আজকের দেশব্রতীর : ১৩ আগস্ট ২০২০ -- অনলাইন সংখ্যা
deeser

এক একটা লেখা আলাদাভাবে খুলতে এখানে অথবা লেখাটির হেডিং-এ ক্লিক করুন

 

ghsam

অতিমারী আর লকডাউনের সুযোগকে পুরো কায়েমী স্বার্থে কাজে লাগাতে কেন্দ্রের মোদী সরকার নিজের কদাকার চেহারা যখন প্রতিনিয়ত উন্মোচিত করে চলছে, তখন বাংলায় বিজেপি কী করছে? ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ হল বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ।

অযোধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে রাম মন্দির নির্মাণের শিলপুজোর দিন বিজেপির উৎসবমুখর হওয়ার নামে হিন্দুত্বের উন্মাদনা সৃষ্টির কর্মসূচী ছিল দেশব্যাপী, এখানেও সমানতালে রাজ্য বিজেপি উদযাপনের উন্মত্ততা চালালো। পশ্চিমবাংলায় নেওয়া রামপূজন কর্মসূচীর পরিণামে কোথাও কোথাও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আগুন লাগার শঙ্কা ঘনীভূত হয়েছিল, যেমনটা এরাজ্যে বিগত বছরগুলোতে বিশেষ করে গঙ্গাপাড়ের জেলাগুলোতে কখনো রামনবমী কখনো বা অন্য কোনো উপলক্ষে বিজেপি লাগিয়ে দিতে পেরেছিল, এই করোনাসৃষ্ট জীবন-মরণ সংকটের পরিস্থিতির মধ্যেও হুগলির তেলেনিপাড়া অঞ্চলে সাম্প্রদায়িকতার আক্রমণ সংগঠিত করেছিল বিজেপি, সেখানে সশরীরে উপস্থিত প্রকাশ্যে প্ররোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে নবনির্বাচিত বিজেপি সাংসদ, ঠিক যেমন আমফান ত্রাণ বিলির ছুতোয় সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানোর ছক কষে এলাকা চষে ফেলার চেষ্টায় ছিলেন দলের বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের নয়া সাংসদ। এবারে অযোধ্যা শিলান্যাস পূজন উপলক্ষে অবশ্য তেমনটা হতে পারেনি। তবে বহুক্ষেত্রে প্রকাশ্যে আবারও হঙ্কার দেওয়া হয়েছে, মন্দির রাজনীতির কোনোরকম সমালোচনা বা বিরোধিতা বরদাস্ত করা হবে না। আর তার তাৎক্ষণিক প্রভাবে পরপর দুজন ছাত্র-ছাত্রীর ওপর বিজেপি ‘মব লিঞ্চিং’ করতে বাড়ি পর্যন্ত ধেয়ে যায়। ঘটনাস্থল কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে। একজন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র, বামমনস্ক; অন্যজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরতা, আধুনিক যুক্তিবাদী। এদের ‘অপরাধ’, অতিমারীর মোকাবিলায় জরুরি সব ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে চরম অব্যবস্থা চলতে থাকাকে কেন্দ্র করে মোদী সরকারের অবহেলা-গাফিলতি-অপদার্থতা-ব্যর্থতা নিয়ে যখন হাজারো প্রশ্ন উঠছে, তখন সেইসমস্ত প্রশ্ন সহ সরকারী আয়োজনে মন্দির নির্মাণের অবৈধতা আর গেরুয়া রাজনীতির রব তোলার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে পাল্টা সোচ্চার হন সামাজিক প্রচার মাধ্যমে। তাই উপরোক্ত দুই ছাত্র-ছাত্রীর ওপর চালানো হয় শারীরিক-মানসিক আক্রমণ। মদত যোগাতে বিজেপির খোদ রাজ্য সভাপতি বললেন, ‘হাসপাতাল কালচারটা বন্ধ করে মন্দির কালচারটা আসা উচিত।’ এটাও ঘটনা যে, করোনা মোকাবিলার প্রশ্নে ‘মোদী সরকার বাংলার জন্য অনেক কিছু করছে’ - রাজ্য বিজেপির এই অন্তঃসারশূন্য প্রচার যত ভোঁতা হচ্ছে ততই তারা ঐ জ্বলন্ত ইস্যু থেকে সরে যাচ্ছে, এপ্রশ্নে তাদের কোনো সহায়ক স্বেচ্ছাসেবী ভূমিকা নিতে ঝাঁপাতে দেখা যায়নি, যাচ্ছে না।

রাজ্য বিজেপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এবার আত্মসাৎ করতে ঝাঁপাতে শুরু করল। কবির প্রয়াণ দিবসে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ভারপ্রাপ্ত জাতীয় স্তরের নেতামশাইকে দিয়ে রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী মতাদর্শ ও বাংলার উত্থানে তাঁর অবদান বিষয়ে এক ভার্চুয়াল বার্তা শোনানো হয়েছে দলের নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে। এতেও দলের রাজ্য সভাপতি ঝাঁঝ তুলতে ফোড়ন দিয়েছেন, বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ভাবনার মধ্যে তাঁরা মেলবন্ধনের সূত্র পেয়েছেন! কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তিনি ঘোষণা রাখলেন এরাজ্যে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে তীব্র করা হবে। ক’মাস আগেই ছিল কবির জন্মদিবস, তখনও রাজ্য বিজেপির নেতা-মাথাদের মনে হয়নি ধরতে হবে কবির ভাবমূর্তিকে, সদ্য দিল্লীতে দলের জাতীয় ও রাজ্য নেতাদের বৈঠকের পরেই শোনা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী শক্তির মুখে রবীন্দ্র কথা, যে মানুষটি হিন্দুত্ববাদীদের আদি ভক্তির আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবাদের নিদর্শন নাৎসীবাদের বিরোধিতায় ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপনের অধিকারী। তাছাড়া দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে শ্যামাপ্রসাদ সম্প্রদায় অবস্থান নিয়েছিলেন মূলত নিষ্ক্রিয় থাকার, তাদের যা সক্রিয়তা ছিল তা কেবল সাম্প্রদায়িক বিভেদের প্রচারে, আর ক্ষেত্রবিশেষে ব্রিটিশ রাজশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে, তাদের পক্ষে ওকালতি করতে, স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে, আন্দোলনকে অন্তর্ঘাত করতে। বিপ্রতীপে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ প্রতাপের বিরোধিতায় দ্বিধাবোধ করেননি এমনকি মনিহার পরিত্যাগ করতে। রবীন্দ্রনাথের সাথে কোথায় মেলাবে বিজেপি তাদের হিন্দুত্ববাদী নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে, মেলানোর দুঃসাহস দেখাতে গেলে হাস্যকর প্রতিপন্ন হবে, কারণ ইতিহাসগতভাবে দুজনার ভাবধারার মধ্যে রয়েছে পুরোদস্তুর বৈপরীত্যের সংঘাত। ক’বছর আগেও বিজেপি এই বাংলায় হিন্দুত্বের সংস্কৃতির জায়গা তৈরি করতে অহরহ বিদ্বেষের মুখ ছোটাতো এই বলে যে, এখানে প্রবল প্রভাব রয়েছে ‘রসুন’ সংস্কৃতির। মানে, রবীন্দ্র-সুকান্ত-নজরুল সমন্বয় সংস্কৃতির। সামনে নির্বাচন। তাই এরাজ্যের বিজেপির আজকের নেতাদের গিলতে হচ্ছে তাদের পূর্বসূরীদের অনেক ছেটানো থুতু।

বিজেপির কোনও সাফাই গাওয়া দেখে ভুললে চলে না, ওদের হিন্দুত্বের আগ্রাসী ‘ভক্তিবাদ’ ভারতকে সবদিক থেকে করে দিচ্ছে বরবাদ।

ceecc

সিপিআই(এমএল)-এর কেন্দ্রীয় কমিটি ৬ আগস্ট একদিনের স্বল্পসময়ের বৈঠকে মিলিত হয়। সারা বিশ্বে যাঁরা কোভিড-১৯ ব্যাধিতে মারা গিয়েছেন, বেইরুটের ভয়াবহ বিস্ফোরণে যাঁরা নিহত হয়েছেন এবং ভারতে নিকৃষ্ট রূপে পরিকল্পিত ও নির্মমভাবে বলবৎ করা লকডাউনের জন্য এবং আমপান ঘূর্ণিঝড়ের জন্য পশ্চিম বাংলা ও উড়িষ্যায় এবং বন্যার কারণে আসাম ও বিহারে যে শতশত মানুষ মারা গেছেন – বৈঠকে এই সমস্ত মানুষের প্রতি শোক জ্ঞাপন করা হয়।

কলকাতায় ২০২০ সালের ১৪-১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর যে সমস্ত কমরেডকে আমরা হারিয়েছি, বৈঠকে তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন কমরেড সত্যনারায়ন সিং (সিপিআই, বিহার শাখার সম্পাদক), শ্যামল চক্রবর্তী (পশ্চিম বাংলায় সিটু ও সিপিআই(এম)-এর প্রবীণ নেতা), চন্দন সরকার, শান্তনু বক্সী, তরুণ প্রকাশ কুণ্ডু, প্রদীপ ব্যানার্জী (পশ্চিম বাংলা), বুদ্ধ মারিদানদাহিয়া (মহিশূর, কর্ণাটক), জীভা (শিবাগঙ্গি, তামিলনাড়ু), জয়সিং হাঁসে এবং পাটোর ফাংচো (কার্বি আংলং, আসাম), বিদ্যানন্দ শাহি, রাজকুমার, সুহাইল আখতার, গুড্ডু পাশোয়ান, কৃষ্ণ বিহারি সিং, তেতারি দেবী, সুখদেব রাম, ফকরে আলম (বিহার), কংগ্ৰেস যাদব, দিলীপ সিং (ঝাড়খণ্ড), চিত্তরঞ্জন সিং (উত্তরপ্রদেশ), গনান্থ পাত্র, মানা রাও (রায়গড়া, উড়িষ্যা), নরেন্দ্র কুমার, কেশব রাম (দিল্লী), এবং খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী ও সমাজ আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক হরি বাসুদেবন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (কলকাতা), ভি প্রসাদা রাও, ভি সম্বাশিভা রাও, পাণ্ডুরাঙ্গা রেড্ডি (অন্ধ্র প্রদেশ), থিয়েটার কর্মী ঊষা গাঙ্গুলি ও ইব্রাহিম আলকাজি, সমাজ আন্দোলনের কর্মী রায়া দেবনাথ (কলকাতা) এবং বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কমল লোহানি।

ভারতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় কেন্দ্রীয় কমিটি গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং পরিস্থিতির মোকাবিলায় চূড়ান্ত রূপে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং অধিকাংশ রাজ্য সরকারকে ধিক্কার জানায়। নমুনা পরীক্ষা, সংক্রমিতর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বার করা এবং চিকিৎসা – এই ত্রিমুখী কৌশলকে চালাতে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে প্রস্তুত ও নিপুণ করে তোলা তো হয়ইনি, বিপরীতে অধিকাংশ মানুষকেই নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করে নেওয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে আর বেসরকারী নমুনা পরীক্ষাগার, ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো পরিষেবার জন্য তাদের কাছ থেকে অত্যন্ত চড়া দাম আদায় করেছে।

বিভিন্ন রাজ্যে কমরেডরা পরিযায়ী শ্রমিক এবং লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত জনগণের মধ্যে ত্রাণ বিলি করা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি কমরেডদের অভিনন্দন জানিয়েছে। বিভিন্ন পার্টি কমিটি এবং সদস্য ও সমর্থকরা লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্ৰস্ত সমাজের বিভিন্ন অংশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় এবং লকডাউন পর্বে নানান নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী সংগঠিত করায়, কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁদেরও অভিনন্দন জানিয়েছে।

লকডাউন চলা এবং লকডাউনের কারণে স্বাভাবিক জীবনধারায় ছেদ ঘটার সুযোগ নিয়ে মোদী সরকার যে জনগণের ওপর তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং মতাদর্শগত এজেন্ডাকে চাপিয়ে দিচ্ছে, কেন্দ্রীয় কমিটি সরকারের সেই দুরভিসন্ধিমূলক অভিপ্রায়কে লক্ষ্য করেছে। ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজের নামে সরকার তার আক্রমণাত্মক বেসরকারীকরণ/কর্পোরেটকরণ এবং বিদেশী পুঁজির কাছে কিছু ক্ষেত্র খুলে দেওয়ার অভিযানে গতি বাড়িয়েছে (কয়লা, রেল, প্রতিরক্ষা এবং ব্যাঙ্কের মতো ক্ষেত্রকে খুলে দেওয়ার বিশেষ নিশানা বানানো হচ্ছে), কৃষির উদারিকরণ ঘটানো এবং কৃষি বাণিজ্যকে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে কৃষি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে, শ্রমিকদের অধিকারকে দুর্বল করে তুলে বৃহৎ পুঁজির নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করতে শ্রম আইনগুলোকে মুলতুবি করা এবং নতুন করে রচনা করা হচ্ছে, পরিবেশ সুরক্ষার বন্দোবস্তগুলোকে লঘু করে তোলা এবং পরিত্যাগ করা হচ্ছে। এছাড়া, সরকার অতিসম্প্রতি নয়া শিক্ষা নীতি ২০২০ প্রকাশ করেছে যা শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপক হারে বহিষ্কার, শিক্ষার বাণিজ্যকরণ, শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রীভবন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে গৈরিকিকরণ ও জাত প্রথাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার নীল নক্সা মাত্র।

কর্মনীতির ক্ষেত্রে মোদী সরকারের এই আগ্ৰাসী অভিযানের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ চলছে এবং প্রতিরোধের বিকাশ ঘটছে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সর্বশক্তি দিয়ে এই প্রতিরোধকে তীব্রতর করে তোলার আহ্বান সমস্ত কমিটি ও কমরেডের কাছে রেখেছে।

আমাদের সম্পদসমূহের ওপর এই অর্থনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি মোদী সরকার জন আন্দোলনের বিভিন্ন ধারার বিশিষ্ট কর্মী ও সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে, বিশেষভাবে সিএএ-বিরোধী অভ্যুত্থান, প্রগতিবাদী ছাত্র আন্দোলন এবং মানবাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে দমনমূলক অভিযান ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে তীব্রতর করে তুলেছে। ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় আরও একজনকে গ্ৰেপ্তার করায় গ্ৰেপ্তার হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে বারো, আর দিল্লীর সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাকে পরিণত করা হয়েছে শাহীন বাগ প্রতিবাদ এবং “ভারত বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও” আন্দোলনের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্রের হাতিয়ারে। বেশ কিছু আন্দোলনের কর্মীকে ইতিমধ্যেই গ্ৰেপ্তার করা হয়েছে (যাদের অন্যতম হলেন পিঁজরা তোড় আন্দোলনের কর্মী নাতাশা নারওয়াল এবং দেবাঙ্গনা কলিতা, ‘ঘৃণার বিরুদ্ধে ঐক্য’ আন্দোলনের কর্মী খলিদ সৈফি)। এবং আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং চার্জশিটে নাম জড়ানো হচ্ছে (যাদের মধ্যে রয়েছেন এআইএসএ-র দিল্লী সভাপতি কাওয়ালপ্রীত কাউর, সিপিআই(এমএল) নেত্রী কবিতা কৃষ্ণান, জেএনইউ-র প্রাক্তন নেতা উমর খলিদ, স্বরাজ অভিযান নেতা যোগেন্দ্র যাদব, শান্তি ও ন্যায়বিচারের প্রবক্তা হর্ষ মান্দার, দিল্লীর সুপণ্ডিত ব্যক্তি অপূর্বানন্দ এবং সমাজ আন্দোলনের আরও কিছু কর্মী)। সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ডাইনি খোঁজ চলছে বিজেপি শাসিত বেশ কিছু রাজ্যে, যার দুটো বড় কেন্দ্র রূপে দেখা দিয়েছে আসাম ও উত্তরপ্রদেশ (গোরখপুরের সুপরিচিত শিশু বিশেষজ্ঞ ডঃ কাফিল খান মথুরার জেলে পচছেন,  অখিল গগৈ ও তাঁর সহ আন্দোলনকারীরা আসামের জেলে বন্দী হয়ে রয়েছেন আর সিপিআই(এমএল) নেতা কমরেড বিবেক দাসের ফোনটা পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে রেখেছে)। কেন্দ্রীয় কমিটি ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় সমস্ত অভিযুক্তদের এবং সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের অবিলম্বে ও নিঃশর্তে মুক্তির দাবি জানিয়েছে।

