সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় শিক্ষা শিবির

“এগিয়ে চলার পথটি কুসুমাস্তীর্ণ নয়, কাঁটা বিছানো। মাঝপথে যারা থেমে গেলেন, তারা আর পেরে উঠলেন না—তাদের জন্য রইলো সহানুভূতি। যারা জীবন দিলেন আর যারা শেষ পর্যন্ত এগিয়ে গেলেন তাদের রক্তিম অভিবাদন! যারা বাধা দিল তাদের জন্য রইলো লড়াইয়ের উন্মুক্ত প্রান্তর—আজ মুখোমুখি সংঘাত অনিবার্য!” (সন্ত রাম উদাসী, পাঞ্জাবের বিপ্লবী লোককবি)

সেই ‘সংঘাত’ আজ একটি বিশেষ মতাদর্শের বিরুদ্ধে, বিজেপি-আরএসএস-এর ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্বের মতাদর্শের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক জীবনে সেই মনুবাদী মতাদর্শের জটিল বন্ধনকে চিহিত করার, ছিন্ন করার লড়াইয়ে সামিল যারা তাদের সামনের নতুন অবরোধকে জানা-বোঝার জন্য গত ১৫ নভেম্বর বসেছিল এই শিক্ষা শিবির, ভুবনেশ্বরের অশোকনগরে নাগভূষণ ভবনে।

বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতা কমরেড নাগভূষণের মূর্তি ও শহীদ বেদীতে মাল্যদানের পর অ্যাপোয়ার সর্বভারতীয় সম্পাদিকা মীনা তেওয়ারি সভার সূচনা করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সর্বভারতীয় সভানেত্রী রতি রাও সহ সরোজ চৌবে, কবিতা কৃষ্ণাণ, ফরহাদ বানুর মতো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

শুরুতে কমরেড মীনা জানান, আগামী ৮-৯ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের উদয়পুরে অ্যাপোয়ার অষ্টম রাষ্ট্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এই শিবির ও ১৬ নভেম্বরের কাউন্সিল বৈঠক। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার খুব দ্রুত হিন্দু রাষ্ট্রের অ্যাজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছে। দুর্নীতি, বেকারত্ব, আর্থিক মন্দাকে পিছনে ঠেলে তথাকথিত দেশপ্রেমের নামে এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, কাশ্মীরে গণতন্ত্র হরণ, অযোধ্যায় রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়— এগুলোকে সামনে নিয়ে আসছে। যথেচ্ছ ইতিহাস বিকৃতি, অপবিজ্ঞানচর্চা চলছে। মুষ্টিমেয় ক্ষমতাশালীর পিছনে যেমন গোটা সমাজকে, তেমনই পুরুষের পিছনে নারীকে, পত্নীকে অনুগামিনী হতে বাধ্য করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রশ্নে বলা হচ্ছে, শ্রমিক কৃষক নন, পুঁজিপতিরাই সম্পত্তি নির্মাণ করছে। পরিবারেও তেমনই পুরুষই মুখ্য, নারীর ভূমিকা তুচ্ছ, তাই মর্যাদা অধিকারের প্রশ্নে তাকে পুরুষের অনুগ্রহপ্রার্থী হয়েই থাকতে হবে। গোটা দেশ তথা সমাজের জন্য বিজেপি- আরএসএস-এর এই দর্শন, ভারতকে পিছিয়ে দেওয়ার দর্শন—একে মোকাবিলা করেই আমাদের, ভারতীয় নারী সমাজকে এগিয়ে যেতে হবে। আজকের আলোচ্য বিষয় সেই নীতি ও দর্শন। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিকতম যে বিষয়গুলি জনপরিসরে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করেছে, যেমন (১) কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও ৩৫(ক) ধারা বিলোপ, (২) এন আর সি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, (৩)অযোধ্যা নিয়ে শীর্ষ আদালতের রায়, (৪) শবরীমালা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পুনর্বিবেচনা, (৫) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ১৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য এবং (৬) অভিন্ন দেওয়ানী আদালত—এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে।

nb aipwa

 

