৩৭০-র বেশি আসনে ইভিএম গণনার হিসেব মেলেনি!

৩৭০-এর বেশি সিটে ইভিএম গণনার হিসেবে মিললো না। যত সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন এবং ইভিএমে যত ভোট দেখাচ্ছে তার তুলনা করে এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে । ইলেকশন কমিশনকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো উত্তর দেননি। পরে তারা সাংবাদিক সম্মেলনে ইলেকশন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য ও ইভিএমের ভোটের সংখ্যার অমিল হওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন “কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অঙ্ক আসলে সম্ভাব্য প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এবং তা পরিবর্তনশীল, মোটেই তা চূড়ান্ত নয়।”

কিন্তু কমিশনার সাহেব পার্থক্যটা যে গণতন্ত্রের পক্ষে বড্ড বেশি রকমের। তামিলনাড়ু, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং অরুণাচল প্রদেশে এই গরমিল সবচেয়ে বেশি, এখানে ইভিএমে বেশি, ভোট পোল হয়েছে কম। ত্রিপুরা পশ্চিম, কেওনঝড় এবং ভুবনেশ্বরে যথাক্রমে ১৯৭৭৬, ১১১৭১ এবং ৮০৫০টি ভোট ইভিএম কম দেখিয়েছে।

এখানে সর্বোচ্চ গরমিলগুলো দেখুন :

১) তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম লোকসভা, ইলেকশন কমিশনের তথ্য ১২১৪০৮৬ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ইভিএম ভোট গুনেছে ১২৩২৪১৭—১৮৩৩১টি ভোট ইভিএমে অতিরিক্ত।

২) তামিলনাড়ুর ধর্মপুরী। ইলেকশন কমিশনের তথ্য ১১৯৪৪৪০ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ইভিএম ভোট গুনেছে ১২১২৩১১—১৭৮৭১টি ভোট ইভিএমে অতিরিক্ত।

৩) তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুম্বুদুর । ইলেকশন কমিশনের তথ্য ১৩৮৮৬৬৬ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ইভিএম ভোট গুনেছে ১৪০৩১৭৮—১৪৫১২টি ভোট ইভিএমে অতিরিক্ত।

৪) উত্তরপ্রদেশের মথুরা। ইলেকশন কমিশনের তথ্য ১০৮৮২০৬ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ইভিএম ভোট গুনেছে ১০৯৮১১২—৯৯০৬টি ভোট ইভিএমে অতিরিক্ত।

৫) বিহারের ঔরঙ্গাবাদ। ইলেকশন কমিশনের তথ্য ৯৩০৭৫৮ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ইভিএম ভোট গুনেছে ৯৩৯৫২৬—৮৭৬৮টি ভোট ইভিএমে অতিরিক্ত।

৬) অরুণাচল প্রদেশের অরুণাচল পশ্চিম। ইলেকশন কমিশনের তথ্য ৩৩৬১৬১ ভোটার ভোটদিয়েছেন। ইভিএম ভোট গুনেছে ৩৪৪১২২—৭৯৬১টি ভোট ইভিএমে অতিরিক্ত।

এইরকম ৩৭০-এর বেশি সিটে এই গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। এবার সাতটি দফার যত লোক ভোট দিয়েছেন আর ইভিএমে যত ভোট পাওয়া গেছে তার তুলনা দেখুন :

table


এই তথ্য বাতিল ভোট নিয়ে। সাধারণত, একটা পরিমাণ পোস্টাল ব্যালট বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়ে থাকে এবং সেটা রাজ্য নির্বাচন কমিশন সমস্ত কেন্দ্রের ফর্ম ২০-তে এন্ট্রি করে। এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ প্রধান নির্বাচন আধিকারিকের ওয়েবসাইট এই তথ্যগুলো প্রকাশ করতেই পারেনি। বিহার প্রকাশ করেছে, তাদের বাতিল হওয়ার মান ১৪.৬১ শতাংশ। অর্থাৎ ২৬৯৭৬৫ সংখ্যক ভোট। তাহলেও ৫৫৬৪৮০৯টি ভোট অতিরিক্ত যা বাতিল ভোট দিয়ে মিলবে না। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে মোট ৫৪২ টি আসনে ১৮৪৬৪৩১টি পোস্টাল ব্যালট গণনা করা হয়েছিল।

এই পরিসংখ্যান ভোটারদের মনের মধ্যে গুরুতর সন্দেহ জাগিয়ে তুলেছে, বিশেষত বিগত পাঁচ বছরের মেয়াদকালে বিজেপি সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ফলে কর্মসংস্থান ধ্বংস হয়ে বেকারত্বের মান সর্বকালের সমস্ত রেকর্ডকে প্রায় চারগুণ ছাপিয়ে যাওয়া, সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর সংঘী বাহিনীর আক্রমণ এক সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে যা সারা দেশজুড়েই একটি বিজেপি বিরোধী হাওয়া তুলতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে এই নির্বাচনে বিজেপি এক অসম্ভব বড়ো ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। ডিসেম্বর মাসের বিধানসভা নির্বাচনে চারটে রাজ্যই তাদের প্রত্যাখান করেছিল। যে কর্নাটকে তারা বিধানসভায় পরাজিত হয়েছিল লোকসভায় তারা সেখানে ২৮টির মধ্যে ২৫টি আসনের দখল নেয়, ২০১৪ লোকসভা থেকেও ৮টি আসন বেশি।

সুতরাং এই দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো বঞ্চিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে এই সমস্যাটি সমাধান করতেই হবে, তার জন্যে দেশের মানুষকে রাস্তায়ও নামতে হতে পারে। দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রকে কিছুতেই ভুতুড়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে দেওয়া যাবে না।

সূত্র সৌজন্যে : দি কুইন্ট, নিউস ক্লিক, ইন্ডিয়া টুডে, এক্সেল.কম, টুইটার.কম

খণ্ড-26