাজার পরিক্রমা করেআবার শিরিষ তলা মোড়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। আবার পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়, জামালপুর ব্লকে ঋণ মুক্তি কমিটির নেতৃত্বে ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার প্রচার করা হয়। ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার জন্য ৩টি গ্রামে শতাধিক ঋণগ্রস্ত মহিলা অর্চনা মল-এর নেতৃত্বে ঋণ মুক্তি কমিটির ব্যানার নিয়ে গ্রামে মিছিল সংগঠিত হয়। খণ্ডকোশ ব্লকের বেরুবাড়ী গ্রামে বন্ধের প্রচার করা হল ঋণ মুক্তি কমিটির নামে প্রচার করা হয়।

মুর্শিদাবাদ

মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের টেক্সটাইল মোড় থেকে বাম দলগুলোর নেতৃত্বে ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল পরিক্রমা করে এবং গির্জার মোড়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। কিছু সময় অবরোধের পর কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। বহরমপুর শহরের সমস্ত দোকান বন্ধ ছিল। বাস চলাচল করেনি, জেলাশাসকের অফিস মিছিল করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৬ ডিসেম্বর খড়গ্রাম ব্লকের ঝিল্লী গ্রাম পঞ্চায়েতের নোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে সভা হয়। ৬ ডিসেম্বর পালন ও ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধ সফল করার জন্য প্রচার হয়। ঐদিন শেরপুর মোড়ে যৌথ সভা হয় ও বন্ধের প্রচার করা হয়।

ddd

কলকাতা

দেশজুড়ে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে যাদবপুর-ঢাকুরিয়া লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে লাগাতার কর্মসূচী নেওয়া হয় এলাকাজুড়ে। ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা বেলায় পালবাজার মোড়ে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ সভা সংগঠিত হয়।সভায় বক্তব্য রাখেন বাসুদেব বোস, তমাল চক্রবর্তী ও আকাশ দেশমুখ। গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রণব মুখার্জি ও সন্চালনা করেন মমতা ঘোষ। সাথেই কৃষি আইন ও মোদীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়। ৬ ডিসেম্বর সকালে কৃষক আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে ১০৪ নং ওয়ার্ডে বামদলগুলোর যৌথ মিছিল সংগঠিত হয়।সন্তোষপুর বাজার থেকে গড়ফা স্কুল পর্যন্ত মিছিলে নেতৃত্ব দেন লোকাল সম্পাদক বাবুন চ্যাটার্জী, প্রণব মুখার্জি প্রমুখ। ওই দিন বিকেলে লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে ৮ ডিসেম্বর বনধের সমর্থনে যাদবপুর-ঢাকুরিয়া এলাকায় ভ্রাম্যমান প্রচার করা হয়।

কৃষক আন্দোলনের উপর পুলিশী আক্রমণের বিরুদ্ধে এবং দেশ বিরোধী কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে গত ২ ডিসেম্বর মৌলালী মোড়ে এক বিক্ষোভ সভা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন এআইসিসিটিইউ এর পক্ষ থেকে বাসুদেব বসু, দিবাকর ভট্টাচার্য্য, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সুমিতা নাথ, এআইএসএ-এর পক্ষ থেকে সৌমেন্দু। সভা শেষে মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীদের শাস্তির দাবিতে বিরসূল হাটে সভা হয়। ঐ সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করা হয়। চলমান কৃষক আন্দোলনে সংহতি জানাতে ৮ ডিসেম্বরের ভারত বনধকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এআইসিসিটিইউ নেতা বাসুদেব বসু। সভায় উপস্থিত ছিলেন অশোক সেনগুপ্ত, মহঃ সামিম, মহঃ সাহবুদ্দিন, মহঃ কলিম, মহঃ মনসুর প্রমূখ নেতৃবৃন্দ। ভবানীপুর এলাকায় লিবারেশন ও এআইসিসিটিইউ উদ্যোগে চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ও কৃষি বিল বাতিলের দাবিতে এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা বাসুদেব বোস, প্রবীর দাস, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মানস, বুলা, নির্মাণ শ্রমিক চৌধুরী ও অন্যান্যরা। এরপর মোদির কুশপুতুল পুড়িয়ে শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচী সমাপ্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর কলকাতার যদুবাবুর বাজারে কৃষক বিরোধী কৃষি আইনের কপি পোড়ানো হয়।

moj

 

কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ৮ ডিসেম্বর ধর্মঘটকে সফল করে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

আইসা বেহালা জোনাল কমিটির উদ্যোগে মুচিপাড়া, ঠাকুরপুকুর, বকুলতলা, সরশুনা, শিবরামপুর, পর্ণশ্রী, রবীন্দ্রনগর, ছোটবাজার এবং বেহালা কলেজ, সরশুনা কলেজ, বড়িশা হাইস্কুল সংলগ্ন অঞ্চলে ৯ ডিসেম্বরের ছাত্র-যুব সমাবেশকে সফল করে তোলার সপক্ষে প্রচার করা হয়।