কাশ্মীর প্রসঙ্গে

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ প্রসঙ্গে কমরেড কবিতা কৃষ্ণাণ বলেন, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকে সেখানে ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ রেখে, তিন মাসের উপর গোটা উপত্যকাকে অবরুদ্ধ রেখে কাশ্মীরী জনগণের উপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে। চরম ঠাণ্ডায় বিদ্যুৎ বন্ধ। নেট বন্ধ থাকায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রবল সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ ও সেনা শিশুদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে অজানা স্থানে। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন, উন্নয়নের নামে ৩৭০ধারা বাতিল করে কাশ্মীরকে গোটা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা লাগু হওয়ার প্রেক্ষিত এবং তার পরের ইতিহাস তুলে ধরেন। তার মধ্যে উল্লেখ্য বিষয় হল, স্বাধীনতার ঠিক পর পরই কাশ্মীরে যে হিন্দু- মুসলিম বিরোধ ঘটে তা আসলে সামন্তী সংঘাত। জম্মু হিন্দু-বহুল। কাশ্মীর মুসলিম প্রধান। ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে স্থায়ী বিভেদ তৈরির চক্রান্ত চলে। শেখ আবদুল্লা তার প্রধানমন্ত্রীত্বের তিন বছরে বৃহত্তম ভূমিসংস্কার করিয়েছিলো। ঐ তিন বছরের পর আরএসএস জম্মুতে প্রবল সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।ভারত সরকার আবদুল্লাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে গৃহে অন্তরীণ করে রাখে। উদ্দেশ্য, কাশ্মীরের সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের কব্জায় রাখা। এরপর দশকের পর দশক কাশ্মীরে অত্যাচার চলেছে। দু’পারেই। কাশ্মীরিয়াতকে অবমাননা করা হয়েছে। কাশ্মীরী জনতার মনের কথা কোন সরকারই শুনতে চায়নি। কাশ্মীরের ‘আজাদী’ মানে দু’পারের কাশ্মীরী জনতার নিজস্ব অধিকারের কথা বলার স্বাধীনতা।

বিজেপি-আরএসএস ‘এক দেশ এক কানুন’- এর বাহানায় ৩৭০ধারা বিলোপ করেছে। কিন্তু উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি রাজ্যগুলোর ৩৭১ ধারা, গুজরাট মহারাষ্ট্রের বিশেষ কানুন বহাল আছে। আসলে মুসলিম আদিবাসীদের বহুলতা খতমের জন্যই বিজেপি-আরএসএস-এর এই তৎপরতা।ওরা আরক্ষণের বিরোধী, ওরা চায় সমাজে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্য কায়েম থাকবে। বিশেষ রাজ্যের মর্যাদার দাবিকে মান্যতা দিয়ে ‘ঝাড়খণ্ড’ সৃষ্টি হল কিন্তু কাশ্মীরের সেই মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হল। আতঙ্কবাদী হামলা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর এই হামলা হচ্ছে যা আগে হয়নি। নিরীহ যুবকদের ‘আতঙ্ক বাদী’ বলে মেরে ফেলা হয়েছে। ৩৭০ ধারা ও ৩৫(ক) ধারায় কাশ্মীরী মহিলারা সুরক্ষিত ছিলেন। এই ধারাগুলি বাতিল করে আসলে কাশ্মীরী মহিলাদের সুরক্ষা তথা অধিকার হরণ করা হল। সেনাবাহিনীর অত্যাচার, বলাৎকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে দেশদ্রোহিতা বলা হবে। ভারতীয় সেনাধ্যক্ষ বিপিন রাওয়াত বলেছেন-সেনার উপর সংবিধান চলবে না।

তিনি আরও বলেন, কাশ্মীরী পণ্ডিত ও কাশ্মীরী মুসলমানদের মধ্যে বিরোধকে ইন্ধন যুগিয়ে জিইয়ে রেখে দু’পক্ষকেই নির্যাতন ও বঞ্চনা করা হচ্ছে। দু’পক্ষকেই নিজের অন্যায় স্বীকার করতে হবে পারস্পরিক স্বার্থে। এর মাধ্যমেই আলোচনার জায়গা তৈরি হবে। ভারত সরকার সেটা চাইছে না। কাশ্মীরে জনতার প্রতিবাদ প্রতিরোধ চলছে। জনজীবন যে মোটেই স্বাভাবিক নেই, সেটা বোঝানোর জন্য দিনে সামান্য কয়েক ঘন্টার জন্য দোকানপাট খুলছে। কাশ্মীর সমস্যা বুঝতে হবে ইতিহাসের আলোকে।

