খবরা-খবর
মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ

'শহুরে নকশাল' বলে ছাপ মেরে মানবাধিকার কর্মী, বাম-ঝোঁকা বুদ্ধিজীবী, কবি এবং আইনজীবীদের গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে দেশের বহু শহরেই সিপিআই(এমএল) প্রতিবাদ সংগঠিত করে। সেই প্রতিবাদের কিছু রাজ্যভিত্তিক খবর নিচে দেওয়া হল।

উত্তরপ্রদেশ : লক্ষ্ণৌতে ২৯ আগস্ট হজরতগঞ্জে আম্বেদকর মূর্তি সংলগ্ন স্থানে ধর্ণা সংগঠিত হয়। বহু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ও সমাজ আন্দোলনের কর্মী, লেখক, সাংবাদিক, কবি এবং অন্যান্যরা এই ধর্ণায় অংশ নেন।

বেনারসে ২৯ আগস্ট আম্বেদকর পার্কে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় যাতে সিপিআই(এমএল) ইনসাফ মঞ্চ এবং অন্যান্য গণ সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। পরদিন ৩০ আগস্ট বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের লঙ্কা গেটে একটি প্রতিবাদ সভা সংগঠিত হয়। বিসিএম, এআইপিডব্লিউএ, পিভিএম, এআইএসএ এবং অন্যান্য সংগঠন যৌথভাবে সভাটি সংগঠিত করে। এছাড়া, এলাহাবাদ, জামানিয়া (গাজিপুর), মৌ, সীতাপুর, জালাউঁ, প্রতাপগড়, রায়বেরিলি এবং গোরখপুরেও প্রতিবাদী মিছিল ও সভা সংগঠিত হয়।

ঝাড়খণ্ড : ৩০ আগস্ট রাঁচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জনসংগঠন, বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকগণ একটি নাগরিক মার্চ সংগঠিত করে যেটি শেষে একটি মানব শৃঙ্খলে পরিণত হয়। ঐ মিছিলে অংশগ্রহনকারি নাগরিকদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে ভারভারা রাও এবং দুষ্মন্ত কুমারের লেখা কবিতার লাইন উদ্ধৃত ছিল। আরো উদ্ধৃত ছিল সুপ্রিম কার্টের আদেশের অংশ বিশেষ, ''বিরোধিতা গণতন্ত্রের সেফটি ভালভ‌; তা প্রকাশের অনুমতি না দিলে প্রেসার কুকার ফেটে যাবে।'' প্রতিবাদে অংশ নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার বিজেতা মেঘনাদ ও বিজু টোপ্পো, অর্থনীতিবিদ জেন দ্রেজে, চলচ্চিত্র পুরষ্কার বিজেতা শ্রীপ্রকাশ, সাহিত্যিক মহাদেব টোপ্পো, বরিষ্ঠ সাংবাদিক শ্রীনিবাস ও বিনোদ কুমার, অন্যান্য খ্যাতনামা নাগরিক এবং শত শত আন্দোলনের কর্মী ও নাগরিক।

বিহার : যে সমস্ত মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী, কবি, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী সবচেয়ে দুর্বল ও প্রান্তিক জনগণের হয়ে লড়াই করেন, তাদের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে পাটনার নাগরিকরা কারগিল চকে একটি প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করেন। অংশগ্রহণকারিদের মধ্যে ছিলেন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী এবং ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীরা। বক্তারা তাঁদের ভাষণে বলেন, ১৯৭৫ সালের ইন্দিরা গান্ধির জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে যেমনটা ঘটেছিল, মোদীর অঘোষিত জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রেও সেই একই পরিণতি দেখা দেবে।

প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণকারিদের মধ্যে ছিলেন সমকালীন জনমত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক রামজি রাই, খ্যাতনামা চিকৎসক ডা: সত্যজিত, নাটক শিল্পী জাভেদ আখতার ও তনবীর আখতার, অধ্যাপক ভারতী এস কুমার, ডেইজি নারায়ণ, আশীষ দত্ত, বিহার বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার উদয় নারায়ণ চৌধুরি প্রমুখ নাগরিকবৃন্দ।

রাজস্থান : কবি, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবীদের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে ৩০ আগস্ট উদয়পুরের কালেক্টরের অফিসের সামনে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় অংশ নেন সিপিআই(এমএল) কর্মীবৃন্দ এবং লেখক, কবি, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণ। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি এবং তাঁদের ওপর চাপানো সমস্ত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

কর্ণাটক : মোদী সরকারের হাতে মানবাধিকার আন্দোলনের সুপরিচিত কর্মীদের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে সিপিআই(এমএল), এআইপিএফ, পিইউসিএল সহ বাঙ্গালোরের সমস্ত প্রগতিশীল সংগঠন গত ১ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করে। সভার জন্য পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়নি, এই অভিযোগে সিপিআই(এমএল) এবং এআইসিসিটিইউ কর্মী কমরেড লেখা ও আপ্পান্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। গঙ্গবতী এবং হারপানাহাল্লিতেও সিপিআই(এমএল) প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করে।

দিল্লী : পাঁচ মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীর গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে জন একতা জন অধিকার আন্দোলনের পতাকাতলে ৩০ আগস্ট পার্লামেন্ট স্ট্রিটে প্রতিবাদ সভা সংগঠিত হয়। শত শত আন্দোলনের কর্মী, নাগরিক, ছাত্র, দিল্লীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ, সাংবাদিক এবং অন্যান্য স্তরের জনগন সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সরকার সনাতন সংস্থা এবং গণপিটুনিতে যুক্ত সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিবাদকারিরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। ঐ সভায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাত, নাগরিক আন্দোলনের কর্মী এবং সাংবাদিক তিস্তা শীতলবাদ, সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুচেতা দে, আম আদমি পার্টর নেতা ও মন্ত্রী রাজেন্দ্র পাল গৌতম, এসইউসিআই(সি)-র দিল্লী রাজ্য সাংগঠনিক কমিটির সম্পাদক প্রাণ শর্মা ও অন্যান্যরা।

পুদুচেরি : পুনে পুলিশ এবং বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি যে সমস্ত বুদ্ধিজীবী, লেখক, মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে পুদুচেরির এআইপিএফ ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত করে। এআইপিএফ-এর জাতীয় প্রচার কমিটি সদস্য মাঙ্গাইয়ারশেলভানের নেতৃত্বে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) রাজ্য সম্পাদক বালসুব্রমনিয়ান, এআইপিএফ-এর জাতীয় পরামর্শদাতা কমিটি সদস্য লিয়াকত আলি, আয়ারলার জাতীয় কাউন্সিল সদস্য বালসুন্দরম এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ। সমস্ত বক্তাই থুতুকুড়ি বিমান বন্দরে বিজেপির বিরুদ্ধে শ্লোগান তোলা ছাত্রী সোফিয়ার গ্রেপ্তারির নিন্দা করেন।

খণ্ড-25
সংখ্যা-29