লকডাউন-এর প্রতিকূলতার মধ্যেও গ্রামাঞ্চলে গ্রামীণ গরিব মেহনতিদের স্বার্থে ও প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু দাবি নিয়ে সরকারের কাছে লাগাতার চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এইসব আন্দোলন আরও বৃহত্তর পরিধিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সাথে সাথে সরকারের বর্তমান নতুন নতুন সংস্কারগুলোতে জোরালো হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে সংস্কারের সুফল আদায়ের জন্য জনগণকে সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেই কিছু আদায় করতে হবে।
যেমন ধরুন ‘জয় বাংলা’ প্রকল্প তাতে নতুন করে আনা ‘৭ বন্ধু’ ও ‘জয় জোহার’ প্রকল্প সহ আরও কয়েকটি
১) মানবিক প্রকল্প, (২) লোক প্রসার প্রকল্প, (৩) বার্ধক্য ও বিধবা পেনশন স্কীম (W&CD), (৪) বার্ধক্য ও বিধবা পেনশন স্কীম (P&RD, UD & MA), (৫) কৃষকদের বাধক্য পেনশন, (৬) শিল্পী ও তাঁতীদের বার্ধক্য পেনশন। এই আটটি প্রকল্পকে যুক্ত করে জয় বাংলা প্রকল্প শুরু হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকেই কার্যকরী হয়েছে। এই প্রকল্পের উপভোক্তাদের বহু গরিব মানুষ গ্রামগঞ্জে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক গরিব মানুষগুলো তাদের প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র বিশেষ করে SC/ST শংসাপত্র জোগাড় করার সমস্যার ফলে অসুবিধায় পড়ছে। এই ক্ষেত্রে শাসক পার্টির ধান্দাবাজরা অনেক সময়ই দলবাজি দুর্নীতি ভাওতাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। পঞ্চায়েত ভিত্তিক বিডিও অফিস থেকে লকডাউন পরিস্থিতির জন্য VRP মানে ভিলেজ রিসোর্স পার্সনস্ নিযুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু মানুষ সরাসরি বিডিও অফিসে আসা সমস্যা তাই এই VRP-দের মাধ্যমে গ্রামের খোঁজ খবর নেওয়া এবং গ্রামের বিভিন্ন ধরনের কাজ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা-২নং ব্লক-এর সিপিআই(এম-এল) এবং আয়ারলা-এআইকেএম কর্মীরা এই লকডাউন পরিস্থিতির সময় সমস্ত প্রতিকুলতার মোকাবিলা করে নিজেদের সংগঠন আছে এমন গ্রামের বাহিরে ও নতুন নতুন গ্রামের গরিব মেহনতিদের মধ্যে সরকার ঘোষিত সমস্ত সংস্কারের সুবিধা আদায়ের জন্য ব্যপক উদ্যোগ নেয়। কমরেডরা লকডাউন-এর নিয়ম মেনেই গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করে গরিব মানুষের মধ্যে জয়বাংলা প্রকল্প বিশেষ করে জয়জোহার ও তপশীল বন্ধু প্রকল্পের ফর্ম পূরণ করার উদ্যোগ নেয়। ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে দেখা যায় বহু লোকের কাষ্ট শংসাপত্র নেই। বয়সের প্রমাণপত্র নিয়ে বিভিন্ন রকম জটিলতা। এই সমস্ত বিষয় ঠিক করার জন্য উদ্যোগ শুরু হয়। কমরেডদের মধ্যে কাজ গুলো ভাগ করে নেওয়া হয়। কঠিন কষ্টকর প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে বহু মানুষ বিশেষ করে আদিবাসীদের থেকে ভালো সংখ্যক বৃদ্ধা ও বৃদ্ধের পেনশন আদায় করতে সক্ষম হন। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে VRP সদস্যদের ও কাজে লাগানোর ফলে অনেক সময় কাজটা ত্বরান্বিত হয়। প্রায় শতাধিক মানুষের পেনশন আদায় করা সম্ভব হয়। হাজারের উপর মানুষের প্রচেষ্টা ফরম পূরণ করা হয়। যদিও প্রচেষ্টা ফরম-এর ভবিষ্যত অনিশ্চিত। ১০০ দিনের কাজের জন্য ৪(ক) ফর্ম পূরণ চলছে। এই সমস্ত কাজের মাধ্যমেই নিজেদের সংগঠনের গ্রামের বাহিরে নতুন করে ৪টি গ্রামের জনগণের মধ্যে সংগঠনের বিস্তার ঘটছে। সমসাময়িক পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচীতে এই সমস্ত গ্রাম থেকে ভাল সংখ্যক মহিলাদের ও অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে।
বর্তমান লকডাউন এর পরিস্থিতির মধ্যে সরকার আর ও বিভিন্নধরনের সংস্কার নামাচ্ছে। যেমন নতুন করে জব কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের 8(E) ফর্ম জমা দিলে নতুন জব কার্ড পাওয়া যাবে। যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার ৪০ হাজার কোটির বরাদ্দ বাড়িয়েছে। তাই ৪(ক) ফর্ম পূরণ করার উদ্যোগ বাড়াতে হবে। গরিব মেহনতি হকারদের জন্য ১০ হাজার টাকার ঋণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন করে কেসিসি কার্ড দেওয়ার কথা উঠছে। নতুন লোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রেশন কার্ড নেই এমন পরিবারকে কুপন দেওয়ার কথা। এসএসওয়াই-এর ২৫ টাকা কিস্তির টাকা সরকার দেবেন ঘোষণা করেছেন। মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের যুক্ত করার কথা। কৃষকদের সমবায় করবে বলছে। ফসলের ক্ষতিপূরণ ও শস্যবীমার আদায়ের প্রশ্ন। সব ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করতে হবে। জনগণের জীবন-জীবিকার ও অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার সাথে সাথে মনে রাখতে হবে এই আন্দোলন গুলোর মোকাবিলার জন্য শাসকরা সংস্কার আনবে। আবার সেই সংস্কারের হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে গণভিত্তি বিস্তারিত করে আন্দোলনের শক্তি বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেই এগিয়ে যেতে হবে। শাসক রা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সুযোগে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করে এবং স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা চালায়। সর্বহারা পার্টিকে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষতিপূরণ, ত্রাণ ও অনুদান আদায়ের মাধ্যমেই জনগনকে শাসকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
-- সজল পাল