যে জম্মু ও কাশ্মীরে গণ বন্দিত্ব ও দমন এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখাটা এক বছর ধরে চলছে, সেখানকার পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যালোচনা করে; সেখানে সুপরিকল্পিতভাবে আইনের পরিবর্তন ঘটিয়ে কাশ্মীরের জনগণের অধিকার হরণ করা হচ্ছে এবং বাইরে থেকে আসা মানুষদের আরও বেশি অধিকার এবং সম্পদ ও কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হচ্ছে যার লক্ষ্য পূর্বতন এই রাজ্যে জনসংখ্যার ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটানো। এবং মতাদর্শগত তাৎপর্যে পরিপূর্ণ এক পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে সরকার আগে যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল সেখানে রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জন্য অপারেশন কাশ্মীরের প্রথম বছর পূর্তিকেই বেছে নিল। এই পদক্ষেপ স্পষ্টতই ছিল সংবিধান এবং তার ন্যায়, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সৌভ্রাতৃত্বের ভাবধারা ও প্রতিশ্রুতির ওপর এক ঔদ্ধত্যপূর্ণ আক্রমণ। এবং এরই সাথে ৫ আগস্ট ও ১৫ আগস্টকে একাকার করে তুলে অযোধ্যা থেকে মোদীর ভাষণ ভারতকে ফ্যাসিবাদী হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার আরএসএস-বিজেপির চক্রান্তকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি দ্ব্যর্থহীন করে তুলল।

৫ আগস্ট ও ১৫ আগস্টকে পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত করার এই দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্রকে কেন্দ্রীয় কমিটি দৃঢ়ভাবে খণ্ডন করে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের গোটা পর্যায়ে বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি বিতর্ক বা সংঘাত কখনই সামনে আসেনি। অযোধ্যা ও তার সন্নিহিত অঞ্চল ১৮৫৭-র বিদ্রোহের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এবং গোটা অঞ্চলেই ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ১৮৫৭-র ভাবধারা অনুরণিত হত। এমনকি স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সম্প্রদায় ভিত্তিক বিভাজন যখন তীব্র হয়ে উঠল, তখনও অযোধ্যা কোনো বিবাদের বিষয় হয়ে দেখা দেয়নি। ১৯৪৯ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বরের রাতে মসজিদের ভিতর চুপিসারে রামলালার মূর্তি ঢোকানোর পরই এই বিতর্ক পুনরায় মাথাচাড়া দেয় (গান্ধী হত্যার অভিযোগে গডসেকে ফাঁসি দেওয়া এবং সংবিধান ও জাতীয় পতাকাকে মেনে চলা, রাজনীতি থেকে দূরে থাকা এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আরএসএস-এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কিছু পরই মসজিদে মূর্তি ঢোকানোর ঘটনা ঘটে)। এমনকি গত বছর ৯ নভেম্বর অযোধ্যায় জমির মালিকানা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়েও চুপিসারে মূর্তি ঢোকানোর ঘটনাকে মসজিদের অপবিত্রকরণ রূপেই অভিহিত করা হয়েছে।

১৫ আগস্টের পথে গৃহীত হয় সংবিধান, এবং সংবিধান আমাদের এক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি ও কাঠামো দেয়। এর বিপরীতে ৫ আগস্টের উৎস রয়েছে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের মসজিদ ধ্বংসের মধ্যে, যে ধ্বংস ছিল সংবিধানের ওপরই এক প্রবল আঘাত। আমাদের তাই জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্খার সবচেয়ে শক্তিশালী আত্মঘোষণা রূপে ৯ আগস্টের ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে এবং স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক পরিণতি রূপে ১৫ আগস্টকে আগস্টের প্রকৃত উত্তরাধিকার রূপে তুলে ধরতে হবে। আজ যখন সংবিধান, গণতন্ত্র এবং ভারতের জাতীয় স্বার্থের ওপর মোদী সরকারের আক্রমণ অব্যাহতভাবে চলছে, তার বিপরীতে “সংবিধান বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও, ভারত বাঁচাও”-এর আহ্বানকেই আজ আগস্টের প্রকৃত উত্তরাধিকার করে তুলতে হবে। আমাদের সামনের দিনের কর্মসূচীগুলোতে বুনিয়াদি ইস্যুগুলোকে ধরে জনগণের শক্তিশালী সমাবেশ ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের এই আলোচনাধারার প্রত্যাখানে এক যোগ্য জবাব দিতে হবে। জনসমাবেশের এই কর্মসূচীগুলো হল – ৯ আগস্ট কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নসমূহ এবং এআইকেএসসিসি-র প্রতিবাদ, আইসার প্রতিষ্ঠা দিবস, ১৩ আগস্ট ঋণ মুক্তি দিবস রূপে উদযাপন (যাতে জোর থাকবে এমএফআই-এর কাছে ঋণগ্ৰস্ত নারী এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণগ্ৰস্ত ও ইএমআই শোধ করা মানুষের সমাবেশের ওপর) এবং ১৫ আগস্টকে সংবিধান বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও, ভারত বাঁচাও দিবস রূপে উদযাপন।

কেন্দ্রীয় কমিটি বিহারের পরিস্থিতিও পর্যালোচনা করে, কোভিড পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হওয়া সত্ত্বেও যে রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচন কমিশন এবং এনডিএ বদ্ধ পরিকর। আমরা এবং বিহারের অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছি যে, নির্বাচনের অনুষ্ঠান যেন ব্যাপক হারে কোভিড সংক্রমণের ব্যাপার না হয়ে ওঠে। জনগণের স্বাস্থ্য এবং ভোটদান প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্ৰহণের ব্যাপারে কোনো ধরনের আপস করা চলবে না – এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টির সাথে-সাথে আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতিকে কিন্তু বাড়িয়ে তুলতে হবে। আরজেডি এবং অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তৃণমূল স্তরে আমাদের প্রস্তুতিকে কোনোভাবেই দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না। বেছে নেওয়া নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলোতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে এবং তাতে লাগাতার গুরুত্ব দিয়ে চলতে হবে বুথ স্তরে। কেন্দ্রীয় কমিটি পশ্চিমবাংলা, আসাম ও তামিলনাড়ুর পরিস্থিতিও বিবেচনা করে, যে রাজ্যগুলোতে আগামী বছরের প্রথম দিকে নির্বাচন হওয়ার কথা। পশ্চিমবাংলায় সিপিআই(এম) ও কংগ্ৰেস ২০১৬ সালের সমঝোতার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর জন্য প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে, এবং তা সম্ভবত আগের তুলনায় আরও খোলাখুলি ও আনুষ্ঠানিকভাবে, আর তাই যথার্থ বাম ঐক্যের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আসামে বিভিন্ন বিজেপি-বিরোধী উদ্যোগ চলছে এবং নির্বাচনের আগে সমস্ত বিরোধী দলকে অন্তর্ভুক্ত করে ঐক্য রূপ পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একাধিক জোট গড়ে উঠতে পারে, এমন পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, আমাদের সম্ভাবনাময় আসনগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং নিজেদের স্বাধীন প্রস্তুতির ওপর জোর দিতে হবে। যখন বিজেপি-বিরোধী মনোভাব বেড়ে চলেছে বলে দেখা যাচ্ছে এবং বেশ কিছু ইস্যুকে ধরে জনগণ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তখন নিজেদের সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগই নির্ধারক গুরুত্ব বহন করবে, এবং তা পার্টি এবং বড়-বড় গণ সংগঠন উভয় পরিপ্রেক্ষিতেই। একই কথা প্রযোজ্য কার্বি আংলং-এর ক্ষেত্রেও। তামিলনাড়ুতে গণ সক্রিয়তা এবং সংগঠনের সার্বিক গতিময়তার এক পর্যায় চলছে। এই প্রক্রিয়াটায় আমাদের আরও গতি সঞ্চার করতে এবং তাকে প্রণালীবদ্ধ করে তুলতে হবে, আমাদের নির্বাচনী পরিকল্পনার সঙ্গে তাকে সংযুক্ত করতে হবে এবং এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

লকডাউন চলা সত্ত্বেও আমাদের বিভিন্ন স্তরের পার্টি কমিটিগুলো এবং অধিকাংশ মুখপত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করে চলেছে এবং যেখানে সম্ভব সেখানে শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়েও বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তামিলনাড়ুর কমরেডরা একটা পার্টি ক্লাস সংগঠিত করেছেন এবং বেশকিছু ভাষাতেই ফেসবুক মাধ্যমে কর্মসূচীর সরাসরি সম্প্রচারও ঘটছে। এই ব্যাপারে রাজ্য কমিটিগুলোর সক্রিয়তা যথেষ্ট মন্থর এবং তাদের দ্রুতই এই ব্যাপারে পারদর্শী হয়ে উঠতে হবে। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক দপ্তরের নির্দেশিকা অনুসারে আগস্ট মাসের মধ্যেই সদস্যপদ নবীকরণের কাজ শেষ করতে হবে এবং চূড়ান্ত তালিকা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দিতে হবে। যে সমস্ত পার্টি কমিটির সময়কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত করার সময় হয়ে গিয়েছিল এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে তা করা যায়নি, সেগুলোর কার্যকালের মেয়াদ সম্প্রসারিত করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরই সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত করতে হবে। পার্টি ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাওয়া এবং প্রতিবাদ কর্মসূচীগুলোতে সাড়া দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের মাস্ক পরা, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিয়মিতভাবে সাবান ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো কোভিড-১৯ প্রতিহত করার অত্যাবশ্যকীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলোকে মেনে চলতে হবে। ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের রেখাচিত্র ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, তরুণ-তরুণীরাও সংক্রমিত হচ্ছেন এবং আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে শুধু নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলেই হবে না, অন্যদের নিরাপত্তায়ও গুরুত্ব দিতে হবে। সমষ্টিগত নিরাপত্তাই এখন সময়ের দাবি এবং এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা না থাকায় এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাও একরকম অমিল হওয়ায়, নিবারণই নিরাময়ের সবচেয়ে ভালো পন্থা হয়ে দেখা দিয়েছে।

saaceaar

প্রায় ২৮ বছর আগে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া বাবরি মসজিদের জমিতে শীর্ষ আদালতের অনুমোদনে ৫ আগস্ট ২০২০ রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন বা ভূমি-পূজনের যে অনুষ্ঠান সংঘটিত হল তা বর্তমান ভয়াবহ মহামারী তথা ২৫ মার্চ থেকে চলা দীর্ঘ লকডাউনের মধ্যে আরএসএস-বিজেপির সর্বোচ্চ নির্ধারক রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত ঘোষণা। জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদকে বিলুপ্তকরণের সাথে রাজ্যসত্তা বিলুপ্ত করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভাজনের (অ)-সাংবিধানিক অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকির দিনটিকেই অযোধ্যার অনুষ্ঠানের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া, এর ঘোর রাজনৈতিক প্রতীককে আরো জোরালো করে তুলেছে।

বিজেপি দাবি করে যে, ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ও রাম মন্দির নির্মাণ তাদের ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে ছিল এবং মোদি সরকার সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছে মাত্র। এটি সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনী জয়ের একটি নির্লজ্জ ব্যাখ্যা। বিজেপি তার নির্বাচনী ইস্তেহারের আশ্রয় নিতে পারে কিন্তু তারা সংবিধানের ভিত্তিতে শপথ গ্রহণ করেছে। কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে আলোচনা ব্যতিরেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করা একটি সম্পূর্ণ সংবিধান-বিরোধী কাজ। অনুরূপে মন্দিরের ভিত্তি স্থাপনে মোদির অংশগ্রহণ সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার মর্মবস্তুকে খারিজ করা যা রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে দূরে থাকতে বলে।

সঙ্ঘ-বিজেপি প্রতিষ্ঠানের হিন্দুরাষ্ট্র প্রকল্পের এতাবৎ কালের সুস্পষ্টতম ও সরবতম ঘোষণা হল মোদির অযোধ্যা বক্তৃতা। তিনি রামকে ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সর্বোৎকৃষ্ট প্রতীক হিসেবে এবং অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তি স্থাপনকে বহু শতাব্দীর প্রতীক্ষার পরিসমাপ্তি হিসেবে তুলে ধরেন। ৫ আগস্টকে ১৫ আগস্টের সঙ্গে একই বন্ধনীতে রেখে অযোধ্যার রাম মন্দিরকে কেবল রামের ভক্তদের ধার্মিক প্রকল্প হিসেবে দেখানোর বদলে একটি জাতীয় প্রকল্প হিসেবে দেখাতে চান। হিন্দু সত্ত্বার সঙ্গে ভারতীয় জাতি সত্ত্বার একিকরণ সামগ্রিক হিন্দু জাতিয়তাবাদ বা হিন্দুত্ব তত্ত্বের মূল ভিত্তি এবং মোদি হিন্দু রাষ্ট্র শব্দটি ব্যবহার না করে হিন্দুত্ব পরিকাঠামোকে বিস্তারের জন্য অযোধ্যাকে নির্দিষ্টভাবে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করলেন।

৫ আগস্টকে কোনোভাবেই ১৫ আগস্টের সঙ্গে এক বন্ধনীতে রাখা যায় না। ১৫ আগস্টের গতিপথ ও তাৎপর্যের সঙ্গে এটি সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে রয়েছে। ১৫ আগস্টের পিছনে ছিল স্বাধীনতার জন্য ভারতের জাতিয় সংগ্রাম, এবং সেই লড়াইয়ের কর্মসূচীতে রামমন্দির কখনো কোনো বিষয় ছিল না। অযোধ্যা-ফৈজাবাদ এবং আওধের সমস্ত অঞ্চল ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালের সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। হিন্দু-মুসলমান ঐক্য এবং ব্রির্টিশ উপনিবেশবাদের খপ্পর থেকে মুক্তির আবেগ সমগ্র অঞ্চলের জনতার চেতনায় প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ দশকেও, যখন সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিভৎসা মাথা তুলেছে, রাম মন্দিরের কোনো গুরুত্ব ছিল না।

