বিবৃতি
ত্রিপুরায়, বিহারে বিজেপির কমিউনিস্ট বিরোধী হুঙ্কার
tri

সিপিআই(এমএল) লিবারেশানের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি গত ২২ অক্টোবর এক প্রেস বিবৃতিতে বলে, ১৮ অক্টোবর আমবাসায় জনজাতি মোর্চার প্রদেশ কমিটির সভায় মুখ্যমন্ত্রীর হুঙ্কার — “২০২৩-এর মধ্যে রাজ্য থেকে কমিউনিস্ট বীজ মুছে ফেলতে হবে”। ২১ অক্টোবর সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক উদয়পুরে এসে একটি অরাজনৈতিক খুনের ঘটনায় রাজনীতি যুক্ত করে প্রতিশোধের ডাক দিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ। ১৫ অক্টোবর বিহারে নির্বাচনী প্রচারে এসে বিজেপি-র জাতীয় সভাপতি নওয়াদা জেলায় এক নির্বাচনী সভায় বিরোধী মহাজোটকে মুখোশ ও বামপন্থী উগ্রবাদ ও বিধ্বংসকারী শক্তির আসল চেহারা বলে উল্লেখ করেন, যা ত্রিপুরায়, বিহারে তথা জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির চরম রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ও দুর্বলতাকে দেখিয়ে দেয়। এই ধরনের বক্তব্য আরএসএস ও বিজেপি-র সংখ্যালঘু মুসলিম-দলিত ও কমিউনিস্ট বিরোধী ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের অঙ্গ। কারণ গত একত্রিশ মাসের অপশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে ত্রিপুরার জনগণ বিজেপি দল ও সরকারের কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে বিরোধী বামপন্থী আন্দোলনের ওপর তীব্র দমন পীড়নকে পরোয়া না করে জনগণের অংশগ্রহণ ও গণসক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে ভয় পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলে ও সরকারে কোণঠাসা ও স্বদলীয় বিধায়কদের তীব্র বিদ্রোহের মুখে পড়ে ভীত মুখ্যমন্ত্রী দলের অভ্যন্তরে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য এই কমিউনিস্ট বিরোধী বিদ্বেষ চাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন এবং রণহুঙ্কার দিচ্ছেন। একইভাবে বিহারের নির্বাচনে জনগণের মধ্যে জমে থাকা কেন্দ্র ও রাজ্য নীতীশ সরকার বিরোধী তীব্র ক্রোধ ও আক্রোশের মুখে পড়ে কোনো উপায় না দেখে বামপন্থীদের বিশেষ করে সিপিআই(এমএল)-কে উগ্রবাদী বলে আক্রমণ করছেন। অথচ এখন দেশে ও রাজ্যে সবচেয়ে বড় উগ্রবাদী দল হচ্ছে আরএসএস ও বিজেপি। সরকারী প্রশাসনিক মদতে ভীড় হিংসায়, মিথ্যা এনকাউন্টারের গল্প বানিয়ে এরা মানুষ খুন করে; বলাৎকারীদের পক্ষে দাঁড়ায়, মিছিল করে। বিরোধী দল ও মতকে দমন করে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস চালায়। জনগণের রুটি রূজি কেড়ে নেয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিহারে জনগণের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এই মহাজোট। রাম মন্দির, পাকিস্তান ও চীন বিরোধী জিগির তোলার সুযোগ নেই। কাজ, খাদ্য, চাকরি, সবার জন্য শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, আবাস, নারী সুরক্ষা ও সম মর্যাদা, দলিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও পশ্চাদপদ অংশের জন্য সমানাধিকার, সংরক্ষন ও আত্মসম্মান এবার প্রধান ইস্যু। আর জনগণের স্বার্থে এসব প্রশ্নে বামপন্থীরা তথা সিপিআই(এমএল) বিহারে নীচুতলায় গণসক্রিয়তায় এগিয়ে থাকা শক্তি। তাতে ভীত হয়েই তারা এমন প্রলাপ বকছেন। যা গণতন্ত্র ও সংবিধান বিরোধী। আমরা এই ধরনের অগণতান্ত্রিক, সংবিধান বিরোধী ফ্যাসিস্ট মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করি ও ধিক্কার জানাই। মানব সভ্যতার ইতিহাসে যতদিন বৈষম্য থাকবে, শোষণ থাকবে, অন্যায় অবিচার ও অত্যাচারী ব্যবস্থা টিকে থাকবে, ততদিন সমাজের প্রয়োজনে কমিউনিস্টরা বেঁচে থাকবে। ততদিন কমিউনিস্টদের কেউ শেষ করতে পারবে না। মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতাদের এই রাজনৈতিক পাঠ নিতে হবে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-38