উত্তর ২৪ পরগণা

৬ ডিসেম্বর সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নেতৃত্বে কামারহাটিতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীদের শাস্তির দাবিতে এবং ৮ ডিসেম্বর দেশব্যাপী ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল ও মোদী, আম্বানি এবং আদানির কুশপুতুল দাহ করা হয়।

how

হাওড়া

কৃষি আইন ২০২০ বাতিলের দাবিতে ৪ ডিসেম্বর বিক্ষোভ সভা সংগঠিত হয় বালি দুর্গাপুর অভয়নগর পঞ্চায়েতের নতুন বাজার মোড়ে। সভায় দিল্লীতে চলা কৃষক আন্দোলন-এর সংহতিতে কৃষি আইন বাতিল-এর দাবিতে বক্তব্য রাখেন বালি লোকাল কমিটির সদস্য দীপক চক্রবর্তী। পরবর্তীতে সভায় বক্তব্য রাখেন আইসা হাওড়া জেলা সম্পাদক আঙ্কিত মজুমদার। সভার শেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের হাওড়া জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্ত। সমগ্র সভা পরিচালনা করেন বালি বেলুড় লোকাল কমিটির সম্পাদক মাধব মুখার্জী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য স্থানীয় সদস্য/সমর্থকেরা। মানুষ আগ্রহ নিয়ে পথসভাটি শোনেন। কৃষি আইনের প্রতিলিপি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে সভা শেষ হয়। ৩০ নভেম্বর বালি বাজারে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে এবং দিল্লীতে চলমান কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে বিক্ষোভ কর্মসূচী সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে। বক্তব্য রাখেন কার্তিক পান্ডে এবং তপন ঘোষ। সঞ্চালনা করেন অমিতাভ ব্যানার্জী। পোড়ানো হয় কৃষি আইনের প্রতিলিপি। দিল্লিতে কৃষক র্যাললির ওপর মোদী সরকারের পুলিশি আক্রমণকে ধিক্কার জানিয়ে গত ২৮ নভেম্বর আইসার কমরেডদের প্রতিবাদ সভা হয় বালি জোড়া অশ্বত্থতলা মোড়ে। বক্তব্য রাখেন আইসার রাজ্য সভাপতি নীলাশিস বসু, সঞ্চালনা করে হাওড়া আইসা জেলা কমিটির সদস্য সৌভিক বনিক। শেষে স্লোগানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় কর্মসূচী। ৩ ডিসেম্বর হাওড়ার আড়ুপাড়ায় কৃষি আইন ২০২০ প্রত্যাহারের দাবিতে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন প্রণব মন্ডল, রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ ব্যানার্জি, রতন দত্ত ও দেবব্রত ভক্ত। সভায় উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও নির্মাণ শ্রমিকেরা। সভাশেষে কৃষি আইন পোড়ানো হয়।

s24

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

দেশ-কৃষি-কৃষক বিরোধী, আদানী-আম্বানীদের স্বার্থে রূপায়িত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে লড়াকু অন্নদাতাদের সমর্থনে বজবজে দঃ ২৪ পরগণা জেলা অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালিত হল। সকাল থেকেই কমরেডরা হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানার, লাল ঝান্ডায় মঞ্চ সুসজ্জিত করে তোলেন, যা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। মঞ্চের মাঝখানে শহীদ-ঈ-আজম ভগৎ সিং ও আম্বেদকারের মুর্তিতে মাল্যদান করার পর সভা শুরু হয়। সভার শুরুতেই বক্তব্য রাখেন আরওয়াইএ-র শুভদীপ পাল। কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি কৌনিক সেন। বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার। কৃষক আন্দোলনের স্পর্ধাকে স্মরণ করে কবি খাইরুল আমন নাইয়া-র কবিতা আবৃত্তি করে শোনান চলার পথে গণসাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি দেবাশিস মিত্র। গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন সেখ সাবির (রাজা) ও স্নেহাশীষ মন্ডল। বক্তব্য রাখেন এআইসিসিটিইউ জেলা-নেতা লক্ষীকান্ত অধিকারী, কৃষক নেতা দিলীপ পাল প্রমুখ।

juuuddareee

৮ নভেম্বর কৃষক সংগঠনের ধর্মঘটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশকিছু চটকলে শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। হাওড়া জেলায় ১২টি মিল এর মধ্যে ৮টি মিলের শ্রমিকরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। মিলগুলি হল -- বালি, মহাদেও, হাওড়া জুট, তিরুপতি, নর্থমিল, নিউ মিল, ল্যাডলো ও প্রেমচাঁদ জুটমিল। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রবর্তক, আগরপাড়া, অকল্যান্ড এবং জগদ্দল জুট ইন্ডাস্ট্রিজ; হুগলি জেলায় ওয়েলিংটন। ধর্মঘটি শ্রমিকদের বেঙ্গল চটকল মজদুর ফোরাম-এর রাজ্য কমিটি সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছে। ইউনিয়ন আশাবাদী আগামীদিনে কৃষক আন্দোলনের পক্ষে আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিকরা অংশ গ্রহণ করবেন।

ddear

৮ ডিসেম্বর পুর্ব বর্ধমান জেলার মেমারী ১নং ব্লকের নিমো গ্রামে ৭০ জন কৃষিমজুর মিছিল করে গ্রাম পরিক্রমা করেন। মিছিল হয় যৌথ নেতৃত্বে আয়ারলা ও সিপিএমের কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান দ্রব্য মুল্য অস্বাভাবিক বেড়ে চলেছে। অথচ কৃষি মজুর দের মজুরি বাড়ছে না। এমন কি সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরিও পাচ্ছেন না। এই ব্যাপারে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। তাই দৈনিক ২০০ টাকা ও ২ কেজি চালের দাবিতে গ্রামে পোস্টার লাগানো হয়। বৈঠকের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘোষনা করেন। অন্যান্য গ্রামে ও প্রচার চলছে। মিছিল হবে। মালিকরা মেনে না নিলে ধর্মঘট সংগঠিত হবে। আয়ারলার পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন জেলা কমিটির সদস্য সাধন কর্মকার।