কেবলমাত্র ২২ ডিসেম্বর ১৯৪৯-এর রাতে মসজিদের অভ্যন্তরে ধোঁকাবাজি করে মূর্তি স্থাপন করে মসজিদটিকে বিতর্কিত কাঠামোয় পরিণত করা হয়, গান্ধিজিকে হত্যার কারণে নিষিদ্ধ হওয়া আরএসএস-এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তখন সবেমাত্র উঠেছে। আরএসএস মুচলেকা দিয়ে জানায় যে সংবিধান ও তেরঙ্গার প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে এবং নিছক সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করবে। এই মুচলেকার ভিত্তিতে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয় ১৯৪৯ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে। গান্ধিজিকে হত্যার জন্য গডসের ফাঁসি হয়েছে নভেম্বরে। সেটি এমন এক সন্ধিক্ষণ যখন আরএসএস ও হিন্দুত্বের অন্যান্য শক্তিগুলি অত্যন্ত নিন্দিত ও কোণঠাসা। এটিও লক্ষ্যণীয় যে, ফৈজাবাদের তৎকালিন জেলা শাসক কেকে নায়ার, যিনি স্পষ্ট নির্দেশ সত্বেও মূর্তি অপসারণ করতে অস্বীকার করেন ও পরবর্তিতে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য অপসারিত হন, জনসঙ্ঘের প্রার্থী হিশেবে বাহারাইচ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে বিজেপি যখন আবার নিম্নাভিমুখি গতিপথে তখন বিষয়টিকে আবার পুনর্জীবিত করে তোলা হল।

রাম মন্দির নির্মাণ অবশ্য এখন শীর্ষ আদালত দ্বারা অনুমোদিত। যদিও এটি একটি কৌতুকের বিষয় যে ৯ নভেম্বর, ২০১৯-এ শীর্ষ আদালতের যে রায় বিতর্কিত জমির মালিকানা রাম মন্দির ট্রাস্টকে সমর্পণ করেছে সেই রায় ১৯৪৯-এর মূর্তি স্থাপনকে মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার দরুন মসজিদের অপবিত্রকরণ বলে অভহিত করেছে এবং ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২-এর বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে আইন-শাসনের আতঙ্কজনক অবমাননা বলে অভিহিত করেছে। অতীতে ১৯৯৪ সালে শীর্ষ আদালত বাবরি মসজিদ ধ্বংস করাকে জাতীয় লজ্জা বলে অভিহিত করেছিল। এটি ভাববার বিষয় যে, ২২-২৩ ডিসেম্বর ১৯৪৯ ও ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২-এর অপরাধ ব্যতিরেকে শীর্ষ আদালত কখনো জমির আইনি সত্ব মন্দির ট্রাস্টকে অর্পণ করত কিনা?

মোদি সরকারের আক্রমণাত্মক বেসরকারীকরণ কর্মসূচী ও ভারতীয় কৃষির উপর কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ জারি করার অর্ডিনান্সের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও কৃষকদের ৯ আগস্ট ২০২০তে ‘ভারত বাঁচাও’ পতাকা হাতে রাস্তায় নামা অবশ্যই আশা জাগাচ্ছে। ভারতের আগস্ট মাস ৯ আগস্ট ১৯৪২-এর ভারত ছাড় আন্দোলন ও ১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এর রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আরএসএস-বিজেপি পরিবারের অন্দরের চক্রের মানুষজন ব্যতিরেকে ৫ আগস্টকে সকলেই সংবিধানের বুনিয়াদী মর্মবস্তুকে লঙ্ঘন করার মোদি সরকারের নিন্দনীয় কাজ হিসেবে দেখবে। আগস্ট ৯ ও আগস্ট ১৫ ভারতের জনগণকে চিরকাল ভারতকে রক্ষা করতে ও ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি ও কাঠামোকে রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

(এমএল আপডেট সম্পাদকীয়, ১১-১৭ আগস্ট ২০২০)  

comnscass

সিপিআই(এম), সিপিআই, সিপিআই(এমএল), আরএসপি ও সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লক – এই পাঁচ বাম দল আমাদের সংবিধানকে রক্ষার এবং স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করার জন্য স্বাধীনতা দিবসে শপথ নেওয়ার আহ্বান জনগণের কাছে রেখেছে।

কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রাদুর্ভাব কালে এবং লকডাউন পর্বে একনিষ্ঠভাবে অতিমারীর মোকাবিলা এবং জনগণের সুরাহা করার পরিবর্তে আরএসএস-চালিত বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ধারায় ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যমূলক নীতিগুলোর বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। এরই সাথে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে শক্তিশালী করে তোলা এবং সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে আক্রমণের নিশানা বানানোও হচ্ছে। সংসদ, বিচারবিভাগ, নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, ইডি এমন প্রতিটি সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের ওপর আক্রমণ হানা হচ্ছে, তাদের স্বাধীনতাকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবিধানের সুরক্ষায় তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গণতান্ত্রিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতার ওপর নামিয়ে আনা হয়েছে তীব্র হামলা এবং সরকার ও তার কর্মনীতির প্রতি যে কোনো বিরোধিতাকে ‘দেশদ্রোহ’ বলে ছাপ মেরে জনগণ, সমাজ আন্দোলনের কর্মী এবং বুদ্ধিজীবীদের ইউএপিএ, দেশদ্রোহ ইত্যাদির মতো নিপীড়ক আইনে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আমাদের সংবিধানের এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য যুক্তরাষ্ট্রীয়তাকে খারিজ করে কেন্দ্রীয় সরকার তার হাতে সমস্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে।

পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পর্যবসিত হওয়ায় সংবিধানের রক্ষায় এবং এই সংবিধান প্রদত্ত সুনিশ্চিত অধিকারগুলির সুরক্ষায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং এইভাবে ভারতের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করতে হবে।

rqqeaha

কেন্দ্রীয় সরকার নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অধস্তন শরিকের বন্ধনে আবদ্ধ করায় এর বিরুদ্ধে ১ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ সংগঠিত করার আহ্বান বাম দলগুলো জনগণের কাছে রেখেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার মার্কিনের ফরমানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করায় ভারত বিশ্বে মার্কিন আধিপত্য শক্তিশালী করার মার্কিনি রণনৈতিক পরিকল্পনায় এক অধস্তন শরিকে পরিণত হয়েছে। ভারতকে স্বাধীন বিদেশ নীতি অনুসরণ করতে হবে এবং বিদেশ নীতির যে ধারায় সে চালিত করছে তাকে সংশোধন করতে হবে। ভারতের বিদেশ নীতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা মার্কিন-ইজরায়েল জোটের নীতির অধীন করে তোলাটা ভারতের সার্বভৌমত্বের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে এবং তা আত্মনির্ভরতাকেও খারিজ করছে।

saresar

৫ আগস্ট ছিল কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সরোজ দত্তের শহীদ দিবস। প্রত্যেক বছর এই দিনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচী পালন করা হয়, তাঁর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষের মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অঙ্গীকার করা হয়।

কিন্তু এবারের ৫ আগস্টের দিনটি ছিল নজিরবিহীন অতিমারী ও সম্পূর্ণ লকডাউন কবলিত। তার ফলে ঐ দিনটি পালনের কর্মসূচী সংগঠিত করার পরিস্থিতি ছিল বিশেষ প্রতিকূল। তাই রাজ্য পার্টি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শহীদ সরোজ দত্তের স্মরণ কর্মসূচী পালন করা হয় তার আগের দিন ৪ আগস্ট। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের ৪-৫ তারিখের মাঝরাতে তদানীন্তন কংগ্রেসের সিদ্ধার্থ রায়ের পুলিশ সরোজ দত্তকে গ্রেপ্তার করে ভোর হওয়ার আগেই নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। তারপর থেকে পশ্চিমবাংলার রাজপাটে বারবার শাসকের বদল হয়েছে, কিন্তু সরোজ দত্তের হত্যাকান্ডকে আজ পর্যন্ত কোনও সরকার সরকারীভাবে স্বীকার করেনি। তাঁকে সিদ্ধার্থ রায়ের জমানায় উল্লেখ করা হোত ‘নিখোঁজ’ বলে। তারপরে পালা বদলের পরে বামফ্রন্ট আমলে বলা হোত, গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে সরোজ দত্তের ফাইলটাই পাওয়া যায়নি। আর, টিএমসি সরকার এব্যাপারে নীরবতার কৌশলই নিয়ে চলেছে। অবশ্য, বিগত বামফ্রন্ট সরকার কলকাতার কার্জন পার্কে সরোজ দত্তের আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠার সিপিআই(এমএল) লিবারেশানের দাবি মেনে নেয়। তারপর থেকে দু’দশকেরও বেশি সময় যাবত প্রতি বছর ৫ আগস্ট এমনকি ঝড়বৃষ্টির পরোয়া না করে ঐ মূর্তিস্থলের সামনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের কর্মসূচী পালন হয়ে এসেছে। কেবল এবারই অতিমারী ও লকডাউনের চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে দিনটি পালনের ছন্দ বদল করে তার আগেরদিন নেওয়া হয় শহীদ স্মরণ কর্মসূচী। ঐদিন পার্টির রাজ্য সম্পাদক সহ রাজ্য কমিটির উপস্থিত সদস্যবৃন্দ, পার্টি অফিস ও পত্রিকা বিভাগের কর্মীরা তথা কলকাতা জেলার কমরেডরা কার্জন পার্কে সরোজ দত্তের আবক্ষ মূর্তিতে এবং পার্টির রাজ্য অফিস চত্বরে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া শহীদ স্মরণ কর্মসূচী পালন করা হয় জেলায় জেলায়। ধ্বনি-প্রতিধ্বনি ওঠে শহীদ কমরেড সরোজ দত্ত লাল সেলাম, শহীদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ।

dasekash

১৩ আগস্ট ২০২০ বরানগর, সিঁথি, কাশীপুর গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মরণে প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করা হয়। এই কর্মসূচীতে এআইএসএ, এআইপিডাব্লিউএ সহ পার্টির কেন্দ্রীয়, রাজ্য, জেলা ও স্থানীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন।

কাশীপুর বরানগরে গণহত্যার নেপথ্যে যে কাহিনী তা হল, শুধুমাত্র সিপিআই(এমএল) করার কারণে রাষ্ট্র ও তার মদতপুষ্ট বাহিনী কলকাতা মহানগর সংলগ্ন কাশীপুর ও বরানগরে ১২-১৩ আগস্ট ১৯৭১ দু’দিনে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী ও সমর্থককে হত্যা করেছিল। আমাদের দেশ বহু গণহত্যার সাক্ষী হয়ে আছে। কিন্তু ব্যাতিক্রমী ঘটনা হল রাজ্যের রাজধানীর নিকটে এতো বড় নৃশংস রাজনৈতিক গণহত্যার ইতিহাস এর আগে বা পরে খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র নকশালপন্থী হিসাবে নয় সিপিআই(এমএল) করার জন্যই তাঁদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। সিপিআই(এমএল)-কে দেশ থেকে মুছে ফেলার জন্য রাষ্ট্র কাশীপুর ও বরানগরকে পরীক্ষাগার বানিয়েছিল। কিন্তু শাসকেরা সেই কাজে সফল হয়নি। পার্টি নতুন কলেবরে আবার ধীরে ধীরে উঠে আসে।

শহীদদের উদ্দেশ্যে নীরবতা পালনের পর, রাজ্য সম্পাদক তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন সেই দিন স্বৈরাচারী শাসকেরা গণহত্যা করেছিল, আজকে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদী শাসকেরা দিল্লির মসনদে অধিষ্ঠিত, এদের পরাজিত করতে হবে। রাজ্য সম্পাদকের ভাষণ শেষে শ্লোগানের মাধ্যমে শহীদদের লাল সেলাম জানিয়ে এবং গণহত্যার বিচারের দাবি করে কর্মসূচী সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

balgad

সিপিআই(এমএল)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সারা ভারত কিষাণ মহাসভার অসম ইউনিটের আহ্বায়ক কমরেড বলিন্দ্র শইকিয়াকে গতকাল অসম পুলিশ তার ডিব্রুগড়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের একজন সামনের সারির নেতা কমরেড বলিন্দ্র রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে জমি হারানো কৃষকদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য চলমান বেশ কয়েকটি লড়াইয়েরও নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

গতকাল সকালে বলিন্দ্রের বাড়িতে বিজেপি-সমর্থিত একদল লোক চড়াও হয় এবং মারধরের লক্ষ্যে বলিন্দ্রকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বলে। কমরেড বলিন্দ্রর সমর্থনে কয়েকজন স্থানীয় মানুষ ও পার্টি কর্মী সেখানে পৌঁছে যাওয়ার পরে সেই জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। থানায় এই চড়াওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলা ও হামলাকারী এই জনতা ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে পুলিশ বলিন্দ্রকেই গ্রেপ্তার করে।

এই প্রসঙ্গে কিছুদিন আগের আরেকটি ঘটনাও মনে রাখা দরকার। কয়েক সপ্তাহ আগে পুলিশ বিশ্বনাথ জেলার চা বাগানের শ্রমিক ও দরিদ্র মানুষের দুর্দশার খবর জানিয়ে করা একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য সিপিআই(এমএল) নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক সদস্য কমরেড বিবেক দাসকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁর ফোনটিও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে।

এইসব ধরপাকড়ের স্পষ্ট একটি ধারা আছে। অসমের বিজেপি সরকার অখিল গগৈ ও বিট্টু সোনোয়াল থেকে সিপিআই(এমএল) নেতা বলিন্দ্র শইকিয়া ও বিবেক দাস পর্যন্ত যাঁরাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলন বা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন, বেছে বেছে তাঁদেরই নিশানা করছে।

আমরা অসম সরকারের কাছে মিথ্যা মামলায় অখিল গগৈ ও বলিন্দ্র শইকিয়ার মতো কৃষক আন্দোলনের নেতাদের গ্রেপ্তারি বন্ধ করার দাবি করছি। আমরা কমরেড বলিন্দ্র শইকিয়ার অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে বিজেপির সেই সমস্ত গুন্ডাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি, যারা গতকাল কমরেড বলিন্দ্রের বাসভবনকে ঘিরে রেখে ভিড় হিংসায় খুনের চেষ্টা চালানো দলবলের মতো আচরণ করেছিল। কমরেড বলিন্দ্রের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১৪ আগস্ট সিপিআই(এমএল) দেশ জুড়ে বিক্ষোভ সংগঠিত করবে।

আসুন, গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার পক্ষে লড়াই করা সব মানুষ এই স্বাধীনতা দিবসে এগিয়ে এসে সম্মিলিত ভাবে আওয়াজ তুলি – গ্রেফতার করে রাখা গণআন্দোলনর সমস্ত কর্মীকে মুক্তি দিতে হবে, তাদেরকে তন্নতন্ন করে খোঁজ ও শিকার অভিযান চলছে তা বন্ধ করতে হবে।

- কেন্দ্রীয় কমিটি, সিপিআই(এমএল)  

deepol

সরকারী কাজে ব্রাহ্মণ্যবাদ কিভাবে প্রভাব রেখে যেতে পারে তার সাম্প্রতিক প্রতিফলন সম্ভবত ধরা পড়ল সাঁওতালি মাধ্যমে এবছর উচ্চ-মাধ্যমিক উত্তীর্ণ আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি এরাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মনোভাবে! এরা ছিলেন এই মাধ্যমের প্রথম ব্যাচ। অন্য মাধ্যমের উত্তীর্ণরা যখন রেজাল্ট হাতে কলেজে ভর্তির অনলাইন ফর্ম পূরণ করছেন, তখন আদিবাসী ছেলেমেয়েগুলো জানেনই না কোন কলেজে ভর্তি হবেন! শেষ পর্যন্ত বিশ্ব আদিবাসী দিবসের ২ দিন আগে উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী টুইট করে জানালেন, ভর্তির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে টুইটের বক্তব্য এটাও স্পষ্ট করছে যে শিক্ষামন্ত্রী নিজেও তখনও জানেন না, কোন কোন কলেজে ভর্তি সম্ভব!