aipwa3

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে—কবিতা কৃষ্ণাণ

টমাস ম্যালথাসকে অনুসরণ করে বলা হয়—গরিব ঘরে বেশি বাচ্চার জন্ম দারিদ্র্যের কারণে অনভিপ্রেত। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ‘‘আইপোয়া’’ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিরোধী নয়, তবে অবশ্যই সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতির বিরোধী।  সরকারের নীতি গরিবের উপর দুর্বলে উপর সবলের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার নীতি। একটি নারীর সন্তান ধারণ, গর্ভপাত, ভ্রূণহত্যা, গর্ভনিরোধের (স্বাস্থ্যসম্মত বৈজ্ঞানিক) পদ্ধতি ব্যবহারসংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিরঙ্কুশ অধিকার তারই থাকা উচিত, যতই দরিদ্র হোক। একজন নারীর নিজের শরীর, গর্ভের উপর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে তার। আইপোয়া এটাই মনে করে। কন্যাভ্রূণ বাঁচানোর জন্য আইন থাকলেও তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভ্রূণহত্যা হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্র পরিবারে বেশি বাচ্চা সংসারের বোঝা নয়, খেত খামারে খাটবার হাত। বিপরীতে ধনী পরিবারের প্রতিটি সন্তানের জন্য জাতীয় আয়ের বিপুল পরিমাণ খরচ হয়, কিন্তু সমাজ, দেশ তার প্রতিদানে কিছু পায় না। সুতরাং গরিবের বাচ্চা দেশের বোঝা—এটা মৌলিকভাবে ভুল একটি দর্শন যা সরাসরি পরিত্যাজ্য।

এরপর কবিতা কৃষ্ণাণ, সমাজকর্মী কল্পনা উইলসনের একটি পর্যবেক্ষণকে তুলে ধরেন। সরকারি জনসংখ্যানিয়ন্ত্রণ নীতির রূপায়ণে অনেক বিদেশি সংস্থার সাহায্য আসে (বিল গেটস ফাউন্ডেশন ইত্যাদি) এবং সব ক্ষেত্রেই মহিলাদের বন্ধ্যাকরণ করা হয়। কোটা পূরণ করার জন্য জোর থাকে সংখ্যায়, দরিদ্র মহিলাদের নিরাপত্তায় নয়। অনেক সময়ই অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক ও অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে করা হয়। এই রকম একটি শিবিরের চরম গাফিলতি তথা নির্মমতায় ছত্তিশগড়ে একদিনে ১৫জন মহিলা মারা যান। কোর্ট ‘টার্গেট’ ধার্য করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও অঘোষিতভাবে তা হয়েই চলেছে। এ বছর বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে বিজেপি সাংসদ গিরিরাজ সিং এক সভায় বলেন, মুসলিমদের জন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ দরকার। গত ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, দায়িত্বশীল পরিবার তারাই যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ করে। কম বাচ্চার জন্ম দেয়।

কবিতা বলেন, ‘আচ্ছে দিনের’ প্রতিশ্রুতি তবে কাদের জন্য, সরকার যদি দেশের গরিব শিশুদের দায়িত্ব না নেয়? জরুরী অবস্থার সময় ‘জবরদস্তি নাশবন্দী’কে ‘তানাশাহী’ বলা হয়, কিন্তু জবরদস্তি বন্ধ্যাকরণে যখন একদিনে ১৫ জন মহিলার মৃত্যু হয় তখন কিন্তু প্রতিবাদের ঝড় ওঠে না। আসলে গরিব মহিলাদের সম্মান, নিরাপত্তা কোনটাই নেই। এমনকি, আমেরিকাতে বর্ণবিদ্বেষী ভাবনা থেকে বলা হয় শ্বেতাঙ্গদের বেশি সন্তান দরকার, কৃষ্ণাঙ্গদের নয়। দক্ষিণপন্থীরা গর্ভপাতের জন্য মহিলাদের জেলে পাঠাতে চায়। সমাজবিকাশের সঙ্গে, শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে মানুষের সচেতনতা বাড়বে। তখন জনসংখ্যা নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রিত হবে।

এই প্রসঙ্গে রতি রাও কিছু পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, এই সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং কর্পোরেটদের স্বার্থে দ্যাখে। তিনি বলেন, কেরালায় শিক্ষা এবং আর্থসামাজিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জন্মহার নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।

এক দেশ এক কানুন (সমান আচার সংহিতা)

