খবরা-খবর
জেএনইউ-র আন্দোলনের সমর্থনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্র ও নাগরিকরা

জেএনইউ-র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে এআইএসএ গত ১৪ নভেম্বর সমস্ত রাজ্যেই প্রতিবাদ সংগঠিত করে। ঐ প্রতিবাদগুলোতে জেএনইউ-র ছাত্রদের তুলে ধরা সমস্ত ইস্যুগুলোর সমাধানের দাবি জানানো হয়। কেননা, মোদী সরকারের সম্মতিতে জেএনইউ কর্তৃপক্ষের নামিয়ে আনা চূড়ান্ত পশ্চাদমুখী পরিবর্তনগুলোর বিপরীতে ঐ ইস্যুগুলো সারা দেশের ছাত্র সম্প্রদায়ের প্রকৃত স্বার্থকে তুলে ধরে। প্রতিবাদগুলো নয়া শিক্ষা নীতির খসড়াকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবিও জানায়।

darbhanga

 

দ্বারভাঙ্গায় এআইএসএ একটা প্রতিবাদ যাত্রা সংগঠিত করে এলএনএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভোগেন্দ্র ঝা চক পর্যন্ত, এবং ঐ যাত্রায় নেতৃত্ব দেয় বিশাল মানঝি। সেখানে একটা প্রতিবাদ সভাও অনুষ্ঠিত হয় যেটি সঞ্চালনা করে এআইএসএ-র জেলা সভাপতি প্রিন্স রাজ। ঐ সভা জেএনইউ-র ছাত্র-ছাত্রীদের উপর চলা নিপীড়ন এবং দরিদ্র ও অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পৃষ্ঠভূমি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকারের উপর সরকারের আক্রমণকে ধিক্কার জানায়।

uttarpradesh

 

লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত প্রতিবাদ: অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে এআইএসএ ১৪ নভেম্বর লক্ষ্মৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে জেএনইউ-র প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের সমর্থনে এক প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ এবং আইআইটিগুলোতে অত্যধিক ফি বাড়ানোয় এআইএসএ তীব্র ক্রোধ প্রকাশ করে এবং ঐ সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানায়। নয়া শিক্ষা নীতির যে রূপ দেওয়া হয়েছে তার এবং জেএনইউ-র ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যে নির্মম লাঠিচার্জ করা হয়েছে তারও তীব্র সমালোচনা করা হয়।

এআইপিডব্লিউএ পাটনা ও কলকাতায় জেএনইউ ছাত্র আন্দোলনের সংহতিতে প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করে। ঐ সভাগুলোতে বক্তাদের বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য ছিল — জেএনইউ-র ছাত্র- ছাত্রীদের আন্দোলনের মধ্যে নিহিত রয়েছে ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার অধিকারও।

বিহার বিধানসভায় সিপিআই(এমএল) বিধায়কও জেএনইউ-র ছাত্রদের আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। গত ২৩ নভেম্বর জেএনইউ-র ছাত্রদের তোলা ইস্যুগুলোর সমর্থনে দিল্লীতে নাগরিকদের এক বিশাল পদযাত্রা সংগঠিত হয় যাতে দিল্লী এবং পার্শ্বর্তী রাজ্যগুলো থেকে প্রচুর সংখ্যক ছাত্র, শিক্ষক এবং অন্যান্য নাগরিকরা অংশ নেন।

Nju prutst

 

জেএনইউ-র প্রতিবাদী ছাত্রদের প্রতি আমরা সম্পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানাচ্ছি। উচ্চ শিক্ষার ব্যাপক বেসরকারিকরণ ও পণ্যায়নের ফলে সরকারি অর্থে চালিত এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশ হিসাবে আমরাও একই ধরনের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি। শিক্ষার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে এবং নয়া শিক্ষা নীতি বাতিলের জন্য সর্বভারতীয় স্তরে বিশালাকায় এক আন্দোলন জরুরি হয়ে উঠেছে। আর তাই তাদের প্রতি সংহতির প্রতীক হিসাবে আমরা জেএনইউ-র ছাত্র ইউনিয়ন এবং প্রতিবাদরত ছাত্র-ছাত্রীদের এই আশ্বাস দিতে চাই যে, প্রতিটি ছাত্র-বিরোধী, শিক্ষা- বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিটি লড়াইয়ের পাশে আমরা দাঁড়াব। জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়ন ২৩ নভেম্বর মাণ্ডি হাউস থেকে সংসদ পর্যন্ত পদযাত্রার যে ডাক দিয়েছে আমরা তাতে অংশ নেব।

Patna

 

