কোভিড-১৯ প্রতিরোধে প্রয়োজন বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির উপযুক্ত সমন্বয়
nab

করোনা-প্রতিষেধক আবিষ্কারের পর ব্যাপক মানুষের ওপর তা প্রয়োগ করে ভয় দূর করা এখনও অনেক দেরী। এই প্রেক্ষিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি পরীক্ষামূলক ভাবে নানা দেশে কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে। ইউরোপ, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশে, বিশেষত আমাদের দেশে এই চিকিৎসা পরীক্ষামূলক ভাবে ভালো ফল দিচ্ছে, যদিও তা নামমাত্র প্রচার পেয়েছে।

জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা মহামারীগুলোর ক্ষেত্রে অসাধারণ ফল প্রদান করেছে। পৃথিবী জুড়ে মহামারীর ফ্লু যেমন ছড়িয়েছে, আলোচ্য চিকিৎসা পদ্ধতিটিও তেমনই সাফল্যের ডিঙিতে চড়ে তত বিস্তার লাভ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। এই পদ্ধতির সাধারণ প্রকরণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলেও মহামারীর ক্ষেত্রে রোগের বাহ্যিক লক্ষণগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখে বিশ্বের এক এক অঞ্চলের সাধারণ প্রতিষেধক (প্রোফিল্যাক্সিস) ঠিক করা হয়। এই পদ্ধতির আবিষ্কর্তা সামুয়েল হ্যানিম্যান যেমন তৎকালীন স্কারলেট ফিভার (1801)-এর সময় এই প্রতিষেধক চালু করেছিলেন 'বেলেডোনা' নামক ওষুধ ব্যবহার করে শতকরা একশো ভাগ সাফল্য পেয়ে।

১৯১৮-২০ সালের বহু আলোচিত স্প্যানিশ ফ্লুয়ের সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার যৌথ মহামারীতে ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যুর সময় প্রচলিত আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার অধীনে থাকা রোগিদের ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয়ে থাকলেও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাধীনদের মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। বসন্ত, কলেরা, হাম, টাইফাস, চিকেনগুনিয়া প্রভৃতি নানান মহামারীতেই উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে এই চিকিৎসা পদ্ধতি।

আজও সেই ধারাবাহিকতায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রচারহীন অবস্থাতেই হোমিও চিকিৎসকগণ নিজেদের সুস্থ রেখেই কোভিড১৯ রোগীদের চিকিৎসা চালিয়ে গিয়ে সফল হচ্ছেন। অন্য দিকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকগণও সফলতা পাচ্ছেন। সার্বজনীন প্রতিষেধক চালু না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্ত সমান্তরাল ধারার চিকিৎসা বস্তুগতভাবেই গুরুত্ব বহন করছে। জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। বিতর্কিত হলেও "আর্সেনিক এলবাম" নামক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যা "আয়ুশ" মন্ত্রক ঘোষণা করেছে, ইতিমধ্যেই তা এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যে বাজারে তা সাময়িক ভাবে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়।

সমাজতান্ত্রিক কিউবা কিম্বা ভারতের বামশাসিত কেরলেও বিভিন্ন সময়ে বিকল্প চিকিৎসি পদ্ধতির সাফল্য উল্লেখযোগ্য। ভারতবর্ষের মতো গরিব দেশে আধুনিক চিকিৎসা একটি মারাত্মক খরচবহুল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় সস্তায় বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো একটা আশার আলোকবর্তিকা হিসাবে পথ দেখাচ্ছে যার আরও বেশি বেশি স্বীকৃতি ও অনুশীলন প্রয়োজন। প্রাচীন আধুনিকোত্তর চিকিৎসা পদ্ধতি- হোমিওপ্যাথি, গরিবের হাতিয়ার হবার সম্ভাবনা নিয়ে হাজির।

- নবকুমার বিশ্বাস   

খণ্ড-27