ত্রিপুরায় আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের গুলি চালনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই

সিপিআই(এমএল) ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক পার্থ কর্মকার এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, ত্রিপুরায় মাধবাড়িতে সড়ক অবরোধকারীদের দমন করার উদ্দেশ্যে শাসক বিজেপি দলের কর্মীদের দ্বারা উস্কানি ও উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালিয়ে ৬ জন আন্দোলনকারীকে গুরুতর আহত করার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, সংসদে পেশ করা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ প্রতিবাদে গত ৮ জানুয়ারি নর্থ-ইষ্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন তথা নেসো উত্তর-পূর্বের সব কয়টি রাজ্যে ১১ ঘন্টা বনধের ডাক দেয়। তার সমর্থনে জিরানীয়া মহকুমার মাধববাড়িতে টিএসএফ, আইএনপিটি এবং বিজেপির শরিক দল আইপিএফটি ও তার ছাত্র সংগঠন আতিসা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে এবং পিকেটিং শুরু করে। সকাল ১০টা নাগাদ এসডিএ অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য অবরোধকারীদের সাথে আলোচনা শুরু করেন। আলোচনা এগোয়। কিন্তু বাদ সাধে বিজেপির কর্মীরা। আন্দোলনকারীদের হটাতে শাসক দল বিজেপির কর্মীরা দূর থেকে এসে মাধববাড়ী এলাকায় জড়ো হয়। মূলত: তাদের উস্কানিতেই পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিজেপির বাইক বাহিনী সড়ক অবরোধ তুলে নিতে বলে হুমকি দিতে থাকে। পুলিশকে মাঝে রেখে চলতে থাকে উস্কানি, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া। দোকানপাটে আগুন দেওয়া শুরু হয়। বেলা ২টো নাগাদ উত্তেজনার তীব্রতা আরো বাড়তে থাকে। পুলিশ অবরোধকারীদের উপর একতরফা লাঠি চার্জ করে ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। তারপর বিনা সতর্কীকরণ ছাড়াই রাজ্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালায়, তারফলে ৬ জন আন্দোলনকারী গুলির আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হয়। তার মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে তারা জি বি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাছাড়া সমগ্র ঘটনায় আরো ১১ জন কমবেশী আহত হয়েছেন।

ক্ষমতাসীন হওয়ার পর গত ১০ মাস যাবত বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার কেন্দ্র-বিরোধী বা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পথে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা আন্দোলন বরদাস্ত করছে না। ভিন্ন মত প্রকাশের অধিকার ও সাংবিধানিক গণতন্ত্র আজ ত্রিপুরায় বিপন্ন। বিরোধী আন্দোলনকে দমন করার এই স্বৈরাচারী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকেই সরকার মাধববাড়ীতে প্রথম পরিকল্পিতভাবে বাইকবাহিনী জড়ো করে হামলা করেছে। সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তারপর পুলিশ দিয়ে গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের আহত করেছে। এই ঘটনা তাই বর্তমান সরকারের স্বৈরাচারী দমন নীতি ও সাম্প্রদায়িক বিভেদমূলক নীতির চরম বহি:প্রকাশ। ত্রিপুরার ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম উপজাতি পিকেটারদের হটাতে অ-উপজাতি পিকেটারদের জড়ো করা হয়েছে। শাসক দলের তরফে এমন উস্কানিমূলক পদক্ষেপ আর দেখা যায়নি। আর প্রশাসন এক্ষেত্রে ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকায় অবতীর্ণ।

একটি স্পর্শকাতর জাতীয় ইস্যুতে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলনরত জনজাতিদের উপর আক্রমণ ও পুলিশ দিয়ে গুলি চালিয়ে বর্বরোচিতভাবে দমন-পীড়ন করার বিরুদ্ধে সিপিআই(এমএল) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানানো হচ্ছে। এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধানে একজন কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়েছে। তাছাড়া যারা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির নেপথ্য পরিচালক এবং দোকানপাটে আগুন দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে যুক্ত ছিল, তাদেরও চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তারপূর্বক উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য দাবি করা হয়েছ। জিরানীয়া মহকুমা সহ ত্রিপুরার সর্বত্র জাতি-উপজাতি জনগণের মধ্যে এবং সমস্ত ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে যে কোন মূল্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও একতা বজায় রাখার জন্য সবার কাছে আবেদন করা হয়েছে।

খণ্ড-26
সংখ্যা-3