cccdaaa

বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার কালো দিনে বালীর নিশ্চিন্দায় সকালে পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ বালীর উদ্যোগে এক প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মসূচী পালিত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানে আরএসএস-বিজেপির ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষকে এক হওয়ার ডাক দেয়া হয়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সংযোগ সাংস্কৃতিক সংস্থা, শ্যাম চক্রবর্তী ও মিঠু চক্রবর্তী; আবৃত্তি পরিবেশন করেন অমিতাভ ব্যানার্জী; ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সৃজনী শাখা আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এআইএসএ-র অঙ্কিত মজুমদার এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের হাওড়া জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্ত ভারতের ফ্যাসিবাদী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। “লড়াই করো যত দিন না বিজয়ী হও” এই সমবেত সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে শেষ হয়। সঞ্চলনায় ছিলেন দীপক চক্রবর্তী।

ddda

শুধু অর্থনীতিকেই রসাতলে নয়, আইএলও-র একেবারে সাম্প্রতিক রিপোর্ট প্রকাশ করলো মোদীর ‘কোভিড মোকাবিলার’ বিপর্যয়কারী ফলাফলের আরেকটা নমুনা।

“ওয়েজ অ্যান্ড মিনিমাম ওয়েজ ইন দ্য টাইমস অফ কোভিড১৯”-এর যে বিশ্ব রিপোর্ট আইএলও প্রস্তুত করেছে, তাতে বলা হয়েছে ভারতে ইনফর্মাল শ্রমিকদের মজুরি এই পর্যায়ে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে ২২.৬ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ, আর সংগঠিত ক্ষেত্রে মজুরি সংকোচন হয়েছে ৩.৬ শতাংশ -- এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে যা সর্বনিম্ন, এমনকি তা পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের থেকেও কম। সংঘ পরিবারের চিরশত্রু পাকিস্থান এ প্রশ্নে মোদীর ‘আত্মনির্ভর’ ভারতকে ও টেক্কা দিল।

এটাও আংশিক সত্য। দিল্লির ইকনমিক গ্রথ-এর অধ্যাপক অরূপ মিত্রর মতে, আইএলও-র এই রিপোর্ট প্রস্তুত হয়েছে লকডাউনের প্রথম পর্বে। লকডাউনের আট-ন মাস পরে অনুসন্ধান করলে দেখা যেত, শুধু মাত্র সংগঠিত ক্ষেত্রে ৩.৬ শতাংশ মজুরি সংকোচনের অনুমান একান্তই অবমূল্যায়ন। যে হারে চাকুরি গেছে, যেভাবে মজুরি কমানো হয়েছে, তাতে এটাই প্রকটভাবে সামনে আসে।

ভারতে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার প্যান্ডেমিকের বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই এমনকি পাকিস্থানের থেকেও কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে আইএলও-র এই রিপোর্ট। পাকিস্থানে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার ২০১৫ সালে বেড়ে হয় ৮.৯ শতাংশ আর তার পরপর তিন বছরে বাড়ে ৪ শতাংশ হারে। এদিকে, মোদীর ভারতে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সেই বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২.৮, ২.৬ এবং ২.৫ শতাংশ ছিল। ২০১৮ সালে তা ছিল একই জায়গায়। ২০১৯-র তথ্য আইএলও দেয়নি। এরই সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ক্রয়, ক্ষমতায় সমতা সংক্রান্ত (পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি) দিকটি। ভারতের মূল মাসিক বেতন বা মজুরির গড় ২১৫ ডলার যা ২০১৯ সালের এশিয়া প্যাসিফিক-এর মোট ৩০ দেশের মধ্যে একেবারে নীচ থেকে ধরলে ভারতের স্থান দুটি দেশের উপরে, ভারতের নীচে রয়েছে বাংলাদেশ ও সলোমন দ্বীপ!!

২০১৫ থেকে ২০১৭র মধ্যে ভিয়েতনামের মজুরি বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৩.৭ শতাংশ থেকে ১২.৪ শতাংশ। চিনের গত চার বছরে বেড়েছে ৫.৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ হারে।

আইএলও রিপোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, মজুরি বৃদ্ধির এই শোচনীয় হার, কোভিড উত্তর আর্থিক বৃদ্ধিকে নীচের দিকে টেনে নামাবে, কারণ, প্রাক কোভিড পর্বেই মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত মন্থর, আর কোভিড পর্বেতো একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আত্মনির্ভতার বুজরুকি দিয়ে অতলান্ত অন্ধকারের কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে নিক্ষিপ্ত মোদীর ভারত।