এমনটা নয় যে প্রথম ব্যাচ বলে এই অব্যবস্থা।

মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকেও এই ছাত্র/ছাত্রীরা উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক, সর্বক্ষণের শিক্ষক ইত্যাদি যথাযথ শিক্ষা পরিকাঠামো ছাড়াই পড়াশোনা করেছেন। বছরের পর বছর সরকার ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি! এবার অব্যবস্থা পৌঁছল স্নাতক স্তরেও।

৯ আগস্ট, বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালিত হল আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের উদ্যোগে, হুগলি জেলার পোলবা ব্লকের বরুনানপাড়ায়; সঙ্গত নানান ক্ষোভের আবহে। করোনা আবহের মধ্যেও বলাগড়ের কামালপুর, বড়াল কিম্বা ধনেখালির যদুপুর, জয়হরিপুর, খোড়োডাঙ্গা; পাণ্ডুয়ার ধামাসিন, ইলামপুর, ভোটগ্রাম তোড়গ্রাম; পোলবার মহেশ্বরবাটী, গোয়ালজোড়, দনার পাড়া, ইত্যাদি নানা এলাকা থেকে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন তপন মুর্মু, সিদ্ধেশ্বর মাণ্ডি, বুধিলাল সরেনদের মতো আদিবাসী সামাজিক নেতৃবৃন্দ, মাঝিবাবারা। সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হল মঞ্চের জেলা সহসভাপতি বিশ্বনাথ সরেনের উদাত্ত কন্ঠের দরদী সংগীতে, যার প্রতিটি শব্দে ছিল আদিবাসী গৌরবের জয়ধ্বনি। যদুপুরের সুখী সরেনের টিম পরিবেশন করলেন সাঁওতালি নৃত্য, যা তাঁদের দৈনন্দিন জীবন চর্চাও। জেলা সহ-সভাপতি ময়না কিস্কুর বক্তব্যে প্রতিফলিত হল পাণ্ডুয়ার মাটিতে জননেতা সিধু-কানহোর মূর্তির উপর হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, উদ্বেগ। মঞ্চের জেলা সম্পাদক পাগান মুর্মু, সহ-সম্পাদক শিবলাল বাস্কেরা তাদের ভাষণে তুলে ধরলেন আজকের সময়ে আদিবাসী সমাজের জীবন সংগ্রামের কথা। সবশেষে জেলা নেত্রী সুমিতা মুর্মু, সরস্বতী বাস্কেদের গান ও অংশগ্রহণকারী আদিবাসী মহিলাদের সমবেত নৃত্যের মধ্য দিয়ে শেষ হল অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব।

polll

 

দ্বিতীয় পর্বে ছিল বঞ্চনা, অবহেলার বিরুদ্ধে সমবেত শপথগ্রহণ ও গণমিছিল। গুড়াপে আদিবাসী ছাত্রীর উপর নিপীড়নকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; পাণ্ডুয়ার মাটিতে লোকনায়ক সিধু-কানহোর মূর্তির উপর হামলাকারীরা হুঁশিয়ার; সাঁওতালি মাধ্যমে উত্তীর্ণ আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি চূড়ান্ত অবহেলা কেন, রাজ্য সরকার জবাব দাও; আদিবাসী-বনবাসী উচ্ছেদ করে কয়লাখনি বেসরকারীকরনের সিদ্ধান্ত কেন, মোদী সরকার জবাব দাও ইত্যাদি শ্লোগানে মুখরিত ছিল মিছিল। মিছিলে পা মেলালেন সোমা রায়, সজল দে, গোপাল রায়, শৈলেন মাজির মতো আদিবাসীগণ আন্দোলনের পরিচিত নেতৃবৃন্দ।

আদিবাসী দিবসের পাশাপাশি ৯ আগস্ট ছিল ঐতিহাসিক “ভারত ছাড়ো” আন্দোলনের দিন। সারা ভারত কিষান সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির দেশব্যাপী আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল “বহুজাতিক হটাও, কিষান বাঁচাও”। জেলায় ঋণ মুক্তি কমিটির নেতৃত্বে চলছে মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলির দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন। আদিবাসী দিবসের সমাবেশের ভাষণ, অনুষ্ঠানের অঙ্গসজ্জায়, মিছিলের শ্লোগানে ছিল এর সচেতন প্রতিফলন। জোট বাঁধো, তৈরি হও।

- সজল অধিকারী  

darreread

১ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এআইসিসিটিইউ সারা ভারত জুড়ে “দেশ বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও” কর্মসূচী গ্রহণ করে, আর ৯ আগস্ট কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলো “ভারত ছাড়োর” ঐতিহাসিক দিনে দেশব্যাপী আইন অমান্য/সত্যাগ্রহের কর্মসূচী নেয়।

কলকাতায় সেই কর্মসূচী পালিত হয় ৬ আগস্ট ও ৯ আগস্ট তারিখে। ৬ আগস্ট এআইসিসিটিইউ’র নির্মাণ শ্রমিক, মিড-ডে-মিল কর্মচারি ও রিক্সাচালক ইউনিয়নের পাশাপাশি অ্যাপোয়া এবং পরিচারিকাদের সংগঠন সমবেতভাবে যাদবপুরের ৮বি-র সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। লকডাউন পর্যায়ে থেকে শুরু করে আগামী ৬ মাস সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের মাসিক ১০,০০০ টাকা প্রদানের দাবিতে, বিলগ্নিকরণ-বেসরকারীকরণ ও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলোকে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলে। ওই দিন বেহালার মুচিপাড়ায় এআইসিসিটিইউ ও আইসা সন্ধ্যেবেলায় সভা করে।

drad

 

৯ আগস্ট সকালে ঢাকুরিয়ায় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো যুক্তভাবে মিছিল ও সভা করে। সেখানে এআইসিসিটিইউ’র থেকে বক্তব্য রাখেন বাসুদেব বোস। কলকাতার বুকে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির দুটো বিক্ষোভ কর্মসূচী হয়, একটা ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে, আরেকটা রানু ছায়া মঞ্চের সামনে। ৬ ও ৯ আগষ্টের বিক্ষোভ সভাগুলিতে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ইন্দ্রাণী দত্ত, চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী, অতনু চক্রবর্তী, বাসুদেব বোস, শুক্লা সেন, মিথিলেশ সিং, শুভদীপ সরকার প্রমুখ।

উত্তর ২৪ পরগণা - এআইসিসিটিইউ কামারহাটি শাখা ৯ আগস্ট শপথ ‘শ্রমিক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ কর্মসূচী সংগঠিত করে। সকালে বাদাম তলা, পূর্ব বেলঘরিয়ায় সিআইটিইউ এবং এআইসিসিটিইউ-র যৌথ কর্মসূচী হয়। এছাড়া বিকেলে আগরপাড়া জুটমিল গেটের যৌথ কর্মসূচীতে আইএনটিইউসি এবং এআইইউটিইউসি সামিল ছিল।

পশ্চিম বর্ধমান - পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহরের প্রাণকেন্দ্র হটন রোডে যৌথ মিছিল হয় শ্রমিক সংগঠনগুলির। লকডাউন পরিস্থিতিতেও তাতে যোগদান করে কোলিয়ারী শ্রমিকরা এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিকরা, ও তাদের প্রতিনিধিরা। এই মিছিল আসানসোলের একটি বড় অংশ অতিক্রম করে।

asan

 

রেল শহর চিত্তরঞ্জনে মূলত বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি সংযুক্ত প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে আমলাদাহি বাজার অঞ্চলে। রেল সহ কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থাগুলিকে এক এক করে কর্পোরেটের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার বিরুদ্ধে, শ্রমিক সংগঠন ও শ্রম আইন বিলুপ্তিকরণের বিরুদ্ধে এবং শ্রমিকদের ভাতা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।

পশ্চিম বর্ধমানের অন্তর্গত ‘জেমারি বাসস্ট্যান্ডের’ কাছেও পালিত হয় যৌথ কর্মসূচী। সবধরণের শ্রমিক, কৃষি ও নারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে। সর্বশেষে প্রতীকী রাস্তা অবরোধ করে শেষ হয় এই কর্মসূচী। দুর্গাপুর, আসানসোল, বার্ণপুর, হিন্দুস্তান কেবলস, চিত্তরঞ্জন সহ বিপুল শিল্পাঞ্চলকে এক এক করে মরুভূমিতে পরিণত করার যে চক্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে তার বিরুদ্ধে পশ্চিম বর্ধমানের সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষদের একত্রিত হয়ে লাগাতার প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয় এবং পরবর্তীকালে আরও বড় এবং লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে ‘এআইসিসিটিইউ’ লড়বে খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার ও স্বার্থের লড়াইয়ের অংশীদার হয়ে।

দার্জিলিং জেলা - ৯ আগস্ট শিলিগুড়ির সেবক মোড়ে এআইসিসিটিইউ সহ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলি যৌথভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে। শ্রম আইন পরিবর্তন করা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারীকরণ, বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধেও সোচ্চার বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে আওয়াজ ওঠে ফ্যাসিস্ট মোদি-শাহের থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করো, সাম্প্রদায়িক বিজেপি ভারত ছাড়ো। সংবিধান বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, কাজ বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও। খড়িবাড়ি বিত্তান জোতে ভারত বাঁচাও দিবসের কর্মসূচী পালিত হয়ে এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে।

gee

 

হুগলি - হুগলি জেলায় বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচী পালিত হয়, বিভিন্ন ছাত্র যুব সংগঠন এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন । সকালে কোন্নগর জিটি রোডের  বাটা বাস স্টপেজে অনুষ্ঠিত সভায় আরওয়াইএ-র  যুব সাথীরা প্ল্যাকার্ড, ঝান্ডা নিয়ে কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বক্তারা বক্তব্য তুলে ধরেন এবং সভার শেষে জিটি রোধ অবরোধ করা হয়, রাজ্য পুলিশ অবরোধ তোলার নামে হুমকি দেয়, সেই হুমকিকে অগ্রাহ্য করেই, দাঙ্গাবাজ, শ্রমিক বিরোধী মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অবরোধ চলে। বিকেলে চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিটু, ইউটিইউসি, টিইউসিসি এবং এআইসিসিটিইউ সংগঠনের শ্রমিক সাথীরা অংশগ্রহণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। এআইসিসিটিইউ-র নির্মাণ ও পরিবহন  শ্রমিকরা লাল ঝান্ডা নিয়ে সুসজ্জিতভাবে কর্মসূচীতে অংশ নেন ।

হাওড়া - কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের ডাকে ৯ আগস্ট কেন্দ্র ও রাজ্যে সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী নীতিগুলির বিরূদ্ধে ভারত বাঁচাও কর্মসূচী পালন হয়! সভা শুরুর প্রথমে প্রয়াত বিশিষ্ট ট্ৰেড ইউনিয়ন নেতা কমঃ শ্যামল চক্রবর্তীর উদ্যেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়! সভায় এআইসিসিটিইউ-র হাওড়া জেলা সভাপতি দেবব্রত ভক্ত তাঁর বক্তব্যে বলেন যে ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ভারত ছাড়ো ডাক দেওয়া হয়েছিল, আজ বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো একটা একটা করে বেচে দিচ্ছে, দেশকে বেচে দিচ্ছে, দেশের সম্পদ বেচে দিচ্ছে, দেশের মানুষকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার প্রাথমিক শর্তকে ভেঙে কর্পোরেট অধীনতার দিকে নিয়ে চলেছে। ব্রিটিশ বিরোধী সেই ঐতিহাসিক স্লোগানই আজ নতুনভাবে সোচ্চারিত!

dderee

পরাধীন ভারতে ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ঐতিহ্য আজকের দিনেও যেন প্রবল ভাবে মূর্ত হয়ে উঠলো! তৎকালীন “আগস্ট বিপ্লব”-এর সময়কালে স্লোগান উঠেছিল – ব্রিটিশ রাজ ভারত ছাড়ো। আর আজ স্লোগান উঠেছে দেশী বিদেশী কর্পোরেটরা কৃষি থেকে দূর হঠো। এই দাবিতে ঐতিহাসিক ৯ আগস্ট সারা দেশের মতো গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক, গ্রামীণ গরিব, আদিবাসী মানুষেরা পথে নেমেছিলেন। বর্তমানে লকডাউনের সময়কালে মানুষকে গৃহবন্দী করে রাখার সুযোগকে ব্যবহার করে মোদি সরকার কৃষিকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছে। লকডাউনের সংকটে আক্রান্ত কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার নাম করে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি ১ লক্ষ কোটি টাকার যে ঋণ সহায়তা প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে সেটা ৯০ ভাগ কৃষকের কাছেই অধরা থেকে যাবে। ‘পিএম কিষাণ’-এর যৎসামান্য অর্থ কৃষকদের বিপুল লোকসানের তুলনায় কণামাত্র! শস্যবীমার সুযোগও ৮০ ভাগ কৃষকরা পায় না। উল্টে বীমা কোম্পানিগুলি কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে নিচ্ছে। চলছে কাটমানির খেলা আর ফসল বীমার নামে লুঠের কারবার। তাই আজকের দিনে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা কৃষি ও কৃষকদের এই সমস্ত বাঁচার দাবিগুলিকে সামনে রেখে ৯ আগস্ট সংগঠিত হলো দেশব্যাপী কৃষক মু্ক্তি দিবস। সরকার বলছে কৃষকরা নাকি তথাকথিত “মুক্ত বাজারে” তাঁদের ফসল বিক্রি করার “স্বাধীনতা” পাবে, ফলে তারা ফসলের দাম বেশি পাবে! কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই নতুন ব্যবস্থার ফলে সরকারী ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণের আর কোনো অর্থই থাকবে না। কৃষকদের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দাম গ্যারান্টি করার দায় থেকেও সরকার সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যাবে। বাস্তবে বর্তমানে সরকারী ফসল ক্রয় ব্যবস্থা প্রায় তুলেই দেওয়া হয়েছে, দেড়গুণ দাম নির্ধারণেও সরকার কৃষকদের ঠকাচ্ছে। তবুও এতোদিন সরকারের কাছে দাবি করবার একটা সুযোগ ছিল! এখন সেটাকেও লোপাট করে দেওয়া হবে। কৃষকদের ছেড়ে দেওয়া হবে কর্পোরেটদের হাতে, যারা চুক্তিচাষের মাধ্যমে চাষিদের গোলামে পরিণত করবে। সরকারী ক্রয় ব্যবস্থা তুলে দিয়ে আসলে ধাপে ধাপে সরকারী বণ্টনব্যবস্থাও তুলে দেওয়া হবে। অর্থাৎ রেশন ব্যবস্থা উঠিয়ে দেওয়া, মিড-ডে-মিল’কে এনজিওদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। নতুন করে চাপিয়ে দেওয়া এই কোম্পানিরাজের বিরুদ্ধে ৯ আগস্ট সারা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছিল দেশের ২৫০টি কৃষক, কৃষিমজুর সংগঠনের সংগ্রামী মঞ্চ এআইকেএসসিসি। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এআইকেএম, আয়ারলা, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ সহ অন্যান্য সংগঠনের উদ্যোগে কোথাও যুক্ত ভাবে কোথাও বা এককভাবে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ব্লকে ব্লকে নানাবিধ কর্মসূচী সংগঠিত হয়েছে।