এই প্রসঙ্গে কবিতা কৃষ্ণাণ বলেন—গোটা দেশে একই দেওয়ানি বিধির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তাকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন আছে। মহিলাদের সুরাহার বাহানায় চাওয়া এই ব্যবস্থাটিকে আদৌ কি মহিলাদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে? এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। মহিলারা যে সম্প্রদায়েরই হোন—তাদের সকলের জন্য সমান আইনি সুযোগ থাকা উচিত। যেমন তাৎক্ষণিক তিন তালাকের বিষয়টি। এক্ষেত্রে ফৌজদারি আইন তৈরি করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে তালাক দেওয়ার সংস্থান রয়েছে। হিন্দু ধর্মেতা নেই, কিন্তু যথেচ্ছ ব্যভিচার ও স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে চলে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমনটা আকছার ঘটছে। সেক্ষেত্রে হিন্দুস্বামীটি ‘অপরাধী’ নয়, তার শাস্তিও হয় না। কিন্তু একই ঘটনায় মুসলিম স্বামীটি ‘অপরাধী’ গণ্য হবে। শাস্তিও হবে. আইনটি হিন্দু সহ অন্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে না কেন? আসলে তো দরকার সন্তান সহ সুস্থ সম্মানজনক জীবনযাপনের উপযোগী খোরপোষ আদায়। সেটা না করে শুধু পুরুষটিকে জেলে পুরে স্বামী পরিত্যক্তার আদতে কোনো সুবিধা হবে কি? তাই আমরা মনে করি মহিলাটির সুরাহা নয়, মুসলিম পুরুষটির হেনস্থা ও নিগ্রহই আইনটির লক্ষ্য। ‘মুসলিম বিবাহ’ একটা চুক্তি, বিবাহের সময় পাত্রীর অনুমোদন বা মঞ্জুরি চাই, কিন্তু বিচ্ছেদের সময় পুরুষটির একতরফা জবরদস্তি কেন? তাহলে সেই চুক্তির সার্থকতা কী?

ভারত বহুত্ববাদের দেশ। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক পরিবেশভেদে অধিবাসীদের জীবনযাত্রা, আচার, সংস্কৃতি, ভাষাগত বিপুল বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য আছে। তাই ‘এক দেশ এক কানুন’-এর উদ্দেশ্য হল-সেই বহুত্ববাদকে নস্যাৎ করে সারা দেশে মনুবাদভিত্তিক একই আইন-ব্রাহ্মণ্যবাদী আইন চালু করা।

আর্থিক সংকটের প্রশ্নে

এই প্রশ্নে রতি রাও বলেন নব্বইয়ের দশকে— এলপিজি (উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ, বিশ্বায়ান) চালু হয়েছিল। চালু হয়েছিল পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ), সেজ (বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল)। আর্থিক সংকট ছিল কিন্তু মন্দা দেখা দেয়নি। নরেন্দ্র মোদী মানুষের আন্দোলনের চাপে সম্প্রতি আরসিইপি-তে সই না করলেও পরবর্তীতে করবেন।বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে দেশগুলোর সঙ্গে বানিজ্যচুক্তি হবে তার মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান নেই।

এই প্রসঙ্গে ইন্দ্রাণী দত্ত শ্রমিকবিরোধী নতুন ওয়েজ কোড বিলের বিপদের প্রেক্ষিতেই আগামী ৮ জানুয়ারির ধর্মঘটের তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। পুঁজি ও মুনাফার আন্তঃসম্পর্ককে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করে কীভাবে পুঁজির সংকট দরিদ্র জনসাধারণ তথা মহিলাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে সরকার তা প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরেন। শহরে ও গ্রামে মেয়েদের কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ছোট ছোট উদ্যোগগুলি মার খাচ্ছে। মাইক্রোফিনান্সের ঋণ না মিটাতে পারায় মহিলারা নিগৃহীত হচ্ছেন। মিড ডে মিল-এর সামনে বেসরকারিকরণের খাঁড়া ঝুলছে।

উপসংহারে কবিতা ভারতীয় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার ভয়াবহ বিপর্যয়, রাম মন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা তুলে ধরেন। বলেন, সামাজিক ন্যায় ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়েছে।

সারাদিনব্যাপী দীর্ঘ আলোচনা সরস, প্রাণবন্ত, প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় মনোজ্ঞ হয়ে উঠেছিল। পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আগত কমরেডরাও প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে উঠে আসে মাটির গান, লড়াইয়ের গান। মিতালির লাবণ্যময় কণ্ঠে বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা সকলের মন ছুঁয়ে যায়। রতি রাওয়ের গান সবাইকে যুগপৎ বিস্মিত ও মুগ্ধ করেছে।

খণ্ড-26
সংখ্যা-40