জেএনইউ-র ছাত্রদের পাশে এআইআইএমএস ছাত্র ইউনিয়ন : এআইআইএমএস ছাত্র ইউনিয়ন জেএনইউ-র ছাত্রদের প্রতি সংহতি জানানোর সাথে ঘোষণা করেছে যে, ডাক্তারি পড়া ছাত্রদের ফি বৃদ্ধি এবং এআইআইএমএস-এ রোগী পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা মোদী সরকারের রয়েছে, তাকে তারা প্রতিরোধও করবে। এআইআইএমএস দিল্লীর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুকুল কুমার বলেছেন, “সরকারকে কোনোভাবেই ভারতের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে আমরা দেব না। প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্ততাকে শেষ করে দেওয়ার পর সরকার শিক্ষাকে এখন সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের নাগালের বাইরে করে দিতে চাইছে।”

গুজরাটের আমেদাবাদ কলেজের এআইডিএসও-র অনুগামী ছাত্ররা জেএনইউ-র ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে একটা বড় ব্যানারে সই সংগ্ৰহ করে।

রাজস্থানের উদয়পুরে নাগরিকরা জেএনইউ ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে একটি পদযাত্রা সংগঠিত করেন। এই সংহতি প্রদর্শনের পিছনে চালিকা শক্তি হিসাবে ছিল উদয়পুরের অভিভাবকগণ যাঁরা বেসরকারি স্কুলগুলোতে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন।

bombay

 

দিল্লীর আইআইটি-তে গবেষণারত স্কলারদের বিবৃতি :

এই দেশের ছাত্ররা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আর তাই তাদের বক্তব্যকে বিচারবুদ্ধি দিয়ে ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে খোলামনে শুনতে হবে। কোনো শিক্ষাগত এবং/অথবা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্ৰহণের আগে প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত ফোরামে যুক্ত করে তাদের বক্তব্য শোনাটা জরুরি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্ততার মর্যাদাকে আমরা যেমন সম্মান জানাই, এরই সাথে তাদের ক্রমেই আরো বেশি করে কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠে ছাত্রদের উপর নিপীড়ন চালানো সম্পর্কেও আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।

যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ অসমর্থনীয় ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তাদের প্রতি আমরা সংহতি জানাচ্ছি। শিক্ষার ব্যয়কে সাধ্যায়ত্ত করার জন্য লড়াই করা সমস্ত ছাত্র, গবেষক ও শিক্ষকের উপর নির্মম পুলিশি পদক্ষেপকে আমরা ধিক্কার জানাই। শিক্ষাকে পণ্য করে তোলা যাবে না, আর দেশের ছাত্র- ছাত্রীরা যাতে ভালো গুণমানের শিক্ষা পেতে পারে তার জন্য তাদের ঋণ না দিয়ে অনুদান দিতে হবে। ফি বৃদ্ধির চলমান ধারার মধ্যে আমরা একটা ‘প্রবণতাকে’ লক্ষ্য করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে এই প্রবণতা অবসানের অনুরোধ করছি।

আইআইটি পর্ষদ এমটেক-এর টিউশন ফি বৃদ্ধি এবং মাসিক প্রাপ্য ভাতা বন্ধের যে সুপারিশ করেছে, আমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করছি। আইআইটি পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত সারা দেশেই ফি বৃদ্ধির এক রাস্তা খুলে দেবে, এবং ছাত্রদের সঙ্গে কোন আলোচনা ছাড়া এই সিদ্ধান্তকে রূপায়িত করার চেষ্টা হলে তা জোরালো ছাত্র আন্দোলনের জন্ম দেবে। এমটেক-এ ফি বৃদ্ধির আইআইটি পর্ষদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অনুরোধ আমরা মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে জানাচ্ছি।

বিভিন্ন আই আই টি ক্যাম্পাসে আত্মহত্যার মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা বেদনাহত। যে সমস্ত পরিবার এবং সাথী তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমরা আন্তরিক সমবেদনা জানাই।

আইআইটি দিল্লীতে গবেষণারত স্কলাররা সংকটের মুখে পড়া ছাত্র সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থনের অঙ্গীকার করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুন্দরতর স্থান করে তোলার জন্য সবসময়ই তাদের পাশে দাঁড়াবে। আইআইটি বম্বের ছাত্ররা জেএনইউ-র ছাত্রদের উপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা শিক্ষার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে। জেএনইউ-র ছাত্রদের উপর পুলিশি নিপীড়নের আমরা তীব্র নিন্দা করছি।”

অভিনন্দন পাকিস্তান-বাংলাদেশ থেকেও

পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের ছাত্ররাও জেএনইউ ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। পাকিস্তানের স্টুডেন্টস কালেক্টিভ এবং বাংলাদেশী স্টুডেন্টস ইউনিয়ন জেএনইউ-র ছাত্রছাত্রীদের ফি বৃদ্ধি বিরোধী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে, তাদের দেশেও তারা এই ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলছে।

খণ্ড-26
সংখ্যা-38