বাঁকুড়া জেলা - সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ব্লকে আদিবাসীদের বনাঞ্চলের জমি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। ক্যাম্পা আইনকে কাজে লাগিয়ে সরকার প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্চবর্ণের গ্রামীণ কায়েমী স্বার্থান্বেষী শক্তি গরিব তপশীলী ও আদিবাসীদের চাষের জমির ফসল ধ্বংস করে দিয়েছে। বাস্তজমি থেকে উচ্ছেদের চক্রান্ত করছে। এর প্রতিবাদে এবং অন্যান্য দাবিতে হীড়বাঁধ ব্লকের মলিয়ানে বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে যৌথ মিছিল ও সভা সংগঠিত হয়। ছাতনাতেও অনুরূপ কর্মসূচী সংগঠিত হয়। এছাড়া ওন্দা ব্লকের নিকুঞ্জপুরে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

nadia

 

নদীয়া - ধুবুলিয়ার নেতাজী পার্কে অনুষ্ঠিত প্রচার সভা ব্যাপক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চল থেকে আসা বেশ কয়েকজন কর্মী এই প্রচার সভায় অংশ নেয়। নাকাশীপাড়া ব্লকের গাছা বাজারে প্রচার সভাও এলাকার ব্যাপক মানুষের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলে। এই সভাগুলি আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একক ভাবেই সংগঠিত হয়।

হাওড়া - সারা ভারত কৃষক সংর্ঘষ সমন্বয় সমিতির ডাকে “কৃষিক্ষেত্র থেকে কর্পোরেট হঠাও ও কৃষক বিরোধী সমস্ত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল কর, কৃষি ও কৃষকদের বাঁচাও” দাবিকে সামনে রেখে বাগনান ২নং ব্লকের ঘোড়াঘাটা অঞ্চলে সারা ভারত কৃষক সভা ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি যৌথ উদ্যোগে “কিষান মুক্তি দিবস” পালন করা হয়।

উত্তর ২৪ পরগণা - গাইঘাটা ব্লকে চাঁদপাড়া বাজারে বিভিন্ন বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষক সংগঠন যৌথভাবে কর্মসূচী সংগঠিত করে। সারা ভারত কিষান মহাসভা, সারা ভারত কৃষকসভা, আইএনটিইউসি, সিআইটিইউ ইত্যাদি সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখা হয়।

জলপাইগুড়ি - ময়নাগুড়ি ব্লকের সাপ্টিবাড়ীতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও কিষাণ মহাসভার উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচী সংগঠিত হয়।

dar

 

দার্জিলিং - দেশ বিক্রির দালাল মোদি সরকার ভারত ছাড়ো স্লোগান সহ বিক্ষোভ কর্মসূচী সংগঠিত হয় খড়িবাড়ি ব্লকের বিত্তান জোতে। এআইকেএম-এর পক্ষ থেকে কর্পোরেট ভারত ছাড়ো স্লোগানে গোটা গঞ্জ এলাকায় প্রচার করে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হয় রাঙ্গাপানিতে।

দঃ ২৪ পরগণা - বিবিরহাট মোড়ে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনগুলির যৌথ নেতৃত্বে। “ভারত বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও, শ্রমিক বাঁচাও, রোজগার বাঁচাও” ও “কর্পোরেটরা কৃষি থেকে দূর হটো” কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে। বিপ্লবী যুব এ্যাসোসিয়েশনও যোগ দেয়। বিষ্ণুপুর ব্লকে বিরাট সংখ্যায় বাগিচা তথা উদ্যান পালনের সাথে যুক্ত কৃষিজীবী মানুষেরা লকডাউন ও আমফান এই দুই বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। এদের প্রতি সরকারের কোনো নজর নেই। এদের ক্ষতিপূরণের দাবি বক্তারা তুলে ধরেন।

উঃ দিনাজপুর - এই জেলার কালিয়াগঞ্জে বিভিন্ন বামপন্থী কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচারসভা সংগঠিত হয়।

মুর্শিদাবাদ - জেলার সদর বহরমপুরে এআইকেএম ও আয়ারলার পক্ষে একটি প্রচার সভা সংগঠিত হয়। 

hoog

 

হুগলী জেলা - কৃষিকে বাঁচানোর তাগিদে, কর্পোরেট লুটের বিরুদ্ধে ৯ আগস্ট এআইকেএসসিসি আহূত দেশজোড়া প্রতিবাদ দিবস হুগলী জেলার গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে পালন করা হয়। সারা ভারত কিষাণ মহাসভার উদ্যোগে (এআইকেএম) সবথেকে সংগঠিতভাবে, বেশ কয়েকদিনের লাগাতার প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে বড় এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় পান্ডুয়া ব্লকের বৈঁচিতে। ৯ আগস্টের সমাবেশ সফল করার জন্য বেশ কয়েকজন কর্মী-সংগঠক খেতমজুর ও গরিব কৃষক অধ্যুষিত পল্লীগুলিতে প্রতিবাদ সভার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা চালান। এআইকেএম মঞ্চ, মাইক, সভার ব্যবস্থাপনা -- সবকিছুরই দায়িত্ব গ্রহণ করে। সভার নির্ধারিত সময়ের (বিকেল ৫ টা) বহু আগে থেকেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষক ও কৃষিশ্রমিক আদিবাসী ও তপশীলি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেন। এলাকার কৃষকদের এক বড় অংশ মুসলিম সমাজভুক্ত। পরিবারের মহিলা সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরাও দল বেঁধে সমাবেশে সামিল হন। ঘোষিতভাবে যা ছিল এক পথসভা তা প্রায় এক জনসভায় পরিণত হয়।

এলাকায় বামপন্থী অন্য কৃষক সংগঠন বলতে কেবল সিপিআইএম প্রভাবিত এআইকেএস-এরই সংগঠিত শক্তি রয়েছে। সমাবেশের দুদিন আগে তাঁদের নেতৃত্বের সাথে সমাবেশের বিষয় নিয়ে মতামত গ্রহণ করা হয়। তাঁদেরও ভালোসংখ্যক কৃষক, অসংগঠিত শ্রমিক ও ছাত্র-যুবরা প্রতিবাদ সভায় সামিল হন। দীর্ঘদিন পরে ভীড়ে ঠাসা, রক্তপতাকার লালে লাল সমাবেশ এলাকার ব্যাপক জনগণের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। সভার শুরুতে দীপনিকা সাহার টানটান গলার আবৃত্তি সমাবেশের সুর বেঁধে দেয়। এরপর বক্তব্য রাখেন সুকুমার সাধুখাঁ (সিটু), সুনীল ক্ষেত্রপাল (এআইকেএস), আব্দুল কাশেম (আয়ারলা), উজ্বল ঘোষ (ডিওয়াইএফ) এবং মুকুল কুমার (এআইকেএম)। সঙ্গীত শিল্পী ঝর্ণা কিসকুর গান সভায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করে দেয়।

hoogs

 

বক্তাদের কথায় লকডাউন পর্বে খারিফ মরশুমের ঝণ মকুব সহ সম্পূর্ণ ঋণমুক্তি, বিদ্যুৎ বিল ২০২০ প্রত্যাহার, ডিজেলের দাম ৫০% কমানো, ৫ জুন জারি হওয়া তিনটি কালা অর্ডিনান্স প্রত্যাহার, গ্রামের গরিবদের নগদ অর্থ প্রদান ইত্যাদি বিষয়গুলি উঠে আসে। সভা পরিচালনা করেন বিনোদ আহির (এআইকেএম) ও সুকুমার সাদুখাঁ (সিটু)। পান্ডুয়ায় অপর কর্মসূচীটি আনুষ্ঠিত হয় সাঁচিতারা গ্রামে। এখানে মসজিদতলায় পথসভাটিতে বক্তব্য রাখেন শুভাশিস চ্যাটার্জী (এআইকেএম), গোপাল রায় (আয়ারলা) ও পার্টির রাজ্যনেতা সজল অধিকারী। আয়ারলা জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন বাগ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন। হুগলীর বলাগড় ব্লকের মহিপালপুর হাটতলায় ৯ তারিখ বিকেলে খেতমজুর কর্মীরা ‘২০০ দিন কাজ ও দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি’, আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত লিজ ও চুক্তি চাষিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ইত্যাদি দাবিতে পোস্টার প্রদর্শন করেন। ছোট এই কর্মসূচীটি পরিচালনা করেন আয়ারলা জেলা নেতা সেখ আনারুল। এছাড়া এই দিনই ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ উপলক্ষ্যে আদিবাসী কৃষক জনগণের এক সমাবেশ সংগঠিত হয় পোলবা ব্লকের বরুনানপাড়ায়। সারা বাংলা আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ ছিল এই কর্মসূচীর উদ্যোক্তা।

kal

 

পূর্ব বর্ধমান : ৯ আগস্ট ঐতিহাসিক ‘ইংরেজ ভারত ছাড়’ আন্দোলন দিবসে পুর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকে যৌথ কর্মসূচী পালন করা হল। শ্লোগান ও দাবি ছিল – সংবিধান বাঁচাও, স্বাধীনতা বাঁচাও, গনতন্ত্র বাঁচাও, শ্রমিক বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও  ও নাগরিকের অধিকার বাঁচাও। কর্পোরেট হঠাও, কৃষি ও কৃষক বাঁচাও। কৃষক-বিরোধী অর্ডিন্যান্স বাতিল কর। ২০২০ বিদ্যুৎ বিল বাতিল কর। লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ঋণ মুকুব কর। পরিযায়ী শ্রমিকদের মাসে ১০,০০০ টাকার ভাতা দাও। মনরেগা প্রকল্পে ২০০ দিন কাজ ও সরকারী ন্যুনতম মজুরি দাও, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি কেন মোদি সরকার জবাব দাও। করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ মোদি-শাহ দূর হঠো।

পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের পাটুলি গঞ্জে, পুর্বস্থলী১নং ব্লকের নাদনঘাট নওপাড়া মোড় বাস স্ট্যান্ড, মন্তেশ্বর ব্লকের কুসুমগ্রাম বাজারে, কালনা ২নং ব্লকের বৈদ্যিপুর বাস স্ট্যান্ড, মেমারী ১নং ব্লকের মেমারী ও বর্ধমান শহরে মিছিল বিক্ষোভ এবং কোথাও অবরোধও সংগঠিত করা হল। সমস্ত কর্মসূচীতে সিপিআই(এমএল), এআইসিসিটিইউ, এআইকেএম, আয়ারলা, আরওয়াইএ এবং সিপিআই(এম)-এর বিভিন্ন গণসংগঠন অংশগ্রহণ করে।

verser

অযোধ্যাকে হিন্দু রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট কেন্দ্র বানানোর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষ এক হও। রাম মন্দিরের আবেগ তৈরি করে লকডাউনের সংকট থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া চলবে না। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যর্থতাকে আড়াল করা চলবে না। বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীদের বিচার ও শাস্তি চাই। অবিলম্বে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও ৩৫(ক) ধারা লাগু করতে হবে‌। লকডাউনের ফলে কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিক সহ প্রতিটা গরিবের লকডাউন ভাতা সুনিশ্চিত করতে হবে। কর্পোরেট ঋণ ছাড় নয়, ব্যাংক, সমবায়, মহাজনী এবং মাইক্রোফাইনান্সের ঋণ থেকে গরিব মানুষকে মুক্ত করো।

এইসব দাবিকে তুলে ধরে ৬ আগস্ট সারা রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ দিবস পালন করল বিপ্লবী যুব অ্যাসোশিয়েশন। এই কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে নদিয়ার ধুবুলিয়ার নেতাজী পার্ক, পূর্ব বর্ধমানের কালনা, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাখরাহাট, হুগলীর জয়হরিপুর, কলকাতার বেহালা ও যাদবপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়।

14pdeea

আমফান দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সকল গ্রামীণ শ্রমিককে লকডাউনভাতা দেওয়ার দাবিতে, সকলকে MGNREGA প্রকল্পে ২০০ দিনের কাজ ও ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হবে, সকল বেকারের হাতে কাজ দাও, শ্রমজীবী জনতাকে জবকার্ড দাও, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং মহাজনী, মাইক্রোফাইনান্স ঋণ মকুবের দাবিতে দঃ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুর-২ ব্লকে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন, সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের যৌথ ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ সংগঠিত হয় গত ১০ আগস্ট। বিবিরহাট মোড় থেকে শ্রমজীবী গ্রামীণ জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল ব্লকের সামনে জমায়েত হয়। ব্লকের সামনে বক্তব্য রাখেন তিনটি রাজনৈতিক দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃবৃন্দ। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন রাজ্য নেতা কমরেড জয়তু দেশমুখ। ছয়জনের প্রতিনিধি দল বিডিওর কাছে ডেপুটেশন দিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। পূর্ব অনুমতি থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন ব্লকের গেটে প্রতিনিধি দলের পথ আটকায়। উপস্থিত শ্রমজীবী জনগণ ব্লকের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে, আরওয়াইএ কমরেডদের তৎপরতায় বাখরাহাট-বিবিরহাট রোড অবরোধ করা হয়। অবরোধের মুখে পড়ে প্রশাসন প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দেয়। প্রতিনিধি দলে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষে ছিলেন জেলা নেতা কমরেড দিলীপ পাল ও লোকাল সম্পাদক কমরেড নিখিলেশ পাল। ডেপুটেশন জমা করে উপস্থিত জনতার সামনে ডেপুটেশনে বিডিওর সাথে হওয়া আলাপ আলোচনা নিয়ে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)-এর কমরেড গৌতম পাল ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের কমরেড দিলীপ পাল।

barevae

বিগত ১০ই আগস্ট ২০২০ প্রতিবাদী কবি ভারভারা রাও এবং গণতান্ত্রিক, মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী জেএন সাইবাবা, সুধা ভরদ্বাজ, ডাঃ কাফিল খান সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে, এআইপিএফ বারাসাত ও এপিডিআর বারাসাত শাখা ও অন্যন্য গণ সংগঠনের উদ্যোগে সকাল ১১টা নাগাদ বারাসতের কলোনি মোড় থেকে একটি সুসজ্জিত ট্যাবলোসহ প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে, হরিতলা মোড়ে একটি সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত করে, সেখানে এআইপিএফ-এর পক্ষে বক্তব্য রাখেন নির্মল ঘোষ, আবার মিছিল এগিয়ে চলে, চাঁপাডালি মোড়ের বিগবাজারের সামনে বক্তব্য রাখেন এপিডিআর-এর পক্ষে সোমনাথ রায়। এরপর বারাসাত জেলা আদালতের সামনে মিছিল গিয়ে শেষ হয় ও সেখানে প্রতিবাদসভা ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদসভায় বক্তব্য রাখেন নির্মল ঘোষ ও ‘রিলিজ পলিটিকাল প্রিজনার্স’ সংগঠনের পক্ষে শুদ্ধব্রত দেব।

