জল সংকট

সম্প্রতি বলা হচ্ছে আগামী পৃথিবীতে যুদ্ধ হবে জলের জন্য। আগে হয়েছে অস্ত্র, জমি মালিকানা, উপনিবেশ বা তেলের জন্য। এবার জলের জন্য।

সদ্য চমকে উঠেছি জেনে যে, ওয়াটার ফুট প্রিন্ট বলে একটি পরিমাপক চালু হয়েছে। তা বলছে, যে কোনো শস্য বা অর্থনৈতিক সম্পদ উৎপাদন করতে কত লিটার জল খরচ হয়েছে তা হিসেব করার কথা। আমরা যা খাচ্ছি, যে জামা পরছি, যা ব্যবহার করছি তার প্রতিটির উৎপাদনে ব্যবহার হয়েছে কোটি কোটি লিটার জল। চাল বা গম প্রতি কেজি উৎপাদনে সেচের জল যে পরিমাণে লাগে তার একটা হিসেব দেখে চমকে উঠতে হয়। তুলনায় ভুট্টা জোয়ার বজরায় অনেক কম জল লাগে। একটা জিন্স-এর প্যান্ট তৈরিতে নাকি ৮০০০ লিটার জল খরচ হয়, কারণ এক কেজি তুলো উৎপাদনেই লাগে ১০ হাজার লিটার জল।

প্রতি দেশে বড় পুঁজির উৎপাদকরা, ধনী চাষিরা খুব জোরালো পাম্প ব্যবহার করে ভূস্তর থেকে জল টেনে নিচ্ছে এসব অর্থনৈতিক উৎপাদনের জন্য। ততটাই বঞ্চিত হচ্ছে আশপাশের বসতির, গ্রামাঞ্চলের দরিদ্ররা। তাই তৈরি হচ্ছে জল-দারিদ্রের অঞ্চল। মাইলের পর মাইল হেঁটে জল আনতে যেতে হচ্ছে তাঁদের। ছোট চাষিরা প্রায় উৎখাত।

সারা পৃথিবীতে যত প্রোডাক্ট কেনাবেচা আমদানি রপ্তানি হচ্ছে তার মধ্যে দিয়ে এক দেশের জল অন্য দেশে ভার্চুয়ালি যাচ্ছে। বাংলাদেশের একটা জিন্স প্যান্টের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের ব্যবহার যোগ্য ৮০০০ লিটার জলও চলে যাচ্ছে ধরা যাক আমেরিকায়।

আমাদের দেশের ৩৭.২ লাখ টন বসমতী চালের সঙ্গে ১০ ট্রিলিয়ন লিটার জল রপ্তানি হচ্ছে বছরে।

এসব ভাবলে মাতা ঘুরে যাবে। কিন্তু এগুলোই আগামী কিছু বছরের সত্য, আলোচনার মূল বিষয় এগুলোই হওয়া উচিত।

-- যশোধরা রায়চৌধুরী
(হোয়াটস অ্যাপের পাতা থেকে)

খণ্ড-26
সংখ্যা-22