banbbb

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ থেকে কৃষকরা জমায়েত হয়ে রয়েছেন দিল্লির চারপাশে। কার্যত দিল্লি ঘেরাও হয়ে আছে। কেন, কৃষকদের দাবি কী? তাঁরা চান গলার জোর আর রাজ্যসভার উপাধ্যক্ষের অসাধু কৌশলে পাশ হওয়া কৃষি আইনগুলিকে বাতিল করা হোক। ওদিকে মোদি সরকার তো অতিমারির সময়ে ক্রমাগত ‘যুগান্তকারী’ আইন চালু করেই চলেছেন। তারা নাকি কৃষিকে উন্মুক্ত করে কৃষকদের জন্য নবযুগ আনতে চলেছে, কিন্তু ‘চাষাভুষো’রা বুঝছেন না। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা অবশ্য বলছে যে, এই সমস্ত কৃষি আইনের মধ্য দিয়ে ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রের মুক্তি ঘটবে, আর ১৯৯১ সালে যে উন্মুক্ত বাজারের সুবিধে শিল্পক্ষেত্রে ‘যুগান্তর’ এনেছে কৃষিতে তেমন ‘উন্নতি’ আসবে। ফলে এটা বোঝাই যাচ্ছে, শিল্পের উদারিকরণ যেমন আমবানি-আদানিদের মুনাফার দুনিয়াকে মুক্ত করে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলেছে, অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে অল্প কয়েকটি পরিবারের হাতে কেন্দ্রিভূত করেছে তেমনটাই কৃষিক্ষেত্রে ঘটানো হবে। কিছুকাল আগেই ভারতের অর্থনীতি নিয়ে একটি গবেষণাপত্রে টমাস পিকেটি লিখেছিলেন, কোম্পানিরাজ থেকে অর্বুদপতিরাজে পৌঁছেছে ভারত, আগে দেশ চালাত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, এখন দেশ চালাচ্ছে অর্বুদপতি বা বিলিয়নেয়াররা। সেই সব বিলিয়নেয়ার কেবল শিল্পক্ষেত্র দখল করেই খুশি থাকতে পারে না, তাদের দরকার ভারতের কৃষির উপরে একচ্ছত্র দখল। সেদিকে এগোতেই মোদি সরকার কৃষি আইনকে পাল্টেছেন।

কেবল কি কৃষি আইন? না, শ্রম আইন, সংবিধান, ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা, ক্রিমিনাল আইন সমস্ত কিছুতেই হাত পড়েছে বা পড়তে চলেছে, এবং সমস্তটাই হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষমতা অধিকতর কেন্দ্রিভবনের লক্ষ্যে, একচেটিয়া পুঁজিকে আরো শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে। ওদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আভ্যন্তরীণ গোষ্ঠি প্রস্তাব করেছে যে, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে বৃহৎ শিল্পপতি ও বৃৎ ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। আশ্চর্যজনক হল যে যে সমস্ত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ওই গোষ্ঠি কথা বলেছিল তাঁদের একজন বাদে সকলেই ওই প্রস্তাবের বিপরীতে মত প্রকাশ করেছেন। কৃষিক্ষেত্রের মতো এক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রিভবন হবে বলেই সবাই মনে করছেন।

বৃহৎ ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্ক খুললে তাদের ব্যবসায়গুলি ব্যাঙ্ক থেকে যোগসাজশের দরুণ অনায়াসে ঋণ পেতে পারবে, যাদের সেই যোগসাজশ থাকবে না তারা পাবে না। প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামনিয়ান, শঙ্কর আচার্য ও প্রাক্তন অর্থ সচিব বিজয় কেলকারের মতে, ভারতীয় অর্থনীতি অতিরিক্ত কেন্দ্রিভবন দ্বারা বর্তমানেই আক্রান্ত। কেবল অন্ত:শিল্পক্ষেত্রীয় কেন্দ্রিভবন আছে এমনটাই নয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে অল্পকয়েকটি শিল্পপতি পরিবার অনেকগুলি ক্ষেত্রেই প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। রাষ্ট্র ও শিল্পপতিদের দ্বিমুখি সম্পর্কের কারণে ভারতীয় পুঁজিবাদ অনেকদিন ধরেই কলঙ্কিত, যদি শিল্প-পুঁজি ও লগ্নিপুঁজির মধ্যে পার্থক্যরেখাটিকেও মুছে ফেলা হয়, তাহলে এই কলঙ্ক আরো বাড়বে।

যদিও ভারতীয় অর্থনীতির চরম কেন্দ্রিভবন ও তদদ্ভুত চরম দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিবাদের উত্থানের জন্য অন্যতম দায়ী চিদাম্বরমের কথাকে ধর্তব্যের মধ্যে আনা উচিৎ নয়, তিনিও কর্পোরেটদের হাতে ব্যাঙ্ক তুলে দেওয়াকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করেছেন। এস এন্ড পি গ্লোবাল রেটিংসএর মতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই প্রস্তাব যথেষ্ট ঝুঁকিবহুল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন ও প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর ভিরাল আচর্যের মতে এই প্রস্তাব একটি বিষ্ফোরণ যা দেশের রাজনীতিতে অর্থশক্তির গুরুত্বকে, এবং আমাদের স্বৈরাচারী সাঙাতি ধান্ধাবাজির কাছে নিমজ্জিত হওয়ার সম্ভাবনাকে আরো বাড়াবে। বৃহৎ কর্পোরেট হাউসগুলি সরাসরি সম্পদ যোগাড় করার অধিকার পেয়ে আরো বড় হয়ে উঠতে সক্ষম হবে। ফলে তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য আরো বিস্তার করতে পারবে। দেশের গণতন্ত্র এমনিতেই যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছে, তা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সম্ভবত গুরুতরভাবে।

অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রিভবন মোদি জমানার অন্যতম বৈশিষ্ট। সেমিনার পত্রিকার গত অক্টোবর সংখ্যায় হরিশ দামোদরন “ফ্রম “এন্টরিপ্রিউনারাল” টু “কংগলোমারেট” ক্যাপিটালিজম” শীর্ষক একটি নিবন্ধে দেখিয়েছেন যে গত কয়েক বছরে কীভাবে অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ চলছে দেশ জুড়ে। তাঁর হিসেবে ২০১৪-১৫ সালে ভারতে প্রোমোটার পরিচালিত বিক্রির পরিমাণের নিরিখে বৃহত্তম যে ২০০ টি কোম্পানি ছিলে তার মধ্যে ৫৭টি উঠে গিয়েছে বা অন্য কোম্পানি কর্তৃক অধিগৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে এসার, অনিল আম্বানি, ভিডিওকোন, গৌতম থাপারের মতো গোষ্ঠিগুলি রয়েছে। ফলে, কম সংখ্যক কোম্পানির হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রিভবন ঘটছে। লক্ষণীয় যে, দেশে প্রায় একদলীয় সরকারের দিকে এগোনোর সঙ্গে কয়েকটি কোম্পানির হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রিভবনের একটি সরাসরি সম্পর্ক পাওযা যাচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলি ক্ষমতাশালী ছিল ও কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোর্চা ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য আঞ্চলিক দলগুলির উপর নির্ভরশীল ছিল, এই ধরনের ক্ষমতার কেন্দ্রিভবন অনেক কম ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরের “শক্তিশালী কেন্দ্র” ও “শক্তিশালী নেতা” শ্লোগানের পিছনে লুকোনো রয়েছে একচেটিয়া শক্তিশালী কর্পোরেট পুঁজির শ্লোগান। সেই অসীম আর্থিক ক্ষমতাবান কর্পোরেটরা অর্থযোগান দেবে নির্বাচনী বন্ড ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে। বৃহৎ পুঁজিপতির সেই অগাধ ক্ষমতাকে আরো জোরালো করে তোলার জন্য জনসাধারণের সঞ্চয়ের উপরেও তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা দরকার। সেই লক্ষ্যেই কর্পোরেটদের হাতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

উত্তরোত্তর ব্যাঙ্ক আমানতে সুদের হার কমানো হচ্ছে, অন্যদিকে সমস্ত লেনদেনকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে করার জন্য প্রতিনিয়ত বন্দোবস্ত করা হচ্ছে, চাপে ফেলা হচ্ছে জনগণকে। ফলে ক্রমাগত ব্যাঙ্ক অপরিহার্য হয়ে উঠবে লেনদেনের ক্ষেত্রে। যদি তেমনটা করা যায়, তাহলে একদিকে ব্যাঙ্ক ব্যবসায়ের রমরমা হবে; অন্যদিকে লেনদেনের জন্য ব্যাঙ্ক ছাড়া গতি না থাকলে ব্যাঙ্ক আমানতের উপর সুদের হার অত্যন্ত কম এমনকি ঋণাত্মক ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিদানের জন্য জনগণ শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবে। যেহেতু শেয়ার বাজারের গতিপ্রকৃতি বৃহৎ পুঁজিপতিদের ব্যবসায়ের লাভ লোকসানের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িত তাই সেই সূত্রেও অর্থনৈতিক ক্ষমতার আরো কেন্দ্রিভবন ঘটবে। দেখা গেছে যে, অর্থনীতিতে একচেটিয়া পুঁজির রমরমা শেষ বিচারে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে, স্বৈরাচারী শাসকের হাতে ঘুরপথে অর্থের যোগান দিয়ে শাসন ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বৃহৎ পুজিপতিদের ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় প্রবেশের অনুমতির মাধ্যমে সেটাই করতে আগ্রহী মোদি সরকার। তার উপর ভরসা করেই বিজেপি আগামী ৫০ বছর ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে চাইছে।

- অমিত দাশগুপ্ত    

ddareenara

আমাদের দেশে মানবাধিকার দলনে সবচাইতে পারঙ্গমতার পরিচয় যিনি দিয়ে থাকেন উত্তরপ্রদেশের সেই মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ বলেছেন: আমরা কি অপরাধীদের আরতি করবো? অর্থাৎ তিনি অপরাধীদের আরতি নয়, নিকেশ করার করারই পক্ষপাতী। আর এই কথা তিনি সদর্পে, সদম্ভে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে থাকেন। জননির্বাচিত একজন মুখ্যমন্ত্রী এধরনের কথা বলতে পারেন কিনা, এপ্রশ্ন অর্থহীন। কারণ কারা অপরাধী তা তিনি এবং তার দল নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনই নির্ধারণ করে থাকেন। আমেরিকার স্বেচ্ছাচারী প্রেসিডেন্টদের কাছে যেমন যারা সরকার এবং প্রশাসনের চোখে মিত্র হিসেবে চিহ্নিত হন না, তাঁরাই সরকার এবং প্রশাসনের কাছে শত্রু হিসেবে গণ্য হয়ে এসেছেন। অনুরূপভাবে আমাদের দেশে বর্তমানে সঙ্ঘের ফ্যাসিস্ত দর্শন-শাসিত বিজেপি সরকারও তাঁদেরই দেশের শত্রু বলে চিহ্নিত করে থাকেন যিনি বা যাঁরাই তাঁদের অমানবিক আচার-আচরণের বিরোধিতায় প্রতিবাদে সামিল হয়ে থাকেন। একসময় ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন যে আন্দোলন হচ্ছে বিলাসিতা। আর এখন শাসক বিজেপির কাছে আন্দোলন দেশবিরোধিতার নামান্তর। স্বভাবতই আন্দোলনকারিরা অতি সহজেই সরকার, সরকারী দল এবং দেশের শত্রু তথা চীন এবং পাকিস্তানের চর বা দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান।