- দেবল 

kjhkhudi

বাংলার বীর বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর শহীদ দিবস সকালে পালন করা হয় আইসা সরশুনা ইউনিটের পক্ষ থেকে সরশুনা হাই স্কুলের সামনে এবং বিকেলে কালিতলায় ক্ষুদিরাম মূর্তিতে বাংলার বীর বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর শহীদ দিবস পালন করা হয় আরওয়াইএ-আইসা কালীতলা মুচিপাড়া ইউনিটের পক্ষ থেকে। মাল্যদানের পর সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন আইসা কলকাতা জেলা সভাপতি অভিজিৎ।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে কৈশরেই শহীদ হন ক্ষুদিরাম বসু। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সর্বকনিষ্ঠ শহীদ বিপ্লবীর নাম শহীদ ক্ষুদিরাম বসু। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার স্পর্ধার যে শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাক যুবসমাজের কাছে।

upup

যোগী আদিত্যনাথ শাসিত উত্তরপ্রদেশে সমাজের দুর্বল অংশের জনগণের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সিপিআই(এমএল)-এর উত্তরপ্রদেশ শাখা ১৪ থেকে ২০ জুলাই প্রতিবাদ সপ্তাহ পালন করে। যে সমস্ত ইস্যুকে ধরে প্রতিবাদ চালানো ও দাবি তোলা হয় তা হল, দলিত ও আদিবাসীদের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে বেড়ে চলা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে থামাতে হবে, অপরাধের যে পরিঘটনা ক্রমবর্ধমান তাতে লাগাম টানতে হবে, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারকে সুরক্ষিত করতে হবে। এছাড়াও, রেশনের লভ্যতা, জীবিকার সংস্থান করা এবং আয়করের আওতার বাইরে থাকা সমস্ত পরিবারকে মাসে ১০,০০০ টাকা লকডাউন ভাতা প্রদানের দাবিও ওঠে। এই প্রচার চলাকালীন মথুরা জেলে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বন্দী ডঃ কাফিল খানের মুক্তি দিবস হিসাবে ১৯ জুলাইকে পালন করা হয়।

কানপুরে আট পুলিশ কর্মীর হত্যার ঘটনা রাজ্যের আইন ও শৃঙ্খলার ভেঙ্গে পড়াকে যেমন প্রকট করেছে, সেরকমই যোগীর শাসনাধীনে দুর্বৃত্ত-পুলিশ গাঁটছড়ার ব্যাপকতা ও জোরালো হয়ে ওঠাকেও সামনে নিয়ে এসেছে। আদিবাসী, দলিত, নারী ও সমাজের দুর্বল অংশের মানুষরা দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত ও নিহত হচ্ছে। এই সমস্ত হামলার ক্ষেত্রে হয় এফআইআর দায়ের হচ্ছে না, আর হলেও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সিপিআই(এমএল)-এর দলিত নেত্রী জীরা ভারতির ওপর মির্জাপুরে যৌন হামলা এটাই প্রমাণ করছে।

সরকার দুর্বৃত্তদের মদত দিচ্ছে, আর আন্দোলনের কর্মী, বিশেষভাবে সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদকারী ও সিপিআই(এমএল) নেতাদের তার হামলার নিশানা বানাচ্ছে। বালিয়া, মহারাজগঞ্জ, গোরক্ষপুর, এলাহাবাদ, লক্ষ্ণৌ, মথুরা, লখিমপুর খেরি, পিলভিট প্রভৃতি জেলার কয়েকশ গ্ৰামে এই প্রচার চলে। আজমগড়ে আধিপত্যকারী শক্তিগুলো সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য এক রাস্তা দখল করায় তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত হয়।। গাজীপুরে তুলসি সাগর লঙ্কা এবং শহীদ ভগৎ সিং পার্কে ধর্ণা সংগঠিত হয়। মৌ ও তাডিঘাটের মধ্যে রেল প্রকল্পের জন্য জোরজবরদস্তি জমি দখলের বিরুদ্ধে কৃষকরা মিছিল সংগঠিত করেন। চান্দৌলি জেলার চাকিয়া ব্লকের গয়াঘাটে মহিলাদের ওপর অত্যাচারে জড়িত থাকার কারণে পঞ্চায়েত সদস্য মহেন্দ্র রাও-এর নামে এফআইআর দায়ের করার দাবিতে প্রতিবাদ সংগঠিত হয়।

kolkas

গত ৭ আগস্ট যাদবপুর এইটবি-তে আইপোয়া সহ বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও আইসা, পিডিএসএফ, ইউএসডিএফ, প্রতিসরণ ইত্যাদি ছাত্রছাত্রী সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের ডাকে শতাধিক মানুষ কাশ্মীরের সংহতিতে জমায়েত হন। পোস্টার শ্লোগান গানে কাশ্মীরের বন্দী মানুষদের প্রতি সংহতি ও মোদি সরকারের স্বৈরাচারী অসাংবিধানিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ধিক্কার ধ্বনিত হয়। বহুদিন পর কোভিড লকডাউনের ভীতি অতিক্রম করে প্রতিবাদী ছন্দে ফিরতে দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীদের।

didee

পরিবেশের ওপর প্রভাব মূল্যায়নের খসড়া নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১১ আগস্ট পাঁচটি সংগঠন সভা করল হুগলির চকবাজার মোড়ে। সভায় বক্তব্য রাখেন হুগলির পরিবেশ ও শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শ্রী বিশ্বজিৎ মুখার্জি (পরিবেশ একাডেমি ), নির্মল দাস (প্রকৃতি ), বিপ্লব চৌধুরী (সেভ ডেমোক্রেসি ), অমল রায় ও কমল দত্ত (এপিডিআর), সুদর্শন বসু ও ভিয়েত ব্যানার্জি (এআইপিএফ) এবং সনৎ রায়চৌধুরি। এআইপিএফ-এর শ্রী কল্যাণ সেন সভা সঞ্চালনা করেন।

idsaeeee

আইসা বা সিপিআই(এমএল) লিবারেশন নয়, এই ঘরানার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে জীবনে প্রথম নাম শুনেছিলাম আইপিএফ-এর। তাও সিপিআই(এম)-এর পত্রিকায়। তখন আমি স্কুলে। তখনও আইসা জন্মায়নি। সিপিএমের ‘দা মার্ক্সিস্ট’ বলে একটা পত্রিকা বাড়িতে আসত, সেখানে। তখন উৎসাহ প্রচুর ছিল, কিন্তু ইংরেজি বিদ্যে ঢুঢু। মার্কসবাদী নানা লব্জ, সম্পূর্ণ অচেনা লাগত। যেমন শভিনিজম শব্দটার সঙ্গে প্রথম পরিচয় ওই পত্রিকাতেই, অভিধান দেখে মানেটা বোঝা গিয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘদিন পর্যন্ত বানান দেখে উচ্চারণ করতাম চাউভিনিজম। এই বিদ্যে নিয়েই টুকটাক পড়াশুনো। এসব কেন ইংরেজিতে ছাপা হয়, সে নিয়ে তখনও প্রশ্ন জাগত, এখনও জাগে। নইলে আদ্যন্ত বাংলা মিডিয়াম আমার পড়াশুনোয় কিছু সুবিধে হত।

তা, ওই পত্রিকাতেই আইপিএফ-এর কথা জানা। কার লেখা মনে নেই। প্রচুর সমালোচনা ছিল। কিন্তু এ সংগঠন দ্রুত বাড়ছে, রণবীর সেনাকে টক্কর দেয়, এবং অস্ত্র হাতে লোকজনকে ভোটের লাইনে দাঁড় করায়, এইসব পড়ে খুব আগ্রহ জেগেছিল। বিহারকে তখন জঙ্গলের রাজত্ব মনে করা হত। থেকে থেকেই গণহত্যার খবর আসে। তার মধ্যে যারা লড়ে যাচ্ছে, তাদের প্রতি ১৬-১৭ বছর বয়সে সম্ভ্রম জন্মাবেই। এরই মধ্যে আজকালে খবর আসে ২২ এপ্রিল আইপিএফ-এর মাতৃরূপী সংগঠন লিবারেশন প্রকাশ্যে আসছে। জনসভা হবে এসপ্ল্যানেড ইস্টে। একই দিনে আরেকটা জনসভা ছিল শহীদ মিনারেও। গদরের আসার কথা। আমি তখন সিঙ্গুরে থাকি। তখনও স্কুলেই। লাফ মেরে ট্রেনে করে হাওড়া হয়ে সোজা এসপ্ল্যানেডে। কাউকে চিনতাম না। তাই একা একা। এসপ্ল্যানেডে তার আগে কোনোদিন গেছি বলে মনে পড়ে না, একা তো নয়ই।

এর বছর খানেকের মধ্যেই কলেজে। হাওড়ার কলেজ। হস্টেল। ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে পরিচয়। যোগ দিতে কিছুদিন সময় লেগেছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই খবর আসে হিন্দি বলয় কাঁপাচ্ছে আইসা। জেএনইউ-তে জয়ী। একই সঙ্গে জয়ী বিএইচইউ এবং এলাবাহাদ ইউনিভার্সিটিতে। জয়ী ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা কলকাতা এসেছিলেন কেউ কেউ। দেখা সাক্ষাৎও হয়। আইপিএফ-এর মতো আইসারও যে ব্যাপারটা চমৎকার লেগেছিল, তা হল দ্রুত বৃদ্ধি। তখন নব্বইয়ের শুরু। বাংলার সংস্কৃতিতে নতুন জোয়ার। সুমন চট্টোপাধ্যায় ফাটিয়ে গান গাইছেন। করন্দায় পাঁচজন খেতমজুর খুন হলেন, রক্ত উথলিয়ে সুমন গান ধরলেন, “মাঝ রাত্তিরে চাঁদের কাস্তে, ধারালো হচ্ছে আস্তে আস্তে”। সুমনের ওই অননুকরণীয় “আস্তে আস্তে” উচ্চারণ এখনও কানে লেগে আছে। সঙ্গে একদিকে চলছে কানোরিয়া আন্দোলন, অন্যদিকে তরুণ গায়করা বন্দীমুক্তির স্বপক্ষে গান গাইছেন। প্রেসিডেন্সিতে এরকমই এক অনুষ্ঠানে এক মহিলার গান শুনলাম, কী জোরালো গলা, ঠিক যেন জোন বেজ। তাঁর নাম, জানা গেল, মৌসুমী ভৌমিক। আরেকটা অনুষ্ঠানে দু-তিনটি ছেলে মঞ্চে উঠে দুদ্দাড় কী একটা যেন গেয়ে দিল। তাদের গ্রুপটারও নাম অদ্ভুত। চন্দ্রবিন্দু।

olld

 

চতুর্দিকে নতুন এক উত্থান। এরই মধ্যে বিহারের খবর আসে। লড়াই চলছে। বাম কনফেডারেশনের কথা ভাবা হচ্ছে। এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় যেটা, দ্রুত বদলের কথা ভাবা হচ্ছে। শুধু বাম নয়, নীতিশ কুমার নামক এক ভদ্রলোক এক সংগঠন গড়েছেন, তাঁদের জনভিত্তি আছে, সেই সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে নির্বাচন লড়া হবে। জেতা যাবে কিনা জানা নেই, কিন্তু জরুরি যেটা, সেটা হল, বড় করে ভাবা হচ্ছে। স্বপ্ন দেখা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য আমরা খুব কিছু করে ফেলেছিলাম এমন নয়। কাজের মধ্যে সাউথ সিটি কলেজে লিফলেট দিতে গিয়ে এসএফআই-এর হাতে মার খেয়ে এসেছিলাম। পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রদের নিয়ে একটা সংগঠন প্রায় বানিয়েই ফেলাই হয়েছিল, কিন্তু ওই প্রায় অবধিই। পলিটেকনিকের ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল ঠিকই, কিন্তু আমাদের বাদ দিয়ে। যাদবপুর এপিসি পলিটেকনিকের ছাত্র সংসদে অবশ্য জেতা গিয়েছিল। বার দুই জেএনইউ মডেলে আস্ত প্যানেল বানিয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম নিজের কলেজে, কিন্তু সদলবলে পর্যুদস্ত। কলেজে তখন কার্টুন-দেওয়া পোস্টার খুব চলত। ছাত্রপরিষদ আইসাকে নিয়ে চিমটি কাটতে হলে একটা মেয়ের ছবি এঁকে নিচে আয়েষা লিখে কার্টুন আঁকত, মনে আছে। তখন বাবরি মসজিদ ভেঙে গেছে। কিন্তু, ভাবলে আশ্চর্য লাগে, আয়েষা নামের কোনো সাম্প্রদায়িক অভিমুখ ছিল না। থাকতে পারে, ভাবাটাই অসম্ভব ছিল। দিনকাল সম্পূর্ণ আলাদা ছিল।

বছর তিরিশেক পরে, ঘুরে দাঁড়িয়ে সময়টাকে দেখলে, এই কথাটাই মনে পড়ে। দিনকালটাই অন্য ছিল। ফেসবুক ছিলনা, মোবাইল ফোন ছিল না, এমনকি সাধারণ ফোন, যাকে এখন ল্যান্ডলাইন বলা হয়, তাও যৎসামান্য। প্রতিটি মিটিং-এর শেষে পরের মিটিং এর দিনক্ষণ ঠিক হত। কেউ বাদ গেলে তার বাড়ি গিয়ে খবর দিয়ে আসতে হত। সেও ছিল এক উৎসব। এসব খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যে ব্যাপারটা চোখে লাগে, তা হল দক্ষিণপন্থার উত্থান এবং তা ঘিরে যুবসমাজের একটা বড় অংশের উন্মাদনা। এই উদ্দীপনা একদা আমাদের অভিজ্ঞান ছিল। জেতা-হারা বড় কথা নয়। বদলে দেবার ইচ্ছে যাদের হত, তারা তখন বাঁ দিকেই ঝুঁকত, হার-জিতের তোয়াক্কা না করে। শুধু তথাকথিত বিপ্লবীরা নয়, ছোট্টো বৃত্তে সে এখনও ঝোঁকে, গ্রাম-গঞ্জ-মফঃস্বলের ছেলেমেয়েরা, যারা ঝা-চকচকে নয়, যাদের ইংরিজি পড়তে অসুবিধে হয়। আমি নিজেই যার অব্যর্থ উদাহরণ। এই তিরিশ বছর পরে, দুনিয়া সম্পূর্ণ বদলে গেছে, আমিও। রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাও বদলেছে। তবু যদি কেউ প্রশ্ন করে, সেই সময়ের কোন জিনিসটা ফেরত চাই, নিঃসন্দেহে, সেটা হল গ্রাম-গঞ্জ-মফঃস্বলের বাংলাপড়া ছেলেমেয়েদের দুনিয়া বদলে দেবার উদ্দীপনা। রাজনৈতিক কম্পাসের ডানদিকে এভাবে হেলে পড়া আর নেওয়া যায় না।

