ভূ-গর্ভস্থ জল ঠেকছে তলানিতে

ভোট, খেলা, খুন, দাঙ্গা এসব খবরের মাঝে আপনি হয়তো আসল খবরটা খেয়ালই করেননি, কয়েকদিন আগে “নীতি আয়োগ” জানিয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের ২১টা বড় শহরের ভূ-গর্ভস্থ জল একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে।

আপনি এই কথাটার বাস্তবতা কতটা কঠিন হতে পারে হয়তো ভাবতেও পারছেন না। সময় হাতে একদম নেই, মাত্র ১ বছরে কত কিছু শেষ হতে দেখবেন চোখের সামনে। নিজেও পস্তাবেন এক বোতল জলের জন্য।

রাজস্থানে গরমকালে জল পাওয়া যায় না আমরা অনেকেই জানতাম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর হল মহারাষ্ট্র সে খাতায় নাম লিখিয়েছে সেটা অনেকেই জানি না। মহারাষ্ট্রে এমনও কিছু এলাকা আছে যেখানে পানীয় জল আনতে ট্রেনে করে ১৪ কিমি যেতে হয়। কাতরাচ্ছে মানুষ।

এবছর সঙ্গে যোগ দিয়েছে চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লী, গুরুগ্রাম আরও কয়েকটি শহর। চারিদিকে জলের হাহাকার চলছে ওখানে। সোনার দামে বিকোচ্ছে জল। নোংরা জলই খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আগামী বছর বা আগামী কয়েক বছরে আামাদেরও একই হাল হবে।

সময় হয়তো সামান্য আছে, তাও বাঁচান জল। সামান্য হলেও বাঁচান। বিগত ১০ বছরে, মাত্র ১০ বছরে আমরা ভূ-গর্ভস্থ জলের ৬১ শতাংশ শেষ করে দিয়েছি। বাকিটা শেষ করতে ২ বছরও লাগবে না।

হয়তো আপনি ভাবছেন আপনার এলাকায় কিছু হবে না, কিন্তু আপনি জানেন না যে কোনো দিন আপনার জলের পাইপেও কালো জল আসতে শুরু করবে। তার ২-১ দিন পর জল আসাই বন্ধ হয়ে যাবে। নীতি আয়োগ বলছে, ভারতের ইতিহাসের সবথেকে সঙ্কটময় সময় এটা।

রাজনীতি থেকে বেরিয়ে কোনও চ্যালেন এসব দেখাবে না, আর আপনি আমি ওসব ছ্যাঁচড়ামি দেখতে দেখতে জানতেও পারব না কখন এক ফোঁটা জলের জন্য পস্তাতে হবে।

আমি খুব ভালো করে জানি এক বালতি জল একটি ব্যক্তির স্নানের জন্য যথেষ্ট, তাই অযথা শাওয়ারে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। বাথরুমে জল অপচয় করবেন না। কলের জলে গাড়ি ধোবেন না। যতটা পারবেন পুকুর বা বৃষ্টির জল বা জলাশয়ের জল ব্যবহার করুন। কারণ মাটির তলার জল একবার উঠে এলে আর ফেরানো যায় না। পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচান, নিজেকে বাঁচান। জল বাঁচান।

সবথেকে বেশি জলের অপচয় হয় কর্পোরেটদের হাতে। গলফ কোর্স থেকে সুইমিং পুল, কর্পোরেট কৃষি থেকে সফট ড্রিংকস কারখানাতে। ৬ ঘণ্টা লাইন দিয়ে গ্রামের মহিলারা যে দামে জল কিনছেন তার থেকে কম দামে মদ আর বিয়ারের কোম্পানিগুলো জল কিনছে। এমন বড় বড় হোটেল তৈরি হচ্ছে যার প্রতিটি তলায় এক একটি করে সুইমিং পুল।

উরুগুয়ের মতো দেশ জলের বেসরকারিকরণ নিষিদ্ধ করেছে। আমরা কি জলের বেসরকারিকরণ নিষিদ্ধ করতে পারি না? নইলে কিন্তু জলসংকট বৃহৎ সংকটের আকার নিতে চলেছে।

(হোয়াটস অ্যাপের পাতা থেকে)

খণ্ড-26
সংখ্যা-19