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাস নাগাদ (আষাঢ় ১৩৪৬) অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ মুসোলিনি এবং হিটলারকে ‘নরবলি সংগ্রহের কাপালিক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এই নরবলি সংগ্রহের কাপালিকরা তো স্বভাবতই কোনও গণতান্ত্রিকতা, নিয়মনীতি কিছু মানবেন না, যে মূল্যবোধ এবং নিয়মনীতি দ্বারা তাঁরা প্রাণিত এবং পরিচালিত হয়ে থাকেন তা তো ফ্যাসিস্ত দর্শন। সেখানে মানুষের ন্যায্য অধিকারের কোনও মূল্য নেই। অধিকার বিষয়টি একমাত্র নির্ধারিত হবে তাঁরা যা করছেন বা করছেন তার দ্বারাই। রবীন্দ্রনাথ তাঁর পূর্বোক্ত বক্তব্যের দু’বছর আগে ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে ‘প্রচলিত দণ্ডনীতি’ শীর্ষক একটি লেখায় ‘দণ্ডপ্রয়োগের অতিকৃত রূপকে’ বর্বরতা আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছিলেন যে তিনি কোনও অপরাধীর ‘নির্জন কারাকক্ষবাস’-এর দণ্ড সমর্থন করেন না। শাসকেরা এধরনের অপকর্ম করলে তিনি একাজের প্রতিবাদ করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

এই প্রতিবাদ করাটাই মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। সরকার এই মানুষের এই অধিকারকেই খর্ব করতে চায় তার কায়েমি স্বার্থসেবার লক্ষ্যেই। মনে রাখা দরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের অগাস্ট মাসে সুভাষচন্দ্র বসু, কিরণশঙ্কর প্রমুখের উদ্যোগে পালিত হয়েছিল ‘নিখিল ভারত লাঞ্ছিত রাজনৈতিক কর্মীদিবস’। এদিনের এই কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যে পরিচালকবৃন্দ নয়মাস কারাদণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। এর দু’বছর পরে ১৯৩১-এর ২৬ সেপ্টেম্বর হিজলি জেলে গুলিচালনার প্রতিবাদে কলকাতার মনুমেন্টের নিচে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভা থেকেই রাজনৈতিক বন্দিমুক্তি এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার লক্ষ্যে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। এঘটনার পাঁচবছর পর ১৯৩৬- এর জুলাই-অগাস্ট মাসে রাজনৈতিক বন্দিমুক্তি, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে সারা দেশজুড়ে সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এর ফলেই গঠিত হয় ‘অল ইন্ডিয়া সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’। এই সংগঠনের অনরারি প্রেসিডেন্ট-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এবং চেয়ারম্যান হন সরোজিনী নাইডু।


১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর তারিখটিকে ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলি মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘোষণার প্রায় ষোলো মাস আগে সাতচল্লিশের পনেরোই অগাস্ট অখণ্ড পরাধীন ভারতবর্ষ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দ্বিধাবিভক্ত দুটি স্বতন্ত্র এবং ‘স্বাধীন’ দেশ হিসেবে গণ্য এবং সর্বজনীন পরিচিতি অর্জন করেছিল। এই দিনটির অবব্যহিত আগে ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতবর্ষে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বারবার লাঞ্ছিত এবং লঙ্ঘিত হয়েছে। উত্তর-সাতচল্লিশেও এই দুই দেশের মানুষই গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বারবার শিকার হয়েছেন এবং আজও হচ্ছেন। স্বভাবতই ১০ ডিসেম্বর প্রতিবছরই আসে এবং দেশের মানুষের অধিকার বঞ্চনার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকে। আমাদের দেশে গত ২০১৪ থেকে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের অন্তর্বর্তী সময়ে অন্তত ২০০ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন সত্যসন্ধ তদন্তমূলক সাংবাদিকতার জন্যেই! এই পাঁচ বছরে ৪০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন! ২০১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে পরবর্তী চার বছরেও ৩০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন বলে জানা যায়। আমাদের দেশে সাংবাদিককের ওপর ২১টি আক্রমণের যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে এই আক্রমণের মধ্যে ব্যবসায়িরা জড়িত ২টি ক্ষেত্রে, পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতা জড়িত ১টি ক্ষেত্রে। এছাড়া রাজনীতিবিদ, দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বাহিনী এবং গ্রাম্য মোড়ল/ মাতব্বরের প্রত্যেকে ১টি করে ক্ষেত্রে জড়িত। রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা জড়িত ২টি ক্ষেত্রে। খনিমালিক এবং বালিখাদের মালিকেরা জড়িত ২টি করে ঘটনায়। বালি এবং মদ ব্যবসায়ী ও কেরোসিন ব্যবসায়ী জড়িত ১টি করে ক্ষেত্রে। পাথর ছুঁড়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ১টি। ‘মাওবাদী’ এবং তাদের উপদলীয়রা জড়িত ২টি ক্ষেত্রে। আর অসনাক্তকৃত ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ জন সাংবাদিক। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে এযাবৎ সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের কোনও ঘটনায় অভিযুক্ত বা অভিযুক্তদের এখনও শাস্তি হয়নি! প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্ত চলছে! ১৯ জন মহিলা সাংবাদিকও এই আক্রমণের শিকার হয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বরের ১১ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে মোট বারোদিনে ১৪ জন সাংবাদিক পুলিশি হুমকি এবং আক্রমণের শিকার হয়েছেন, আর এঁদের অধিকাংশই মুসলিম!