--  সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়  

ais

 

aees

সময়টা সিপিএমের দীর্ঘ শাসনকালের শেষ দিকের সেই উদ্ধত জামানা। ঔদ্ধত্যর আঁচ গায়ে বাজছিল বাংলার বৃহত্তর ছাত্র সমাজে। অধিকার হরণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল ছাত্র সমাজ। সময়ের দাবিতে কলকাতার আইসা নেতানেত্রীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমার মতো বহু ছাত্রছাত্রীর – বগুলা, বহিরগাছি, তারক নগর এলাকাকে আলোড়িত করে শুরু হয়েছিল ছাত্র-যুব আন্দোলন। কলকাতা-বগুলা একাত্ম হয়ে গড়ে ওঠে এক বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের প্রয়াস। পরবর্তীতে কলকাতার আরও কমরেডদের যাতায়াতের মধ্যে দিয়ে তার ব্যাপকতা বাড়ে। আমাদের নতুন পথের দিশা দেখায়। অজানা কথা, কত মানুষের আত্মত্যাগের কাহিনী আমাদের উৎসাহিত করে, বাধভাঙ্গা উৎসাহে পৌঁছে যাই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। ‘মহিনের ঘোড়াগুলি’র গানে নতুন মাত্রা আনে। সবাই মিলে চিৎকার করে গাইতে থাকি ‘কথা দিয়া বন্ধু ফিরা না আইলা ...’ আরও কতো। লাস্ট ট্রেনে কমরেডদের রিসিভ করে প্রায় মধ্য রাতে চিৎকার করে সবাই মিলে গাইতে গাইতে পৌঁছে যেতাম তিন-চার কিমি দূরে কোনো কমরেডের বাড়ি। যেন মুক্তাঞ্চল।

আইসা’র তিন দশকের মধ্যেকার দ্বিতীয় দশক ছিল সেটি। নদীয়া জেলার এক প্রান্তিক কৃষি-প্রধান এলাকা আইসার আন্দোলনে মুখর হয়ে উঠেছিল। স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে প্রচার নিয়ে যাওয়া, কলেজে প্রচার, বারবার হামলার সম্মুখীন হয়েও মোটেই দমে না যাওয়া, রাস্তার দাবিতে শয়ে শয়ে ছাত্র-যুবর রানাঘাট অভিযান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রাণকার্য, কলকাতার পথনাটকের দলবল ডেকে প্রতিবাদী কনভেনশন, সম্মেলন। এলাকাভিত্তিক এবং শহর কলকাতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে বগুলা ইউনিটের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল অনেকটা সময় জুড়ে। ২০০৫-এ যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আমরাও গলা মেলাতে পেরেছিলাম ‘লাঠির মুখে গানের সুর, দেখিয়ে দিল যাদবপুর’। কলকাতায় মহামিছিলে যোগ দেওয়ার অপরাধে বগুলা কলেজে সিপিএমের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল আমাদের ছাত্র সাথীদের। তার জবাবে “ছাত্রছাত্রী সংহতি মঞ্চ” গড়ে যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সির একঝাঁক ছাত্রছাত্রী বগুলা কলেজগেট ও হাঁসখালি থানায় বিক্ষোভ সংগঠিত করেছিল।

olddd

 

এসবেরও আগে একবার ২৮ জুলাই পার্টির ডাকা এক বাংলা বন্ধের দিনে ট্রেন অবরোধ করে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় সেদিনের ‘নকশাল বাড়ি লাল সেলাম’ স্লোগান উপস্থিত জনতাকে চমকিত করেছিল। কলকাতায় অহরহ ঘটলেও প্রান্তিক মফস্বলে এক ঝাঁক ছাত্র যুব’র সেই স্লোগান নতুন মাত্রা পেয়েছিল সেদিন। ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে আইসা ও কৃষিমজুর সমিতি (বর্তমানে যা আয়ারলা) ‘জমি-রক্ষা ক্যাম্প’ করে ছিল সারা নভেম্বর মাসটা – ক্যাম্পে ব্যানারে লেখা ছিল – “এখান থেকেই শুরু হোক এক অধ্যায়, আঙুলে আঙুল আগলে রেখেছি ঘাঁটি। মাথার ওপর একফালি চাঁদ উন্মাদ, পায়ের তলায় নাছোড়বান্দা মাটি” – কমরেড বিলাস সরকারের লেখা। আমরা এই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলাম। প্রথম দিন থেকেই সিঙ্গুর আন্দোলনে জুড়ে গেছিল বগুলার আইসা কর্মিরা। সিঙ্গুর আন্দোলনে উপস্থিতি এবং তৎকালীন তীব্র বিতর্ক আমাদের মধ্যে এক গভীর রাজনৈতিক বোধের জন্ম দিয়েছিল। নদীয়া জেলার পার্টি কাঠামোর সাথে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিশেষ করে প্রয়াত কমরেড বিমান বিশ্বাস তখন আমাদের সাথে প্রায়শই যোগাযোগ রাখতেন।

ইউনিভার্সিটির ছাত্র না হয়েও যাদবপুর ক্যাম্পাস তথা মেইন হোস্টেলে আমাদের প্রবেশ প্রায় অবাধ ছিল তখনকার আইসা ইউনিটের সৌহার্দপূর্ণ সহযোগিতায়। বিতর্ক আমাদেরও ছিল, ছিল নেতৃত্বের প্রতি আস্থাও। বিতর্ক কখনোই জনগণের স্বার্থের বাইরে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি ব্যাক্তি স্বার্থে। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্তমানের যত লড়াই আন্দোলন, তার মধ্যে আজও সেদিনের উপস্থিতি খুঁজে ফিরি।

-- শঙ্কর রায়  

freddeee

২৮ মার্চ ২০২০, নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করলেন যে তিনি করোনা ভাইরাসের মোকাবিলার জন্য একটি ফান্ড বানাচ্ছেন যেখানে দেশের মানুষ এবং দেশের কোম্পানিরা টাকা দিয়ে দেশের সরকারকে সাহায্য করতে পারে।

পিএম কেয়ারস হল একটি ট্রাস্ট যার কর্ণধার প্রধানমন্ত্রী এবং তার বোর্ডটিতে থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, আর থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত তিন জন লোক। দেশের আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি ট্রাস্টের ট্রাস্ট ডীডে লেখা থাকে ট্রাস্টটি কিসের জন্য তৈরি। কিন্তু অদ্ভুৎভাবে এই ট্রাস্ট ডীডটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতাতেও এই ট্রাস্ট সংক্রান্ত কোনো তথ্য পিএম কেয়ারস দেবে না, কারণ আইনত এটা নাকি কোনো সরকারী প্রতিষ্ঠান নয়। তার মানে হল এই ফান্ডে কত টাকা জমা পড়ল আর কত টাকা কোথায় খরচ করা হল তা কোথাও জানানো হবে না।

বলা হয়েছিল যে এই ট্রাস্টকে বিশ্বাসযোগ্য বানানোর জন্য একজন স্বাধীন অডিটার বা হিসাব পরীক্ষককে নিয়োগ করা হবে। বলে রাখা ভাল সরকারী হিসাব পরীক্ষক ‘ক্যাগ’ এই ফান্ডের হিসাব পরীক্ষা করবে না। তো সেই ‘স্বাধীন পরীক্ষক’ হিসেবে যাকে নিয়োগ করা হল সেই সংস্থার নাম ‘সার্ক এসোসিয়েটস’ এবং তার প্রধান সুনীল কুমার গুপ্তা আরএসএস-এর এক প্রকাশ্য সমর্থক এবং বিজেপির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। স্বাধীন শব্দটা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই অনেকের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মানুষের কাছে সাহায্য চাইতেই প্রচুর পয়সা জমা পড়তে শুরু করে। জমা পড়ার কারণও আছে। এই দানে আয় কর ছাড়ের লোভ আর কোম্পানিদের কর ছাড়ের মাত্রাটা আরো বেশি। যারা যারা ঘোষণা করে ত্রাণ তহবিলে দান করেছে, তার মধ্যে কত সরকারী টাকা এই ফান্ডে ঢুকেছে তার একটা হিসাব দেখি। এলআইসি ১০৫ কোটি, এনএমডিসি ১৫০ কোটি, স্টিল সরকারী কোম্পানি ৫০০ কোটি, ওএনজিসি ৩১৬ কোটি, এমপি ফান্ডের পয়সা ৩৮৬ কোটি, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সরকারী কোম্পানি ২০০ কোটি, গ্রামীন বিদ্যুৎ সরকারী কোম্পানি ১৫০ কোটি, আর বাকি সব সরকারী কোম্পানি মিলিয়ে ৭০০ কোটি। তাহলে মোট হল ২৭৩২ কোটি। এটা শুধু ঘোষণা যারা করেছে সেই হিসেব। পুরো টাকা যত জমা পড়েছে সেটা ১০,০০০ কোটি টাকার বেশি আন্দাজ করা যায় কারণ প্রাইভেট কোম্পানি যারা ঘোষণা করেছে সেটা আর এখানে লিখে শব্দ বাড়ালাম না।

তো এই বিপুল অর্থ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুই করেননি বহুদিন ধরে। পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহ্য যন্ত্রণা দেখেও তার মনে হয়নি টাকাটা খরচ করা উচিত। তো যাই হোক বেশ কিছুদিন পর পিএম কেয়ারস ফাণ্ডের টাকা দিয়ে প্রায় ৫০,০০০ ভেন্টিলেটার অর্ডার দেওয়া হল। যখন খুব শ্বাস কষ্টে কেউ ভোগে তখন তাকে শ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য এই যন্ত্রটি লাগে।

এই যন্ত্রের অর্ডার আর তার দাম নিয়ে বিপুল জল ঘোলা। ৩১ মার্চ সরকার ৪০,০০০ ভেন্টিলেটারের অর্ডার দেয়। অর্ডার পায় স্ক্যান রে–বেল আর এগভা বলে দুটি কোম্পানি। স্ক্যান রে–বেল ৩০,০০০ ভেন্টিলেটারের আর এগভা ১০,০০০। মনে রাখতে হবে এটি পিএম কেয়ারস তৈরি হওয়ার দু’দিন পরে। এই অর্ডার দেওয়ার প্রক্রিয়া ৫ মার্চ থেকে শুরু হয়ে যায় অর্থাৎ পিএম কেয়ারস তৈরি হওয়ার আগে।

দুটির মধ্যে কোনো কোম্পানিই টেন্ডারে যা যা ভেন্টিলেটারের বৈশিষ্ট্য লেখা ছিল তা পূরণ করছিল না। ১৮ এপ্রিল অর্ডার দেওয়ার পরে সেই বৈশিষ্ট্যগুলোই টেন্ডার থেকে বদলে যায়। এই কাজটি আইনত অপরাধ আর দেখায় যে সরকার এই দুই কোম্পানিকে সাহায্য করল টেন্ডার পেতে।

৫ মে শ্রীধর মানেক নামে একজন রিপোর্টার খবর করেন যে এগভার ভেন্টিলেটার কতটা খারাপ মানের এবং তাদেরকে কিভাবে সরকার সাহায্য করেছে অর্ডার পেতে। এরপর জুনে মোদি ঘোষণা করেন ৫০,০০০ ভেন্টিলেটার অর্ডার দেওয়া হল পিএম কেয়ারস ফান্ড থেকে। জানা গেল এরমধ্যে সেই আগে অর্ডার দেওয়া ভেন্টিলেটারগুলোও আছে। আবার বিজেপি অধ্যক্ষ জে পি নাড্ডা দাবি করলেন যে জুনের মধ্যে ৬০,০০০ ভেন্টিলেটার হাসপাতালে পৌছে যাবে।

তার মানে ৫০,০০০ নাকি ৬০,০০০? কত ভেন্টিলেটার অর্ডার দেওয়া হল? মার্চ থেকে জুন হয়ে গেছে। বেল এর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হল কতোগুলো ভেন্টিলেটার বানিয়েছে? তারা জানাল মাত্র ৪,০০০ বানানো হয়ছে ১৫ জুন অবধি। প্রধানমন্ত্রীর অফিস আবার জানায় যে ২,৯২৩-ই এখনো পর্যন্ত বানানো হয়েছে। কেন এই গড়মিল?

এবার আসি দামের প্রশ্নে। ভেন্টিলেটারের জন্য পিএম কেয়ারস এর ২,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০,০০০ ভেন্টিলেটারের জন্য। মানে ৪ লাখ টাকা একেকটির দাম। কিন্তু এগভার ভেন্টিলেটারের দাম কোম্পানির মতে ১.৫ লাখ টাকা। স্ক্যান রে–বেল-এর তৈরি করা ভেন্টিলেটারের ডিজাইনার বলেছে এর দাম এক লাখেরও কম। যদি আমরা ধরেনি যে দুটোর দাম এক মানে তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম দুটোর দামই ১.৫ লাখ। তাহলে বেশি পড়ে থাকছে ২.৫ লাখ। তার মানে ১,০০০ কোটি টাকা বেশি থেকে যাচ্ছে। সেই টাকাগুলো যাচ্ছে কোথায়? এর কোনো উত্তর নেই।

তার মানে পিএম কেয়ারস এর টাকা কিভাবে খরচ হচ্ছে তা নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে। আমরা এটাও জানি না যে ট্রাস্ট বা ফান্ডটা বানানো হয়েছে কি জন্যে। বিভিন্ন কোম্পানিকে সরকার সাহায্য করে টেন্ডার পাইয়ে দিচ্ছে। তার জন্য তারা খারাপ যন্ত্র দাম দিয়ে কিনছে। সেই ফান্ডের মধ্যে সরকারী কোম্পানির টাকা ঢালা হয়েছে জোর করে যেগুলো তারা বেসরকারীকরণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আর এক বিপুল অর্থের কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কাদের পকেটে যাচ্ছে বেশ বোঝা যাচ্ছে। আর এক বিপুল অর্থ এখনো পড়ে আছে সেই ফান্ডে। তার ও কোনো হিসাব জনসমক্ষে নেই।

তবে তছরুপ করা টাকা যে বড়লোককে বড়লোক বানাতে আর গণতন্ত্র শেষ করার জন্য ব্যবহৃত হবে এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত।

- প্রত্যুষ নন্দী  

raddpoet

প্রয়াত হলেন উর্দুর অন্যতম জনপ্রিয় কবি রাহাত ইন্দোরি। করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি। শেষে ১১ আগস্ট ইন্দোরের এক হাসপাতালে কর্ডিয়াক এরেস্টে মৃত্যু হয়। দেশে বিদেশে অজস্র মুশায়েরা কবি সম্মেলন মাতিয়েছেন তিনি। তাঁর লেখা কবিতায় সুর দিয়ে হিন্দি ছবির বহু কালজয়ী গান তৈরি হয়েছে।

১৯৫০ সালে বর্তমান মধ্য প্রদেশের ইন্দোর শহরে জন্ম হয় কবির। পিতৃদত্ত নাম রাহাত কুরেশি। ইন্দোর শহরেই জীবনের প্রায় পুরোটা কাটিয়েছেন তিনি। পড়াশোনা, গবেষণা, অধ্যাপনা এবং কবি বা শায়ের হিসেবে খ্যাতির সূত্রপাত এই শহর থেকেই।

সারা জীবন তিনি সোচ্চার ভাষায় বলেছেন ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা, মানবতার কথা বলে গেছেন। আওয়াজ তুলেছেন শাসকীয় স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাই ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে তিনি যেমন সরব ছিলেন, একইরকমভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার কবিতা ঝলসে উঠেছে বার বার।

