খবরা-খবর
সিঙ্গুরে কৃষক ও কৃষিমজুর সংগঠনের সভা

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্রে জিতেই বিজেপি সাংসদ শ্রীমতী লকেট চ্যাটার্জি প্রথম ছুটেছিলেন সিঙ্গুর। আওয়াজ তুলেছিলেন, সিঙ্গুরে টাটাকে ফিরিয়ে আনা তাঁর অগ্রাধিকার। সিঙ্গুর বিধানসভা ক্ষেত্রে তৃণমূলের থেকে প্রায় সাড়ে দশ হাজার ভোটে এগিয়ে তিনি; এসত্বেও তাঁর ডাকে ইচ্ছুক কৃষকরা সহ সিপিএমের একাংশ সাড়া দিলেও সাড়া দেননি অনিচ্ছুক কৃষকরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, টাটাকে এনে নতুন করে অশান্তি করে কি লাভ! বরং কারখানা হোক অন্য কোথাও।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে আন্দোলনের অন্য নাম সিঙ্গুর – অচলায়তনকে ভাঙ্গার আন্দোলন, কৃষিজীবী জনতার উপর বহুজাতিকের হামলা জনতার শক্তিতে রুখে দিতে সিঙ্গুর সফল এক দৃষ্টান্ত। বিশ্বায়ন পর্বেও রাষ্ট্র ও বহুজাতিকের সম্মিলিত হামলা রুখে দেওয়া সম্ভব, এই বার্তা দেয় সিঙ্গুর। ভোট জিতেই তাই বিজেপি সাংসদের প্রথম ও ‘মহান’ দায়িত্ব, জনগণের এই বিজয় চিহ্ন গুঁড়িয়ে দেওয়া!

প্রবচন বলে, ‘শনির অনুপ্রবেশ ছিদ্রপথেই’। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়, জমি চাষযোগ্য করে ফেরত দিতে হবে কৃষকদের। তারপর দিন, মাস, বছর গড়িয়েছে! সিঙ্গুরের জমি চাষযোগ্য হয়নি। প্রথমত, রাজ্য সরকার একাজে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করেনি, দ্বিতীয়ত, কাজ হওয়া উচিত ছিল অনেকটা যুদ্ধকালীন তৎপরতায়; তা হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছে,বছর বছর বেনাবন পরিষ্কারের নামে তা জলে গেছে। আন্দোলনের বিরুদ্ধ শক্তি এই অব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আওয়াজ তুলেছে, ‘দ্যাখো, ওই জমিতে আর চাষ হবে না। কারখানাই চাই।’ সৃষ্টি হয়েছে হতাশা, বিভ্রান্তি। এই পরিস্থিতিতে ঘোলাজলে মাছ ধরতে নেমেছে বিজেপি

 বিজেপি সাংসদ যদি কর্মসংস্হানের লক্ষ্য নিয়ে সত্যিই এগোতেন, তবে প্রথমেই তিনি হিন্দমোটর নিয়ে, ডানলপ নিয়ে এগোতেন। হুগলির এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি কারখানা খোলার ব্যাপারে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করতেন। সেসব না করে তাঁর প্রথম উদ্যোগ, সিঙ্গুরের গণআন্দোলনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে নিয়োজিত হয়েছে। পরিস্থিতিকে তিনি তাঁর অনুকূল ‘মনে করেন’।

singur, Sajal

 

এই পরিস্থিতিতে সিঙ্গুরের মাটিতেই বিজেপি ও লকেট চ্যাটার্জিদের এই দুর্বুদ্ধিকে উদ্ঘাটন করার লক্ষ্যে ৬ জুলাই সাতমন্দির তলার দুর্লভপাড়া মোড়ে সারা ভারত কিষান মহাসভা ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির রাজ্য শাখা সংগঠিত করল প্রতিবাদ সভা। সভার মূল শ্লোগান ‘সিঙ্গুরে টাটার দালালি বন্ধ করো। আদালতের রায় মেনে জমি চাষযোগ্য করে কৃষকদের ফিরিয়ে দাও।’ উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ, হুগলি জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার, কিষান মহাসভার জয়তু দেশমুখ, তপন বটব্যাল, মুকুল কুমার, অন্নদাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, আয়ারলার সজল অধিকারী, বাবলু ব্যানার্জি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন তপন বটব্যাল। বিস্তৃতভাবে বর্তমান পরিস্থিতি ও বিজেপির অপচেষ্টাকে ব্যাখ্যা করেন পার্থ ঘোষ। সংক্ষিপ্ত, সুন্দর বক্তব্য রাখেন মুকুল কুমার ও জয়তু দেশমুখ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সজল অধিকারী।

উল্লেখ্য, সভা চলাকালীন সাতমন্দিরতলাতেই সেমিনার ছিল বিজেপির। অসংখ্য মাইকের চোঙ লাগানো হয়। কিষাণ ও কৃষিমজুর সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে আগাম জানিয়ে সভা করা হচ্ছিল। এসত্বেও সভাস্থলেও পৌঁছে যায় ওদের মাইকের আওয়াজ। এই অসভ্যতা অস্বীকার করেই আমরা সভার কাজ চালিয়ে যাই। পথচলতি ও স্থানীয় বেশ কিছু মানুষকে বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে দেখা যায়।

খণ্ড-26
সংখ্যা-20