ভারতের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী প্রশ্নে পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে আসা বার্তা

“পাকিস্তানের হিন্দু কমিউনিটি সর্বসম্মতভাবে এই আইনকে প্রত্যাখ্যান করছে কারণ এই আইন ভারতকে সাম্প্রদায়িক লাইনে বিভাজিত করবে”, জানিয়েছেন ‘পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিল’-এর মেন্টর রাজা আসর মংলানি। “এটা পাকিস্তানের সমগ্র হিন্দু কমিউনিটির পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বার্তা। কোনও প্রকৃত হিন্দু কখনই এই আইনকে সমর্থন করবেনা। আই আইন ভারতের সংবিধানকে উল্লঙ্ঘন করছে”, বলেন তিনি।

পাকিস্তানের সংসদের উচ্চকক্ষ ‘সেনেট’-এর খ্রীষ্টান সদস্য তথা বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির সদস্য আনওয়ার লাল ডীন বলেন, “এই আইন মৌলিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে। আমরা একে প্রত্যাখ্যান করছি”।

পাকিস্তানের শিখ সংগঠন ‘বাবা গুরু নানক’-এর নেতা গোপাল সিং বলেন, “কেবল পাকিস্তানের শিখ-রা নয়, ভারত সহ সারা বিশ্বের শিখ সম্প্রদায় এই পদক্ষেপকে ধিক্কার জানাচ্ছে। শিখ সম্প্রদায় ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন হিসেবে আমি ভারতের মুসলমান সংখ্যালঘুদের আতঙ্ক ও বেদনা অনুভব করতে পারি। এ তো উৎপীড়ন ছাড়া আর কিছু নয়”।

পাকিস্তানে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি কতটা সত্যি?

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করার সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন যে পাকিস্তানের অ-মুসলমান জনসংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। সত্যিই কি তাই? অমিত শাহ বলেন যে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ছিল ২৩%, কিন্তু এখন তা মাত্রও ৩.৭%-এ এসে দাঁড়িয়েছে। এই তথ্য দিয়ে অমিত শাহ বলেন যে এর অর্থ হল, হয় ওই মানুষদের হত্যা করা হয়েছে অথবা তাদের দেশ ছাড়তে বা ধর্মত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। বাস্তবে কি তাই? জনগণনার হিসেব কী বলে? ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে, ২৩% জনতা অ-মুসলমান ছিল! কখনই তা ছিল না।

১৯৪৭ সালে বর্তমান বাংলাদেশ ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান’ আর বর্তমান পাকিস্তান ছিল ‘পশ্চিম পাকিস্তান’—এই দুই মিলে ছিল তৎকালীন পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে কোন ধর্মের কত মানুষ পাকিস্তান বা ভারতে বসবাস করতেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

১৯৫১ সালের জনগণনায় পাকিস্তানে (পূর্ব+পশ্চিম) সংখ্যালঘু জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ১৪.২%। এই ১৪.২ শতাংশ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে সমানভাবে ছিল না। বলাই বাহুল্য যে পূর্ব পাকিস্তান(বর্তমান বাংলাদেশ) অংশেই এই অ-মুসলমানদের সিংহভাগের বসবাস ছিল, মোট জনসংখ্যার ২৩.২%। আর পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমান পাকিস্তান) ছিল ৩.৪৪%।

পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হওয়ার পর বাকি পাকিস্তানের অ-মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাত ১৯৭২-এর হিসেবে দাঁড়ায় ৩.২৫% এবং ১৯৮১-র সেন্সাসে ৩.৩%। পাকিস্তানে এর পরের জনগণনা হয় ১৯৯৮ সালে। তখন অ-মুসলমান জনতার অনুপাত দাঁড়ায় ৩.৭%। ২০১৭ সালে পাকিস্তানে নতুন সেন্সাস হয়েছে কিন্তু তার হিসেব এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিলের নেতা আসর মংলানির মতে পাকিস্তানে বর্তমানে হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত মোট জনসংখ্যার ৪%-এর কাছাকাছি। সুতরাং একথা নিশ্চিতরূপেই বলা যায় যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনে বুঝেই সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলেছেন কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে।

খণ্ড-26
সংখ্যা-41