“যদি আগুন লাগে, তবে তার কবল থেকে কি ওরা বেঁচে যাবে ?
এটা শুধু আমার একার বাড়ি তো নয়

আমি নিশ্চিত আমাদের শত্রু দুর্বল মোটেই নয়
কিন্তু ওদের মতো মৃত্যুর ভয় তো আমাদের নেই

আজ যারা সিংহাসনে আসীন, কাল থাকবে না
ওরা তো ভাড়াটে মাত্র, আমাদের মতো এ দেশের মালিক তো নয়

আমাদের সবার রক্ত মিশে আছে যে মাটিতে
সেই দেশটা কারুর একার পৈতৃক সম্পত্তি তো নয়"

সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি নিয়ে তিনি বারবার সরব হয়েছেন:

“আপনি হিন্দু, আমি মুসলিম, উনি ক্রিশ্চান, তিনি শিখ
দূর মশাই, ছাড়ুন তো এসব! চলুন প্রেম করি!”
অথবা
“আমার একটা বিশেষ পরিচয় ছিল
এ কথাটা আমি মরে গেলে সবাইকে জানিয়ে দিও
আমার কপালে রক্তাক্ষরে ভারতীয় লিখে দিও”

এরকম অজস্র বার অজস্র পংক্তিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ভাষায় তিনি মানবিকতার কথা, সম্প্রীতি সৌহার্দ্যের কথা বলেছেন। পৃথিবীর হেন কোনো দেশ নেই যেখানে তাঁর অনুরক্তরা নেই। তাঁকে শুনতে লোকে ভিড় জমাতেন হাজারে হাজারে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললে তাঁর নাম নামে তৈরি অসংখ্য ফ্যান পেজ, আর তার লাখে লাখে সদস্য তাঁর এই বিপুল জনপ্রিয়তার সাক্ষ্যই বহন করে। কিন্তু জনপ্রিয়তার ‘বোঝায়’ নুব্জ্য হয়ে নিজের মতামত নিয়ে তিনি আপোষ করেননি।

আজকের দিনে যেখানে আমাদের গোটা দেশ প্রতিদিন সাম্প্রদায়িক শক্তির কবলে, তখন রাহাত সাহেবের মতো উদারচেতা, স্পষ্টবক্তা, আর আপামর জনসাধারনের ভাষায় কথা বলতে জানা, কবিতা লিখতে জানা সাহিত্যিকের চলে যাওয়াটা একই সাথে বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক।

বিদায় রাহাত ইন্দোরি সাহেব। আপনি আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল উজ্জ্বল থাকবেন।

--  বিস্ময় বসু   

ilaiille

ইলিনার কথা আমি প্রথম শুনি ভিলাই গুলিকান্ডের পরে ছত্তিসগড়ে গিয়ে। সময়টা ছিল ১৯৯২ সাল, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ। ভিলাইতে ছত্তিসগড় মুক্তি মোর্চা-র ডাকে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ রেল-অবরোধের ওপর তৎকালীন মধ্যপ্রদেশের – ছত্তিসগড় তখনও আলাদা রাজ্য হিসাবে গঠিত হয়নি – বিজেপি সরকার – মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরলাল পাটোয়া -- গুলি চালিয়ে শিশু-মহিলা সহ ১৩ জনকে হত্যা করেছিল। আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর এই বর্বর, রক্তক্ষয়ী হামলার পরে অনেকের মতো আমরাও ছুটে যাই ভিলাইতে। সেখানে তখন কার্ফিউ, থমথমে পরিস্থিতি, পুলিশ যাকে পারছে গ্রেপ্তার করছে। ভিলাই শহর, আমরা বুঝতে পারলাম, আমাদের পক্ষে নিরাপদ নয়। কোনোরকমে লুকিয়ে বাস ধরে শাল-পলাশ-মহুয়ায় সেজে থাকা দু’পাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আড়াই ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার জঙ্গল-টিলার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম দল্লি-রাজহরা।

দল্লি-রাজহরা। দুটি পাহাড়, দুটি লোহা খাদান। এখানেই বাস্তব রূপ পেয়েছিল শংকর গুহ নিয়োগীর ‘সংঘর্ষ-নির্মাণ’ তত্ত্ব -- যা সম্পাদনের পুরোভাগে ছিল ছত্তিসগড় মাইনস শ্রমিক সঙ্ঘ (বৃহত্তর পরিসরে যা রূপান্তরিত হয় ছত্তিসগড় মুক্তি মোর্চায়)। এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খাদান-মজদুরদের নিজেদের শ্রমে গড়ে তোলা শহীদ হাসপাতাল। আর নিয়োগীজীর কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে এই শহীদ হাসপাতালেরই প্রতিষ্ঠা লগ্নে, ৮০-র দশকের শুরুতে দল্লি-রাজহরায় পৌঁছে যান এক তরুণ শিশু-চিকিৎসক – বিনায়ক সেন। সঙ্গী জীবনসঙ্গিনী ইলিনা। দু’চোখে তাদের একরাশ স্বপ্ন। বুকভরা সংকল্প তাদের একমাত্র ভরসা।

জেএনইউ-র পিএচডি ইলিনা অ্যাকাডেমিক প্রত্যাশা বিসর্জন দিয়ে ছত্তিসগড়ে এসে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েন নিয়োগীর শ্রমিক আন্দোলনের কর্মসূচীর সাথে, বিশেষ করে আত্মনিয়োগ করেন নারীমুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে। তার হাত ধরেই শক্ত জমিন পায় নিয়োগীর সাধের ছত্তিসগড় মহিলা মুক্তি মোর্চা। এই কাজের মাধ্যমেই ইলিনা পরিচিত হন শ্রমিক-জীবনের সঙ্গে, আত্মীয়তা গড়ে ওঠে শ্রমিক পরিবারের মেয়েদের সাথে। সমাজে এবং পরিবারে নারীর অবস্থান কোথায়, পুরুষতন্ত্রের কঠোর শাসন-শৃঙ্খলে নারীজীবন কিভাবে বিপর্যস্ত, এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হয় তার। কিভাবে মেয়েদের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা দূর করা যায়, কিভাবে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো যায়, এসব নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনা করেন তিনি। ছত্তিসগড়ের এই অসাধারণ অভিজ্ঞতাই পরবর্তীকালে তাকে এদেশের নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম দিশারীর স্বীকৃতি এনে দেয়। তার লেখা এ স্পেস উইদিন দ্যা স্ট্রাগল (১৯৯০) তো একটা ফেমিনিস্ট ক্ল্যাসিক হিসাবে মান্যতা পেয়েছে। নারী আন্দোলনের অনেকেই বলেছেন বইটি তাদের অনুপ্রেরণা।

বিভিন্ন সমাবেশে স্বকণ্ঠে ইলিনার যে গান সভায় উপস্থিত সমস্ত মুক্তিকামী নারীবাদীদের প্রেরণা যোগাতো, উজ্জীবিত করে তুলত তা হল, তু ইস আঁচল কে এক পারচাম বনা লেতি তো আচ্ছা থা। / তু সহনা ছোড় কর কহনা শুরু করতি তো আচ্ছা থা।

ছত্তিসগড়ে এসে নিয়োগী ও নিজের উৎসাহে ইলিনা বহুমুখী কার্যকলাপে জড়িত হন। শৈশব ও স্কুলজীবন কেটেছিল শিলংয়ে, খাসি জনগোষ্ঠীকে, তাদের রীতিনীতি, আদবকায়দাকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু দূর থেকে, ইংরেজি-শিক্ষিত উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের রোদচশমার আড়াল থেকে। ছত্তিসগড়ে কিন্তু ইলিনা আরও কাছাকাছি, আরও ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছিলেন আদিবাসী, মূলত গোন্দ, জনগোষ্ঠীর মানুষজনের সঙ্গে। এতটাই একাত্ম হয়েছিলেন তিনি তাদের সাথে যে অনায়াসেই আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন গোন্দি ভাষা, তাদের সাথে সাবলীলভাবে কথাবার্তা চালাতেন ওই ভাষাতেই। নৃতত্ববিদের নিষ্ঠা নিয়ে আহরণও করেছিলেন গোন্দ ইতিহাস, সঙ্গীত, চিত্রকলা, সংস্কৃতির উপাদান ও জীবনধারার জানা-অজানা নানা তথ্য। এইভাবেই উদ্ধার হয়েছিল ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহের বিদ্রোহী নায়ক বীরনারায়ণ সিংয়ের বীরগাঁথা। ব্রিটিশ শাসকরা যাকে ফাঁসি চড়িয়েছিল, কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রচলিত ব্রাহ্মনবাদী ইতিহাসের পাতায় যার জায়গা হয়নি। নিয়োগীর উদ্যোগে তাই চালু হয় বীরনারায়ণ শহিদ দিবস উদযাপন। ইতিহাস পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছিল নতুন ভোরের ইতিহাস।

বিকল্প কৃষিতে নিয়োগীর আগ্রহ-উদ্দীপনা ছিল সীমাহীন। প্রখ্যাত রাইস সাইনটিস্ট বা ধান-বিজ্ঞানী আর এচ রিচারিয়া রায়পুরের কাছে একটি রাইস রিসার্চ সেন্টার গড়ে তুলেছিলেন। স্বাভাবিক নিয়মেই নিয়োগীর সাথে এই কৃষি-বিজ্ঞানীর গভীর সখ্যতা স্থাপিত হয়েছিল। এ ব্যপারে ইলিনার আগ্রহও ছিল চোখে পড়ার মতো। জৈব-চাষ, বীজ-বৈচিত্র সংরক্ষণ ইত্যাদি প্রসারের কাজে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছিলেন উনি। রিচারিয়া ছিলেন একাধারে তার বন্ধু, শিক্ষক, উপাদেষ্টা। ১৯৮৭ সালে নিয়োগীর সাথে মতপার্থক্যের কারণে দল্লি-রাজহরা ছেড়ে চলে যাবার পরেও ছত্তিসগড়ের গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রবল পরিশ্রম করে এই কাজ চালিয়ে গিয়েছেন ইলিনা। এর মাধ্যমেই ছত্তিসগড়ের কৃষিজীবী মানুষের সাথে গড়ে উঠেছিল নাড়ির যোগ।

ছত্তিসগড়ের আদিবাসী-অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন, সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাক্ষরতার প্রসার, পানীয় জল যোগানের ব্যবস্থা করা, খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য বিনায়ক ও ইলিনা তৈরি করেন তাদের নিজস্ব সংস্থা রূপান্তর। স্থানীয় স্তরে গণউদ্যোগ গড়ে তোলাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এই কাজেও ইলিনাদের চড়কির মতো ঘুরতে হয়েছে গ্রাম থেকে সুদূর গ্রামে। পরমানন্দে দায়ভার গ্রহণ করেছেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ সম্পন্ন করেছেন এই দুটি নিবেদিত প্রাণ।

আসলে ছত্তিসগড়কে ভালবেসে ফেলেছিলেন বিনায়ক ও ইলিনা। এখানকার লাল রুক্ষ মাটি, দেবতার মতো খাড়া টিলা পাহাড়ের চূড়ো, মহানদী-ইন্দ্রাবতী-প্রাণহীতার অবারিত বয়ে চলা, ঘন-সবুজ মায়াময় অরণ্য, নীল স্ফটিক-স্বচ্ছ আকাশ, এখানকার প্রাণবন্ত মানুষজন, সহজ জীবনযাত্রা মাতিয়ে তুলেছিল দুজনকেই। ইনসাইড ছত্তিসগড় : এ পলিটিক্যাল মেমোয়ার (২০১৪), ইলিনার শেষ লেখা এই বইটির ভূমিকায় উনি লিখেছেন, “আমাদের কাছে ছত্তিসগড় স্রেফ কাজের জায়গা নয়, বৃহত্তর অর্থে এটাই আমাদের ঘরবাড়ি। এখানকার মাটি-জমি, এখানকার মানুষজন সবই আমাদের নিজেদের।” বলা যায়, ছত্তিসগড়ই তৈরি করেছিল ইলিনা বিনায়ককে।

ছত্তিসগড়ের ইলিনা আজ আর নেই। তিনি আছেন, থাকবেন ওই ছত্তিসগড়েই।

-- সুমিত  

ve

একটি প্রেস বিবৃতিতে জিএসএফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুবীর বোস জানিয়েছেন, ৭ আগস্ট ২০২০ ন্যাশন্যাল প্রোগ্রেসিভ ডিফেন্স এমপ্লয়ীজ ফেডারেশনের নির্দেশে জিএসএফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানেজারের হাতে স্ট্রাইক নোটিস প্রদান করা হয়। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সাধারন সম্পদক সুবীর কুমার বোস ও যুগ্ম সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস জেনারেল ম্যানেজারের অফিসে অন্যান্য উচ্চ আধিকারিক ও সিকিউরিটি অফিসারের উপস্থিতিতে এই নোটিস দেন। এরপর জিএসএফ জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির পক্ষ থেকে অফিস বেয়ারার ও এক্সিকিউটিভ সদস্যদের লাঞ্চ বয়কটের মধ্য দিয়ে লাগাতর ধর্মঘটের প্রচার শুরু হয়। ঐদিনই ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও গাণ অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপক্ষিক বৈঠক হয়। কর্তৃপক্ষ প্রতিরক্ষা শিল্পে কর্পোরাটাইজশন মেনে নিয়ে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা বলে। ইউনিয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় সরকারের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা শিল্পে করপোরেশন করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হলেই ধর্মঘট প্রতাহার করা হবে। শ্রমিকদের সমর্থনের বার্তা সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করা হয় কর্তৃপক্ষের কাছে।

জি এস এফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ৮ আগস্ট “সেভ ইন্ডিয়া দিবস” পালন করা হয়।

kit

বর্ষিয়ান পার্টি সদস্য কমরেড আনু মিত্র গত ৭ আগস্ট দক্ষিণ কলকাতার এক হসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন। তার কয়েকদিন আগে গুরুতর অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু আর ফেরা হল না। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি রেখে গেছেন একমাত্র পুত্র ও পুত্রবধূ সহ অন্যান্য পরিজনদের। তাঁর মৃত্যুতে পার্টি হারালো এক অবিচল প্রবীণ সদস্যাকে। পার্টি তাঁর শোকাহত পরিবারের প্রতি জানিয়েছে গভীর সমবেদনা। কমরেড আনু মিত্র ছিলেন খুবই মিষ্টভাষী, মৃদুভাষী, সহজিয়া, যিনি সবাইকে খুব দ্রুত আপন করে নিতে পারতেন। তিনি বিজয়গড়-বাঘাযতীন এলাকায় পার্টি সংগঠন সহ সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির কাজে যুক্ত ছিলেন।

আনু মিত্রকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতার, বিশেষ করে বাঘা যতীনের কমরেডরা উপস্থিত হন আইরিস হাসপাতালের সামনে। তাঁর মরদেহে লাল পতাকা দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। উপস্থিত কমরেডরা একে একে পুষ্পার্ঘ দেন। এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রয়াত আনুদির পুত্র অর্ণব ও তাদের পরিজন সেখান থেকে বিজয়গড়ের বাড়ি হয়ে রওনা দেন কেওড়াতলা শ্মশানের উদ্দেশ্যে।

কমরেড আনুদি লাল সেলাম!

খণ্ড-27
সংখ্যা-28