গত ২০১৭-র ৫ সেপ্টেম্বর ব্যাঙ্গালোরে নিহত হয়েছিলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। শ্রীনগরের ‘রাইজিং কাশ্মীর’ পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক সুজাত বুখারি খুন হন ২০১৮-র ১৪ জুন। ইন্ডিয়ান একসপ্রেস পত্রিকার সাংবাদিক শিবানী ভাটনগর খুন হন ২০১৯-এর ২৩ জানুয়ারি। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের প্রতিতুলনায় ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে আমাদের দেশের জেলগুলিতে নিহত বন্দীদের সংখ্যা ৫.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জেল হেফাজতে বন্দীমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬৭১। এরমধ্যে ১৩৩ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরে জেল হেফাজতে বন্দীমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬৫৫। এরমধ্যে ২৩১ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে এই সংখ্যাগুলি ছিল যথাক্রমে ১৫৮৪ এবং ১১৫। ২০১৫-র প্রতিতুলনায় ২০১৭-য় জেল হেফাজতে বন্দীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার ছিল ১৫.৭ শতাংশ বেশি। ২০১৭-য় যে ১৩৩ জন বন্দীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল জেল হেফাজতে তার মধ্যে ১০৯ জন আত্মহত্যা করেছিলেন, ৯ জন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন, ৫ জন খুন হয়েছিলেন। এছাড়া ৪৪ জন বন্দীর মৃত্যুর কারণ এখনও অজ্ঞাত। ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭-য় পুলিশি হেফাজত থেকে বন্দীদের পালিয়ে যাওয়ার প্রচারিত তথ্য হচ্ছে যথাক্রমে ৩৭১, ৫৭৭ এবং ৩৭৮ জন। গুজরাট, রাজস্থান, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৯০, ৮, ৮ এবং ১১ জন। ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সারাদেশের বিভিন্ন জেলে বন্দীদের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪১৮৫৯৫, ৪১৯৬২৩, ৪৩৩০০৩ এবং ৪৫০৬৯৬ জন। দেখা যাচ্ছে প্রতিবছরই জেলবন্দির সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছে। ২০১১, ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে জেলহেফাজতে বন্দীমৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১২৪৪, ১৩৪৫, ১৪৮২ এবং ১৫০৭ জন। এরমধ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৮৮, ১২৬, ১১৫ এবং ১৯৫ জন। ২০১৯-এর ৩০ জুন অবধি দেশের আটটি প্রধান হাইকোর্টে ৩৭,২৪৫টি জামিনের আবেদন পড়ে রয়েছে। এই বিচারাধীন বন্দীদের কথা কেউ বলেন না!

bbb

 


মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত থাকার ‘কথিত’ অভিযোগে নাগপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী আছেন আশি শতাংশ শারীরিকভাবে পঙ্গু অধ্যাপক জিএন সাইবাবা। তিপ্পান্ন বছর বয়সি এই অধ্যাপক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পেয়েছেন আমাদের দেশের মহামান্য আদালতের রায়ে। অসুস্থ এই বন্দির সঙ্গে এমনকি তার স্ত্রীকেও দেখা করার অনুমতি সবসময় দেওয়া হয় না। তিরাশি বছর বয়সি পাদ্রি ফাদার স্টান স্বামীও মাওবাদী সংযোগের অভিযোগে বর্তমানে কারাবন্দী। পারকিনসন রোগাক্রান্ত এই অশীতিপর বন্দীও জেলে সুব্যবস্থার অনধিকারী! বাষট্টি বছর বয়সি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের প্রাক্তন অধ্যাপিকা সোমা সেন ভিমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারারুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তিনি চোখের রোগে ভুগছেন। তিনিও মুম্বাই জেলে কোনোরকম প্রয়োজনীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রখ্যাত তেলুগু কবি একাশি বছর বয়সি ভারভারা রাও তাঁর জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় জেলে কাটিয়েছেন। গত দু’বছরেরও অধিক সময় (২০১৮-র ২৮ অগাস্ট থেকে) তিনি পুনরায় জেলের গরাদের আড়ালে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে কথিত হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায়! এই ভিমা কোরেগাঁও তথা এলগার পরিষদ ষড়যন্ত্র মামলায় আরও যাঁরা বন্দী হয়ে দিনযাপন করছেন তাঁদের মধ্যে আছেন প্রখ্যাত আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, কবি ও প্রকাশক সুধীর ধাওয়ালে, অধিকার আন্দোলনের কর্মীদ্বয় মহেশ রাউত এবং রোনা উইলসন, আইনজীবী এবং ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক সুধা ভরদ্বাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিক অরুণ ফেরেইরা এবং ভার্নন গনজালভেজ। এছাড়াও বন্দীদশায় দিন কাটাচ্ছেন ইকোনমিক অ্যান্ড পোলিটিক্যাল উইকলি পত্রিকার নিয়মিত কলাম-লেখক আনন্দ তেলতুম্বে, পিপলস ইউনিয়ন ফর ডেমোক্রাটিক রাইটস-এর সদস্য এবং ইপিডব্ল্যু পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গৌতম নভলাখা প্রভৃতি। কবি ভারভারা রাও-এর জামাতা এবং হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক কে সত্যনারায়ণার বাড়িতে পুলিশ হাজির হয়ে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছে: তিনি কেন মাও এবং মার্কস-এর ওপর লেখা বই পড়ছেন, কেন তাঁর ঘরে চীন দেশে ছাপা বইপত্তর রয়েছে এবং কেন তাঁর ঘরে কোনও ঈশ্বরের ছবির পরিবর্তে ফুলে এবং আম্বেদকর-এর ছবি টানানো রয়েছে? এভাবেদেশের যশস্বী কবি, লেখক, আইনজীবী, কলাম-লেখক, অধিকার আন্দোলনের কর্মিদের মাওবাদী সংযোগের কথিত এবং কল্পিত অভিযোগে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত করে দীর্ঘদিন কার্যত বিনাবিচারে কারারুদ্ধ করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পদদলিত করে চলেছেন বিজেপি সরকার যা তাদের ফ্যাসিস্ত রাজনীতির সঙ্গেই খাপ খায়। দিল্লির জেএনইউএর প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খলিদ-কেও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করে রেখেছে এই সঙ্ঘপরিবার নিয়ন্ত্রিত সরকার। এই সরকার এবং দলীয় কাপালিকদের কাছে মানবাধিকার শব্দটি তামাশার সমার্থক।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন: “পুলিশ একবার যে চারায় অল্পমাত্রও দাঁত বসাইয়াছে সে চারায় কোনোকালে ফুল ফোটে না, ফলও ধরে না।” ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর লেখা ‘ছোটো ও বড়ো’ প্রবন্ধে এই কথা লেখার পর তিনি আবার বলেছিলেন: “পুলিশের মারের তো কথাই নাই, তার স্পর্শই সাঙ্ঘাতিক।” তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন: কেন নিছক সন্দেহের বশে এইভাবে এঁদের সারাজীবনের মতো পঙ্গু করে দেওয়ার মতো কাজ সরকার করে চলেছেন? তিনি প্রশ্ন করেছিলেন: দেশের বালক যুবক সহ মানুষকে এভাবে ‘পুলিশের গুপ্তদলনের হাতে নির্বিচার’ ছেড়ে দেওয়া কী ধরনের রাজনীতি? তিনি কি জানতেন না যে এই পুলিশ রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ হিসেবেই কাজ করে? পুলিশকে এই মানবতাবিরোধী ক্ষমতা রাষ্ট্রই দিয়ে থাকে। আর এখন তো দেশে ফ্যাসিস্ত রাজ কায়েম হয়েছে। এখন তো বিরোধী কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করাই সরকারের অনুশীলিত রাজনীতির অঙ্গ।

এখন তো আমাদের দেশে বিশ্বাসের মন্দির প্রতিষ্ঠা আর মসজিদ ধ্বংস করাকে সমার্থক বলে গণ্য করে আদালতের রায় দেওয়া হয়। যে কোনও ক্ষমতার মধ্যে যে একটা আধিপত্যের সম্পর্ক থাকে, সেই আধিপত্যের সঙ্গে যে হিংসার সম্পর্ক থাকে একথা তো মিথ্যে নয়। কিন্তু এই নির্জলা সরল সত্যকে যদি দেশের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানোর প্রচারে ব্যবহারের সাজানো তত্ত্বে যাকে তাকে গ্রেপ্তার করে ইউএপিএ দিয়ে জেলে পোরার নিদান দেওয়া হয়, তবে তা কি আর দেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখার প্রক্রিয়ায় সামিল হতে পারে? পাঞ্জাবের কৃষকরা সরকারের কৃষিনীতি সংক্রান্ত তিনটি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকারের অনুদশীলন করতে নেমে সরকারের আক্রমণের শিকার হয়েও প্রতিবাদী আন্দোলনের পথচ্যুত হননি। ক্রমশই সারাদেশ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। ঔপনিবেশিক আইন এবং দণ্ডনীতি সাতচল্লিশের প্রায় সাড়ে সাত দশক পরে এসেও সমান কার্যকারিতায় ঔপনিবেশিক শাসনকেই মনে পড়ায়। এবারের ১০ ডিসেম্বর কি এই স্খলিত স্বাধীনতা, খণ্ডিত অধিকার, ধ্বস্ত মানবতাকে মুক্তির স্বপ্ন দেখাবে?

- অশোক চট্টোপাধ্যায়    

ddd

গত ২২ নভেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম ব্লকের ঝিল্লী গ্রাম পঞ্চায়েতের কেলাই গ্রামের দীর্ঘদিনের পার্টি সদস্য কমরেড মালেক সেখ কলকাতার আর্জিকর মেডিক্যাল কলেজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিডনীতে অসুস্থতার কারণে অনেক দিন চিকিৎসা চলে। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কলকাতার আর্জিকর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর পর শেষ রক্ষা হল না। জন্ডিসের কারনে বাঁচানোসম্ভব হল না। গরিব কৃষি পরিবারের ছেলে। মৃত্যু কালে বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। খুব অল্প বয়স থেকে পার্টির সাথে যুক্ত হন। কেলাই গ্রামের পার্টির উপর শত্রুর আক্রমন কমরেড সেজাম্মল, নিয়ামত ও নুরহকের শহীদ হওয়ার পর শত্রুর আক্রমন কমরেড কোনোদিন পিছু হঠেননি। অনেক আন্দোলনের ও সংগ্রামের দৃঢ় সাথী। পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচিতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করতেন। কমরেডের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে আমরা পার্টির গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধাকে হারালাম। মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি এই কমরেডের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করছে। কমরেড মালেক সেখ লাল সেলাম।

খণ্ড-27
সংখ্যা-44